ঢাকা, শুক্রবার, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

ইলিশের ঝাঁক মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে বাংলাদেশ থেকে!

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, এনভায়রনমেন্ট স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৬
ইলিশের ঝাঁক মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে বাংলাদেশ থেকে! ছবি: একে জহুরুল ইসলাম

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): আমাদের পহেলা বৈশাখের সাথে ‘পান্তা-ইলিশ’ নামটিই যুক্ত হলো কেন? অন্য মাছেরাও তো যুক্ত হতে পারতো! যেমন- ‘পান্তা-বোয়াল’ বা ‘পান্তা-পাবদা’ অথবা ‘পান্তা-চিংড়ি’। এর নেপথ্যে নিশ্চয়ই বিশেষ কোনো কারণ রয়েছে।

কিংবা রয়েছে বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য।

যে কারণেই হোক বা যে উদ্দেশ্যেই হোক- বাংলা নববর্ষের সাথে ইলিশের নামটি যুক্ত হওয়ার ফলে গত তিন দশক ধরে ডিমমৌসুমে লাখ-লাখ, কোটি-কোটি মা-ইলিশকে প্রাণ হারাতে হয়েছে অসময়ে। খাদ্যরসিক বাঙালির জিহ্বার স্বাদে প্রজনন মৌসুমে অনেকটা নিশ্চিহ্ন হতে চলেছে ইলিশ।

শত শত সুস্বাদু মাছের ভিড়ে ইলিশই কেন এভাবে ‘টার্গেট’ হলো? এই প্রশ্নটি নিয়ে বাংলানিউজের পক্ষ থেকে মুখোমুখি হয়েছিলাম মৎস্য গবেষক এবং জুনিয়র ল্যাবেরেটরি স্কুল, ধানমন্ডি, ঢাকা এর জীববিজ্ঞানের শিক্ষক একে জহুরুল ইসলামের সাথে।

ইলিশ গবেষক এই শিক্ষক জানালেন তার অভিজ্ঞতার কথা। গভীর উদ্বেগের সাথে বললেন- ‘ডিমের মৌসুমে ইলিশের এই নিধন অব্যাহত থাকলে ইলিশের ঝাঁক একদিন বাংলাদেশ থেকে সত্যিই সত্যিই মুখ ফিরিয়ে অন্য দেশের দিকে চলে যাবে। তখন আমরা চরম ক্ষতির মুখোমুখি হবো। ’

তিনি বলেন, ইলিশের ইংরেজি নাম Hilsa এবং বৈজ্ঞানিক নাম Tenualosa ilisha। একটি মা-ইলিশ প্রায় ২০ লাখ ডিম পেড়ে থাকে। মৌসুমে একটি ডিমওয়ালা মা-ইলিশকে যদি আমরা ধরে ফেলি, তাহলে প্রায় ২০ লাখ পোনা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেলো।

সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর এই তিন মাস এবং ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল এই তিন মাছ হলো ইলিশের প্রজননের সময়। পহেলা বৈশাখকে মাথায় রেখে ইলিশ শিকারীরা মার্চ মাসটিকেই বেছে নেয়। ইলিশ কিন্তু ঝাঁকে ঝাঁকে থাকে। প্রজনন মৌসুমে বঙ্গোপসাগর থেকে ইলিশের ঝাঁকগুলো আমাদের নদীর মোহনায় ডিম ছাড়তে আসে। তখন তিন-চার মাস তারা আমাদের দেশের নদীগুলোর মোহনায় অর্থাৎ মিঠা পানিতে থাকে। ডিম ফুটিয়ে আবার মা মাছগুলো তাদের বাচ্চাদের নিয়ে লবণাক্ত পানিতে অর্থাৎ বঙ্গোপসাগরের দিকে নিয়ে চলে যায়। এমনই চলছে যুগ যুগ ধরে। এখন যদি ওই মা ইলিশগুলো ধরা হয় তখন বাচ্চাগুলো মা হারা হয়ে পড়বে। তাদের বংশবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হবে, বলেন জহুরুল ইসলাম।

তিনি আরো বলেন, ফলে মা-মাছগুলো তাদের গতিপথ পরিবর্তন করে পাশের দেশ মায়ানমার বা পশ্চিমবঙ্গের হুগলির দিকে চলে যেতে পারে। কারণ, তারাও বুঝতে পারে এদিকের মোহনায় এসে তারা ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে কিংবা আক্রমণের মুখে পড়ে যাচ্ছে। কোনো মাছের প্রজাতিই চায় না এভাবে মারা পড়তে। আমাদের দেশের নদীর মোহনাগুলো তাদের কাছে এখনো ‘সেফজোন’-এ পরিণত হচ্ছে না। যদিও পাঁচটি স্থানে সরকার ইলিশ অভয়ারণ্য ঘোষণা করেছে।

নববর্ষের সাথে পান্তা-ইলিশ যুক্ত হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলা নববর্ষের সাথে ইলিশ মাছ খাওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। এটি মানুষের এক প্রকারের ভ্রান্ত ইচ্ছার বর্হিপ্রকাশ। আমার তো মনে হয়, এই ভ্রান্ত ইচ্ছেটি ইলিশের প্রজাতিকে ধ্বংস করে দেওয়ার একটি সংঘবদ্ধ প্রয়াস।

‘মুঘল সম্রাট আকবরের শাসনামল থেকে নববর্ষ পালন শুরু হলেও আধুনিক নববর্ষ উদযাপনের খবর পাওয়া যায় ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে। ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে আমাদের দেশে ঘটা করে পহেলা বৈশাখ উদযাপন শুরু হতে থাকে। তখনই ‘পান্তার সাথে ইলিশ’ নামক খাবারটির ব্যাপক প্রচলন ঘটানো হয়েছে। যা একটি মাছের প্রজাতিকে সমূলে ধ্বংস করার একটি ভুল সিদ্ধান্ত বলে পরবর্তীতে বিবেচিত হয়, যোগ করেন এই মৎস্য গবেষক।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৬
বিবিবি/এটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।