ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

‘ভিটেমাটি দখল করতেই পুড়িয়ে মারা হয় ১১ জনকে’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৪
‘ভিটেমাটি দখল করতেই পুড়িয়ে মারা হয় ১১ জনকে’

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার সাধনপুরের শীলপাড়ায় ১১ জনকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন বেঁচে যাওয়া ওই পরিবারের সদস্য ও মামলার বাদির ছোট ভাই নির্মল শীল।

সোমবার চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ লা মংয়ের আদালতে সাক্ষ্য দেয়ার সময় নির্মল শীল পুরো ঘটনা সবিস্তারে বর্ণনা দেন।



এসময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে নির্মল শীল বলেন, ‘ভিটেমাটি দখলে নেয়ার জন্য আমিন চেয়ারম্যানসহ সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে আমাদের ঘরে আগুন দিয়েছে। তারা নির্মমভাবে ১১ জনকে পুড়িয়ে মেরেছে।


চট্টগ্রাম জেলা পিপি অ্যাডভোকেট আবুল হাশেম বাংলানিউজকে বলেন, ‘নির্মল শীল জবানবন্দিতে ১১ জনকে পুড়িয়ে হত্যার জন্য আমিন চেয়ারম্যানসহ তার অনুসারী সন্ত্রাসীদের দায়ী করেছেন। আজ (সোমবার) জবানবন্দি শেষে নির্মল শীলের আংশিক জেরা হয়েছে। আগামী ২ মার্চ পরবর্তী জেরার দিন ধার্য করা হয়েছে। ’

আদালতে দেয়া সাক্ষ্যে নির্মল শীল বলেন, ঘটনার দিন রাত আনুমানিক সাড়ে ৩টার দিকে আমার বড় ভাই ও ‍মামলার বাদি বিমল কান্তি শীল টেলিফোন করে আমাকে জানান, আমার বাড়িতে আগুন দিয়ে ১১ জনকে পুড়িয়ে মেরে ফেলেছে। আমি রাতেই টেক্সি নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিই। ভোর ৬টার দিকে আমি বাড়িতে পৌঁছাই। তখনও আমাদের বাড়িতে আগুন জ্বলছিল।

তিনি বলেন, বাড়িতে পৌঁছে আমি চিৎকার করে কাঁদতে থাকি। সেখানে দেখি শত, শত লোকের ভিড়। কেউ কেউ পানি দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছিল আর কেউ দাঁড়িয়ে কাঁদছিল আর কেউ নীরবে দাঁড়িয়েছিল। অন্যদিকে আমার বড় ভাই বিমল শীল ঘরের বারান্দায় আহত অবস্থায় যন্ত্রণায় কান্না করছিল। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে থানার ওসি আসলেন।

তিনি বলেন, আমি বাদি ও আমার বড় ভাই বিমল শীলের মুখ থেকে জানতে পারি, ১৮ নভেম্বর রাত সাড়ে ১২টার দিকে সশস্ত্র একদল সন্ত্রাসী দরজা ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে। দরজা ভাঙার শব্দ শুনে নিচে যারা ঘুমাচ্ছিল তারা ভয়ে দোতলায় উঠে যায়। ৩০-৩৫ জনের ওই সন্ত্রাসী দল ঘরে ঢুকে কাউকে না পেয়ে নিচতলায় আগুন ধরিয়ে দেয়।

তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আগুনের লেলিহান শিখায় চারদিনের শিশুপুত্রসহ ১১ জন আগুনে পুড়ে ঘটনাস্থলে মারা যায়। পরদিন সকাল ১০টা থেকে পুলিশ ও ইউনিয়নের চৌকিদার মিলে লাশ বের করা শুরু করে। একে একে ১১টি ঝলসানো লাশ বের করে আমাদের বাড়ির উঠানে রাখা হয়।

আদালতে দেয়া সাক্ষ্যে নির্মল শীল জানান, সুরতহাল রিপোর্টে তিনি ১১ জনের লাশ শনাক্ত করেন।

উল্লেখ্য ২০০৩ সালের ১৮ নভেম্বর রাতে বাঁশখালীর সাধনপুর ইউনিয়নের শীলপাড়ায় তেজেন্দ্র লাল শীলের বাড়িতে একই পরিবারের ১১ জনকে পুড়িয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।

নির্মম খুনের শিকার ব্যক্তিরা হলেন, তেজেন্দ্র লাল শীল (৭০), তার স্ত্রী বকুল বালা শীল (৬০), ছেলে অনিল কান্তি শীল (৪২) ও তার স্ত্রী স্মৃতি রাণী শীল (৩০), তাদের মেয়ে মুনিয়া শীল (৭) ও রুমি শীল (১১), চারদিন বয়সী শিশু কার্তিক শীল, তেজেন্দ্রর ছোট ভাইয়ের মেয়ে বাবুটি শীল (২৫), প্র‍সাদী শীল (১৭), অ্যানি শীল (১৫) এবং তেজেন্দ্রর বেয়াই দেবেন্দ্র শীল (৭৫)।

এ ঘটনায় কয়েক দফা অভিযোগপত্র দাখিল, বাদির নারাজিসহ নানা নাটকীয়তার পর ২০১২ সালের ১৯ এপ্রিল ৩৮ আসামির বিরুদ্ধে সম্পত্তি দখল করতে গিয়ে পরিকল্পিত হত্যাকান্ডের ধারায় অভিযোগ গঠন করেন আদালত।   এরপর আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।

এর মাঝে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হলেও সময়মত নিষ্পত্তি না হওয়ায় তা আবারও তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ফেরত আসে। ট্রাইব্যুনাল থেকে ফেরত আসার পর আজ (সোমবার) প্রথম দফা সাক্ষ্যগ্রহণ করা হল।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।