ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

উপকূল থেকে উপকূল

গ্রামের স্কুলে তথ্যপ্রযুক্তি, কতদূর?

রফিকুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৭, ২০১৪
গ্রামের স্কুলে তথ্যপ্রযুক্তি, কতদূর? ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

লালুয়া, কলাপাড়া, পটুয়াখালী ঘুরে এসে: গ্রামের স্কুলে এখনও পৌঁছেনি বিদ্যুতের আলো। নেই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগে শিক্ষক।

আসেনি কম্পিউটার। কোথাও চলছে জোড়াতালির ক্লাস।

সময়ের সবচেয়ে দরকারি ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি’র ক্লাসের এই হাল গ্রামের স্কুলে। ফলে বহু শিক্ষার্থী তথ্যপ্রযুক্তির বদলে নিচ্ছে অন্য বিষয়। আর যেসব ক্লাসে এরই মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, সেসব ক্লাসের শিক্ষার্থীরা মহা বিপাকে। এ অবস্থায় সংশ্লিষ্টরা প্রশ্ন তুলেছেন, গ্রামের স্কুলে তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা আর কতদূর?

চিত্রটা উপকূলের পটুয়াখালীর জেলার সর্বদক্ষিণে সমুদ্র তীরবর্তী কলাপাড়া উপজেলার কয়েকটি গ্রামের। প্রত্যন্ত এলাকার একাধিক স্কুল ঘুরে মেলে নানান তথ্য। কোথাও নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ঐচ্ছিক বিষয় হিসাবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বদলে কৃষিসহ অন্য বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করছে।

ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্লাস বাধ্যতামূলক থাকলেও, তাতে বইয়ের তাত্ত্বিক আলোচনার বাইরে ব্যবহারিক ক্লাসের সুযোগ নেই। ফলে অনেক কিছুই অজানা থাকছে শিক্ষার্থীদের।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কলাপাড়া উপজেলা সদর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরের লালুয়া ইউনিয়ন পরিষদের কাছে জনতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ক্লাসের কোনো ব্যবস্থাই নেই।

প্রধান কারণ কী? এমন প্রশ্নের জবাবে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, বিদ্যুত সমস্যার কারণে এখানে কম্পিউটার চালানো যাচ্ছে না। একই কারণে এই বিভাগে এখনও শিক্ষক নিয়োগ হয়নি।

বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, ২০১২ সালে বিদ্যালয়ের নিজস্ব উদ্যোগে একটি কম্পিউটার কেনা হয়েছিল। সেটি বছর খানেক চলেছে। বিদ্যুতের অভাবে এরপর বন্ধ হয়ে যায়। বিদ্যালয়ে বর্তমানে কম্পিউটার শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বিদ্যালয়ে বিদ্যুত সংযোগ পাওয়ার পর কম্পিউটার ল্যাব স্থাপিত হবে। এর আগ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা যথাযথভাবে যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তির ক্লাস নিতে পারবে না।

জনতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা উপলব্ধি করতে পারছি বিদ্যালয়টি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্লাস থেকে অনেক পিছিয়ে পড়ছে। এই বিষয় পড়তে না পারায় বিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে কৃষি নিয়েছে। বিদ্যুত সমস্যার কারণে কম্পিউটারের ব্যবহারিক ক্লাস বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিদ্যালয়ে বিদ্যুত সংযোগ দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

জনতা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ফোরকান প্যাদা বলেন, কম্পিউটার না থাকায় বিদ্যালয় পিছিয়ে আছে। কম্পিউটার শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। বিদ্যুত সংযোগ না পাওয়া গেলেও, সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে বিদ্যালয়ে কম্পিউটার চালানোর উদ্যোগ আমাদের রয়েছে। অচিরেই সমস্যার সমাধান হবে।   

কলাপাড়া উপজেলার চাপলী ইউনিয়নের চর চাপলী ইসলামিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একই অবস্থা। সরকার থেকে এখানে কোনো কম্পিউটার আসেনি। বিদ্যালয়ের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় একটি ডেস্কটপ ও একটি ল্যাপটপের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহারিক পাঠ দেওয়া হয়।

বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষক মো. আবদুর রহমান বলেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ক্লাস পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা এখানে গড়ে ওঠেনি। বিদ্যালয়ের নিজস্ব উদ্যোগে যে ডেস্কটপ ও ল্যাপটপ কেনা হয়েছে, তা দিয়ে সব শিক্ষার্থীদের যথাযথভাবে পাঠদান সম্ভব নয়। নবম ও দশম শ্রেণিতে তিনদিন করে কম্পিউটার ক্লাস নেওয়া হয়। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অন্য একটি ৫০ মার্কের ক্লাসের এই বিষয়টি পড়ানো হয়। এই তিন ক্লাসে ব্যবহারিক ক্লাস করানোর সুযোগ নেই বললেই চলে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল ওহাব বলেন, স্থান সংকটের পরও বিদ্যালয়ের একটি কক্ষ কম্পিউটার বিভাগের জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আশপাশের বেশকিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কম্পিউটার পেলেও এই প্রতিষ্ঠানে এখনও আসেনি। ফলে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির জ্ঞান থেকে। সরকারের নির্দেশে বিভিন্ন শাখা খোলা হলেও যথাযথ সহযোগিতা পাওয়া যায় না।

কথা হয় বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির একদল শিক্ষার্থীর সঙ্গে। তারা জানায়, কম্পিউটার না থাকায় এ বিষয়ের খুঁটিনাটি নানান বিষয় সম্পর্কে তারা জানতে পারছে না। ব্যবহারিক ক্লাস তারা ভালোভাবে করতে পারছে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের বইয়ের তাত্ত্বিক আলোচনা থেকেই শিখতে হয়। আর এই ব্যবহারিক ক্লাস করতে না পেরে অনেক ছাত্রছাত্রী অন্য বিষয়ে লেখাপড়া করছে।

সূত্র বলছে, কলাপাড়া উপজেলার বেশকিছু বিদ্যালয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের ক্লাস ভালোভাবে হচ্ছে না। বিদ্যুত সমস্যাই এর অন্যতম কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন। আর এরফলে চলতি সময়ে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় বিষয় সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা অন্ধকারেই ডুবে থাকছে।

শুধু কলাপাড়ায় নয়, সরেজমিন ঘুরে এই চিত্র মিলেছে উপকূলের বিভিন্ন এলাকায়।

প্রত্যন্ত এলাকার শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের পরামর্শ, গ্রামের স্কুলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রসারের সরকারের বৃহৎ পরিকল্পনা নিতে হবে। বিষয়টি শুধুমাত্র ঘোষণার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে মাঠের সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে। বিদ্যুতবিহীন এলাকায় এখনই কিভাবে কম্পিউটার চালানোর ব্যবস্থা করা যায়, সে বিষয়ে ভাবতে হবে।  
     
[ পশ্চিমে সাতক্ষীরা, পূর্বে টেকনাফ, উপকূলের এই ৭১০ কিলোমিটার তটরেখা বেষ্টিত অঞ্চলে সরেজমিন ঘুরে পিছিয়ে থাকা জনপদের খবরাখবর তুলে আনছে বাংলানিউজ। প্রকাশিত হচ্ছে ‘উপকূল থেকে উপকূল’ নামের বিশেষ বিভাগে। আপনি উপকূলের কোনো খবর বাংলানিউজে দেখতে চাইলে মেইল করুন এই ঠিকানায়: [email protected] ]

বাংলাদেশ সময়: ০২৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০১৪


বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।