ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

স্বর্ণের চাহিদার যোগান আসে চোরাচালান থেকে!

তপন চক্রবর্তী, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৪
স্বর্ণের চাহিদার যোগান আসে চোরাচালান থেকে!

চট্টগ্রাম: দেশে স্বর্ণের চাহিদার অর্ধেকেরও বেশি চোরাচালান থেকেই যোগান আসে বলে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। বাজারে স্বর্ণের উৎসের অনুসন্ধানে এ তথ্য বের হয়ে এসেছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই, আবুদাবি, শারজাহ এবং ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশ থেকে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের বিমানে করে স্বর্ণের বার, স্বর্ণালংকার পাচার হয়ে আসছে।

সম্প্রতি ঢাকা-চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে একের পর এক স্বর্ণের চালান ধরাও পড়ছে।
সূত্র মতে, দেশে প্রতিদিন ৫ হাজার ভরি স্বর্ণের চাহিদা রয়েছে। এ হিসেবে মাসে দেড় লাখ ভরি ব্যবহৃত হয়।

কাস্টমসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, স্বর্ণ চোরাচালানির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে যেসব যাত্রীদের আটক করা হয়েছে তারা সবাই বহনকারী। সাধারণত মধ্যপ্রাচ্যে যেসব শ্রমিক কর্মহীন ও অর্থ সংকটে থাকেন তাদেরকে লোভ দেখিয়ে বহনকারী হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ফলে জিজ্ঞাসাবাদ করেও মূল হোতাদের বিষয়ে তেমন কোন তথ্য পাওয়া যায় না।

সূত্র জানায়,মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ও বাংলাদেশে এ চক্রের একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক রয়েছে। তবে এ চক্রটি একেবারেই ধরা ছোয়ার বাইরে রয়ে গেছে।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের সহকারী কমিশনার মশিউর রহমান মণ্ডল বাংলানিউজকে জানান, চলতি বছরে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি এ দু’মাসে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৩৪টি স্বর্ণ চালানে ৭২ কেজি স্বর্ণ উদ্ধার করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস ও শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ। এসব স্বর্ণের বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৩১ কোটি টাকা। ৩৪ চালানের মধ্যে জানুয়ারি মাসে ধরা পড়ে ১০টি চালান। ২৪টি চালান ফেব্রুয়ারি (২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত) মাসে আটক হয়।

এরমধ্যে সবচেয়ে বড় চালানটি ধরা পড়ে চলতি মাসের ৬ ফেব্রুয়ারি। ওই দিন রাত সাড়ে ৮টায় দুবাই থেকে আসা ফ্লাই দুবাই’র (এফজেড) একটি ফ্লাইটের যাত্রী আসনের নিচ থেকে ৪৯ কেজি ওজনের ৪২০টি স্বর্ণবার পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।  

এছাড়া ২১ ফেব্রুয়ারি ওমানের মাস্কাট বিমানবন্দর থেকে আসা বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট থেকে তাও পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় সাড়ে ১০ কেজি স্বর্ণের বার। গত দুই মাসে আসা ৩৪ চালানের মধ্যে এ দুটিই ছিল বড় চালান।   

মশিউর রহমান বলেন, অধিকাংশ চালানই পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। ফলে চোরাচালানির সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করা যায়নি। এ কাস্টমস কর্মকর্তা বাংলাদেশে বৈধভাবে স্বর্ণের আমদানি হয় না বলেও তথ্য দেন।

এদিকে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির চট্টগ্রাম শাখার সাধারন সম্পাদক সুবাস ধর বাংলানিউজকে জানান, ‘ আমরা দীর্ঘদিন থেকে স্বর্ণের আমদানির জন্যে সরকারের কাছে লাইসেন্স দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছি। ’ 

তিনি দেশের বাজারে স্বর্ণের উৎস সম্পর্কে তথ্য দিয়ে বলেন, পুরোনো স্বর্ণ হাত বদল হয়ে ফের স্বর্ণের বাজারে ঢুকে। এছাড়া ২শ’ গ্রাম ওজনের স্বর্ণ ট্যাক্স দিয়ে আনা যায়। মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা লোকজন এরকম বৈধভাবে স্বর্ণালংকার নিয়ে আসে। চোরাচালান থেকেও স্বর্ণ বাজারে ঢুকে এ তথ্যও স্বীকার করেন জুয়েলার্স সমিতির এ নেতা। তবে তা শতকরা ২৫ ভাগের বেশি নয় বলে তিনি দাবি করেন।

সম্প্রতি স্বর্ণ চোরাচালান বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে সুবাস ধর বলেন, এসব স্বর্ণের চালান ভারতে পাচার হয়ে যাচ্ছে। পাচারকারীরা বাংলাদেশকে রুট হিসেবে ব্যবহার করছে। ভারতে আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির সুযোগে বাংলাদেশ হয়ে স্বর্ণের পাচার বেড়ে যায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৮ ঘন্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।