ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

জামায়াত কী নিষিদ্ধ হচ্ছে?

তপন চক্রবর্তী, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৪
জামায়াত কী নিষিদ্ধ হচ্ছে? ছবি:বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম/ফাইল ফটো

চট্টগ্রাম: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। এরই মধ্যে জামায়াতের এক নেতার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।



একই সঙ্গে জামায়াতকে একটি অপরাধী সংগঠন বলে আখ্যা দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। এরপরও মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র বিরোধিতাকারী জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও অন্যান্য দল ঐকমত্যে পৌঁছ‍ুতে পারছে না।


বর্তমান সরকারের এ মেয়াদে কী জামায়াত নিষিদ্ধ হচ্ছে?- এ প্রশ্ন এখন অনেকের।

বিশিষ্টজনেরা মনে করেন, দেশে যে রাজনৈতিক সংকট চলছে, তার মূলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও জামায়াত। এ সংকট কাটাতে জামায়াতসহ দেশের ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোকে নিষিদ্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে জামায়াত নিষিদ্ধ করা প্রসঙ্গে জাতীয় স্বার্থে প্রধান দু’দলকে ঐকমত্যে পৌঁছুতে হবে।

কিন্তু জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার প্রশ্নে প্রধান দু’দলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন রাখছেন বিশিষ্টজনেরা।

বিএনপি’কে জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ার জন্য আওয়ামী লীগ নেতারা পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু সরকারে থেকেও জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে কার্যকর কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না আওয়ামী লীগ।

অন্যদিকে বিএনপি নেতারা বলছেন, জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির নির্বাচনী জোট হয়েছে, যা সাময়িক। এখানে আর্দশের কোনও বিষয় নেই। আওয়ামী লীগও অতীতে জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করেছে।

দু’দলের এরকম অবস্থানের কারণে সংশয়ে ভুগছে তরুণ প্রজন্ম, যারা জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে রাজপথে আন্দোলনে নেমেছে। জামায়াত নামের বিষফোঁড়াটি স্বাধীন রাষ্ট্রের মানচিত্র থেকে ওপড়ানো যাবে কিনা তা নিয়ে উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষও।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাইরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, যে দলটি বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সশস্ত্র বিরোধিতা করেছিল, সেই দল স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনীতি করে কী করে? এ দেশে জামায়াতের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই। কিন্তু বড় দু’দলের কেউই জামায়াত নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে আন্তরিক নয়। তারা সবসময় জামায়াতকে ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করেছে। সরকার আদালতের দোহাই না দিয়ে চাইলে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে পারে। কিন্তু তারা তা করছে না।

সরকারি হাজী মুহম্মদ মহসীন কলেজের শিক্ষার্থী আলী এরশাদ বাংলানিউজকে বলেন, জামায়াত নিষিদ্ধ হবে কি না তা নির্ভর করছে রাজনৈতিক দলগুলোর উপর। রাজনৈতিক দলগুলোর ছত্রছায়ায় জামায়াত কাজ করে যাচ্ছে। বড় দলগুলোর প্রশ্রয়ে জামায়াত টিকে থাকবে। কারণ জামায়াত তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার হাতিয়ার।

বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী ও প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অনুপম সেন বাংলানিউজকে বলেন, জামায়াতকে বিএনপিই এদেশে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বিএনপিতে অনেক মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। তারা কেন জামায়াতকে তোষণ করেন বুঝি না। বিএনপি’র উচিত জাতীয় স্বার্থে, দেশের মানুষের স্বার্থে তাদের সঙ্গ ত্যাগ করা।

তিনি বলেন, আমরা আশা করছি সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করবে। সরকার সে পথেই হাঁটছে। অধৈর্য হওয়ার কারণ নেই। যা হবে তা দেরিতে হলেও আইনসম্মতভাবে হওয়া ভালো।

ইস্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মু. সিকান্দার খান বাংলানিউজকে বলেন, বড় দু’টি দলের একমাত্র টার্গেট ক্ষমতায় যাওয়া। তাই তারা সুবিধামতো জামায়াতের সঙ্গে আঁতাত করেছে। ক্রমান্বয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার নিয়ামক হিসেবে দলটি বাংলাদেশে দাঁড়িয়ে গেছে। বড় দলগুলোর ক্ষমতায় যাওয়ার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার বন্ধ না হলে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা সম্ভব হবে না।

নির্বাচন কমিশন ২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর জামায়াতকে অস্থায়ী নিবন্ধন দেয়। এই নিবন্ধনের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন তরিকত ফেডারেশনের ত‍ৎকালীন মহাসচিব রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ ২৫ জন। নিবন্ধনকে অবৈধ ঘোষণা করে ওই রিটের ওপর হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় গত বছরের ২ নভেম্বর প্রকাশ করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৪
টিসি/সম্পাদনা: জাকারিয়া মন্ডল, আউটপুট এডিটর/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।