ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

আওয়ামী লীগ

হাফ ছেড়ে বেঁচেছে সাংবাদিকরাও

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৫ ঘণ্টা, মে ৩, ২০১৬
হাফ ছেড়ে বেঁচেছে সাংবাদিকরাও

গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) থেকে ফিরে: তার কাণ্ডকীর্তি ফাঁস করলে সাংবাদিকদের উপর বেজায় চটতেন ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য ক্যাপ্টেন (অব.) মুজিবুর রহমান ফকির।

ময়মনসিংহের অনেক সাংবাদিককেই তিনি রক্তচক্ষু দেখিয়েছেন।

পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। হত্যার হুমকি থেকে শুরু করে মানসিক নির্যাতনও করেছেন।

কোন কোন সাংবাদিকের মোবাইল ফোনও ট্র্যাকিং করে নজরদারিতে রাখতেন তিনি। বিতর্কে মোড়া এ এমপি দূর আকাশে হারিয়ে যাবার পর যেন হাফ ছেড়ে বেঁচেছে স্থানীয় সাংবাদিকরাও।

জানা যায়, জরুরি সরকারের সময়ে হস্তশিল্প মেলার আড়ালে জুয়ার আসরের বিরুদ্ধে সরেজমিন প্রতিবেদন ছাপার কারণে দেশের একটি জাতীয় দৈনিকের গৌরীপুর উপজেলা প্রতিনিধি সুপ্রিয় ধর বাচ্চুকে নানাভাবে হেনস্থা করেন তিন বারের এ সংসদ সদস্য।

সেই প্রতিবেদনের জুয়ার আসর ভেঙে যাওয়ায় সাবেক প্রতিমন্ত্রীর ক্যাডারদের আর্থিক ক্ষতি হয়। আর এর খেসারত হিসেবে জেলের ঘানি পর্যন্ত টানতে হয়েছিল এ সাংবাদিককে।

মঙ্গলবার (৩ মে) বিকেলে সুপ্রিয় ধর বাচ্চু বাংলানিউজকে বলেন, ক্যাপ্টেন সাহেব যখন ক্ষমতার চর্চা শুরু করলেন তখন কতবার তার দ্বারা নির্যাতিত, নিগৃহীত হয়েছি তার কোন ইয়ত্তা নেই।

তিনি আমার পেছনে ভাড়াটে খুনি লেলিয়ে দিয়েছিলেন। জাতীয় দৈনিকে ময়মনসিংহের প্রতিনিধিত্ব করা বিভিন্ন অনলাইন, জাতীয় দৈনিক ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরাও তার শ্যেন দৃষ্টিতে পড়েছিলেন। হুমকি-ধমকির শিকার হয়েছেন।

দেশের প্রথম সারির একটি জাতীয় দৈনিকের নিজস্ব প্রতিবেদক নিয়ামুল কবির সজলকে কখনোই ভাল চোখে দেখেননি ক্যাপ্টেন (অব:) মুজিবুর রহমান ফকির। রিপোর্ট প্রকাশের জের ধরে বেশ কয়েক দফা তাকে হুমকি দিয়েছেন। এসব ঘটনায় সাংবাদিকরা নিন্দাও জানিয়েছিলেন। কিন্তু টনক নড়েনি বহুল আলোচিত ওই এমপি’র।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নিয়ামুল কবির সজল বাংলানিউজকে বলেন, একেক সময় একেক কথা বলে তিনি হুমকি দিয়েছেন আমাকে। তিনি মারা গেছেন। আমি সব ভুলে গেছি।

গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক মোর্শেদুজ্জামান সেলিমকে কুপিয়ে আহত করার ঘটনার বিষয়টি দেশের প্রায় সব মিডিয়াতেই গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হয়। আর এ খবর প্রকাশের জের ধরে একটি টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক আইয়ুব আলীকে পেটানোর হুমকি দেন এমপি মুজিবুর রহমান ফকির।

এ সময় এমপি তাকে একটি টাইটেলও দেন। এ টাইটেল নিয়ে তীব্র আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। ওই সাংবাদিককে এমপি সেদিন বলেছিলেন, আপনার সম্পর্কে আমার স্টাডি কি জানেন? আপনি ভেতরে জামায়াত, ওপরে বিএনপি, ঠোঁটের আগায় আওয়ামী লীগ। নাইলে পিটনি খাইবেন, এই জন্য। আপনারে আমি চিনি তো।

ওই সাংবাদিকের কাছেই প্রথম মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং করার কথাও স্বীকার করেন এমপি। যা পরবর্তীতে ওই টিভির অনলাইনে প্রকাশিত হয়। সেখানে এমপি বলেন, আপনে একটু বাড়াবাড়ি কম করেন। আপনার মোবাইল ট্রেকিং করেছি তো আমি।

শুধু এ সাংবাদিকেরই নয়, তার কুকীর্তির গোমর ফাঁস করেছেন এমন অনেক সাংবাদিকেরও মোবাইল ফোন ট্রেকিং করতেন এমপি। গৌরীপুরের স্থানীয় কোন সাংবাদিক বা বাসিন্দা এসব সাংবাদিকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাদেরও ডেকে ডেকে হুমকি দিতেন এমপি।

গত ৩০ মার্চ ‘বঙ্গবন্ধুর প্রতি বিরল ভালবাসার আকাশছোঁয়া ভাস্কর্য’ শিরোনামে স্থানীয় সংসদ সদস্য ক্যাপ্টেন (অব:) মুজিবুর রহমান ফকিরের এ ব্যতিক্রমী উদ্যোগের ইতিবাচক খবর ছাপা হয় বাংলানিউজে। এ সংবাদ লেখার সময় ফকিরের সঙ্গে বাংলানিউজ করেসপন্ডেন্ট যোগাযোগ করলে উল্টো হুমকি দেন তিনি।

গৌরীপুরে নিজের একচেটিয়া প্রভাব ও শাসন ধরে রাখতে গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে উপজেলা পরিষদের সামনে ৮টি সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছিলেন এমপি। এ খবর সংগ্রহের সময় ময়মনসিংহ থেকে একটি ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক ঘটনাস্থলে গেলে এমপি’র ক্যাডারদের হাতে লাঞ্ছিত হন। পরবর্তীতে লোক লজ্জার ভয়ে তিনি আর মুখ খোলেননি।

২০০৮ সালের নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো জিতে প্রতিমন্ত্রিত্ব পাবার পর পরই ঠুনকো কারণে একটি টিভি মিডিয়ার সাংবাদিককে নিয়ে প্রকাশ্যে বিষোদগার করেন মুজিবুর রহমান ফকির। নগরীর সানকিপাড়া শেষ মোড় এলাকার একটি স্কুলে কোমলমতি শিশুদের সামনে অনুষ্ঠানে আপত্তিকর সব কথা বলেছিলেন সাবেক এ প্রতিমন্ত্রী।

ময়মনসিংহের এক সিনিয়র সাংবাদিক বলেন, অতীতে আওয়ামী লীগে দোর্দণ্ড প্রতাপশালী অনেক সংসদ সদস্য ছিলেন। কিন্তু তারা কখনো সাংবাদিকদের কারণে-অকারণে হুমকি বা কূটকৌশল করে হেনস্থা করেননি।

আমাদের বার বার মনে হয়েছে ফকিরের মতিভ্রম ঘটেছে। তিনি সাংবাদিকদের সব সময় নিজের বড় প্রতিপক্ষ ভেবে ভুল করেছেন। জয়নাল হাজারী সাজতে গিয়ে তিনি স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছেই ধিকৃত হয়েছিলেন। তার অতীত কৃতকর্মের জন্য আল্লাহ তাকে ক্ষমা করুক।

গৌরীপুরে ফকির রাজত্বের অবসান

বাংলাদেশ সময়: ১৯২১ ঘণ্টা, মে ৩, ২০১৬
এমএএএম/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।