ঢাকা, শুক্রবার, ৬ আষাঢ় ১৪৩২, ২০ জুন ২০২৫, ২৩ জিলহজ ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

লন্ডন বৈঠকের পর জামায়াত-এনসিপিকে নিয়ে কী ভাবছে বিএনপি

ইফফাত শরীফ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২:২০, জুন ১৯, ২০২৫
লন্ডন বৈঠকের পর জামায়াত-এনসিপিকে নিয়ে কী ভাবছে বিএনপি

ঢাকা: আগামী বছর রমজানের আগেই অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকে এ সংক্রান্ত আলোচনা হয়।

পরে ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের যৌথ বিবৃতিতে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ইঙ্গিত মেলে।  

এই বৈঠকের পরের দিনই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী অভিযোগ করে, প্রধান উপদেষ্টা একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের প্রতি পক্ষপাত দেখাচ্ছেন, যা দেশে নতুন করে রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। রাজনৈতিক দলের নেতার সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের যৌথ বিবৃতি তাদের মতে আপত্তির বিষয় বলেও জামায়াত জানায়। এমনকি ওই বৈঠকে নির্বাচনের সময় নির্ধারণের ঘোষণার জন্য তারা প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে গত মঙ্গলবারের (১৭ জুন) সংলাপ বয়কটও করে।

প্রায় একই সুরে কথা বলে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তাদের দাবি, সরকার নির্বাচন নিয়ে একটি নির্দিষ্ট দলের দাবিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে, যা নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য অনুকূল নয়। এনসিপি আরও বলেছে, নির্বাচনের চূড়ান্ত আলোচনার আগে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রণয়ন, ‘জুলাই সনদ’ কার্যকর করে মৌলিক সংস্কার আনা এবং একটি ‘বিচারের রোডম্যাপ’ ঘোষণা করা জরুরি।  

এনসিপির এই অবস্থান ইঙ্গিত দেয়, তারা বর্তমান আলোচনাকে সামগ্রিক গণতান্ত্রিক সংস্কারের পরিবর্তে কিছু দলের রাজনৈতিক এজেন্ডা হিসেবে দেখছে।

বিএনপির নেতারা জামায়াত ও এনসিপির এ ধরনের অভিযোগ ও মূল্যায়নকে অযৌক্তিক বলছেন। দলটির নেতারা অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সবার অংশগ্রহণে আসন্ন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন।

জামায়াত ও এনসিপির তরফ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের একটি বিশেষ দলকে সুবিধা দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স কা ‘অযৌক্তিক এবং অপরিপক্ক’ বলে অভিহিত করেন।  

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপি বাংলাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল এবং বিএনপিকে উপেক্ষা করে কোনো সিদ্ধান্ত সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা যাবে না।  

তিনি নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং নির্বাচনকে বিলম্বিত না করার ওপর জোর দেন।  

জামায়াতের বিষয়ে প্রিন্স বলেন, অতীতে অনির্বাচিত শাসন দীর্ঘায়িত করার জন্য বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করা হয়েছিল।  

তিনি স্বীকার করেন, বর্তমানে জামায়াত ও এনসিপির সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব তৈরি হয়েছে, তবে বিএনপি আগামী নির্বাচনে সবাইকে নিয়ে সরকার গঠন করতে চায়।

লন্ডনে ১৩ জুন অনুষ্ঠিত ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক নিয়ে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির অভিযোগের বিষয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান বিএনপির আরেক যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি। তিনি প্রশ্ন তোলেন, জামায়াতের আমির যদি মনে করেন লন্ডনের বৈঠকটি পক্ষপাতমূলক ছিল, তাহলে বিএনপির সঙ্গে এতো আন্দোলন করার পর এমন মন্তব্য কি শোভা পায়? 

এ্যানি উল্লেখ করেন, লন্ডনের বৈঠক ছাড়াও অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে জামায়াতের ১০ বারের বেশি বৈঠক হয়েছে, যার মধ্যে একক ও যৌথ বৈঠকও ছিল, কিন্তু তখন বিএনপি কোনো অভিযোগ করেনি।

এ্যানি আরও বলেন, তারেক রহমান দেশের বাইরে থাকায় দেশের ভেতরের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকগুলোতে থাকতে পারেননি; তিনি দেশে থাকলে দেশেই বৈঠক হতো। তারেক রহমানের বিদেশে অবস্থান যেহেতু নতুন কিছু নয়, তাই দেশের বাইরে একটি বৈঠক হওয়া নিয়ে এত কৌশলী মন্তব্য করার প্রয়োজন নেই।

তাদের আন্দোলনের মূল লক্ষ্য স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়া বলেও উল্লেখ করেন বিএনপির এ নেতা।

এ্যানি স্মৃতিচারণ করে জানান, জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানের সঙ্গে তিনি কাশিমপুর কারাগারে একসঙ্গে ছিলেন, যেখানে তারা আন্দোলনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন।

এ্যানি দৃঢ়ভাবে বলেন, বিএনপি একটি দায়িত্বশীল দল এবং অতীতে বহুবার ক্ষমতায় এসেছে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে আগামী দিনে বিএনপিই বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবে, তবে তারা একক বা একদলীয় শাসন চায় না। বিএনপি আগেও সব দলকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠনের কথা বলেছে।  

তিনি বলেন, গণতন্ত্রের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে এবং একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। ভবিষ্যতে কীভাবে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা যায়, তা নিয়ে সবার আলোচনা করা উচিত।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান মনে করেন, লন্ডনে অনুষ্ঠিত বৈঠক দেশের রাজনীতিতে ‘গুণগত পরিবর্তন’ এনেছে।

জামায়াত ও এনসিপির অভিযোগের বিষয়টি বিএনপি কীভাবে দেখছে জানতে চাইলে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমি একটা জিনিস মনে করি, আমরা যদি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি তাহলে এখানে সবার মতামত নেওয়ার সুযোগ আছে। সুতরাং সবাই তার মতামত দিতে পারে। আমার মনে হয় এটাই আমাদের গণতন্ত্রের বড় পাওয়া, সবাই তার নিজের মতামত দেবে। এর মধ্য দিয়েই আমাদেরও এগিয়ে যেতে হবে। ’

ইএসএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।