ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

বইমেলা

মেলায় ঝড়ের আর্তনাদ!

আসাদ জামান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৫
মেলায় ঝড়ের আর্তনাদ! ছবি: সায়মন/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বইমেলা থেকে: ‘যে কবিতা শুনতে জানে না, সে ঝড়ের আর্তনাদ শুনবে’...। বুধবার গভীর রাতে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় বোধ হয় কবিতা শোনার মতো একজন লোকও ছিলো না।

প্রকৃতির রুদ্ররূপ তাই ঝড়ের আর্তনাদ শুনিয়ে গেছে।
 
বৃহস্পতিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৩টায় মেলার দরজা উন্মুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই ‘আর্তনাদ’ বড় বেশি করে শুনতে পেয়েছেন প্রকাশক ও বিক্রয়কর্মীরা। সে আর্তনাদ কানে পৌঁছেছে পাঠকদেরও।
 
এদিন দুপুর আড়াইটায় দোয়েল চত্বর দিয়ে মেলায় প্রবেশের সময় অমর একুশে গ্রন্থমেলা উপলক্ষে নির্মিত তোরণটির দিকে নজর পড়ে।
 
চিত্রশিল্পী কাইয়ূম চৌধুরী, সৈয়দ মাইনুল হোসেন, শিল্পী ফিরোজা বেগম, অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, সাংবাদিক এবি এম মূসা, বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম, ইতিহাসবিদ সালাহ্উদ্দিন আহমেদসহ সদ্য প্রয়াত গুণীজনদের আলোচিত্রগুলো তোরণ থেকে উধাও।
 
জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের আলোকচিত্র তোরণ থেকে সরিয়ে নেওয়ার দুঃসাহস দেখানোর মতো লোক এই মুহূর্তে বাংলাদেশে আছে; তা বিশ্বাস হয় না!
 
সুতরাং বুঝতে আর বাকি রইলো না, বুধবার রাত ১২টার পর থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত প্রকৃতির বিরূপ আচরণে ককশিট (সোলা)-এর ওপর ছাপ দিয়ে তৈরি আলোকচিত্রগুলো উধাও হয়ে গেছে।
 
রাতের দমকা হাওয়ায় বইমেলা উপলক্ষে তৈরি তোরণের ক্ষতচিহ্ন দেখার পর মেলার ভেতরের অবস্থা সম্পর্কে একটা ধারণা মনের মধ্যে অনায়াসেই এঁকে গেলো। সেই ধারণাটা আরো পোক্ত হলো বিকেল ৩টার দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মেলার প্রবেশ পথে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরকে দেখে।
 
সাধারণত বড় ধরনের ঘটনার ঘটার পরই জনপ্রতিনিধি বা মন্ত্রী-এমপিরা ঘটনাস্থলে যান এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলেন, সান্ত্বনা দেন অথবা দেন ক্ষতিপূরণের আশ্বাস।

মেলা গেট দিয়ে ঢুকতেই চোখ পড়লো স্বাধীনতাস্তম্ভ বরাবর। বাঙালির গর্বের ওই বস্তুটি দেখার জন্য কাচের দেওয়াল সদৃশ স্বচ্ছ প্লাস্টিকের বোর্ড দিয়ে যে প্রাচীর তৈরি করা হয়েছিলো সেটি ভেঙে পড়েছে। হাতের ডান দিকে তাকাতেই চোখে পড়লো বইয়ের অনুকৃতি দিয়ে বানানো বোর্ডের স্তম্ভটি মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে।
 
বুকের মধ্যে ছ্যাৎ করে উঠলো। এমনিতেই হরতাল অবরোধের কারণে বই বিক্রি কম বলে হতাশা ব্যক্ত করে আসছিলেন প্রকাশকরা। তার ওপর যদি বৃষ্টিতে ভিজে অথবা ঝড়ের কবলে পড়ে বই নষ্ট হয়, তাহলে সেটি হবে মরার ওপর খাঁড়ার ঘা।
 
সামনে এগিয়ে ডানে একটু মোড় নিতেই চোখে পড়লো কাকলী প্রকাশনীর প্যাভিলিয়নের ছাদে কাজ করছেন নির্মাণ শ্রমিকরা। আঁটো-সাঁটো করে পলিথিন দিয়ে বাঁধছে প্যাভিলিয়নের ছাউনি।
 
জিজ্ঞেস করতেই কাকলী প্রকাশনীর প্রতিনিধি আব্দুর রহিম বাংলানিউজকে জানান, একটা মাত্র ত্রিপল দিয়ে প্যাভিলিয়নের ছাউনি নির্মাণ করায় তাদের প্রায় শ’ খানেক বই ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। এতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা।
 
সংস্কৃতিমন্ত্রী এসেছিলেন, খোঁজ-খবর নিয়েছেন। পরামর্শ দিয়ে গেছেন ওপরে ভালো করে ছাউনি দিতে- জানান আব্দুর রহিম।
 
ঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আহমদ পাবলিশিং হাউসের। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিনিধি শাহ আলম বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাদের প্রায় ১ লাখ টাকার ক্ষতি হয়ে গেছে। কর্তৃপক্ষের (বাংলা একাডেমির) ত্রুটির কারণেই এই ক্ষতি।
 
আদর্শ প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী মামুন অর রশিদ বাংলানিউজকে জানান, তাদের প্রায় ২০ হাজার টাকার বই ভিজে নষ্ট হয়েছে। এ প্রকাশকেরও অভিযোগ বাংলা একাডেমির দিকে। তার মতে ওপরের ত্রিপলটা যদি পেছন দিকে হেলানো থাকতো তাহলে পানি গড়িয়ে স্টলের ভেতরে পড়তো না। একাডেমির দক্ষতার অভাবেই এ ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন প্রকাশকরা।
 
গদ্যপদ্য প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মীর জানান, তাদের প্রায় ১৫/২০ হাজার টাকার বই নষ্ট হয়েছে। ত্রিপলের ফাঁক গলে স্টলের ভেতরে পানি ঢোকার কারণেই এই ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে তাদের।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০০, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৫

** বাতায়ন থেকে খোলা দরজায়!

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।