ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

ভাষার বিকাশে মায়েদের আত্মসচেতন হতে হবে : আনোয়ারা সৈয়দ হক

এম জে ফেরদৌস | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১২

বইমেলা থেকে: বইমেলায় এসেছিলেন কথাসাহিত্যিক ও মনোচিকিৎসক আনোয়ারা সৈয়দ হক। বাংলানিউজের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বাংলা ভাষা, বইমেলা, পাঠ্যাভ্যাস প্রভৃতি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন।



মেলা কেমন লাগছে? জানতে চাইলে আনোয়ারা সৈয়দ হক বলেন ‘মেলা ভাল লাগছে। এই নিয়ে তৃতীয় দিনের মতো মেলায় এলাম। এখন ভিড় একটু কম। ’

পাঠকের পাঠ্যাভ্যাস প্রসঙ্গে তিনি বলেন ‘পাঠকেরা বই কিনছেন, পড়ছেন গল্প কবিতার বাইরে সিরিয়াস বই, সৃজনশীল, মননশীল প্রবন্ধের বইও কিনছেন। আর আমাদের প্রজন্মের পাঠকেরা স্বাধীনতার আগে কিছুটা অপরিপক্ক হয়তো ছিলেন। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা এখন পরিণত হয়েছেন। পরিণত বয়সে সিরিয়াস প্রবন্ধের বই আর কবিতার বই বেশি ভাল লাগে।

তরুণ লেখকদের প্রধান পাঠক তো তরুণরাই। গল্প, উপন্যাসের পাঠক সব সময়ই বেশি, তবে তরুণরাই গল্প, উপন্যাস বেশি পড়ে। আর কবিতার পাঠকও কম নয়। ’

ভাষা ব্যবহারে বিকৃত উচ্চারণ ও ভাষার অশুদ্ধ ব্যবহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন ‘আমাদের ছেলেমেয়েদের ভাষার বিকৃত উচ্চারণ, ভাষার ভুল ব্যবহারের জন্য তাদের মায়েরাই দায়ী।

মায়েরাই তো শুদ্ধ ভাষায় কথা বলেন না। ছোটবেলা থেকে ছেলেমেয়েরা তাদের মায়ের মুখে আঞ্চলিক ভাষা, ভুল উচ্চারণ শুনে আসে। তাই ছেলেমেয়েরাও সেটা থেকে শেখে। শিক্ষিত লোকেরাও আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করে, সচিব, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার সবাই আঞ্চলিক ভাষা সর্বত্র ব্যবহার করে।

আজকাল টেলিভিশনেও দেখি টকশোতে আলোচকরা অশুদ্ধ ও আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলছেন। আমাদের শিশুরা প্রমিত ভাষা শিখবে কীভাবে। এখন পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে কেউ কেউ অন্যকে বিদ্রুপ করার জন্য শুদ্ধ ভাষা ব্যবহার করে।

একজনকে বলতে শুনলাম শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে তার লজ্জা করে। কয়েকদিন পর তো দেখা যাবে ভালো বাংলা বলেন এরকম নিদর্শন হারিয়ে গেছে। ’

তিনি আরো বলেন ‘ইংল্যান্ডের লোকাল ভাষা শুনলে আমরা বুঝতেই পারবো না। কিন্তু ওরা নিজ বাড়িতে ছাড়া অন্য কোথাও আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করে না। বাড়িতে ছেলেমেয়েদের নিয়ে সারাদিন হিন্দি চ্যানেল দেখা বন্ধ করতে হবে। হিন্দি ও ইংরেজি উচ্চারণে বাংলা যেন সন্তানেরা না বলে সেটাও খেয়াল রাখতে হবে। ’

আনোয়ারা সৈয়দ হক এফএম রেডিও প্রসঙ্গে বলেন ‘এটা ভারতের প্রভাব, ভারত যা করবে আমরা কি তার অনুস্মরণকারী হবো? ভারত তো একটা ককটেল ভাষার দেশ, ভারতের কৃষ্টি-সংস্কৃতির সঙ্গে আমার মিললে চলবে না।

আমাদের বৈশিষ্ট সম্পূর্ণ আলাদা। আমাদের ভাষার সাহিত্য অনেক সমৃদ্ধ। আমাদের ভাষাকে আমাদেরই শ্রদ্ধা করতে হবে। ভাষার জন্য রক্ত আমরাই দিয়েছি। ’

শিক্ষার মাধ্যম কী হবে? সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন ‘সরকারের উচিৎ নয় ইংরেজি শিক্ষার ব্যাপারে বেশি উৎসাহ দেওয়া । ইংরেজি আমাদের জানতে হবে। তার জন্য ৬ মাসের একটা প্রশিক্ষণই যথেষ্ট।

আমদের শিক্ষাঙ্গনে ছোটবেলাতেই ইংরেজি চাপিয়ে দেওয়ার কারণে শিক্ষার্থীরা না পারে ইংরেজি, না পারে নিজের ভাষা বাংলা। মাতৃভাষা হবে মূল কাঠামো। কেন ইংরেজি ভাষায় শিক্ষা লাভ করতে হবে?

ইংরেজি মাধ্যমে সমাজের যে অংশ পড়ে তারা হল পরগাছা, ভাষার জন্য তারা প্রাণ দেয় নাই, তৃণমূলের লোকেরাই প্রাণ দিয়েছে। ইংরেজি মাধ্যমের লোকদের বাংলা ভাষায় তাদের কোনো অবদান নাই।

আমরা পৃথিবীর সকল ভাষাকে শ্রদ্ধা করবো, কিন্তু আমার ভাষাকে অবমাননা করে নয়। ’

তিনি আরও বলেন ‘আমাদের মেয়েদের আত্মসচেতন হতে হবে, মায়েদের আত্মসচেতন হতে হবে। তা না হলে ভাষার বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হবে। ’

এবারের বইমেলায় আনোয়ারা সৈয়দ হকের দু’টি প্রবন্ধের বই, দু’টি ছোটগল্প, একটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।