ঢাকা, সোমবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

ফাতু-নাজনীনের সন্তানের অপেক্ষা

২৪ ঘণ্টা পাহারায় পৃথিবীর শেষ সাদা পুরুষ গণ্ডার

পরিবেশ-জীববৈচিত্র্য ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৩ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৫
২৪ ঘণ্টা পাহারায় পৃথিবীর শেষ সাদা পুরুষ গণ্ডার ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: দক্ষিণ সুদানে জন্ম হওয়ায় নাম রাখা হয় ‘সুদান’। কিন্তু ধরা পড়ে শামবি অঞ্চলে, তখন সুদানের বয়স মাত্র এক বছর।

এ সাদা গণ্ডারটি এবা প্রজাতির সবশেষ পুরুষ।

ফলে প্রতিপালকরা চাচ্ছেন, অলৌকিকভাবে হলেও যেন স‍ুদান বাবা হতে পারে। কারণ প্রজনন ছাড়াই ৪২ বছর বয়সী তিন টন ওজনের এই প্রাণী মারা যাওয়ার অর্থ হলো বিশ্বের শেষ সাদা গণ্ডার প্রজাতির বিলুপ্তি।

উদ্ধার হওয়া পরে তাকে চেক রিপাবলিকের ভুর ক্রালোভ চিড়িয়াখানায় স্থানান্তর করা হয়। সেখান থেকে ২০০৯ সালের ডিসেম্বর মাসে তাকে নিয়ে আসা হয় ওল পেজাতা’তে ।

সুদান ছাড়াও একই প্রজাতির দুই নারী গণ্ডার ফাতু (১৫) এবং নাজনীনকেও (২৫) আনা হয়।

ওল পেজাতা’তে থাকা আরেক পুরুষ সাদা গণ্ডার সানি গত বছর মারা যায়। যদিও সুদানের চেয়ে তার বয়স অনেক কম ছিল। এরপর সুদানই শেষ পুরুষ এই প্রজাতির।

যে কারণে শিকারির হাত থেকে বাঁচাতে ২৪ ঘণ্টা সশস্ত্র রক্ষী তাকে পাহারা দেয়।

ওল পেজাতা প্রাণী সংরক্ষণ এলাকার প্রধান নির্বাহী রিচার্ড ভিগনে বলেন, সাধারণত গণ্ডার যেমন বাঁচে সে অনুযায়ী, সুদানের অনেক বয়স হয়ে গেছে। বাস্তবতা হলো খুব তাড়াতাড়ি ও মারা যাবে।

তবে আশা করা হচ্ছে, সুদান তার সঙ্গী ফাতু এবং নাজনীনের সন্তানের বাবা হলে এই প্রজাতি রক্ষা পাবে। অসুস্থতায় তার বীর্য কমে যাচ্ছে এবং পেছনের পা দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। ফলে এখন পর্যন্ত প্রজননের সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে।

ভিনগে বলেন, এদের নিরাপদে আবদ্ধ জায়গায় রাখা হয়েছে এবং এখানেই প্রজননের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। আপাতত শিকারিদের হাত থেকে বাঁচাতে এদের ২৪ ঘণ্টা সশস্ত্র রক্ষী পাহারা দিচ্ছে। যদিও এই অস্ত্রধারী রক্ষীদের সঙ্গে তাদের ভীষণ ভাব।

রক্ষী জাকারিয়া মুতাই বলেন, সুদানের পেটের নীচে আদর করলে সে খুব খুশি হয়। আর কানের পেছনে চুলকে দিলে তার মুখে স্বস্তির ছাপ ফুটে ওঠে। আমরা যখন তার নাম ধরে ডাকি, প্রায়ই সে ছুটে চলে আসে। স্বাভাবিকভাবে সুদান খুবই শান্ত, কিন্তু প্রাণীর কথা বলা মুশকিল। যে কোনো সময় আমাদের আক্রমণ করতে পারে, তাই সব সময় সতর্ক থাকতে হয়।

আরেক রক্ষী জন মুগো গণ্ডারদের রক্ষা করতে সারাদিন জি৩এ৩ স্বয়ংক্রিয় রাইফেল কাঁধে ওই আবদ্ধ এলাকায় ঘুরে বেড়ান।

তিনি বলেন, সুদান আমার কাছে আলাদা। কারণ বিশ্বে সেই একমাত্র এই প্রজাতির জীবিত পুরুষ। যে কারণে ২৪ ঘণ্টা তাকে শিকারিদের হাত থেকে বাঁচাতে পাহারা দেওয়া হয়। আর সিংয়ের কারণে তার জীবন ঝুঁকিতে।

সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা এবং পরদিন সকাল পর্যন্ত সময় ভাগ করে গণ্ডারদের পাহারা দেওয়া হয়।

ভিনগো আরও বলেন, এখনও আশা রয়েছে এই প্রজাতির বংশ বৃদ্ধির। যদি সুদান স্বাভাবিকভাবে বাবা হতে নাও পারে, কৃত্রিম পদ্ধতিতে বংশ বিস্তার করানো সম্ভব হবে। তবে সমস্যা হলো গণ্ডারের জন্য এ পদ্ধতি এখনও পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। সুদান মারা যাওয়ার আগেই চেষ্টা করা হবে এ পদ্ধতি উদ্ভাবন করতে। ইতোমধ্যে আমাদের গবেষক দল কাজও শুরু করেছে।

ভিন্ন একটি পদ্ধতির কথাও চিন্তা করা হচ্ছে। যদি কোনোটাই সম্ভব না হয়, সেক্ষেত্রে শঙ্কর করা হবে। এই আধুনিক পৃথিবী থেকে একটি প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাবে এটা মেনে নেওয়া যায় না। আমি বিশ্বাস করি ভবিষ্যতে এই প্রজাতি আবার আগের অবস্থানে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। সাদা গণ্ডার প্রজাতির জিনগত অনেক কিছু সংরক্ষণ করা হয়েছে। যা আগামীতে গবেষণায় কাজে লাগবে। বিভিন্ন প্রজাতির গণ্ডারের কোষ কালচারও করা হয়েছে, যোগ করেন তিনি।

১৯৬০ সালে দেওয়া ওয়ার্ল্ডলাইফ ফান্ডের তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীতে দুই হাজারের বেশি উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গণ্ডার ছিল। কিন্তু শিকারিদের কারণে বর্তমানে এটি বিলুপ্ত প্রায়। মানুষই একমাত্র দায়ী এর জন্য। কেবল সাদা গণ্ডারই নয়, প্রতিটি প্রজাতির গণ্ডারই তার সিংয়ের জন্য হুমকিতে রয়েছে।

ওল পেজাতা সাদা গণ্ডারের সংরক্ষণ ও প্রজননের জন্য ফান্ড সংগ্রহ শুরু করেছে। ইতোমধ্যে সংরক্ষণে ১ মিলিয়ন ডলার ও প্রজননে ৪ মিলিয়ন ডলার ধরা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৫
এটি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।