ঢাকা, বুধবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫

এভিয়াট্যুর

৮ জনের সুরাহা না করে ১৬ বৈমানিক নিতে বিজ্ঞাপন

ইশতিয়াক হুসাইন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩০ ঘণ্টা, মে ২১, ২০১৪
৮ জনের সুরাহা না করে ১৬ বৈমানিক নিতে বিজ্ঞাপন

ঢাকা: বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে বৈমানিক সংকট বেশ কিছুদিন ধরেই। এই সংকট কাটাতে বিদেশ থেকেও বৈমানিক আনা হয়েছে।

অথচ নিয়োগ পেয়েও ৩বছর ধরে বসিয়ে রাখা হয়েছে ৮ ক্যাডেট বৈমানিককে। এরইমধ্যে সোমবার বিমান এয়ারবাস ৩১০ ও বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজের জন্য বৈমানিক চেয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে বিমানের নিজস্ব ওয়েবসাইটে। এই সার্কুলারের মাধ্যমে ১৬ জন বৈমানিক নেওয়া হবে বলে বিমান সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, ২০১০ সালে বিমান ১০ জন ক্যাডেট বৈমানিককে নিয়োগ দেয়। এদের ৬ মাসের ট্রেনিং সম্পন্ন হয়। শুধুমাত্র সিমুলেটর ট্রেনিংসহ দুই মাসের ট্রেনিং হলেই এরা ফার্স্ট অফিসার হিসেবে নিয়োগ পেতেন। সেই অবস্থায় ১০ জনের মধ্য থেকে ৪ জনকে সিমুলেটরে পাঠানো হয়। এদের মধ্যে দুইজন ফেল করে। বাকি দুইজন উত্তীর্ণ হয়ে এরই মধ্যে বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজে ফার্স্ট অফিসার হিসেবে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। দুইজন ফেল করেছে বাকিরাও ফেল করবে এই অজুহাত দিয়ে বাকিদের আর সিমুলেটর ট্রেনিংয়ে পাঠানো হয়নি।

বিমানের একজন বৈমানিক বাংলানিউজকে বলেন, বিমানের বৈমানিকদের এ ধরনের ফেল করার নজির নতুন নয়। পরবর্তীতে তারা পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়ে বিমানে চাকরি করছেন। অথচ পরীক্ষা দেওয়ার আগেই এরাও ফেল করবে- এ ধরনের ঠুঁনকো অজুহাতে ৮ বৈমানিককে ৩বছরের বেশি সময় ধরে বসিয়ে রাখা হয়েছে। তারা প্রতি মাসে বেতনও পাচ্ছেন। কিন্তু অজানা কারণে তাদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না।  
 
এই ক্যাডেট ৮ বৈমানিক সিমুলেটর ট্রেনিং পাঠানোর জন্য পে-অর্ডার দিয়ে যেতে রাজি হন। যদি তারা সিমুলেটর ট্রেনিংয়ে ফেল করেন তাহলে তারা ট্রেনিং বাবদ খরচ হওয়া অর্থ ফেরত দিয়ে বিমান থেকে বিদায় নেওয়ার অঙ্গীকারও করেছিলেন। কিন্তু কোনো কিছুতেই বিমানের কর্তাব্যক্তিদের এই বৈমানিকদের প্রতি মন গলেনি।

অথচ বিমানে এই সময়ে ৮০ জনের বেশি বৈমানিক প্রয়োজন। বৈমানিক না থাকায় এখন বিদেশ থেকে ১৫ হাজার থেকে ১৮ হাজার মার্কিন ডলার বেতন দিয়ে বিদেশি বৈমানিক আনা হয়েছে। সেখানে দেশীয় একজন বৈমানিক পান মাত্র ৭ থেকে ৮ হাজার মার্কিন ডলার।

এ ব্যাপারে বিমানের ফ্লাইট অপারেশন পরিচালক ক্যাপ্টেন ইশরাত হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, চাইলে বসে থাকা এসব ক্যাডেট বৈমানিকেরা এবার আবেদন করতে পারবেন। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে তাদের নেওয়া হবে।

এরা একবার পরীক্ষা দিয়ে ৬ মাস ট্রেনিং করে আবার কেন পরীক্ষা দেবে প্রশ্ন করা হলে ক্যাপ্টেন ইশরাত বলেন, এবারের বিজ্ঞাপনে এক হাজার ঘণ্টা ফ্লাই করার অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়েছে। আগের নিয়োগ পাওয়াদের ফ্লাইং আওয়ার কম ছিল।   
বিমান সূত্রে জানা গেছে, বসে থাকা ক্যাডেটদের মধ্যে অনেকেরই ৫০০ ঘণ্টার বেশি ফ্লাইং করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। আর এদের প্রত্যেকেরই ১৫০ ঘণ্টা ফ্লাই করার অভিজ্ঞতা আছে।

রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইন্সের একজন বৈমানিক বলেন, বিশ্বের সব এয়ারলাইন্সই ১৫০ থেকে ২০০ ঘণ্টা ফ্লাই করা বৈমানিকদেরই ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে বোয়িং ৭৩৭ কিংবা এয়ারবাসের মতো উড়োজাহাজের ফার্স্ট অফিসার হিসেবে উপযুক্ত করে তোলে। এজন্য বোয়িং কোম্পানি কিংবা আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল সংস্থা (আইকাও) এর সুস্পষ্ট নির্দেশনাও রয়েছে।

কম ঘণ্টা ফ্লাই করা ক্যাডেটদের রুট ট্রেনিংয়ে ২০ ঘন্টার জায়গায় ২৫/৩০ ঘন্টা এবং ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম করালেই তারা বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজের ফার্স্ট অফিসার হতে পারে। কিন্তু এই ৮ বৈমানিককে সেই সুযোগ না দিয়ে নতুন করে করে আবারো বিজ্ঞাপন দেওয়া হলো।

ক্যাডেট বৈমানিকদের মাঝপথে ট্রেনিং বন্ধ করে বসিয়ে রাখার এ ধরনের নজির বিশ্বের কোথাও নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৯ ঘণ্টা, মে ২০, ২০১৪ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।