ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জলবায়ু ও পরিবেশ

অতিবৃষ্টিতে ডুবছে চায়ের ‘সবুজ সম্ভাবনা’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭০২ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৭
অতিবৃষ্টিতে ডুবছে চায়ের ‘সবুজ সম্ভাবনা’ বিস্তীর্ণ চায়ের সরুপথ ধরে চা কন্যাদের চলাচল/ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

মৌলভীবাজার: চা বাগান অধ্যুষিত বৃহত্তর সিলেটের মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জে থেমে থেমে হচ্ছে বৃষ্টি। মাঝে মধ্যে যা ঝরছে বিরতিহীন। এই অতিবৃষ্টি বিনষ্ট করছে চায়ের সুদিন। সবুজ পাতার নরম শরীর ছুঁয়ে গড়িয়ে পড়া বৃষ্টির পানি এখন আর মাটি শুষে নিতে পারছে না।

চলতি বছর ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১২ জুলাই পর্যন্ত মৌলভীবাজারে মোট ২২শ ৮৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা অন্য বছরগুলোর তুলনায় অনেক বেশি।

চা বিশেষজ্ঞরা অতিমাত্রার এ বৃষ্টিপাতকে ‘অমঙ্গল-সূচক’ হিসেবে দেখছেন। এতে ব্যাহত হয়েছে চায়ের সামগ্রিক উৎপাদন ব্যবস্থা।  

১৩ জুলাই (বৃহস্পতিবার) এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সকাল থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছিল চায়ের শহর শ্রীমঙ্গলে।
মাইজদিহি চা বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক মো. সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বৃষ্টিপাত বেশি হলে ‘ডে-টেম্পারেচার’ স্বাভাবিক থাকে না। দৈনিক তাপমাত্রা নিচে নামায় চা গাছে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটে। এতে চা গাছ নতুন কুঁড়ি ছাড়তে দেরি করে।

আরেকটি অন্যতম সমস্যা হলো– আমাদের চা গাছের মাটির উপরের স্তরকে ‘সাব-সয়েল’ বলে। এই সাব-সয়েলগুলো চা গাছের জন্য খুব উর্বর। অধিক বৃষ্টির ফলে চা গাছের মাটির উপরের সাব-সয়েলগুলো দ্রুত ‘ওয়াশ আউট’ হয়ে যায়। এই ওয়াশ আউটের ফলে মাটির গুণাবলী নষ্ট হয়ে কার্যকারিতা হারায়। ফলে  চা গাছগুলো মাটি থেকে ভালো খাদ্য সংগ্রহ করতে পারে না। ব্যাহত হয় উৎপাদন।

সিলেট বিভাগের প্রবীণ ‘টি-প্ল্যান্টার’ এবং চা গবেষক শাহজাহান আখন্দ বাংলানিউজকে বলেন, অতি বৃষ্টিপাতের ফলে ইতোমধ্যে চা গাছের নানান সমস্যা দেখা দিয়েছে। প্রথম সমস্যাই হলো- মাটি ‘ফ্যাচুলেটেড’ হয়ে যাওয়াতে চা গাছ আর পানি টানতে পারছে না। বিশেষ করে ফ্ল্যাট এরিয়াগুলোতে।

বিস্তীর্ণ চা বাগান//ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপনআর দ্বিতীয় সমস্যা হলো, চা গাছের ‘পরফেক্ট গ্রোথ’ হচ্ছে না। যেদিকে সূর্যের আলো লাগবে সেদিকে গ্রোথ মোটামুটি হবে। আর যেদিকে সূর্যের আলো লাগবে না সেদিকে অবস্থা আরও খারাপ হবে। যদি এরূপ বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকে তবে সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে এটি আরও মারাত্মক আকার ধারণ করবে। টিলার একদিকে চা পাতাই হবে না। কারণ সেপ্টেম্বরের পর থেকে মাটির ‘টেম্পারেচার’ কমে যাবে। ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে চলে গেলে চা-গাছ আর খাদ্যগ্রহণ করতে পারে না।

তিনি বলেন, অতিবৃষ্টিপাতের ফলে প্রচুর পরিমাণে টিলার মাটি ক্ষয় হচ্ছে। তারপর চা গাছের ‘ফার্টিলাইজার’ ‘ওয়াশ-আউট’ হয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও আরেকটি সমস্যা হলো চা গাছগুলো ‘রেগুলার’ পর্যাপ্ত ‘সানলাইট’ পাচ্ছে না। ‘মিনিমাম’ ১১ ঘণ্টা সানলাইট পাওয়ার কথা। তা না পেলে সামগ্রিক উৎপাদন ব্যাহত হবে। এ সবই চা শিল্পের জন্য মারাত্মক ‘অ্যালার্মিং’।

ভূমিধস প্রসঙ্গে শাহজাহান আখন্দ বলেন, ‘এক্সেস রেইন’ এর ফলে মাটির ভিতরে পানি এমনভাবে জমা হয় যে মাটি তার ‘টেকচার’ ধরে রাখতে পারে না; ফলে চা বাগানে ভূমিধস হচ্ছে। বিশেষ করে ৪৫ ডিগ্রির উপরের যেসব টিলাগুলো রয়েছে সেগুলো অত্যন্ত বিপজ্জনক।

শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের সিনিয়র অবজারভার মো. হারুনুর রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) থেকে ১২ জুলাই (বুধবার) সকাল ৯টা পর্যন্ত ৬ মাসে জেলায় মোট ২২শ ৮৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাত। বিগত বছরগুলোতে এতো বৃষ্টিপাত হয়নি।

২০১৬ সালের ওই তারিখে মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ১৪শ ১৮ মিলিমিটার, ২০১৫ সালের ওই তারিখে মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ১৫শ ৯৩ মিলিমিটার এবং ২০১৪ সালের ওই তারিখে ১০৬৮ মিলিমিটার। জানান আবহাওয়াবিদ হারুনুর রশিদ।

বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে দেশে সর্বোচ্চ ৮৫.০৫ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে। যা চা-শিল্পের ১৬২ বছরের ইতিহাসে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। তবে এই অতি বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় বর্তমানে চা উৎপাদন তুলনামূলকভাবে কমে গেছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ২০২০ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০১৭
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।