ঢাকা, সোমবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জলবায়ু ও পরিবেশ

পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে বিধিমালা হচ্ছে: মন্ত্রী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৮ ঘণ্টা, জুন ২, ২০২২
পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে বিধিমালা হচ্ছে: মন্ত্রী

ঢাকা: পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে একটি বিধিমালা তৈরি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন। একই সঙ্গে পরিবেশ দূষণ রোধ ও দূষণ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে ইটিপি প্ল্যান্ট স্থাপন করা হবে, যা অনলাইনে নিয়ন্ত্রণ করা হবে।

বৃহস্পতিবার (০২ জুন) দুপুরে তথ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে আগামী ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী এ কথা জানান। এ সময় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মো. শাহেনুর মিয়াসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

দূষণ রোধে সরকারের পরিকল্পনা জানতে চাইলে পরিবেশমন্ত্রী বলেন, আমরা এরই মধ্যে বায়ু দূষণ রোধ করতে এটি বিধিমালা আমরা করতে যাচ্ছি। এটি আগামী সংসদে পাশ হলে বায়ু দূষণ রোধ করতে সরকারের যা করণীয় তাতে হাত দেবো। আমরা ইতোমধ্যে সে কাজ করে যাচ্ছি। বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পরিমাপ যন্ত্র আমরা বসিয়েছি। এতে আমরা জানতে পারছি যে কী পরিমাণে কোথায় দূষণ হচ্ছে। আপনারা জানেন যে, আমাদের উন্নয়নমূলক কাজ চলছে, এই কাজের জন্য কিছু বায়ু দূষণ হয়। গাড়ির কালো ধোঁয়া, ইন্ড্রাস্ট্রি ও ইট ভাটাগুলো বায়ু দূষণের জন্য দায়ী। ইট ভাটাগুলোকে আমরা এরই মধ্যে নিয়ন্ত্রণে এনেছি। নতুন আইন আমরা করেছি।

তিনি বলেন, আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে সরকারি সব স্থাপনায় পুরনো ইট ব্যবহার করবো না। পুরানো ইট বায়ু দূষণ করছে, মাটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সে কারণে এটা বন্ধের প্রক্রিয়া আমরা শুরু করেছি। এর প্রজ্ঞাপনও আমরা জারি করেছি। আমরা ২০২৫ সালে ব্লক ইটে চলে যাবো। এতে দূষণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।

শাহাব উদ্দিন বলেন, গাড়ির কালো ধোঁয়ার বিষয়ে আমাদের পরিবেশ অধিদপ্তরের আওতায় একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এর অধীনে আমরা কালো ধোঁয়া পরিমাপ যন্ত্র বসিয়ে সেটাকে মাপা হবে। এটার তথ্য সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হবে, যাতে সেই গাড়ি আর ফিটনেস না পায়। এ ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। কালো ধোঁয়া, ইটের কালো ধোঁয়া, উন্নয়নের কারণে দূষণ এবং ইন্ড্রাস্ট্রিগুলো যে দূষণ করছে, এর পুরোটাকেই আমরা ইটিপির আওতায় নিয়ে আসবো এবং অনলাইনে নিয়ে আসবো। যাতে করে অফিসে বসেই দেখা যায় এই ইটিপিগুলো চালাচ্ছে কিনা।

নতুন পরিবেশ বিধিমালায় কী আছে জানতে চাইলে পরিবেশ মন্ত্রী বলেন, আমাদের পরিবেশ আইন আছে, সেটার সাথে আমরা পরিবেশ দূষণমুক্ত একটি বিধিমালা প্রণয়ন করবো, তাতে বায়ু দূষণ হচ্ছে যেসব কারণে সেগুলো বন্ধ করতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে আইনে বিস্তারিত থাকবে। এছাড়া জাতীয় জলবায়ু অভিযোজন পরিকল্পনা ও মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্ল্যান প্রণয়নের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

লিখিত বক্তব্যে জলবায়ুমন্ত্রী বলেন, ইটভাটা সৃষ্ট দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং কৃষি জমির উর্বর মাটি রক্ষার লক্ষ্যে সরকার ‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ (সংশোধিত ২০১৯)’ জারি করেছে। ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১ হাজার ৫১৬টি অভিযান পরিচালনা করে ২ হাজার ৫৯৪টি ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৮২৮টি অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ বা কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে এবং ৬২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।

বনমন্ত্রী বলেন, পরিবেশের ভারসাম্যের জন্য কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে বনভূমি থাকা আবশ্যক। বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়ায় কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে বনভূমি সৃজন কষ্টসাধ্য। বর্তমানে দেশে বৃক্ষাচ্ছাদিত ভূমির পরিমাণ মোট ভূমির ২২ দশমিক ৩৭ শতাংশ এবং বনাচ্ছাদন ১৪ দশমিক ০১ শতাংশ। আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ দেশের বৃক্ষাচ্ছাদন ২৫ শতাংশে এবং বনাচ্ছাদনের পরিমাণ মোট ভূমির ১৬ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যে বনায়ন ও বন সংরক্ষণ, অবক্ষয়িত বন পুনরুদ্ধার এবং টেকসই বন ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম অব্যাহত আছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আগামী ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপনে সরকার বেশ কিছু কর্মসূচি নিয়েছেন। এরমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ জুন বেলা ১১টায় বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হবেন। একই সঙ্গে ৫ থেকে ১১ জুন পর্যন্ত পরিবেশ মেলা ও ৫ জুন থেকে ৪ জুলাই পর্যন্ত জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষ মেলা উদ্বোধন করবেন।

এবারের বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য—‘একটাই পৃথিবী: প্রকৃতির ঐকতানে টেকসই জীবন’। জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষ মেলার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে—‘বৃক্ষ-প্রাণে প্রকৃতি প্রতিবেশ, আগামী প্রজন্মের টেকসই বাংলাদেশ’।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৩ ঘণ্টা, জুন ০২, ২০২২
জিসিজি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।