ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

বইমেলা

চাহিদা থাকলেও সংকট কিশোরদের উপযোগী ভালো বইয়ের

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৩ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০২২
চাহিদা থাকলেও সংকট কিশোরদের উপযোগী ভালো বইয়ের ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: চাহিদা থাকলেও সংকট কিশোরদের উপযোগী ভালো বইয়ের। বইমেলা ঘুরে তাই অনেক অভিভাবক যেমন হা-হুতাস করছেন, তেমনি কিশোর-কিশোরীরাও ভরসা করতে পারছেন না হাতে গোনা দু-একজন বাদে অন্য লেখকদের উপর।

অভিভাবকরা বলছেন, অনেক স্টলে ঘুরেও মনমতো বই পাচ্ছেন না টিন-এইজ ছেলে-মেয়ে বা ভাই-বোনের জন্য। যেগুলো পাওয়া যাচ্ছে তা একেবারেই শিশুদের জন্য অথবা কিশোর উপযোগী বলা হলেও তার ভাষা বা কাহিনী মূলত বড়দের উপন্যাস। ভুক্তভোগীরাও বলছেন এই একই কারণে হাতে গোনা লেখক ছাড়া অন্যদের বইয়ের প্রতি ভরসা নেই তাদের। ফলে অনেকেই ঝুঁকছেন ইংরেজি সাহিত্যে।

সপ্তম শ্রেণীতে পড়া মেয়েসহ পুরো পরিবার নিয়ে মেলায় এসেছিলেন তাসলিমা আক্তার রিমা। বইও কিনেছেন বেশ কিছু। কথা হলে হুমায়ূন আহমেদ, সমরেশ মজুমদার, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ভালোবাসা এই অভিভাবক বলেন, আমরা যখন ছোট ছিলাম, তখন আমরা নানু-দাদুর কাছে গল্প শুনতাম। এখন সেই গল্পগুলো পাওয়া যাচ্ছে বইয়ের পাতায়। একই গল্প, কিছুটা পরিবর্তন। আমাদের সময় যেসব বই ছিল, তা আমাদের যেভাবে কল্পনারাজ্যে নিয়ে যেত, তবে এখনকার বাচ্চাদের বইগুলো যেন সেদিক থেকে একটু দুর্বল। সহজে বোঝা যাচ্ছে না। যুগের পরিবর্তন আছে সেটা মানতে হবে। তবে লেখক যারা লিখছেন, বিশেষ করে ছোটদের বিষয়ে যারা লেখেন, তাদের এ বিষয়ে আরও চিন্তা করে লেখা উচিত।

তিন গোয়েন্দা, হুমায়ূন আহমেদ আর আরিফ আজাদের লেখা ভালো লাগে রামপুরার 'রাজধানী আইডিয়াল কলেজে'র শিক্ষার্থী মাসুমা হক শাকিরা এবং সানজিদা হাসান মিমসার। কথা হলে এই দুই বান্ধবী বলেন, হুমায়ূন আহমেদের মতো করে সহজ ভাষায় আমাদের জন্য খুব কম বই আছে। অন্য লেখকের লেখাও পড়ি, তবে সেগুলো হুমায়ূন আহমেদের মতো এতো টানে না।

রাজধানীর মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজেরর দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী নামিরা আফসিন আয়াত। বইমেলা থেকে সে কিনেছে 'সুকুমার রায়ের শ্রেষ্ঠ গল্প' বইটি। সাথে ছিল বাবা আরিফ নিয়াজ আর দাদু মো. নেহাজ উদ্দিন। কথা হলে আয়াতের বাবা বলেন, প্রথম দিকে বাচ্চারা কি বই পড়বে তা অভিভাবকেই মূলত ঠিক করে দিতে হয়। কেননা এই সময়ে শিশুর বিকাশের বিষয় থাকে, চারিত্রিক গঠন ও রুচিবোধ জন্মায়। শুধু পাঠপুস্তক দিয়ে সেসব হয়না। সেদিক থেকে শিশুদের অনেক বই আছে কিন্তু কিশোর-কিশোরীদের উপযোগী বইয়ের সংখ্যাটা একটু কম বলেই মনে হলো।

দশম শ্রেণীতে পড়া বোনের জন্য বই কিনতে এসে ভাই ইমরান হোসেন বলেন, বোনের জন্মদিন সামনে। তাই ভাবলাম তিনটি বই উপহার দেবো। কিন্তু ওর উপযোগী বই খুঁজতে খুঁজতে প্রায় হয়রান। যে স্টলেই বলি, সবাই শুধু একদম শিশুদের কার্টুন বই দেখায় অথবা উপন্যাস সাজেস্ট করে; তাও আবার বড়দের। আবার কয়েকটির ভাষাও পছন্দ হয় না। কিন্তু ওদের মনের বিকাশ ঘটাতে ওদের বয়সের আনুপাতিক হারেও তো কিছু বই আমাদের থাকা উচিত। বাধ্য হয়ে দুটো ইংরেজি বই নিতে হলো।

এদিকে বিশিষ্ট লেখকদের মতে, শিশু-কিশোররা ফুলের মতো। এই ফুলকে ফুটতে দিতে হবে। শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নয়, এদের নিজের ইচ্ছেমতো পড়তে দিতে হবে। ওদের দেখতে দিতে হবে আকাশ, নদী, পাহাড়, ফুল, পাখি ও জোনাকির সৌন্দর্য। তাইতো সেসব বইয়ের ভাষা হতে হবে সুন্দর, চিন্তার জগত হতে হবে সুবিশাল।

এ নিয়ে কথা সাহিত্যিক ঝর্ণা রহমান বলেন, প্রত্যেক লেখকের দর্শনের জায়গা আলাদা। সে তার জায়গায় দাঁড়িয়ে লিখবে। আমি একটা কথা বলতে পারি, এটা আমার উপদেশ নয় বরং প্রত্যাশা যে লেখার জন্য আমাদের কাঁচামাল কি? একটা হলো আমাদের মনের চিন্তা, আমাদের ভাবনার জগত। আর বাইরের কাঁচামালটি হলো আমাদের ভাষা। তাই ভাষার দখলটি লাগবে। ভাষাটা জানতে হবে। ভাষাটা না জানলে সত্যিকারের সাহিত্য হবে না।

শিশুদের জন্য বই প্রকাশের ক্ষেত্রে দক্ষ সম্পাদনা পর্ষদ থাকা জরুরি বলেও মনে করেন অনেকে। কিন্তু অধিকাংশ প্রকাশনা সংস্থার নেই সম্পাদনা পর্ষদ। কোনো কোনো লেখক নিজের টাকা খরচ করেই প্রকাশ করছেন শিশুতোষ বই।

এ বিষয়ে লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, দেশে অনেক লেখক আছেন, নতুন লেখক, তারা আসলে টাকা দিয়ে বইটা ছাপিয়ে নিচ্ছেন। এটা যদি বন্ধ করা যায়, তবে বইয়ের মানটা অনেক বেড়ে যাবে।

আর আগামী প্রকাশনীর প্রকাশক ওসমান গণি বলেন, যতবড় মেলা, সত্যিকার অর্থে এতগুলো প্রকাশক কিন্তু আমাদের নেই। সিজেনাল প্রকাশক এবং ড্রয়িংরুম প্রকাশকরা এসে মেলাটাকে নষ্ট করছে। এক্ষেত্রে প্রফেশনাল প্রকাশকদের গুরুত্ব দিতে হবে।

এছাড়া কিশোর-কিশোরীদের উপযোগী বইয়ের চাহিদা থাকলেও এই বিষয়ে সাহিত্যিকের সংখ্যা খুবই কম বলেও জানান এই প্রকাশক।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪৩ ঘণ্টা, ৬ মার্চ, ২০২২
এইচএমএস/কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।