ঢাকা, বুধবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

‘দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় খালেদাকে জড়ানোর চেষ্টা চলছে’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১৪
‘দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় খালেদাকে জড়ানোর চেষ্টা চলছে’

চট্টগ্রাম: জিয়া পরিবারকে হেয় প্রতিপন্ন এবং জনগণকে বিভ্রান্ত করতেই আওয়ামী লীগ দশ ট্রাক অস্ত্র মামলার রায় নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে জড়িয়ে বক্তব্য দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।

সোমবার বিকেলে নগর বিএনপির দলীয় কার্যালয় নাসিমন ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন,‘দশ ট্রাক অস্ত্র মামলার রায়ের পর খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে জড়িয়ে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এ মামলায় সম্পৃক্ত রয়েছে বলে প্রচারের চেষ্টা করা হয়েছে।



খালেদা ও তারেক রহমানকে জড়িয়ে দেয়া বক্তব্য আওয়ামী লীগের হীন প্রচেষ্টা, দুরভিসন্ধী ও ষড়যন্ত্র উল্লেখ করে তিনি এর নিন্দা জানান।

এদিকে দশ ট্রাক অস্ত্র মামলার রায়ের প্রতিক্রিয়া জানাতে রোববার সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ।
ওই সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ দাবি করেন দশ ট্রাক অস্ত্র চালান আসার কথা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া অবগত ছিলেন এবং তার নির্দেশেই এ ঘটনা ঘটেছিল। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ খালেদা জিয়ার বিচারও দাবি করেন।  

সংবাদ সম্মেলনে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন এবং দশ ট্রাক অস্ত্র মামলার রাষ্ট্র পক্ষের কৌঁসুলি ও মহানগর পিপি অ্যাডভোকেট কামাল উদ্দিন আহমেদসহ আওয়ামী লীগ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।  

আওয়ামী লীগের ওই সংবাদ সম্মেলনে এ ঘটনায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও হাওয়া ভবন জড়িত ছিল বলেও দাবি করা হয়। মূলত এসব বক্তব্যের পাল্টা জবাব দিতেই সোমবার সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিএনপি।  

দশ ট্রাক অস্ত্র নিয়ে রাজনীতি করা হচ্ছে অভিযোগ করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নোমান বলেন,‘দশ ট্রাক অস্ত্র চালানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান জড়িত রয়েছে বলে মিথ্যাচার করছে সরকারি দল। এমন বক্তব্য দিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করে জনগণকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। ’ 

‘খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও হাওয়া ভবনকে কেন্দ্র করে জনগণের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে চায় সরকার। ’

আওয়ামী লীগের পক্ষে যে কোন অন্যায় কাজ সম্ভব মন্তব্য করে নোমান বলেন, এ সরকার বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করতে চায়। তার প্রথম কার্যক্রম শুরু হয় সংবিধান পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে। এর মাধ্যমে নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতায় বসে সে প্রত্যাশা আংশিক পূরণ হয়েছে। ’

কিন্তু মুক্তিকামী মানুষ ১৯৭১ সালে যে মূল মন্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিল সেই গণতন্ত্র এখন দেশে নেই।

দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রতিফলিত হয়েছে। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে মামলায় জড়াতে মিথ্যা তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করা হয়েছিল বলেও সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়।  

এসময় আবদুল্লাহ আল নোমান আওয়ামী লীগ সভাপতি মহিউদ্দিন চৌধুরীর দেয়া বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানান।  

রায় রাজনৈতিক যোগসাজশে:
পূর্নাঙ্গ রায় প্রকাশের আগে আদালতের রায় নিয়ে আওয়ামী লীগ বক্তব্য দেয়ায় রাজনৈতিক যোগসাজশে এ মামলার রায় দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দশ ট্রাক অস্ত্র মামলার আসামী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম সাজ্জাদ।

তিনি বলেন,‘পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের আগে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী কিভাবে জানলেন রায়ে কি আছে। ‘

মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান জড়িত থাকার বিষয়টি কোথাও না থাকলেও তৎকালীন ডিজিএফআই’র মহাপরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সাদিক হাসান রুমির বক্তব্য দিয়ে জিয়া পরিবারকে জড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে।

অস্ত্র চালানের ইতিহাস আরো আছে: 
দশ ট্রাক অস্ত্র চালানের আগে এ ধরণের বড় অস্ত্র চালানের ইতিহাস বাংলাদেশে রয়েছে বলে দাবি করেছেন আবদুল্লাহ আল নোমান।

তিনি বলেন,‘এ ধরণের অস্ত্র আসার ইতিহাস আরো আছে। ১৯৯৬ সালে তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে কক্সবাজার চৌফলদন্ডীতে অস্ত্রের চালান ধরা পড়ে। পত্রিকায় বিস্তারিত এসেছিল। ’

নোমান অস্ত্র চালানের ঘটনাটি তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে হয়েছে দাবি করলেও মূলত তখন বিএনপি সরকারই ক্ষমতায় ছিল।  

তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করে তিনি বলেন,‘ বিস্তারিত বলতে পারবো না। আপনারা অনুসন্ধান করে দেখতে পারেন। তখন মামলা হয়েছিল কিনা। ‘

দশ ট্রাক অস্ত্র মামলার সঠিক বিচার বিএনপি চায় উল্লেখ করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, এসব অস্ত্র চালানের মামলা চট্টগ্রামে হয়েছে। তদন্তও হয়েছে। আমরা চাই সঠিক তথ্য উঠে আসুক। পাশ্ববর্তী এলাকার শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হয় এমন কোন কার্যক্রম বিএনপি চায় না।  

বাংলাদেশ অস্ত্র চোরা চালানের রুট হবে এটা বিএনপির কাম্য নয় জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা চাই যে বা যারা অস্ত্র নিয়ে এসেছে তাদের বিচার হোক।

সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও আইন সম্মত বিচার চায় বলেই বিএনপি দশ ট্রাক অস্ত্র নিয়ে লুকোচুরি করেনি দাবি করে নোমান বলেন,‘নিরপেক্ষ বিচার চাই বলেই তখন ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও এ মামলা নিয়ে কোন লুকোচুরি হয়নি। ’

এমন অস্ত্র আগে দেখিনি:
দশ ট্রাক অস্ত্র অন্য দেশে নিয়ে যাওয়ার জন্যই বাংলাদেশ রুট ব্যবহার করা হয়েছে উল্লেখ করে নোমান বলেন, অন্য দেশে নিতে বাংলাদেশ রুট ব্যবহার করা হয়েছে বলে সরকারি অনুসন্ধানে স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে।

এসব অস্ত্র বাংলাদেশে ব্যবহারের জন্য এসেছে এমন কথা কোথাও আসেনি।

তিনি বলেন, বিএনপি সরকারের আমলেই দশ ট্রাক অস্ত্র ধরা পড়েছিল। আমি নিজেও সে অস্ত্র দেখতে গিয়েছিলাম। এ ধরণের অস্ত্র এরআগে আমি কখনো দেখিনি।

১৯৭৪ সালের সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনী পরিবর্তন করে যেভাবে একদলীয় শাসন কায়েম করতে চেয়েছিল, ঠিক তেমনি পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করে ফেসিস্ট সরকার বিএনপিকে নি:শেষ করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন আবদুল্লাহ আল নোমান।

তিনি বলেন,‘হামলা, মামলা, নির্যাতন করে ৫ শতাংশ ভোট নিয়ে ক্ষমতায় আসা সরকার ৯৫ শতাংশ মানুষের উপর চেপে বসেছে। ‘

তবে বাংলাদেশে সব সময় গণ আন্দোলন সফল হয়েছে উল্লেখ করে নোমান বলেন,‘সব সময় গণ আন্দোলন জয়লাভ করেছে আর সরকার পরাজিত হয়েছে। মানুষের মনের ভেতরে আন্দোলনের যে মনোভাব তাতে এ সরকারেরও পতন হবে। ’

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বিএনপির সাবেক হুইপ সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম, বিএনপির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক এএম নাজিম উদ্দিন, নগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান, সাধারণ সম্পাদক ডা.শাহাদাত হোসেন, নগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সাত্তার উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০১৪ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।