ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

কেইপিজেডে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে, নিহত ১, আহত ২০

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৯, ২০১৪
কেইপিজেডে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে, নিহত ১, আহত ২০ ছবি:বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানার পশ্চিম পটিয়া এলাকায় কোরিয়ান ইপিজেডে (কেইপিজেড) একটি বিদেশি জুতা তৈরির কারখানায় পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের দফায় দফায় সংঘর্ষ এবং ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এতে এক নারী শ্রমিক নিহত ও পুলিশসহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন।



বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে কেইপিজেডের কর্ণফুলী স্পোর্টস ওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিজ (কেএসআই) নামে ইয়ং ওয়ান গ্রুপের একটি কারখানায় এ সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।


নিহত নারী শ্রমিকের নাম পারভিন আক্তার (১৮)। তার বাড়ি আনোয়ারা উপজেলার বটতলী ইউনিয়নের গুন্দুকপাড়া গ্রামের মাহমুদ শরীফের মেয়ে বলে জানা গেছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়িতে দায়িত্বরত নায়েক আবুল বাশার বাংলানিউজকে বলেন, গুরুতর আহত অবস্থায় পারভিনকে হাসপাতালে আনার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেছেন।

হাসপাতালে তিন পুলিশ সদস্যসহ আরও কমপক্ষে ১৬ জন চিকিৎসাধীন আছেন বলে জানান নায়েক বাশার।

চট্টগ্রামের শিল্প পুলিশের গোয়েন্দা শাখার পরিদর্শক আরিফুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, ইয়ং ওয়ানের কেএসএল নামের কারখানাটিতে বৃহস্পতিবার নতুন স্কেলে শ্রমিকদের বেতন দেয়া হচ্ছিল। মধ্যাহ্ন বিরতির সময় দুপুর ১টার দিকে ২০-২৫ জন শ্রমিক কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করেন, তাদের বেতন ঠিকভাবে দেয়া হলেও যাতায়াত ভাতা কম দেয়া হয়েছে। এসময় কর্মকর্তাদের সঙ্গে শ্রমিকদের বাকবিতণ্ডা হয়। এর এক পর্যায়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ কর্ণফুলী থানা পুলিশকে খবর দেয়।

আরিফুর রহমান বলেন, ‘পুলিশ দেখে শ্রমিকরা আরও উত্তেজিত হয়ে উঠে। তারা পুলিশের দিকে ইট, পাটকেল ছুঁড়লে পুলিশ কয়েক রাউণ্ড টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। শ্রমিকরা কেইপিজেডের ভেতরে ব্যাপকভাবে ভাংচুর চালায় এবং বিভিন্ন কাঁচামালে আগুন ধরিয়ে দেয়। ’

কেএসআই’র প্রকৌশলী বিভাগের কর্মকর্তা নাছির উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, নতুন বেতন স্কেলে দিলেও অন্যান্য খাতে টাকা কমিয়ে দেয়ায় বেতন আগের চেয়ে কমে গেছে। আগে দুপুরের খাবারের বিল নিত মাসিক ৫২ টাকা, এখন করেছেন ৬৫০ টাকা। আগে চিকিৎসা ভাতা বাবদ কোন টাকা নিতনা, নতুনভাবে সেখানে দু’শ টাকা যোগ করা হয়েছে। আগে যাতায়াত ভাতা দিত ৪’শ টাকা, এখন কমিয়ে করা হয়েছে দু’শ টাকা।

তিনি বলেন, এসব বৈষম্য দেখে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। শ্রমিকরা সবাই কারখানা থেকে বেরিয়ে মাঠে চলে যায়। পুলিশ এসে টিয়ার শেল ছুঁড়লে শ্রমিকরাও ভাংচুর শুরু করে।

শিল্প পুলিশের গোয়েন্দা শাখার পরিদর্শক আরিফুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, উত্তেজিত শ্রমিকরা কারখানার ভেতরে ল্যাপটপ, কম্পিউটারসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম নির্বিচারে ভাংচুর করেছে। কারখানার পাশে রাখা জুতা তৈরির বিভিন্ন কাঁচামাল আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে। একটি কার্গো ভ্যানও শ্রমিকরা ভাংচুর করেছে।

এদিকে সংঘর্ষের খবর পেয়ে র‌্যাব, শিল্প পুলিশের ৮০ জন সদস্য এবং সিএমপি থেকে এপিবিএন’র কয়েকটি টিমকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়।

আরিফুর রহমান বলেন, বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে শ্রমিকরা আস্তে আস্তে কারখানা থেকে বেরিয়ে যাওয়া শুরু করে। ৪টার দিকে ভেতরে আর কোন শ্রমিক ছিলনা।

নিহত পারভিনের খালাত ভাই সরওয়ার বাংলানিউজকে জানান, পারভিনের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে গ্রামের বাড়িতে নেয়া হবে। দু’ভাই, দু’বোনের মধ্যে পারভিন সবার ছোট বলে তিনি জানান।

কেইপিজেডে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষ, নিহত ১


বাংলাদেশ সময়: ১৬৫০ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯,২০১৩
সম্পাদনা: তপন চক্রবর্তী, ব্যুরো এডিটর।  

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।