ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

ক্রিকেট

ধোনির ভক্ত হয়ে ক্রিকেটে আসা মেয়েটির ১৩ বছরে স্বপ্নপূরণের গল্প

মাহমুদুল হাসান বাপ্পি, সিলেট থেকে | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২, ২০২২
ধোনির ভক্ত হয়ে ক্রিকেটে আসা মেয়েটির ১৩ বছরে স্বপ্নপূরণের গল্প ছবি : শোয়েব মিথুন

তার নাম মাহিকা গৌর। বয়স? ১৬।

বিশেষত্ব? আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যখন অভিষেক হয় বয়স কেবল ১৩, খেলেছেন দ্য হান্ড্রেডের মতো টুর্নামেন্টে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের হয়ে এশিয়া কাপ খেলতে এখন তিনি সিলেটে। নিজের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পেয়েছেন তিন উইকেট। সিলেটেই বাংলানিউজের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট মাহমুদুল হাসান বাপ্পির সঙ্গে কথা হয়েছে মাহিকার।

চার ঘণ্টা অপেক্ষা করানোর পর কীভাবে আইপিএলের ম্যাচ দেখে প্রেমে মজেছিলেন ক্রিকেটের, লন্ডন ঘুরে দুবাইয়ে এসে কেমন করে ১৩ বছর বয়সে পূরণ হয়ে গেল স্বপ্ন। হ্যাটট্রিকের পরও তার সতীর্থরা কেন রেগে গিয়েছিল, ধোনির প্রেমে পড়া, মোস্তাফিজুর রহমানের অফ কাটারে নিজের মুগ্ধতার গল্প সিলেট ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বসে শুনিয়েছেন মাহিকা।

বাংলানিউজ : একদম প্রথম থেকে যদি বলতেন... ক্রিকেটের শুরুটা কীভাবে হলো?

মাহিকা : আমার বয়স ছয় অথবা সাত হবে ওই সময়। তখন আমরা ভারতে থাকতাম, একটা আইপিএল ম্যাচ দেখতে গেলাম সবাই মিলে। যতটুকু মনে পড়ে, ম্যাচটা ছিল রাজস্থানের সঙ্গে দিল্লির। আপনি তো জানেনই, ভারতে ক্রিকেট কত বড় ব্যাপার।  এরপর থেকেই আমি খেলাটার প্রেমে পড়ে গেলাম। সারাদিন টিভিতে খেলা দেখতাম। সবসময় চেন্নাই সুপার কিংসকে সমর্থন দিতাম ধোনির জন্য। এরপর বাবার সঙ্গে বাগানে ক্রিকেট খেলা শুরু করলাম হঠাৎ। কিছুদিন পরই আমরা লন্ডনে চলে গেলাম। সেখান থেকে চলে এলাম দুবাইয়ে, একাডেমিতে ভর্তি হলাম, ক্রিকেট এভাবেই এগোলো।

বাংলানিউজ : ধোনিকে আলাদা করে ভালো লাগার কারণ আছে?

মাহিকা : আমার একদম ছোটবেলা থেকেই উনাকে কেন যেন খুব ভালো লাগতো। তখনও তো এত বুঝতাম না। তবে পরে দেখেছি, খুবই ঠাণ্ডা থাকতে পারেন মাঠে। বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগান, ক্রিকেটকে দেখেন একেবারে আলাদাভাবে।

বাংলানিউজ : লন্ডন, এরপর আবার দুবাই গেলেন কেন?

মাহিকা : আমার বাবার চাকরির জন্য।

বাংলানিউজ : উনার সমর্থন কেমন পেয়েছেন? 

মাহিকা : খুব ভালো সমর্থন দিয়েছে। উনি কলেজে ক্রিকেট খেলতেন। উনারও স্বপ্ন ছিল ক্রিকেট খেলবেন, কিন্তু পারেননি। উনি আমার মধ্যে নিজের স্বপ্নকে দেখেন, সবসময় সাহায্য করেছেন। আমিও উনার কথা মনে করি সবসময়।  

বাংলানিউজ : একাডেমিতে তো ভর্তি হলেন। কিন্তু ঠিক কখন মনে হলো যে পেশাদার ক্রিকেটার হবেন?

মাহিকা : আমি আসলে কখনও ভাবিনি। হতে চেয়েছি, কিন্তু এত তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে স্বপ্নেও ভাবিনি। যখন জাতীয় দলে এলাম তখন বয়স মাত্র ১৩, আমার মনে হয়নি এত তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে। পেশাদার ক্রিকেটার একদিন হতে চেয়েছি, এ নিয়ে স্বপ্নও দেখেছি কিন্তু এত তাড়াতাড়ি হয়ে গেছে... আমি খুব খুশি।

বাংলানিউজ : ১৩ বছর বয়সেই জাতীয় দলে?

মাহিকা : হ্যাঁ, তখন ১৩ ছিল। এখন কিন্তু ১৬... (হাসি)

বাংলানিউজ : ওই বয়সে সুযোগ পাওয়ার খবর পেয়ে কেমন লেগেছে? 

মাহিকা : যখন মেসেজ পেলাম যে আমাকে নেওয়া হয়েছে। ওই আনন্দ বলে বোঝাতে পারবো না আসলে। আমার বোনের জন্মদিন ছিল ওই দিন। আমার পরিবারের সবার খুশির মাত্রা আরও বেড়ে গিয়েছিল। তারা ভেবেছে, পালন করার মতো দুটো উপলক্ষ পাওয়া গেল! কারণ আরব আমিরাতের হয়ে খেলতে অনেকদিন ধরে কঠোর পরিশ্রম করে গেছি। যদিও কখনো ভাবিনি এত দ্রুত পেয়ে যাবো। কিন্তু খুব রোমাঞ্চিত ছিলাম। স্রষ্ঠার প্রতি কৃতজ্ঞতা এটার জন্য।

বাংলানিউজ : কল্পনার মধ্যেও ছিল না এই সুযোগ পাওয়া? 

মাহিকা : আমার মনে আছে প্রথম ট্রেনিং সেশনের কথা। আইসিসিতে আমি ইউএই অধিনায়ককে বল করেছিলাম। তখন থেকেই চিন্তা করেছি এই জার্সি একদিন গায়ে পরতে হবে, আমাকেও দেশের হয়ে খেলতে হবে।  

বাংলানিউজ : আরব আমিরাতে তো ছেলেদের পেশাদার ক্রিকেটও ওইভাবে প্রতিষ্ঠিত না। মেয়েদের জন্য ক্রিকেট খেলা কি একটু বেশিই কঠিন না?

মাহিকা : আমার মনে হয় না কঠিন। খুব ভালো ফ্যাসেলিটি আছে ওখানে। আইসিসি একাডেমি, মাঠ; খুব সুন্দর ওটা, নেটও। হ্যাঁ শুরুর দিকে একটু কঠিন। কিন্তু আপনাকে সঠিক ক্লাব আর কোচ খুঁজে বের করতে হবে সাফল্যের জন্য।  

বাংলানিউজ : ভারতে আপনার জন্ম, খেলছেন আরব আমিরাতের হয়ে। দুই দেশের পার্থক্য কত বড়?

মাহিকা : ভারতের ব্যাপারে তো বলতে পারবো না, কারণ আমি ভারতে খেলিনি সেভাবে। শুধু এটা বলতে পারি, দুবাই খুব ছোট শহর তবে অনেক ধরনের সুযোগ-সুবিধাই আছে।

বাংলানিউজ : অল্পদিনের ক্যারিয়ারে তো অর্জনও কম না। নেপালের বিপক্ষে ২ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন। একই টুর্নামেন্টে মালেশিয়ার বিপক্ষে হ্যাটট্রিকও ছিল...

মাহিকা : কীভাবে বলি...খুব খুব ভালো একটা স্মৃতি এটা। আমার কেবল মনে আছে, হ্যাটট্রিকটা হওয়ার পর দৌড় শুরু করেছিলাম। পেছনে পেছনে দলের সবাই। একসময় তারা সবাই আমার ওপর রেগে গেল, কারণ আমার জন্য তাদেরও দৌড়াতে হচ্ছিল। আমার তখন মনে হয়েছে, কঠোর পরিশ্রম কাজে এসেছে। খুব খুশি ছিলাম। এক লাফে আত্মবিশ্বাস এক সমুদ্র বেড়ে গিয়েছিল। আমার জীবনের সেরা দিনগুলোর একটি, কোনো সন্দেহ ছাড়াই।

বাংলানিউজ : দ্য হান্ড্রেডে খেলার অভিজ্ঞতা কেমন? এত এত তারকা...

মাহিকা : আমার জন্য অনেক সুন্দর অভিজ্ঞতা। ক্যাট ক্রস, ডিয়ান্ড্রা ডটিন...এত এত তারকার সঙ্গে ড্রেসিং রুম শেয়ার করা। আমাকে অনেক কিছু শিখতেই হতো। আমি কেবল তাদের প্রশ্ন করছিলাম। জানতে চাইছিলাম খেলাকে তারা কীভাবে দেখে, নিজেদের এগিয়ে নেয়, সফল হয়। আমি অবশ্যই বিশ্বাস করি অনেক কিছু শিখেছি। যদিও কোনো ম্যাচ খেলিনি, তবুও।  

বাংলানিউজ : ক্রিকেটার হিসেবে সবচেয়ে বড় স্বপ্ন?

মাহিকা : এখন আমি জানি না। আপাতত শুধু বল করে যেতে চাই, যত জোরে সম্ভব; ততটা। আর খেলাটাকে উপভোগ করতে থাকা।  

বাংলানিউজ : কোনো বাংলাদেশি ক্রিকেটারকে পছন্দ করেন?

মাহিকা : হ্যাঁ অবশ্যই; জাহানারা আপু আছেন, অনেকদিন ধরেই উনাকে অনুসরণ করি...আরেকজন বাঁহাতি পেসার আছেন, মোস্তাফিজুর রহমান। আইপিএলের একটা মৌসুমে উনি দুর্দান্ত খেলেছেন, উনার অফ কাটার খুব পছন্দ। সাকিব আল হাসান আছেন...

বাংলানিউজ : সাকিবকে কেমন লাগে?

মাহিকা : উনি বাংলাদেশের মেইন ক্রিকেটার। বাংলাদেশ ক্রিকেটকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরেন। আমি উনার অনেক ভক্তের একজন।

বাংলাদেশ সময় : ১৭৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০২, ২০২২
এমএইচবি/এআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।