চট্টগ্রাম: দশ ট্রাক অস্ত্র মামলার বিচার চলাকালে রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলী ও মহানগর পিপি অ্যাডভোকেট কামাল উদ্দিন আহমেদ টেলিফোনে হুমকি পেয়েছিলেন। একইভাবে হুমকি পেয়েছিলেন বেশ কয়েকজন সাক্ষীও।
শুধু পিপি কিংবা সাক্ষীদের হুমকি নয়, চাঞ্চল্যকর এ মামলার বিচার চলাকালে বিচারকের সরকারী বাসভবনে ককটেল হামলার ঘটনাও ঘটেছিল।
কিন্তু সব হুমকি-আতংক উপেক্ষা করে দশ ট্রাক অস্ত্র মামলার বিচার শেষ করাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলেন সংশ্লিষ্টরা। দৃঢ় ভূমিকার কারণে শেষ পর্যন্ত এ মামলার বিচার শেষ হয়েছে বলে মনে করছেন পিপি অ্যাডভোকেট কামাল উদ্দিন আহমেদ।
শুক্রবার বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে মহানগর পিপি বলেন, ‘বছরখানেক আগে একদিন আমাকে টেলিফোন করে একজন বলেছে সাবধান থাকবেন। আমি পরিচয় জিজ্ঞেস করেছি। কিন্তু তিনি খুবই উত্তেজিত ছিলেন। ’
পিপি বলেন, সাক্ষ্য দেয়ার পর আমার বেশ কয়েকজন সাক্ষীও হুমকি পেয়েছিলেন। তারা আমাকে জানিয়েছেন। কিন্তু নিজেও আইনগত কোন ব্যবস্থা নেয়নি, তাদেরও নিতে দেয়নি। কারণ বিষয়টি প্রকাশ হলে মামলার বিচার কার্যক্রমের উপর প্রভাব পড়ত। হুমকিদাতারা এটাই চেয়েছিলেন।
২০১২ সালের ২৫ জানুয়ারি সংশ্লিষ্ট বিচারিক আদালত চট্টগ্রামের স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক এস এম মুজিবুর রহমানের আদালতে সাক্ষ্য দেন সাবেক শিল্প সচিব ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড.শোয়েব আহমেদ। এরপর ১২ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় দফা সাক্ষ্য দিতে এসে তিনি আদালতকে জানান, প্রথম দফা সাক্ষ্য দেয়ার পর থেকে তাকে উড়ো চিঠি দিয়ে এবং বিভিন্ন অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন করে কয়েক দফা হুমকি দেয়া হয়েছে। এতে তিনি জীবনের নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন।
আদালত সাক্ষীর নিরাপত্তার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সিএমপি কমিশনারকে নির্দেশ দেন।
মহানগর পিপি বলেন, সাক্ষী শোয়েব আহমদের পর যখন আরও কয়েকজন সাক্ষীকে হুমকি দেয়া হল তখন আমরা অ্যালার্ট হয়ে যায়। মামলার বিচার কার্যক্রমকে ঝুলিয়ে ফেলতেই পরিকল্পিতভাবে এটা করা হচ্ছিল বলে আমরা বুঝতে পারি।
২০০৪ সালের ১ এপ্রিল রাতে রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা চিটাগং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের (সিইউএফএল) জেটিঘাটে দশ ট্রাক অস্ত্রের চালান খালাসের সময় ধরা পড়ে।
এ ঘটনায় কর্ণফুলী থানায় দায়ের হওয়া দু’টি মামলার বিচার কার্যক্রম চলাকালে ২০০৭ সালের ২০ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত মামলাটি অধিকতর তদন্তের আদেশ দেন আদালত।
অধিকতর তদন্ত শেষে ২০১১ সালের ২৫ জুন সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো.মনিরুজ্জামান চৌধুরী আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেন। ওই অভিযোগপত্রে নতুনভাবে আসামীর তালিকায় যুক্ত হন ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফা’র সামরিক কমাণ্ডার পরেশ বড়ুয়া, সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী এবং সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১১ জন প্রভাবশালী।
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক এস এম মুজিবুর রহমান অস্ত্র চোরাচালান মামলায় ১৪ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং অস্ত্র আইনে দায়ের হওয়া মামলায় যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও সাত বছরের সশ্রম কারাদন্ড দেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১,২০১৪