ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

এভিয়াট্যুর

৫ম বর্ষে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ

বদলে গেছে শাহজালাল, আয় বেড়েছে সরকারের

ইমরান আলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২৭ ঘণ্টা, জুন ১, ২০১৫
বদলে গেছে শাহজালাল, আয় বেড়েছে সরকারের ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: এক সময় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছিল গোটা বিশ্বের বিমানবন্দরগুলোর মধ্যে বিপজ্জনক। আইকাও (ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটি) রেটিংয়েও ছিল থার্ড ক্যাটাগরিতে।

নিরাপদ অবতরণ ও উড্ডয়ন ছিল হুমকির মুখে। নিরাপত্তার তেমন বালাই ছিল না। চোরাকারবারীদের ছিল স্বর্গরাজ্য। যাত্রী হয়রানী ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা।

সে সময় শাহজালালে পার্কিংয়ে ছিল না কোনো শৃঙ্খলা। পরিবহন শ্রমিকদের দৌরাত্ম্য ছিল চরমে। সিভিল অ্যাভিয়েশনের কোনো নিয়ন্ত্রণই ছিল না বিমানবন্দরের ওপর।   দুর্নীতির মাধ্যমে বিমানবন্দরের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তারা আঙুল ফুলে হয়েছেন কলা গাছ। দেশি-বিদেশি যাত্রীদের কাছে ঢাকা বিমানবন্দর ছিল আতঙ্কের জায়গা।

এরপর ২০১০ সালের ২৪ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বসে ১০ম গোয়েন্দা সম্মেলন। ওই সম্মেলনে দেশের বিমানবন্দরগুলোর নাজুক পরিস্থিতি উঠে আসে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিমানবন্দরগুলোকে কি পয়েন্ট ইন্সটলেশন (কেপিআই) হিসেবে ধরে নিয়ে নিরাপত্তার জন্য বিশেষায়িত পুলিশের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি উঠে আসে। প্রস্তাব করা হয় এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ গঠনের। এরপর ওই বছরের ১ জুন বিমানবন্দরে কার্যক্রম শুরু করে আর্মড পুলিশ।

দীর্ঘদিনের অনিয়ম দূর করতে গিয়ে প্রথমেই প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয় এ ইউনিটকে। বিমানবন্দরের বিভিন্ন অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর স্বার্থে আঘাত লাগায় আর্মড পুলিশের কাজে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির চেষ্টা করা হতে থাকে।

এমনকি কালেকশনে ব্যস্ত থানা পুলিশও চরমভাবে নাখোশ হয় আর্মড পুলিশের ওপর। কাস্টম ইমিগ্রেশনের এক শ্রেণির দুর্নীতিবাজ সদস্য তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে বলতে থাকেন, আর্মড পুলিশ ৩ মাসও থাকতে পারবে না। এমন পরিস্থিতি পার করে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ১ জুন (সোমবার) ৫ম বর্ষে পদার্পণ করলো।
এরই মধ্যে বিমানবন্দরের আমূল পরিবর্তন এসেছে। বিপজ্জনক ও থার্ড ক্যাটাগরি কাটিয়ে দ্বিতীয় ক্যাটাগরিতে উন্নীত হয়েছে। প্রস্তাবিত তৃতীয় টার্মিনালসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো স্থাপন হলে ফার্স্ট ক্যাটাগরিতে উঠে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

জানা যায়, ২০১০ সালে বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তায় মানুষের অকুন্ঠ আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয় নবগঠিত এ ইউনিট। প্রতিটি সদস্যই নিষ্ঠা আর দায়িত্বশীলতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নিরবিচ্ছিন্নভাবে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।

বিমানবন্দরে এখন যাত্রী হয়রানী তো হয়ই না বরং যাত্রীদের হারিয়ে যাওয়া মূল্যবান জিনিসপত্র উদ্ধার করে তা যাত্রীদের কাছে পৌঁছে দেন এপিবিএন সদস্যরা। যাত্রীদের নিয়ে টানাহেঁচড়া আর লাগেজ টানা পার্টি নেই বললেই চলে। যে কারণে যাত্রীদের কোনো কিছু হারিয়ে গেলেও কর্তব্যরত আর্মড পুলিশ সদস্যরা সেটি খুঁজে এনে অফিসে জমা দেন। এরপর সেই ব্যক্তিকে খুঁজে বের করে তার হারানো জিনিস ফেরত দেওয়া হয়। এ ধরনের প্রাপ্তির সংবাদ তাদের কাছে স্বপ্নের মতোই মনে হয়।

বর্তমানে একজন সিও’র নেতৃত্বে ১ হাজার ১শ’ ৮০ জন সদস্য রয়েছেন বিমানবন্দর আর্মড পুলিশে। এর মধ্যে ১২ জন রয়েছেন বিসিএস সহকারী পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তা।

এয়ারপোর্ট এপিবিএন প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৩শ’ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। পাশাপাশি সাড়ে ৭ হাজার বিভিন্ন ধরনের অপরাধী গ্রেফতার হয়েছে। স্বর্ণ উদ্ধার হয়েছে ১শ’ ৯৩ কেজি। ১২ হাজার ৪শ’ ২২ কার্টন সিগারেট, ১৬ কোটি ৯৫ লাখ ৮০ হাজার ৩শ’ ২৮ টাকার বৈদেশিক মুদ্রা এবং ১৬ দশমিক ১৫ কেজি হেরোইন উদ্ধার করা হয়েছে এ সময়ের মধ্যে।

এছাড়াও যুগের চাহিদা ও পরিবর্তিত বিশ্ব নিরাপত্তার প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রেখে শাহজালালে তৈরি হচ্ছে নতুন
নতুন অনুবিভাগ। জরুরি ও জিম্মিদশা থেকে উত্তরণের জন্য কার্যক্রম শুরু করেছে ক্রাইসিস রেসপন্স টিম (সিআরটি)। যথাযথ টহল পরিচালনার জন্য মাঠে নেমেছে বাইক পুলিশ।

বিমানবন্দরকে সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখার জন্য বসানো হয়েছে সিসি টিভিসহ আধুনিক সার্ভেলেন্স মেকানিজম। টোকাই ও ভিক্ষুকমুক্ত করে বিমানবন্দরকে করা হয়েছে অনেক বেশি যাত্রীবান্ধব ও পরিচ্ছন্ন। যাত্রীসেবা বৃদ্ধি ও নবতর সংযোজনের মাধ্যমে বিমানবন্দরকে বিশ্বমানে উন্নীত করার জন্য চলছে নিরন্তর চেষ্টা।

সার্বিক বিষয়ে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, কার্যকর পুলিশি ব্যবস্থা যে একটি উত্তম বিনিয়োগ হতে পারে তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন। গত ৫ বছরে প্রায় ৩শ’ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ে সরাসরি সহায়তা করেছে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ। তাছাড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার রাজস্ব প্রবৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। এ ইউনিটের চোরাচালানবিরোধী অভিযান অধিকতর রাজস্ব আদায়ে অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে।

যার ফলে গত ৫ বছরে বিমানবন্দর থেকে রাজস্ব আয় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

তিনি আরও বলেন, যাত্রী হয়রানীসহ বকশিশের নামে অবৈধভাবে অর্থ আদায় কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। এক শ্রেণির পরিবহণ শ্রমিকদের প্রবাসী যাত্রীদের টার্গেট করে সর্বস্ব কেড়ে নেওয়ার ঘটনা ছিল নিত্যনৈমিত্তক ঘটনা। তা এখন শুন্যের কোটায় নেমে এসেছে।

লাগেজ কেটে মালামাল চুরি কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। বিমানবন্দরের বহিরাঙ্গনে হারিয়ে যাওয়া লাগেজ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে স্ব স্ব মালিকদের কাছে। এই হচ্ছে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বদলে যাওয়ার নতুন চিত্র।

বাংলাদেশ সময়: ০৭২৬ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১৫
আইএ/আরএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।