ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

জলবায়ু ও পরিবেশ

বিশ্ব পরিবেশ দিবস আজ

‘নেউ-নেউ’ শব্দে ডাকে জলচর নেউপিপি 

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৭ ঘণ্টা, জুন ৫, ২০২২
‘নেউ-নেউ’ শব্দে ডাকে জলচর নেউপিপি  নেউপিপি যুগলের উড়ন্ত অপরূপ সৌন্দর্য। ছবি: তিমু হোসেন

মৌলভীবাজার: জলজপ্রকৃতি বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ। এখানেই নানা জীববৈচিত্র্য প্রকৃতিগতভাবে জন্মলাভ করে জলাভূমিকে উর্বর করে সমৃদ্ধ রেখেছে দেশকে।

সুস্থ রেখেছে স্থানীয় প্রকৃতির প্রতিবেশ ব্যবস্থা।  

প্রাকৃতিক হাওর-বিলের অন্যতম জলচরপাখি ‘নেউপিপি’। কেউ কেউ পদ্মলিপি নামেও এ পাখিটিকে উল্লেখ করে থাকেন। এর ইংরেজি নাম Pheasant-tailed Jacana এবং বৈজ্ঞানিক নাম Hydrophasianus chirurgus। উড়ন্ত অবস্থায় লম্বা লেজের এই পাখিটির গভীর সৌন্দর্য সহজেই দৃষ্টি কাড়ে।

৫ জুন ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ ঘিরে জলাভূমির এসব মূল্যবান পরিবেশ সম্পদগুলোকে চেনার মাধ্যমে আমরা এসব জীববৈচিত্র্য রক্ষায় প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে হয়তো অবদান রাখতে পারি। মৌলভীবাজারের বাইক্কা বিল, হাকালুকি হাওরসহ দেশের বিভিন্ন প্রাকৃতিক জলাশয়ে এরা এখনও যুদ্ধ করে টিকে রয়েছে। কেননা, একদিকে প্রাকৃতিক জলাভূমিকে ধ্বংস করে কৃত্রিম মাছের খামার তৈরি করার জন্য মহোৎসবে নেমেছে প্রভাবশালী মানুষ, অন্যদিকে আমাদের জলাভূমির এসব প্রাকৃতিক বন্ধুরা সবার আড়ালে নিজেদের লুকিয়ে পরবর্তী প্রজন্ম রক্ষায় নিরন্তর প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের এই প্রয়াস কত দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে তাই গভীর শঙ্কার বিষয়।   

বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রী তিমু হোসেন, এই পাখিটিকে কেউ কেউ জলময়ুর নামোল্লেখ করে থাকেন। ময়ুয়ের মতো অপরূপ সুন্দর এই পাখিটি জলময় এলাকা দখল করে থাকে বলে সম্ভবত এর নামকরণ জলময়ুর। এই ছবিগুলো তোলার সময় এ পাখিটির অপরূপ সৌন্দর্য আমার হৃদয় কেড়েছিল।  

এই পাখিটি সম্পর্কে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রখ্যাত পাখি গবেষক ইনাম আল হক বাংলানিউজকে বলেন, Jacanidae (যাকানিদাকে) পরিবারভুক্ত পাখি নেউপিপি। পৃথিবীতে এই পরিবারের অনেক প্রজাতির পাখি রয়েছে। আর আমাদের দেশে এই পরিবারের দুটি প্রজাতি রয়েছে। এ দুটোর মধ্যে Pheasant-tailed jacana একটি প্রজাতি। এর পারিবারিক নাম হলো ‘পিপি’। ও ‘নেউ-নেউ’ করে ডাকে বলে বহু আগে থেকে আমাদের দেশে ওর নাম নেউপিপি। তিনি বলেন, এরা মাঝারি আকারের জলচর পাখি। দেখতে অনেকটা কবুতরের মতো। এরা দৈর্ঘ্যে ৩১ সেন্টিমিটার এবং প্রায় ১৪৫ গ্রাম। সব ঋতুতে ওড়ার সময় প্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহের প্রায় পুরোটাই সাদা দেখায়। বাদামি পিঠ ছাড়া সারাদেহ সাদা। সোনালি-বাদামি ঘাড়। গলার দুই পাশে লম্বা কালো রেখা এবং বুকে কালো ব্যান্ড। পায়ের রঙ সবুজ। প্রজননকালে এরা দীর্ঘ লেজের অধিকারী হয়। লেজে লম্বা কালো পালক গজায়। তখন পেট কালো এবং ঘাড়ের সোনালি অংশ প্রশস্ত হয়ে উঠে।  

বিচরণ ও খাদ্যতালিকা সম্পর্কে তিনি বলেন, গ্রীষ্মকালে একা বা জোড়ায় বিচরণ করে। শীতকালে একই প্রজাতির পাখিদের ঝাঁকে এরা থাকে। ভাসমান পাতায় হেঁটে বা অগভীর পানিতে সাতার কেটে ও ভাসমান উদ্ভিদ ঠুকরে এরা খাবার খায়। এদের খাদ্যতালিকায় রয়েছে বীজ, জলজ উদ্ভিদের অঙ্কুর, পোকা ও জলজ অমেরুদণ্ডী ছোট প্রাণী।  

বর্ষায় প্রজননকালে ভাসমান ঘন উদ্ভিদের মধ্যে বাসা বানিয়ে এরা ডিম পাড়ে। ডিম থেকে ছানা বের হওয়ার পরপরই ছানাগুলো জলাশয়ে খাবার খুঁটে খায় এবং ছেলে পাখিটি ছানাগুলোকে পাহারা দেয় বলে জানান প্রখ্যাত পাখিবিদ ইনাম আল হক।  
  
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৫ ঘণ্টা, জুন ০৫, ২০২২
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।