ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

নওশাদ জামিলের ৪টি কবিতা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪২ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০১২
নওশাদ জামিলের ৪টি কবিতা

দাগ

তোমাকে এনেছি এই সবুজের দেশে
পাহাড়-চূড়ায় বসে চুমু দেব
কেননা পাহাড় শীর্ষে চুমুগুলো গাঢ় হয়, দীর্ঘ হয়

ম্যারাথন চুমুগুলো শুধু কী স্মারক?
স্মরণচিহ্নের মতো এঁকেবেকে চলে রক্তস্রোত
কোথায় থামব?
তুমি তো মৃত্যুর মতো পবিত্র হয়েছ
দৃষ্টিজুড়ে আজ কোনো প্রতিবাদ নেই
প্রেমও নেই
কেবল বিস্ময় নিয়ে তাকিয়েছ দূরে  
ভাবি, এই দাগ এই স্মৃতি
মিশে যাবে বিষণ্ন মাধবকুণ্ডে, ওই ঝর্ণাতলে।

তারপর, পাহাড় পেরিয়ে
মাঠের ভিতরে এসে আমি
ছেড়ে দেব সব সব বেদনার ভার।





সন্ন্যাসীর বাড়ি

পাহাড় পেরিয়ে ডানে সন্ন্যাসীর বাড়ি
তারপর কুঁড়েঘর
বায়ে খাদ
তার নিচে পাতার আড়ালে
লুকিয়ে রয়েছে ধর্মগ্রন্থের পবিত্র এক পাখি

পাখি ওড়ে একা
ছায়া পড়ে ঝাঁকে ঝাঁকে
ঝর্ণাজলে কোথা থেকে এল এত পাখি?

পাহাড়ের খাদ বেয়ে কুয়াশাকাতর মেঘগুলি
একে একে উড়ে যায়
ছুঁয়ে যায় কুঁড়েঘর
আমি এই ঘরে আছি কিছুদিন ধরে
আমি এই ঘোরে আছি অনেক অনেক দিন ধরে!



তিলফুল

ফিরে এসে ভেবেছি, পথের পাশে দূর্বাদল ছিল
ইট-চাপা পড়ে তারা হলুদ হয়েছে
আমিও কী হলুদ নই? জন্ডিসের হাত থেকে বাঁচতে শিখেছি
শিখিনি কিভাবে ঘাস হব
কিভাবে সবুজ হয়ে মিশে যাব মাটির শিথানে।

ঘাস হব ভেবে আমি স্বপ্নের ভিতর
ওই পথে আবারও গিয়েছি
ফিরে এসে দেখেছি, বিস্তৃর্ণ মাঠজুড়ে ফুটে আছে তিলফুল
আচ্ছা, ফুলগুলো এত সাদা কেন?
                  মৌমাছিরা কি হুল ফুটাবে?

মাঝে-মধ্যে ভাবি, অর্থহীন আনন্দের দিকে যাব
ফিরে এসে দেখব পথের ঘাসগুলো লাল হয়ে গেছে

ফিরে এসে দেখব আকাশে জেগে আছে কয়েকটি নক্ষত্র
হয়তো নক্ষত্র নয়, আলোর মতন মৃদু হাসি
ছড়িয়ে পড়েছে পথে, তারা
                 শিশির কণার মতো ভেসে আছে ঘাসে।



শৈশবযান

তেপান্তরে ওই দূরে ঝিকমিকে পাতার আড়ালে
লুকিয়ে রয়েছে রংতুলি, পেনসিল
কিভাবে ফিরব ধূলিমাখা পথে?
খালি পায়ে? মেঠো পথে ধরে
ধূ ধূ মাঠ, উঁচু-নিচু গাছগাছালির ঝোপ পেরিয়ে জোনাকপাড়া এসে
থেমেছে শৈশবযান
তখন ঘুমের ঘোরে অচেতন সারা গ্রাম
আশ্বিনের চাঁদ শুধু জেগে আছে চোখের ওপর

চারদিকে চিঁ চিঁ শব্দ, খচ খচ করা ছোট গর্ত
বড় গর্ত
হয়তো কেউটে বিচ্ছু বানিয়েছে ঘর
সরু গলি ধরে মিহি মিহি আলোকণা পাড়ি দিয়ে
কিভাবে পৌঁছাব?
গাছের ছায়ারা ঘিরে আছে পথে পথে
ছায়াগুলো বিষফলা
ধারালো বিজলি পেয়ে লুকিয়েছে গোপন কোটরে

জোছনাটা শাদা, রাত শাদা পথ শাদা
দূরের দিগন্ত শাদা
তবুও অক্ষরগুলো উড়ে উড়ে চলে মুঠো থেকে

হাতের আঙুলে মুছে ফেলি কালো কুচকুচে রেখাময় ছবি
কী আঁকব কী দেখব
পুঁতে রাখি বেলপাতা, সব হাহাকার

রাত বাড়ে, জোছনাটা তেজি হয়ে তেড়ে আসে চোখের মণিতে
চৌরাস্তার মোড়টাতে শেয়াল-বেজির জটলা পার হয়ে
গরম হাওয়ার স্রোত আসে
কাঁপে বাঁশপাতা
দোলে শালপাতা
পুকুরপাড়ের ঘন শিউলিগাছটা শির শির শব্দ করে
গাছ জেগে
রাত জেগে
চাঁদ জেগে
ঘুমে শুধু তল্লাটের শরীরী মানুষ

উঁচু ডাল নিচু ডাল সব শিরা-উপশিরাজুড়ে
শাকিনি ডাকিনি নাচে, পাতারা বেজায় খুশি হয়ে সুর ধরে
উঠে আয়, উঠে আয় গীত বাজে তেঁতুল গাছের মগডালে

মানুষ এখনো ঘুমে, জোছনাটা নিবে আসে ধীরে
কয়েকটি তারা
গোপনে তাকিয়ে আছে মুখ বরাবর
কি আঁকি কি খুঁজি ভেবে চেয়ে দেখে ইতিউতি
কয়েকপশলা উড়ো মেঘ
দু’তিনটি বক
মাছরাঙা ঝাঁক বেধে উড়ে চলে বাঁশঝাড় থেকে।

 

naoshad jamil

 

 

নওশাদ জামিল

কবি, সাংবাদিক

 

 

 

 

 

 

 

 

বাংলাদেশ সময় ১৬১৫, মার্চ ২২, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।