ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

র‌্যাবের বিরুদ্ধে মামলা কেন-জানতে চেয়ে নির্যাতন

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৬ ঘণ্টা, মার্চ ৫, ২০১৪
র‌্যাবের বিরুদ্ধে মামলা কেন-জানতে চেয়ে নির্যাতন

চট্টগ্রাম: ধনাঢ্য স্বর্ণ ব্যবসায়ী মৃদুল চৌধুরী পুলিশের অনুসন্ধান কমিটির কাছে বক্তব্য দিয়েছেন। এসময় তিনি আবেগাক্রান্ত হয়ে অপহরণ পরবর্তী তার উপর নির্যাতনের মৌখিকভাবে বর্ণণা দেন।

 

নগর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, লিখিতভাবে দেয়া বক্তব্যে মৃদুল চৌধুরী জানিয়েছেন, অপহরণের পর নির্যাতনের সময় অপহরণকারীরা তিনি কেন র‌্যাবের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন সে বিষয়টি বারবার জানতে চেয়েছেন। তার উপর নির্যাতনের বিষয়টি অপহরণকারীরা উপভোগ করত বলে তার কাছে মনে হয়েছে।


তবে অপহরণকারীদের কাউকে চিনতে না পারলেও তাকে যে স্থানে রাখা হয়েছে তার একটি সম্ভাব্য বর্ণনা দেন মৃদুল চৌধুরী।

বুধবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে মৃদুল চৌধুরী অনুসন্ধান কমিটির প্রধান নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) বনজ কুমার মজুমদারের কার্যালয়ে যান। সেখানে তিন সদস্যের কমিটির সামনে বক্তব্য উপস্থাপন শেষে দুপুর পৌনে ২টার দিকে মৃদুল চৌধুরী বেরিয়ে আসেন।

বনজ কুমার মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, ‘মৃদুল চৌধুরী লিখিত এবং মৌখিকভাবে বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি আদালতে যে জবানবন্দি দিয়েছেন আমাদের কাছে দেয়া বক্তব্যেও সব তথ্যই আছে। ’

সূত্র জানায়, অনুসন্ধান কমিটির কাছে দেয়া বক্তব্যে মৃদুল চৌধুরী জানান, অপহরণের পর অধিকাংশ সময় তাকে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে রাখা হয়েছিল। তাকে মুখোশও পরানো হয়। আর অপহরণকারীদের তিনি স্যার হিসেবে সম্বোধন করতেন।

অপহরণকারীদের কাছে থাকা অবস্থায় মৃদুল চৌধুরী জীবিত ফেরত আসবেন এ আশা কখনোই করেননি বলেও তিনি কমিটিকে জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য গত ১১ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নগরীর পুরাতন টেলিগ্রাফ রোডে নিজ বাসার সামনে থেকে র‌্যাবের বিরুদ্ধে মামলা করে আলোচিত ধনাঢ্য স্বর্ণ ব্যবসায়ী মৃদুল চৌধুরীকে তুলে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এসময় তাদের এক আত্মীয় বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে দুর্বৃত্তরা নিজেদের র‌্যাব ও ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে দ্রুত ওই স্থান ত্যাগ করে।

এ ঘটনার পর মৃদুল চৌধুরীর পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, গত ১৫ জানুয়ারি র‌্যাবের কর্মকর্তা মেজর রাকিবুল আমিনসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ৮০ ভরি স্বর্ণ লুটের একটি মামলা দায়ের করেন মৃদুল চৌধুরী। এ ঘটনার জের ধরে র‌্যাব তাকে অপহরণ করেছে বলে সন্দেহ করেন মৃদুলের স্ত্রী ও ভাই।

এরপর গণমাধ্যমে এ ঘটনা নিয়ে তোলপাড় শুরু হওয়ার পর ১৭ ফেব্রুয়ারি ভোরে মৃদুল চৌধুরীকে কুমিল্লা জেলার বুড়িচং থানার কংসনগর বাজারের পাশে ধানক্ষেতে ফেলে রেখে যায় অপহরণকারীরা। সেখান থেকে উদ্ধার হওয়ার পর ১৯ জানুয়ারি তিনি আদালতে সাক্ষী হিসেবে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।

এরপর গত ১ মার্চ পুলিশ সদর দপ্তর থেকে মৃদুল চৌধুরীকে অপহরণের সঙ্গে র‌্যাব কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্য কোন সদস্য জড়িত আছে কিনা তা অনুসন্ধানে একটি কমিটি গঠন করা হয়।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) বনজ কুমার মজুমদারকে প্রধান করে গঠিত  তিন সদস্যবিশিষ্ট এ কমিটিতে র‌্যাবের একজন প্রতিনিধি এবং চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) মোহাম্মদ ইলতুৎমিশকে সদস্য করা হয়েছে। কমিটিকে এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ সদর দপ্তর থেকে কমিটিকে মৃদুল চৌধুরী অপহরণের প্রকৃত রহস্য কি, অপহরণের রহস্যের উন্মোচন হলনা কেন এবং এ অপহরণের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা কি তা অনুসন্ধান করে বের করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৪ঘণ্টা, মার্চ ০৫,২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।