ঢাকা, বুধবার, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০৪ জুন ২০২৫, ০৭ জিলহজ ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

আবদুল্লাহ আল নোমান চিরকাল স্মরণীয় থাকবেন: মেয়র শাহাদাত

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২:১৩, জুন ২, ২০২৫
আবদুল্লাহ আল নোমান চিরকাল স্মরণীয় থাকবেন: মেয়র শাহাদাত ...

চট্টগ্রাম: বিএনপি নেতা আবদুল্লাহ আল নোমানের স্মৃতিচারণ করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, নোমান ভাইয়ের কাছ থেকে শেখা অনেক রাজনৈতিক কৌশল ও আদর্শ আজ আমার মেয়র জীবনে বাস্তব প্রয়োগে আসছে। ওনার কাছ থেকেই আমি শিখেছি কিভাবে ধৈর্যের সঙ্গে নেতৃত্ব দিতে হয়।

তিনি আমাকে পছন্দ করতেন, ভালোবাসতেন। আমি মেয়র হয়েছি, তার কাছ থেকে শেখা অনেক কৌশল, নরম নেতৃত্বের কৌশল এখন আমার কাজে লাগছে।
আবদুল্লাহ আল নোমান চিরকাল স্মরণীয় থাকবেন। লাখো মানুষের হৃদয়ে তিনি জ্বলজ্বল করে জ্বলবেন। সবার কাছে অনুরোধ, উনার জন্য দোয়া করবেন আল্লাহ যেন তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন।

সোমবার (২ জুন) বিকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের জুলাই বিপ্লব স্মৃতি হলে চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির উদ্যোগে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী মরহুম আবদুল্লাহ আল নোমানের স্মৃতিচারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

পিপলস ভিউ’র সম্পাদক ওসমান গণি মনসুরের সভাপতিত্বে ও চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সদস্য শাহনেওয়াজ রিটনের পরিচালনায় সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন দৈনিক আজাদী সম্পাদক এমএ মালেক, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা সাঈদ আল নোমান।

ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন,  ১৯৮৭ সালে নোমান ভাইয়ের সঙ্গে আমার প্রথম দেখা। আমি তখন মেডিকেলের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। কিছু নবীন শিক্ষার্থী ছাত্রদল প্রতিষ্ঠা করতে চাইছিল, কিন্তু বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হচ্ছিল। ওরা আমার বাসায় এসে বারবার অনুরোধ করতো, দায়িত্ব নিতে। আপনাকে নোমান ভাইয়ের সঙ্গে একটু দেখা করতে হবে। তখন আমি বললাম— আমি তো উনাকে চিনি না ভালো করে। ওনার কাছে কীভাবে যাব? তখন তারা আমাকে বললো, চলেন একটা বাসা আছে, সেখানে আমরা কথা বলবো। গোলাম আকবর খন্দকার ভাইয়ের বাসায় গেলাম। সেখানে নোমান ভাই, গোলাম আকবার ভাই এবং আমরা ছেলেরা কয়েকজন ছিলাম। আর সেখান থেকেই শুরু হয় আমার ছাত্রদল নেতৃত্বের পথচলা।

চসিক মেয়র বলেন, মূলত ওইদিন থেকে নোমান ভাইয়ের সঙ্গে যেই সম্পর্কটা হয়ে গেছে, এ সম্পর্কটা প্রায় ৩৮ বছর। এই সম্পর্কের মধ্যে আমি কখনোই ওনাকে রাগান্বিত হতে দেখিনি। মেডিকেল কলেজে তখন খুব গণ্ডগোল হতো। এমনও হয়েছে— নোমান ভাই অনেক সময় মেডিকেল কলেজের ছাত্র রাজনীতিতে আমরা ঠিক মতো মিছিল করছি কিনা, গাছের নিচে দাঁড়িয়ে থাকতেন। সন্ধ্যায় যখন পার্টি অফিসে যেতাম, তখন তিনি আমাকে বলতেন তোমাদের তো আজকে ১২ জনের মিছিল হয়েছে। আমি বললাম, আপনি কেমনে দেখেছেন, তখন তিনি বললেন আমি দেখেছি ওই গাছের নিচে আমি ছিলাম। তবে ওনাকে কখনো রাগতে দেখিনি। পরে তিনি আমাকে সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সারগাম’রও আহ্বায়ক করে দেন।  

নোমান অসাধারণ নার্সিং সক্ষমতা সম্পন্ন নেতা ছিলেন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, একটি প্রতিষ্ঠানে একটা দলকে স্টাবলিশড করার জন্য তিনি (নোমান) নার্সিং করতেন। ওনি যেভাবে ছাত্রদলকে গড়ে তুলেছেন, নার্সিং করেছেন—তাতে ৯০ সালে এসে আমি দেখেছি, ক্ষমতায় আসার এক বছর আগে আমরা সংসদে ৪-৫টি আসন পেয়েছিলাম।

মেয়র শাহাদাত বলেন, যখন কোনো গণ্ডগোল হতো, উনি বলতেন, বসো, ধৈর্য ধরো। এ রকম করতে করতে ওনি রাগ যে থাকে মানুষের সেটা আস্তে আস্তে ঠাণ্ডা করে দেয়। সত্যিকারের রাজনীতিবিদ যারা তারা কিন্তু এ ধরনের আদর্শ রেখে গেছেন। এ জায়গায় আব্দুল্লাহ আল নোমান জ্বলজ্বল করে জ্বলবেন স্মৃতির পাতায়, লাখো কোটি মানুষের হৃদয়ে।

দৈনিক আজাদী সম্পাদক এমএ মালেক বলেন, আবদুল্লাহ আল নোমান একজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ ছিলেন। এছাড়া তিনি ছিলেন বহু গুণে গুণান্বিত। সব দলের মানুষের কাছে ছিলেন গ্রহণযোগ্য। বিভিন্ন সময়ে আমরা কোনো কোনো রাজনীতিবিদকে চট্টগ্রামের অভিভাবক হিসেবে ভাবতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি। আবদুল্লাহ আল নোমান তেমন বড় মাপের নেতা, যিনি সবার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার আসনে আসীন ছিলেন। তিনি শুধু রাজনৈতিক নেতা ছিলেন না সামাজিক নেতাও ছিলেন। এসব কারণে আবদুল্লাহ আল নোমান তাঁর সময়ে চট্টগ্রামের অভিভাবক স্থানীয় নেতা হয়ে উঠেছিলেন। তার তুলনা তিনি নিজেই। তিনি যেমন ভীরস্থির, শান্তশিষ্ট, প্রজ্ঞাবান, যুক্তিবাদী ও দরদর্শী নেতা ছিলেন, তেমনি ছিলেন অসম্মান দক্ষ সংগঠক। সর্বদা হাস্যোজ্জল, ব্যক্তিত্বে অমায়িক, কথাবার্তায় বিনয়ী, চলাফেরায় নম্র ও শান্ত মেজাজের অধিকারী আবদুল্লাহ আল নোমান ছিলেন একজন সফল রাজনীতিবিদ ও আলোকিত মানুষ। সুস্থ রাজনীতির অনুসরণ, অনুকরণ ও মনেপ্রাণে অন্তঃকরণের পর ছাত্রজীবন থেকেই প্রাতিষ্ঠানিক রাজনীতির চর্চায় মনোনিবেশ করেছিলেন তিনি।

তিনি বলেন, স্বাভাবিকভাবেই রাজধানীকেন্দ্রিক সব আন্দোলন সংগ্রামে তাঁকে সামনের সারিতে দেখেছি। তাঁর কণ্ঠস্বর ছিল খুবই জোরালো। কথা বলতেন যুক্তি ও তথ্য দিয়ে। তোয়াক্কা করতেন না কোনো শক্তির। শুধু রাজপথেই নয়, ঘরোয়া প্রোগ্রাম কিংবা সভা-সেমিনারেও তাঁকে দেখেছি সারগর্ত আলোচনা করতে। আবদুল্লাহ-আল-নোমান শৈশব থেকে সমাজ সচেতন, সংস্কৃতিমনস্ক ও রাজনীতির প্রতি অনুরক্ত ছিলেন। দীর্ঘ ৫০ বছরের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে বিভিন্ন সাংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত থেকে অসংখ্য আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দেন। তাঁর পিতা আহমদ কবীর চৌধুরী ও পিতামহ আবদুল লতিফ মাস্টার দু’জনই বিশিষ্ট শিক্ষাব্রতী ও সমাজহিতৈষী ছিলেন। তাঁর পিতা রাউজান স্কুল, বড় ভাই আবদুল্লাহ আল হারুন রাউজান কলেজ প্রতিষ্ঠায় বড় ভূমিকা পালন করেন। তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে আবদুল্লাহ আল নোমানও একটি কলেজ এবং ইস্ট ডেল্টা ইউনিভারসিটি নামে একটি ইউনিভারসিটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রচলিত রাজনীতির বাইরে তিনি ছিলেন আধুনিক ও অগ্রসর চিন্তার মানুষ। তাঁর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে অতিকথন ও ক্ষমতার দম্ভ তাঁকে স্পর্শ করেনি। রূপমণ্ডুকতার ঊর্ধ্বে উঠে তিনি উদার গণতান্ত্রিক রাজনীতিবিদের মতোই নীরবে-নিভৃতে পথ হেঁটেছেন। তিনি মনে করতেন, জনগণই রাজনৈতিক দলের গণভিত্তি। সততা ও সহিষ্ণুতা রাজনৈতিক নেতাদের আদর্শ হওয়া বাঞ্ছনীয় বলেও তিনি বিশ্বাস করতেন। আমি তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করছি।

সাইদ আল নোমান বলেন, আমার বাবা আবদুল্লাহ আল নোমান পাহাড়সম সমস্যাকে সমুদ্রের তরঙ্গের মতো, যোগ বিয়োগের মতো করে যেন সমাধান করে ফেলতেন। সমস্যা আসলে তিনি ভেঙে পড়তেন না, এগিয়ে যেতেন। তিনি আমাদের মিতব্যয়ী হওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন। এই শিক্ষাটাই আমাদের জীবনে পথনির্দেশকের মতো কাজ করেছে। জননন্দিত হয়ে মৃত্যু পায় এমন মানুষ আমাদের সমাজে কম আছে। আমি গর্বিত যে, এমন একজন জননন্দিত মানুষের সন্তান আমি। তিনি তার বাবার আত্মার মাগফেরাত কামনায় সবার দোয়া কামনা করেন।  

বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নীতিশ দেবনাথ, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক নছরুল কদির, বিএসএফএফের চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহমুদুল হক, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সদস্যসচিব ও দৈনিক আমার দেশের আবাসিক সম্পাদক জাহিদুল করিম কচি, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ চট্টগ্রামের সদস্যসচিব ডা. খুরশীদ জামিল চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, চবি শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. ছিদ্দিক আহমেদ চৌধুরী, ইস্ট ডেলটা ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজিম উদ্দীন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কেএম ফেরদৌস, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য সাথী উদয় কুসুম বড়ুয়া, দৈনিক কালের কণ্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি মুস্তফা নঈম, কবি ও নাট্যকার অভীক ওসমান। কোরান তেলোয়াত করেন সহকারী অধ্যাপক ওসমান গনি।  

এআর/পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।