ঢাকা, রবিবার, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ মে ২০২৪, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

জাতীয় গণসঙ্গীত উৎসব শুরু শুক্রবার, অংশ নেবেন ৬০০ শিল্পী

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০২৪
জাতীয় গণসঙ্গীত উৎসব শুরু শুক্রবার, অংশ নেবেন ৬০০ শিল্পী

চট্টগ্রাম: ‘সাম্প্রদায়িকতা ও শ্রেণি-বৈষম্যের বিরুদ্ধে জেগে ওঠো বাংলাদেশ’ এই স্লোগানে শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) থেকে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু হচ্ছে তিনদিনব্যাপী চতুর্থ জাতীয় গণসঙ্গীত উৎসব।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে উৎসব উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আয়োজনের সব বিষয় তুলে ধরা হয়।

 

সংবাদ সম্মেলনে চতুর্থ জাতীয় গণসঙ্গীত উৎসব উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক এবং সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি লেখক ও গবেষক গোলাম কুদ্দুছ বলেন, জাতীয় গণসঙ্গীত উৎসব আগের তিনবার ঢাকায় আয়োজন করা হয়েছে। সমস্ত কিছু ঢাকায় না করে দেশের অন্যান্য স্থানে করলে সব মানুষের কাছে পৌঁছানো যাবে।

ঢাকার বাইরে এই প্রথম জাতীয় গণসঙ্গীত উৎসব আয়োজন করা হচ্ছে। এজন্য আমরা চট্টগ্রামকে বেছে নিয়েছি। উদ্বোধনী পর্বে জাতীয় সঙ্গীত ও উদ্বোধনী গণসঙ্গীত পরিবেশন করবেন ১৩৫ জন শিল্পী। যতদিন শ্রেণি বৈষম্য থাকবে, সকল মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে না ততদিন গণসঙ্গীতের প্রয়োজনীয়তা থাকবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি। কথা ছিল স্বাধীন দেশে সকল শ্রেণি-পেশার, জাতি ও ধর্মের মানুষ সমান অধিকার নিয়ে বাঁচবে। ধর্ম-বর্ণের কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। শ্রেণি বৈষম্য থাকবে না। সে লক্ষ্যে বাহাত্তরের সংবিধানে চার মূলনীতি গ্রহণ করা হয়। পঁচাত্তরে জাতির জনককে হত্যার পর সেই যাত্রা থেমে গিয়েছিল। তারপর বহু কঠিন পথ আমাদের পার হতে হয়েছে এবং হচ্ছে। যে রাষ্ট্রে বাংলা নববর্ষ উদযাপনে বিধি-নিষেধ মানতে হয় সেখানে বাংলা, বাঙালি, বাঙালি সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব? সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। আজ হয়ত কেউ না খেয়ে নেই। অতি দরিদ্রের সংখ্যা হয়ত কমেছে। কিন্তু শ্রেণি বৈষম্য তো বাড়ছে। বৈষম্য কমিয়ে সবার অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমাদের লড়াই করতে হবে। ৫২, ৭১ সহ অতীতে নানা দু:সময়ে সংস্কৃতি কর্মীরা রুখে দাঁড়িয়েছিল। আমাদের সংগ্রাম আজো অব্যাহত আছে। লুটেরা শ্রেণি ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে।  

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট বলেন, চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমির উন্মুক্ত চত্বরে ২৬, ২৭ ও ২৮ এপ্রিল তিনদিনব্যাপী চতুর্থ জাতীয় গণসঙ্গীত উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। উৎসবে বাংলাদেশের অগ্রগণ্য গণসঙ্গীতের দল সমূহের মধ্যে সারাদেশের ৩২টি দল ও একক বরেণ্য গণসঙ্গীত শির্পীরা অংশ নেবেন। তিন দিনের উৎসবে সারাদেশের প্রায় ৬০০ শিল্পী একত্রিত হবেন।  

২৬ এপ্রিল শুক্রবার সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমির উন্মুক্ত চত্ত্বরে উৎসবের উদ্বোধন করবেন সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. অনুপম সেন। উদ্বোধনী পর্বে বক্তব্য রাখবেন উৎসব উদযপিন পরিষদের আহ্বায়ক ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি, লেখক ও গবেষক গোলাম কুদ্দুছ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক আবৃত্তিশিল্পী আহকাম উল্লাহ, সংস্কৃতিজন ও উৎসব উদযাপন পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. একিউএম সিরাজুল ইসলাম, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও উৎসবের প্রধান সমন্বয়কারী মানজার চৌধুরী সুইট, উৎসবের যুগ্ম সমন্বয়কারী মিল্পী শ্রেয়সী রায় ও চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার মোসলেম উদ্দিন শিকদার। সভাপতিত্ব করবেন সংগঠনের সভাপতি শিল্পী কাজী মিজানুর রহমান।

২৭ এপ্রিল সকাল ১০টায় শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে সেমিনারে মূল বিষয় ‘শিল্পীর নাগরিক দায়, জীবন ও সংগ্রাম’ শীর্ষক বক্তব্য উপস্থাপন করবেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশিদ। আলোচনায় অংশ নেবেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ ও গবেষক শামসুল হক। সূচনা বক্তব্য রাখবেন গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট। সভাপতিত্ব করবেন সংগঠনের সভাপতি কাজী মিজানুর রহমান।  

শুক্রবার উৎসবের সকালের অধিবেশনে লালন সাঁইজীর গান পরিবেশন করবে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী চট্টগ্রাম, কাজী নজরুল ইসলামের সাম্যের গান পরিবেশন করবে নজরুল সঙ্গীত শিল্পী সংস্থা চট্টগ্রাম। এরপর একক সঙ্গীত পরিবেশন করবেন ঢাকার শিল্পী আবিদা রহমান সেতু।  

শুক্রবার বিকেলে দলীয় সঙ্গীতে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী গান পরিবেশন করবে খুলনার বাংলাদেশ গণশিল্পী সংস্থা, আব্দুল লতিফের গান পরিবেশন করবে দিনাজপুরের দল ভৈরবী, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়-রজনীকান্ত সেন ও অতুলপ্রসাদের দেশের গান পরিবেশন করবে রাজশাহীর দল জয়বাংলা, বর্ণবাদ বিরোধী গান পরিবেশন করবে বরগুনার দল মাটিয়াল, সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী গান পরিবেশন করবে নোয়াখালীর দল বিশ্বভূবন, ফকির আলমগীরের গান পরিবেশন করবে ঢাকার দল ঋষিজ শিল্পী গোষ্ঠী, ভূপেন হাজারিকার গান পরিবেশন করবে ঢাকার দল উঠোন, শ্রেণি-সংগ্রাম ও সমসাময়িক বিষয়ের গান পরিবেশন করবে চট্টগ্রামের দল সৃজামি সাংস্কৃতিক অঙ্গন এবং অজিত রায়ের গান পরিবেশন করবে চট্টগ্রামের অভ্যুদয় সংগীত অঙ্গন।  

শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটায় একক সঙ্গীত পরিবেশন করবে রংপুরের শিল্পী রূপু মজুমদার, ঠাকুরগাঁও এর জ্যোতিষ চন্দ্র বর্মন, ঢাকার ফকির সিরাজ, কাজী মিজানুর রহমান, আরি রহমান ও প্রলয় সাহা এবং চট্টগ্রামের ফারহানা রহমান কান্তা। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করবে চট্টগ্রামের ওরিয়েন্টাল স্কুল অব ডান্স।  

২৭ এপ্রিল বিকেল সাড়ে চারটায় দলীয় সঙ্গীত পর্বে হেমাঙ্গ বিশ্বাসের গান পরিবেশন করবে যশোরের দল পুনশ্চ, শাহ আব্দুল করিমের গান পরিবেশন করবে সিলেটের অন্বেষা শিল্পীগোষ্ঠী, কৃষক আন্দোলনের গান পরিবেশন করবে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ঢাকা, শেখ লুৎফর রহমানের গান পরিবেশন করবে ঢাকার সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী, সলিল চৌধুরীর গান পরিবেশন করবে ঢাকার বহ্নিশিখা, চাকমা ভাষার গণসঙ্গীত পরিবেশন করবে রাঙ্গামাটির গিরিসুর শিল্পীগোষ্ঠী, ভাষা আন্দোলনের গান পরিবেশন করবে চট্টগ্রামের ছন্দানন্দ সাংস্কৃতিক পরিষদ, আখতার হুসেন ও সেলিম রেজার গান পরিবেশন করবে খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরীর শিল্পীরা।  

একক সঙ্গীত পরিবেশন করবেন সাতক্ষীরার শির্পী রোজ বাবু, পাবনার প্রলয় চাকী, সিলেটের গৌতম চক্রবর্তী, ঢাকার ফকির শাহাবুদ্দীন, সুরাইয়া পারভীন ও নবনীতা জাঈদ চৌধুরী এবং চট্টগ্রামের সুজিত চক্রবর্তী। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করবে ঘুঙুর নৃত্যকলা কেন্দ্র।  

২৮ এপ্রিল রোববার বিকেলে সাড়ে চারটায় দলীয় সঙ্গীত পর্বে গারো গান পরিবেশন করবে নেত্রকোনার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কালচারাল একাডেমি, বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত গান পরিবেশন করবে চাঁদপুরের দল সপ্তসুর, মুকুন্দ দাসের গান পরিবেশন করবে মুন্সীগঞ্জের দল অন্বেষণ, মুক্তিযুদ্ধের গান পরিবেশন করবে ঢাকার দল স্বভূমি লেখক-শিল্পী কেন্দ্র, কাজী নজরুল ইসলামের সাম্যের গান পরিবেশন করবে ঢাকার দল ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দেশের গান পরিবেশন করবে চট্টগ্রামের জাতীয় রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ, চট্টগ্রাম অঞ্চলের ভাষায় গণমানুষের গান পরিবেশন করবে চট্টগ্রামের স্বরলিপি সাংস্কৃতিক ফোরাম এবং অশোক সেনগুপ্তের গান পরিবেশন করবে চট্টগ্রামের আওয়ামী শিল্পীগোষ্ঠী।  

একক সঙ্গীত পরিবেশন করবেন ময়মনসিংহের শিল্পী দিল বাহার খান, মুন্সীগঞ্জের শিশির রহমান, ঢাকার অলক দাশগুপ্ত, চট্টগ্রামের কল্পনা লালা, জয়ন্তী লালা ও শ্রেয়সী রায়। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করবে চট্টগ্রামের প্রাপন একাডেমি।  

উৎসব কমিটির আহ্বায়ক আবু ফারাহ পলাশের সঞ্চালনায় সংবাদ সস্মেলনে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ গণসঙ্গীত সমন্বয়ক পরিষদের সভাপতি শিল্পী কাজী মিজানুর রহমান ও যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. একিউএম সিরাজুল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন শিল্পী আরিফ রহমান, উৎসব উদযাপন কমিটির যুগ্ম সমন্বয়ক শিল্পী শ্রেয়সী রায়, পরিষদের সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য অলক দাশগুপ্ত ও হাবিবুল আলম।  

উপস্থিত ছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী জয়ন্তী লালা, বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান মাকসুদ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব জসিম চৌধুরী সবুজ, পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে স্বপন চৌধুরী, বশির আল হেলাল, ফয়জুল বারী, তারিক আলী মিলন, সামিন রেজা চৌধুরী, শ্যামলী চৌধুরী, ইকবাল হাফিজ, সুজিত চৌধুরী, পরিষদের চট্টগ্রামের নেতৃবৃন্দের মধ্যে অসীম বিকাশ দাশ, মোরশেদুল আলম চৌধুরী, অনির্বাণ ভট্টাচার্য প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০২৪
পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।