চট্টগ্রাম: ডেমু নিয়ে বিড়ম্বনা কাটছে না রেলওয়ের। রাজনৈতিক সহিংসতায় প্রায় ২ মাস বন্ধ রাখার পর জানুয়ারি মাসে পুনরায় চালু হলেও ডেমুতে যাত্রী চলাচল কমে গেছে।
চট্টগ্রামের সার্কুলার রুটে ডেমু ট্রেনের সেবা নিয়ে অসন্তোষ থাকায় যাত্রী সংখ্যা একেবারেই নেই।
বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে চীন থেকে ডেমু ট্রেনগুলো আনার পর থেকেই নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে রেলওয়েকে। এরপরও চট্টগ্রাম ছাড়া অন্যান্য রুটে ডেমু সফলভাবেই চলছে বলে দাবি করেছেন রেলওয়ের মহাপরিচালক মো.তাফাজ্জল হোসেন।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২৫ মে থেকে চট্টগ্রাম শহরের সার্কুলার রুটে কমিউটার ট্রেন চালু করা হয়। প্রতিটি কমিউটার ট্রেন দিনে দুইবার চালাতে ব্যয় হয় প্রায় ৩০ হাজার টাকা। এর বিপরীতে উদ্বোধনের মাসে চট্টগ্রাম কমিউটার থেকে রেলওয়ে আয় করেছে ১০ হাজার ১২৫ টাকা, জুন মাসে ৬৭ হাজার ৬৩৫ টাকা, জুলাই মাসে ৫২ হাজার ৩৫০ টাকা, আগষ্টে ৭৭ হাজার ৬৮৫ টাকা এবং সেপ্টেম্বরে যাত্রী পরিবহন থেকে রেলওয়ে আয় হয়েছে মাত্র ৫৪ হাজার ৯৬০ টাকা।
শুধুমাত্র রাজনৈতিক চাপে যাত্রীহীন রুটে ট্রেন পরিচালনা করায় রেলওয়ের বিপুল পরিমাণ লোকসান হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন রেলের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
লোকসান এড়াতে বাধ্য হয়ে সার্কুলার ট্রেন বাতিল করে নতুন দুটি গন্তব্যে চট্টগ্রাম কমিউটার ট্রেন পরিচালনা করা হবে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
তবে লোকসানের হিসেব আমলে নিতে রাজি নয় রেলের মহাপরিচালক। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নয়। এটি একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। তাই এখানে লোকসানের বিষয়টি বিবেচ্য নয়।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, বিগত বছরের ২৫ অক্টোবর থেকে দেশে টানা অবরোধ কর্মসূচির কারণে সংহিসতার আশংকায় ডেমু ট্রেনের চলাচল সীমিত করে রেলওয়ে। ২৫ নভেম্বর থেকে সারাদেশে ডেমু ট্রেনের চলাচল পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করে রেলওয়ে। নির্বাচন পরবর্তী সময়ে গত ১৬ জানুয়ারি থেকে সব রুটেই ডেমু চালু করা হয়। কিন্তু যাত্রী সংকটের কারণে বিভিন্ন রুটের ট্রেনের যাত্রা সময় ও দূরত্ব কমানোর চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক(জিএম) মকবুল আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে ডেমু আনা হয়েছে। তাই যে কোনভাবে চালাতে হবে।
যাত্রী আকর্ষণ না থাকায় সার্কুলার রুটের পরিবর্তে চট্টগ্রাম-নাজিরহাট ও চট্টগ্রাম দোহাজারী রুটে এ ট্রেন চালানোর চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
সূত্র জানায়, বিগত বছরের অক্টোবরের শুরুতে রেলভবন থেকে বিভিন্ন রুটে কমিউটার ট্রেন চলাচলের অগ্রগতি বিষয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের কাছে জানতে চাওয়া হয়। ডেমু ট্রেনকে জনপ্রিয় করতে সংশ্লিষ্ট দফতরের কাছে মতামতও চাওয়া হয় তখন।
নির্বাচন পরবর্তী সময়ে রেলওয়ের পরিবহন শাখা ডেমু পরিচালনায় নানান অসঙ্গতি তুলে ধরে চারটি রুটের ডেমু ট্রেনের মধ্যে চট্টগ্রাম কমিউটার ট্রেন (সার্কুলার ট্রেন) বাতিল করে নাজিরহাট ও হাটহাজারী রুটে পরিচালনা এবং লাকসাম, কুমিল্লা ও নোয়াখালী কমিউটার স্বল্প দূরত্বে পরিচালনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয় পরিবহন শাখা।
রেলের একাধিক ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তা বলেন, চট্টগ্রামের সার্কুলার রুটে ডেমু ট্রেন জনপ্রিয় হয়নি। ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-নোয়াখালী রুটের তিনটি কমিউটার রেলওয়ের ওয়ার্কিং টাইম টেবিল নম্বর ৪৯ এর আলোকে চলাচল শুরু করলেও রাজনৈতিক চাপে রুটের কুমিল্লা পর্যন্ত দূরত্ব বাড়ানো হয়। মূলত অফিসগামী যাত্রীদের কথা বিবেচনা করে কমিউটার ট্রেন চালানো হলেও দূরত্ব বেড়ে যাওয়ায় যাত্রী সংখ্যা কমতে থাকে। এছাড়া স্বল্প দূরত্বে যাত্রী পরিবহনে সক্ষম ডেমু দিয়ে বেশি দূরত্বে যাত্রী পরিবহন করায় ডেমু ট্রেনগুলোতে যান্ত্রিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। এজন্য পরিবহন বিভাগ দ্রুত বিষয়টি নিয়ে নতুন করে চিন্তা ভাবনা করছে বলে জানান তারা।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক বলেন, নিরাপত্তার কারণে কয়েক মাস সারাদেশে ডেমু ট্রেনগুলো চালানো হয়নি। ফলে স্বল্প দূরত্বের যাত্রীরা ডেমু ট্রেনে ভ্রমণ করতে আগ্রহী হচ্ছেন না।
ট্রেনগুলোকে কিভাবে জনপ্রিয় করা যায় সে বিষয়ে রেলওয়ের উচ্চ পর্যায়ে আলাপ আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৯ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৪