চট্টগ্রাম: দশ ট্রাক অস্ত্র আটকের মত এতবড় একটি ঘটনা অবহিত হওয়ার পরও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নীরব ভূমিকা পালন আদালতের কাছে রহস্যজনক মনে হয়েছে।
দশ ট্রাক অস্ত্র আটক ও চোরাচালান মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত উল্লেখ করেছেন, সাক্ষী অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সাদিক হাসান রুমি ডিজিএফআই-এর প্রধান হিসেবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে (বেগম খালেদা জিয়া) এ মামলা সংক্রান্ত অস্ত্র ও গোলাবারুদ আটকের ঘটনা টেলিফোনে অবহিত করলে তিনি কোন ধরনের প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে ঘটনাটি অবগত আছেন এবং একটি কমিটি করে দেবেন বলে জানান।
মঙ্গলবার রায় প্রদানকারী চট্টগ্রামের স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক এস এম মুজিবুর রহমান পূর্ণাঙ্গ রায়ে স্বাক্ষর করেন।
ট্রাইব্যুনালের বেঞ্চ সহকারী মো.ওমর ফুয়াদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘মহামান্য আদালত পূর্ণাঙ্গ রায়ের নথিতে স্বাক্ষর করেছেন। এখন পূর্ণাঙ্গ রায় সুপ্রিম কোর্টে পাঠিয়ে দেয়া হবে। ’
পর্যবেক্ষণে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মতিউর রহমান নিজামী শিল্প মন্ত্রী এবং বাবর স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী থাকার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলা হয়, আসামী লুৎফুজ্জামান বাবর এতবড় একটি অপরাধের সাথে যুক্ত আসামীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ না করে পুরো ব্যাপারটিকে ছলে বলে কৌশলে আড়াল করার চেষ্টা করেছেন এবং তারা নিজেরাও সরকারের উচ্চ পর্যায়ে ঘটনা সম্পর্কে জানে বা এতে সরকারের তথাকথিত ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট জড়িত রয়েছে বলে উল্লেখ করার কথা সাক্ষ্যপ্রমাণে পাওয়া গেছে।
উলফা নেতা পরেশ বড়ুয়ার জন্য দশ ট্রাক অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ চোরাচালানের মাধ্যমে আমাদের দেশের অভ্যন্তরে আনা কোন যুক্তিতে ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট হতে পারে তা আদালতের কাছে বোধগম্য হয়নি বলে পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করা হয়েছে।
পর্যবেক্ষণে নিজামী ও বাবরের প্রসঙ্গে বলা হয়, এই মামলার ঘটনা সম্পর্কে তাদের বিরেুদ্ধে যে সাক্ষ্য প্রমাণ ট্রাইব্যুনালের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে বুঝা যায় যে, তারা উলফা নেতা পরেশ বড়ুয়া সহ অন্যান্য আসামীদের সাথে পরস্পরের যোগসাজশে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে মামলার ঘটনা সংঘটনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।
গত ৩০ জানুয়ারি দশ ট্রাক অস্ত্র আটকের ঘটনায় চোরাচালান (বিশেষ ক্ষমতা আইনে) ও অস্ত্র আইনে দায়ের হওয়া পৃথক দুটি মামলার রায় দেন বিচারক।
চোরাচালান মামলার রায়ে সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী এবং সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৪ জনকে মৃত্যুদন্ড দেন আদালত। একই রায়ে তাদের পাঁচ লক্ষ টাকা করে জরিমানাও করা হয়েছে।
একই ঘটনায় অস্ত্র আইনে দায়ের হওয়া একটি মামলায় একই আসামীদের ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইনের ১৯ (এ) ধারায় যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং ১৯ (সি) ও ১৯ (এফ) ধারায় সাত বছর কারাদন্ড দেন বিচারক। উভয় সাজা একসঙ্গে চলবে বলে বিচারক আদেশে উল্লেখ করেন। এছাড়া তাদের হাজতবাসের মেয়াদ দণ্ড থেকে বাদ যাবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে রায়ে।
বাংলাদেশ সময়: ১২০০ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪,২০১৪