ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

২০২১ সালের মধ্যে নগরীতে পানির সংকট কাটবে

মাহবুব আলম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১৪
২০২১ সালের মধ্যে নগরীতে পানির সংকট কাটবে ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: ২০২১ সালের মধ্যে চট্টগ্রাম নগরীতে পানির সংকট থাকবে না বলে জানিয়েছেন পানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ।

তিনি বলেছেন,‘নগরীতে দৈনিক পানির চাহিদা ৫০ কোটি লিটার থাকলেও ওয়াসা গড়ে ২০ থেকে ২১ কোটি লিটার সরবরাহ করছে।

তবে পর্যায়ক্রমে কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্পের দুটি পর্যায়সহ সব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ২০২১ সালের মধ্যে নগরীতে পানির সংকট কেটে যাবে। ’

মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রাম ওয়াসা কার্যালয়ে বাংলানিউজকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ এসব কথা বলেন।


নগরীতে পানির সংকট নিরসনে নানা পদক্ষেপসহ চট্টগ্রাম ওয়াসার সার্বিক প্রকল্প ও অগ্রগতি নিয়ে বাংলানিউজের মুখোমুখি হন তিনি।

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও চট্টগ্রাম ওয়াসা নগরবাসীকে সুপেয় পানি সরবরাহ করছে জানিয়ে তিনি বলেন,‘তবে চাহিদার তুলনায় ওয়াসা সবার কাছে সুপেয় পানি সরবরাহ করতে পারছে না। বর্তমানে চাহিদার ৪০ শতাংশ দিলেও সবার কাছে পানি পৌঁছে দিতে ওয়াসা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ’

ওয়াসার এমডি ফজলুল্লাহ জানান, ২০১২ সালে জাইকা’র অর্থায়নে চট্টগ্রাম ওয়াসা রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পোমরা এলাকায় কর্ণফুলী পানি শোধনাগার প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। তিনটি প্যাকেজের মাধ্যমে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে। ইতোমধ্যে ৬০ ভাগ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। ২০১৪ সালে প্রকল্প কাজ সমাপ্তের কথা থাকলেও নানা জটিলতায় তা একবছর সময় বাড়ানো হয়েছে।

তিনি জানান, এক হাজার ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পের কাজ ২০১৫ সালে সমাপ্ত হলে নগরীতে দিনে ১৩ কোটি ৬০ লাখ মিলিয়ন লিটার পানি সরবরাহ করা যাবে। এতে বর্তমান চাহিদার ৩০ শতাংশ ঘাটতি পূরণ করে অর্থাৎ সব মিলিয়ে চাহিদার ৭০ শতাংশ পানি দেওয়া সম্ভব হবে। এরপর একই স্থান থেকে কর্ণফুলী প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজও হাতে নেয়া হয়েছে।

এছাড়া মোহরা কালুরঘাট পানি শোধনাগার পুর্নবাসন প্রকল্পসহ সবগুলো প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে নগরীতে পানির সংকট থাকবে না বলেও জানান প্রকৌশলী ফয়জুলুল্লাহ।

তিনি বলেন,‘এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে নগরীতে সপ্তাহে সাতদিনই দৈনিক ১২ থেকে ১৩ ঘণ্টা করে সবাই পানি পাবেন। যা বর্তমার্নে নগরবাসী রেশনিং পদ্ধতিতে সপ্তাহে দুই থেকে তিনদিন পাচ্ছেন। ’

কর্ণফুলী প্রকল্পের দীর্ঘসূত্রিতা নিয়ে একেএম ফয়জুলুল্লাহ বলেন,‘প্রকল্পটি ২০০৬ সালে হাতে নেয়া হলেও ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে নানা জটিলতা সৃষ্টি হয়। এরপর আবার ফান্ড নিয়ে বিভিন্ন সমস্যা হয়। তবে এসব কাটিয়ে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কাজ এই মুহূর্তে ৬০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। ’

তিনি বলেন,‘প্রকল্পের পাইপ লাইনের কাজ শেষ পর্যায়ে। এরপর ট্রিটমেন্ট প্লান্ট করে পানি সরবরাহ করা যাবে। ’

এদিকে পাইপ লাইনের সংস্কার ও নতুন পাইপ লাইন স্থাপন নিয়ে ওয়াসার এমডি বলেন,‘পাইপ লাইন স্থাপন করায় নগরবাসীর সাময়িকভাবে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। ’

ওয়াসার অন্যান্য প্রকল্পের বিষয়ে তিনি জানান, জরুরি পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীর ২০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে পাইপ ও ২০টি গভীর নলকূপ স্থাপনের কাজ শেষ পর্যায়ে। এছাড়া পানি প্রকল্প নামে একটি কারিগরী সহায়তা প্রকল্পও চালু রয়েছে।

অন্যদিকে ভাসমান জলাধার থেকে শোধন করে মোহরা ও কালুরঘাট পানি শোধনাগার পূনর্বাসন প্রকল্পের মাধ্যমে নগরবাসীকে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।

চট্টগ্রাম ওয়াসা বর্তমানে ভূ-গর্ভস্থ ও ভূ-উপরিস্থ উৎস থেকে পানি সরবরাহ করছে জানিয়ে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী ফজলুল্লাহ বলেন,‘বর্তমানে ৫৭ ভাগ গভীর নলকূপ ও ৪৩ ভাগ ভাসমান জলাধার থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে। তবে দিনে দিনে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। এতে নির্ভরশীলতা বাড়ছে ভূ-উপরিস্থ পানির দিকে। ’

তিনি বলেন,‘কর্ণফুলী প্রকল্পের দুই পর্যায়ের পানির উৎস হচ্ছে হালদা ও কর্ণফুলী নদী। অর্থাৎ ২০২১ সাল থেকে চট্টগ্রাম ওয়াসা শুধু ভাসমান জলাধারের পানি ব্যবহার করবে। এছাড়া মোহরা পানি শোধনাগারও কর্ণফুলী থেকে পানি সরবরাহ করছে। ’

ওয়াসার চোরাই লাইনের বিষয়ে তিনি বলেন,‘প্রয়োজনের তুলনায় কম হওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয়রা চোরাইভাবে ওয়াসার পানির লাইনের সংযোগ নিয়েছে। ’

এতে ওয়াসার অসাধু লোকজনের জড়িত আছে কিনা তা খতিয়ে দেখাসহ  বিষয়টি তাদের মনিটরিংয়ের মধ্যে রয়েছে বলে তিনি জানান।

পানির অপচয় অনেক কমে গেছে উল্লেখ করে প্রকৌশলী ফজলুল্লাহ বলেন,‘পানির সংযোগ লাইনগুলো অনেক পুরোনো হওয়ায় তা বিভিন্ন জায়গায় নষ্ট হয়ে গেছে। তবে এগুলো ইতোমধ্যে এসব পাইপ লাইন সংস্কার করা হয়েছে। ’

চট্টগ্রাম ওয়াসাকে একটি জনকল্যাণ ও জনবান্ধব প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করতে বর্তমান প্রশাসন বদ্ধ পরিকর বলে জানালেন এমডি ফজলুল্লাহ।

তিনি বলেন,‘বর্তমানে ওয়াসার প্রতিটি প্রকল্পেই লেটেষ্ট ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হয়েছে। একই সঙ্গে গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করতে ওয়াসা কাজ করে যাচ্ছে। ’

‘সার্বিক প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রাম ওয়াসা সর্বোচ্চ বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ সম্ভব হবে’—যোগ করেন এমডি প্রকৌশলী ফজলুল্লাহ।
 
একই সঙ্গে নগরীতে পরীক্ষামূলকভাবে পয়:নিষ্কাশন ও স্টোর্ম ওয়াটার ড্রেনেজ ব্যবস্থা চালু করতেও ওয়াসার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানালেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad