ঢাকা, রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

বাজেট

করের হার নয়, দাতার সংখ্যা বাড়াতে হবে

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৯ ঘণ্টা, মে ৬, ২০১৭
করের হার নয়, দাতার সংখ্যা বাড়াতে হবে ‘কেমন বাজেট চাই’ শীর্ষক গোল টেবিল আলোচানায় বক্তারা/ছবি: কাশেম হারুন

ঢাকা: করের (ট্যাক্স) হার না বাড়িয়ে কর দাতার সংখ্যা (ট্যাক্স পেয়ার) বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, ব্যবসায়ী, সংগঠক, গবেষক, বিশ্লেষক ও আইসিটি বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, যারা নিয়মিত কর দেন, তাদের উপর করের বোঝা আরো না বাড়িয়ে, কর দাতার সংখ্যা বাড়াতে হবে।

এতে করে নিয়মিত কর দাতাদের ওপর বাড়তি চাপ যেমন কমবে, তেমনি নতুন করে লোকজন কর দেওয়ার ব্যাপারে উৎসাহী হবে। আর কর’র হার  যদি বাড়ানো হয়, তাহলে পুরাতন কর দাতারাও তা ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করবে।

পাশাপাশি যারা এখনো কর’র আওতায় আসেন নি, তারা ভয়ে এর আওতায় আসতে চাইবেন না।
 
শনিবার (০৬ মে) সন্ধ্যায় ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ’র কানফারেন্স রুমে দৈনিক কালের কণ্ঠ আয়োজিত ‘কেমন বাজেট চাই’ শীর্ষক গোল টেবিল আলোচানায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
 
কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলনের সঞ্চালনায় গোল টেবিল  আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক আবু আহমেদ, শিক্ষাবিদ করুণাময় গোস্বামী, আইসিটি বিশেষজ্ঞ মোস্তফা জব্বার, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. জামালউদ্দিন আহমেদ, নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার, অর্থনীতিবিদ মানুন রশীদ, বিআইডিএস’র সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, রিহ্যাব’র সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামীন, ডেইলি সান’র সম্পাদক ইনামুল হক চৌধুরী প্রমুখ।
ডা. নাজনীন 
কর’র হার কমানোর পরামর্শ দিয়ে আবু আহমেদ বলেন, ইনকাম ট্যাক্সের হার ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশে নিয়ে আসেন, দেখবেন বহু লোক বলছে, ১৫ শতাংশ দিয়ে দিই না সরকারকে, অসুবিধা কী? আর যখনই শোনে ২৫ শতাংশ, তখনই বলে, বাবারে আর দেব না। সুতরাং ইনকাম ট্যাক্স কমানো উচিত।
 
প্রস্তাবিত ১৫ শতাংশ ভ্যাট’র ব্যাপারে তিনি বলেন, ১৫ শতাংশ হোক আর ১০ শতাংশ হোক, আদায় হওয়া ট্যাক্স বা ভ্যাট যাচ্ছে কোথায়? ভ্যাট আদায় করে নিজের পকেটে রেখে দেওয়া তো ক্রিমিনাল অফেন্স। আর এর বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে পারবে না, সরকার কথা বলতে পারবে না? তা তো হতে পারে না।
মোস্তফা জব্বার 
যত দিন দেশের অর্থনীতির আকার ছোট থাকবে, ততো দিন গ্লোবাল সিটিজেনরা নিরাপদ অনুভব করবেন না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আশিয়ান কান্ট্রি থেকে টাকা সহজে বাইরে যায় না। কারণ, আশিয়ান কান্ট্রির লোকজন যেখানে যায় সেখানেই মর্যাদা পায়। তাদের টাকা মালয়েশিয়ায় নেওয়া যায়, সিঙ্গাপুরে নেওয়া যায়, থাইল্যান্ড নেওয়া যায়। কিন্তু বাংলাদেশের টাকা কোথাও নেওয়া যায় না। সে কারণেই বাংলাদেশের টাকা বাইরে পাচার হয়ে যায়। তাই সিস্টেম চেঞ্জ করতে হবে।
 
শিক্ষাবিদ করুণাময় গোস্বামী বলেন, বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে আমরা যেন সমগ্র জাতির কথা ভাবি। রবীন্দ্রনাথ বার বার এ কথাটি বলেন, আমরা সমগ্র, আমরা খণ্ড নই, ক্ষুদ্র নই।
 
সমগ্র জাতির মঙ্গল চিন্তা নেই বলেই মুষ্টিমেয় কয়েকজন লোক ৭০ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশকে তারা নিরাপদ মনে করছে না। তার কেবল নিজের কথা চিন্তা করছে, নিজের বাড়িটা হয়ে গেলো, নিজের সন্তান ভালো থাকলো, নিজের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হলো। দেশের কথা বা সমগ্রের কথা তারা ভাবছে না। এ জন্য আমাদের সামগ্রীক মঙ্গলের কথা চিন্তা করতে হবে।
করুণাময় গোস্বামী 
মামুন রশীদ বলেন, বিআইডিএস স্ট্যাডি করে দেখিয়েছে বাংলাদেশের ৩ কোটি লোক প্রতি বছর গড়ে ৬ হাজার ডলার আয় করে। আরেকটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান দেখিয়েছেন বছরে সাড়ে ৫ হাজার ডলার আয় করে-এ রকম লোকের সংখ্যা বাংলাদেশে ৬ কোটি।
 
অর্থাৎ প্রতি বছর এ ৬ কোটি লোক গড়ে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা আয় করে। আমাদের রাজস্ববোর্ড বলেছে আড়াই লাখ টাকা আয় করলেই আয়কর দিতে হবে। সেই হিসেবে ৬ কোটি লোকের কাছ থেকে আয়কর পাওয়ার কথা। আমরা পাচ্ছি মাত্র ১২ লাখ লোকের কাছ থেকে- বলেন মামুন রশীদ।  
 
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৩ ঘণ্টা, মে ০৬, ২০১৭
এজেড/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।