ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ব্যাংক কেলেংকারি

ইমাম গ্রুপের ২৯ হিসাবের নথিপত্র জব্দের নির্দেশ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ৩, ২০১৪
ইমাম গ্রুপের ২৯ হিসাবের নথিপত্র জব্দের নির্দেশ

চট্টগ্রাম: খ্যাতনামা শিল্প প্রতিষ্ঠান ইমাম গ্রুপের ব্যাংক কেলেংকারি অনুসন্ধানে তাদের ২৯টি ব্যাংক হিসাবের নথিপত্র জব্দ করার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্দেশ দিয়েছেন চট্টগ্রামের একটি আদালত।

ইমাম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যাংকের কয়েক’শ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে সোমবার আদালতে ব্যাংক হিসাবের নথিপত্র জব্দ করার আবেদন জানায় দুদক।

এ সংক্রান্ত অনুসন্ধান টিমের প্রধান  ও দুদকের চট্টগ্রামের উপ সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম এ আবেদন জানান।

আবেদনের উপর শুনানি শেষে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ এস এম মুজিবুর রহমান সোমবার নথিপত্র জব্দের আদেশ দেন।


দুদকের বিশেষ পিপি অ্যাডভোকেট মাহমুদুল হক মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, ইমাম গ্রুপের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ অনুসন্ধানের পর্যায়ে আছে। এজন্য তাদের ব্যাংক হিসেবে তথ্য জানা জরুরি। আমরা আদালতের কাছে এ বিষয়ে আবেদন জানিয়েছি। আদালত তা মঞ্জুর করেছেন।

যেসব হিসাব জব্দ হবে সেসব ব্যাংক ও শাখাগুলো হচ্ছে, সোনালী ব্যাংক, আগ্রাবাদ কর্পোরেট শাখা, উত্তরা ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখা, সিটি ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখা, সিটি ব্যাংক আন্দরকিল্লা শাখা, অগ্রণী ব্যাংক লালদিঘী পূর্ব কর্পোরেট শাখা, ইস্টার্ণ ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখা, এক্সিম ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখা, ইউসিবিএল আগ্রাবাদ শাখা, যমুনা ব্যাংক কদমতলী শাখা, জনতা ব্যাংক সাধারণ বীমা ভবন কর্পোরেট শাখা, এবি ব্যাংক জুবিলি রোড শাখা, এবি ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখা, যমুনা ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখা, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক সিডিএ এভিনিউ শাখা, কৃষি ব্যাংক ষোলশহর শাখা, বিআইএফসি, আগ্রাবাদ শাখায় দু’টি হিসাব, ন্যাশনাল এন্ড হাউজিং ফাইন্যান্স জিইসি মোড়, ফারইস্ট লিজিং, প্রিমিয়ার লিজিং ফাইন্যান্স ইনভেস্টমেন্ট আগ্রাবাদ, প্রাইম ব্যাংক আগ্রাবাদ, প্রাইম ব্যাংক জুবিলি রোড, ন্যাশনাল ব্যাংক আগ্রাবাদ, আইএফআইসি ব্যাংক আগ্রাবাদ, ঢাকা ব্যাংক আগ্রাবাদ, প্রিমিয়ার ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখা, ব্যাংক এশিয়া আগ্রাবাদ, মার্কেণ্টাইল ব্যাংক আগ্রাবাদ, ইউসিবিএল জুবিলি রোড এবং ডাচ বাংলা ব্যাংক, আগ্রাবাদ শাখা।

যেসব নথিপত্র জব্দের অনুমতি পাওয়া গেছে সেগুলো হল, ইমাম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী, তার সহযোগী ও স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক থেকে প্রদত্ত ঋণ সুবিধা (এলসি লিমিট, এলটিআর, এলসি, একসেপ্টেড বিল, পিসি, পিএডি, লিম, আইবিপি ও অন্যান্য ঋণ) সংক্রান্ত ব্যাংক হিসাব খোলার ফরম, ঋণের আবেদন, ঋণ আবেদন মঞ্জুরীর প্রস্তাব, ঋণ মঞ্জুরীপত্র, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, গ্রান্টার প্রদান সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র, ঋণ আদায়ের জন্য গৃহীত পদক্ষেপ ও এ সংক্রান্ত নথি, বন্ধকী সংক্রান্ত নথি, ইমাম গ্রুপের দেয়া চেক, ওই চেক নগদায়ন বা প্রত্যাখান সংক্রান্ত নথি, বাংলাদেশ ব্যাংক বা অভ্যন্তরীণ অডিট প্রতিবেদন।

দুদক ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি দুদকের কাছে সোনালী ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক, রুপালি ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, ‍অগ্রণী ব্যাংক, শিল্প ব্যাংক ও বেসরকারী বিভিন্ন ব্যাংক থেকে অনিয়মের মাধ্যমে ইমাম গ্রুপের মোহাম্মদ আলী ৩০ হাজার কোটি টাকা অবৈধ ঋণ সুবিধা নিয়েছেন বলে একটি অভিযোগ আসে।

তিন পৃষ্ঠার ওই অভিযোগে কৃষি ব্যাংকের ষোলশহর শাখা এবং সোনালী ব্যাংকের আগ্রাবাদ কর্পোরেট শাখা থেকে প্রায় ৩২০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তা আত্মসাতের সুনির্দিষ্ট তথ্য উল্লেখ করা হয়।

এতে বলা হয়, কৃষি ব্যাংক থেকে জামানতবিহীন এলসি লিমিট বাবদ ১১৯ কোটি ৯১ লক্ষ টাকা এবং এলটিআর লিমিট বাবদ জামানতবিহীন ৯৫ কোটি ৯২ লক্ষ টাকা অবৈধ ঋণ নিয়ে মোহাম্মদ আলী আত্মসাৎ করেন। এছাড়া সোনালী ব্যাংক থেকে ডিজিএম আবুল কালামের সহযোগিতায় এক’শ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তা আত্মসাত করেন মোহাম্মদ আলী।

বিপুল অংকের টাকা আত্মসাতের পর মোহাম্মদ আলী দেশত্যাগের চেষ্টা চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয়। দেশত্যাগের চেষ্টার অংশ হিসেবে আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকায় সুরাইয়া ম্যানশনে বিলাসবহুল অফিস ছেড়ে তিনি আগ্রাবাদের তাহের চেম্বারে অফিস স্থানান্তর করেছেন বলেও ওই অভিযোগে উল্লেখ আছে।

গত বছরের অক্টোবরে এ অভিযোগ দুদকে দাখিলের পর ২০১৩ সালের ২৭ নভেম্বর সেটি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক (স্মারক নং-দুদক/১২৬-২০১৩/চট্টগ্রাম/অনু: ও তদন্ত-২/৩২০৩৭)।

২০১৩ সালের ১০ ডিসেম্বর দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য চট্টগ্রাম কার্যালয়কে নির্দেশ দেয়া হয়। এজন্য দুদক চট্টগ্রামের উপ সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সিরাজুল হককে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়। বাকি দু’জন হলেন, উপ সহকারী পরিচালক খলিলুর রহমান সিকদার ও আজিজুল হক।

এরপর গত ২৭ জানুয়ারি ইমাম গ্রুপের ব্যাংক হিসাবের নথিপত্র জব্দের অনুমতি চেয়ে পিপি’র মাধ্যমে আদালতে একটি আবেদন পাঠান সিরাজুল হক। সোমবার আবেদনটি আদালতের সামনে উপস্থাপন করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২০২০ঘণ্টা, মার্চ ০৩,২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।