ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

উপকূল থেকে উপকূল

উপকূল থেকে উপকূল

পেটে ভাত নাই ঈদ কিসের

সুমন সিকদার, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৮ ঘণ্টা, জুলাই ৭, ২০১৬
পেটে ভাত নাই ঈদ কিসের ছবি:বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বরগুনা: ঘরে চাউল নাই, রান্দার (রান্নার) চুলা নাই, কি খামু হেইয়াই কইতে পারি না হেরপর আবার ঈদ। পেটে ভাত নাই ঈদ কিসের?।

  ঈদ বড়লোকগো লইগ্গা অ মোগো না। যেরা দালান কোডায় থাকবে ঈদ হেগো।

বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার জিনতলা গ্রামের বানভাসী কোহিনুর বেগমের কাছে ঈদ উদযাপনের কথা জানতে চাইলে এভাবেই অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন তিনি।

শুধু কোহিনুর বেগমই নন। ঈদের আনন্দ নেই বরগুনাসহ উপকূলীয় অঞ্চলের বানভাসী মানুষের। টানা বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উপকূলীয় অঞ্চলের দরিদ্র মানুষের জীবনযাত্রা। জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে বাড়ি-ঘর, কৃষি জমি ও মাছের ঘের। পানিবন্দি রয়েছে অন্তত ৪০টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ। নষ্ট হয়ে গেছে জীবনধারণের উপকরণসমূহ। বন্ধ হয়ে গেছে এ উপকূলের মানুষের রান্না-খাওয়া।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় বরগুনায় ১৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

এছাড়াও বরগুনার তিনটি প্রধান নদ-নদীর (বিষখালী-পায়রা-বলেশ্বর) পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ সব এলাকায় দরিদ্র মানুষের মধ্যে ঈদের আনন্দ দেখা দিয়েছে হতাশা হয়ে।

পাউবো সূত্র জানায়, সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে বরগুনার ১৮টি স্থানে ৯৬০ মিটার বাঁধ সম্পূর্ণভাবে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২৮ কিলোমিটার বাঁধ। ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে প্রতিনিয়ত ঢুকছে জোয়ারের পানি। ভাসছে গ্রামের পর গ্রাম।

বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া গ্রামের বাসিন্দা জয়নাল বলেন, জোয়ারে ঘরের মধ্যে হাঁটু সমান পানি উঠে সবকিছু নষ্ট হয়ে গেছে। ঈদ করমু ক্যামনে ঘর থেকে তো বের হইতেই পারি না। এ বছর টানা বর্ষণে সবার ঈদ আনন্দ মাটি হয়ে গেছে। দুই/তিনদিনের মধ্যে পানি কমবে বলে তো মনে হয় না।
 
তালতলী উপজেলার তেঁতুলবাড়িয়া এলাকার আবদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, রোয়ানুতে বিলীন হওয়া তেঁতুলবাড়িয়া এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটির ৬০ থেকে ৭০ ফুট এলাকা দিয়ে দুই দিন ধরে জোয়ারের পানি ঢুকে তেঁতুলবাড়িয়া, নিশানবাড়িয়া, জয়ালভাঙাসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়ে পড়েছে। প্লাবিত এলাকায় নেই ঈদের আনন্দ।

একই এলাকার মো. পনু বাংলানিউজকে বলেন, প্রত্যেক বছর ভাঙতে ভাঙতে মোরা শেষ আর কতো ভাঙবো? এর চাইতে মোগো এক চোডে গজব দিয়া মাইরা হালাইলেও ভালো হয়। সব ঝামেলা একসাথে শেষ।

পাথরঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যান আব্বাস হোসেন মন্টু বাংলানিউজকে বলেন, বরগুনাসহ উপকূলীয় অঞ্চলে ভাঙন প্রতিরোধ না করতে পারায় প্রতিনিয়ত ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে প্লাবিত হচ্ছে নিম্মাঞ্চল।

তবে ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষের সহায়তার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন বরগুনার জেলা প্রশাসক ড. মহা. বশিরুল আলম।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলেছি। ইতোমধ্যেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। শিগগিরই ভাঙন কবলিত বাঁধগুলো মেরামত করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, জুলাই ০৭, ২০১৬
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।