ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

বইমেলা

সকালে দুরন্তপনা, বিকেলে বইকেনা

ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৯
সকালে দুরন্তপনা, বিকেলে বইকেনা পছন্দের বইয়ে মগ্ন দুই তরুণী | ছবি: ডিএইচ বাদল

বইমেলা প্রাঙ্গণ থেকে: অমর একুশে গ্রন্থমেলার ৯ম দিন শিশুপ্রহর হওয়ায় সকালে মেলা প্রাঙ্গণ ছিল শিশুদের দুরন্তপনা আর কলকাকলিতে মুখরিত। তবে বিকেল নামতে না নামতেই তা সববয়সী পাঠকের পদচারণায় ভরে ওঠে।

শনিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) মেলা প্রাঙ্গণে বাবা-মায়ের হাত ধরে কিংবা কোলে-পিঠে চড়ে ঘুরেছে শিশুরা। সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত অভিভাবকদের সঙ্গে তারা ঘুরেফিরে দেখেছে বিভিন্ন রংবেরঙের বই।

আর বিকেল ৩টা থেকেই সে মেলায় অংশ নিয়েছে সববয়সী পাঠকরা।

সকাল থেকেই কিশোর-কিশোরীরা ব্যস্ত ছিল মহাজগৎ আর পৃথিবীর নানা সমস্যা জয়ে বিজ্ঞানের ব্যবহার নিয়ে লেখা দারুণ সব বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীতে।  

অভিভাবকরা জানান, অমর একুশের চেতনা আর বাংলা সাহিত্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতেই সন্তানকে নিয়ে এসেছেন গ্রন্থমেলায়।

পাঠক ও দর্শনার্থীর আগমনে আগের দিন শুক্রবার বিকেলের মতো মেলাটি রীতিমতো জনারণ্যে পরিণত হয়। সেই সুবাদে বইয়ের বিকিকিনিও হয়েছে প্রচুর। দুই হাত ভর্তি বইয়ের ব্যাগ নিয়ে পথ চলতে দেখা গেছে অনেক গ্রন্থপ্রেমীকে।

এদিন সকালে গ্রন্থমেলায় এসেছিলেন ছোটদেও প্রিয় লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। অভিভাবকদের উদ্দেশে এ সময় তিনি বলেন, বাচ্চাদের ইউটিউব, ফেসবুক স্ক্রিন থেকে সরিয়ে নিয়ে এসে বই পড়তে আগ্রহী করে তুলুন। স্ক্রিন হচ্ছে একমুখী, কিন্তু বই তো একমুখী না। আমরা যখন বই পড়ি তখন কল্পনা করি, চিন্তা জাগে, আর এটা একটা পক্রিয়া। কিন্তু ফেসবুক দেখলে বা ইউটিউব দেখলে তো কোনো প্রক্রিয়া হয় না, শুধু ভালো লাগা জন্মে। আর এই সমস্যাটা শুধু আমাদের নয়, সারা পৃথিবীর সমস্যা। সারা পৃথিবী এখন চেষ্টা করছে বাচ্চাদের বই পড়া শেখানোর জন্য।
সকালে বইমেলায় শিশুপ্রহরে উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে দুরন্ত শিশুরা | ছবি: ডিএইচ বাদলশনিবার মেলায় ২১৮টি নতুন বই এসেছে বলে জানিয়েছে বাংলা একাডেমির জনসংযোগ বিভাগ। এর মধ্যে মধ্যে গল্প ৪৪টি, উপন্যাস ৩২টি, প্রবন্ধ ১২টি, কবিতা ৬৪টি, গবেষণা ৫টি, ছড়া ৪টি, শিশুসাহিত্য ৮টি, জীবনী ৯টি, মুক্তযুদ্ধ বিষয়ক ৫টি, নাটক ৪টি, বিজ্ঞান বিষয়ক ৩টি, ভ্রমণ বিষয়ক ২টি, ইতিহাস বিষয়ক ৩টি, রাজনীতি ১টি, স্বাস্থ্য বিষয়ক ৩টি, রম্য ২টি, সায়েন্স ফিকশন ১টি, ধর্মীয় ১টি, অনুবাদ ১টি এবং অন্যান্য ১৪টি।

এদিনের বইগুলোর মধ্যে শ্রাবণ প্রকাশনী থেকে ওবায়েদ আকাশের ‘স্বতন্ত্র কবিতা’, প্রত্যয় প্রকাশন থেকে ঝর্না দাশ পুরকায়স্থের ‘চাঁদের আলোয় রূপকথা’, নিখিল প্রকাশন থেকে স্বপন কুমার দাসের ‘বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ’, অনন্যা প্রকাশনী থেকে সুমন্ত আসলামের ‘পাঁচ গোয়েন্দার পাঁচ গোয়েন্দাগিরি’ ও রাকিব হাসানের ‘জলাভূমির রহস্য’, কথা প্রকাশ থেকে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ‘দীক্ষাগুরুর তৎপরতা’ ও পলাশ মাহবুবের ‘লালুর লালজামা’, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্সের মুনতাসীর মামুনের ‘রাজার নতুন পোষাক’, শব্দশৈলী থেকে হায়াত মাসুদের ‘ভিনদেশের রূপকথা’, অনুপম থেকে আনিসুল হকের ‘মুক্তি নাই প্রতিবাদ থাকুক’, বিদ্যা প্রকাশ থেকে সেলিনা ইসলাম চৌধুরীর ‘প্রবন্ধ সমগ্র-৮’, বিজয় প্রকাশের নীরব রবির ‘অব্যক্ত কথা’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

বিকেলে গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘আবদুল হক: জন্মশতবর্ষ শ্রদ্ধাঞ্জলি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সৈয়দ আজিজুল হক। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন অজয় দাশগুপ্ত, সোহরাব হাসান এবং আহমাদ মাযহার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সুব্রত বড়ুয়া।

প্রাবন্ধিক বলেন, একজন সার্থক মননশীল প্রাবন্ধিকের চিন্তনপ্রক্রিয়াকে অনিবার্যভাবে যেমন হতে হয় যুক্তিশৃঙ্খলিত তেমনি তার আবেগ-অনুভূতিকেও বাঁধতে হয় বুদ্ধির শাসনে। সাহিত্য ও সমাজ-সংস্কৃতি বিষয়ে বিশ্লেষণে আগ্রহী একজন প্রাবন্ধিককে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হয় সাহিত্যের যাবতীয় গতি-প্রকৃতি। পাশাপাশি তার দেশকালের সংকট ও তার উত্তরণমুখী সুদূরপ্রসারী সম্ভাবনাকেও। এভাবে তিনি একটি জাতির সামগ্রিক সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনার সঙ্গে একাত্ম হন, ব্যাপৃত হন আপন জাতিসত্তার স্বরূপ সন্ধানে।  

আলোচকবৃন্দ বলেন, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ— উভয় ক্ষেত্রেই আবদুল হক প্রদর্শন করেছেন বুদ্ধিজীবিতার দায়বোধের চূড়ান্ত আদর্শ। তার চিন্তার স্বচ্ছতা, দূরদর্শিতা ও দেশপ্রেমের উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত হয়ে আছে এ বিষয়ক প্রবন্ধাবলি। তার প্রবন্ধসমূহে সর্বদাই অভিব্যক্ত হয়েছে এদেশের সাহিত্য, সংস্কৃতি, সমাজ ও রাজনীতি নিয়ে গভীরতর বিশ্লেষণমূলক অনুভাবনা। ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, সমাজ ও রাজনীতি বিষয়ে আবদুল হকের সুগভীর চিন্তাভাবনাকে পাঠককুলের বোধের কাছে যত বেশি পৌঁছে দেওয়া যাবে সমাজ ও জাতির জন্য তত বেশি তা ইতিবাচক ও কল্যাণময় ফল বয়ে আনবে।

সভাপতির বক্তব্যে সুব্রত বড়ুয়া বলেন, আবদুল হক একজন সত্যসন্ধ বুদ্ধিজীবী। তার নাট্যরচনা, অনুবাদ, দিনলিপি, প্রবন্ধ গবেষণা-সবকিছুর মধ্যেই বড় করে প্রতিভাত হয়েছে দেশপ্রেম, উদার মানবিকতা এবং নিরাপোষ মনোভাব। জন্মশতবর্ষে তাকে নিয়ে নতুন করে আলোচনার অবকাশ রয়েছে।  

বিকেলে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ করেন কবি আতাহার খান এবং ফরিদ কবির। আবৃত্তি পরিবেশন করেন বেলায়েত হোসেন এবং অনন্যা লাবণী পুতুল। সন্ধায় সাংস্কৃতিক পর্বে ছিল গোলাম কুদ্দুছের পরিচালনায় ‘বহ্নিশিখা’ এবং খাজা সালাহ উদ্দিনের পরিচালনায় নৃত্যসংগঠন ‘ঘুংঘুর সাংস্কৃতিক একাডেমি’র পরিবেশনা।  

আগামীকাল রোববার (১০ ফেব্রুয়ারি) অমর একুশে গ্রন্থমেলার দশম দিন। এদিন মেলা চলবে বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘কথাশিল্পী অমিয়ভূষণ মজুমদার: জন্মশতবর্ষ শ্রদ্ধাঞ্জলি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান।  

এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন মহীবুল আজিজ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন হোসেনউদ্দীন হোসেন, মাহবুব সাদিক এবং হরিশংকর জলদাস। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন সেলিনা হোসেন। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, কবিতা-আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০১৯
এইচএমএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।