ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

ফয়েজ আহমদের শেষ বই

শ্যামল চন্দ্র নাথ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১২
ফয়েজ আহমদের শেষ বই

১৯৫৪ সালের ভিয়েনার আন্তর্জাতিক সম্মেলনের ‘হিরো’ আর নেই। মুক্তচিন্তা ও প্রগতিশীলতার আকাশ থেকে ঝরে  গেছে হিরাখচিত এক নক্ষএরাজি।

‘মধ্যরাতের অশ্বারোহী’কে আর ফিরে পাবে না বাংলার মাটি।

এবারের মেলায় প্রকাশিত হয়েছে সদ্য প্রয়াত সাহিত্যিক-সাংবাদিক ফয়েজ আহমদের  প্রবন্ধের বই ‘আমার সাম্প্রতিক লেখা প্রবন্ধ’। এখন পর্যন্ত এটাই তার শেষ প্রকাশিত বই। এ বইতেও ফয়েজ আহমদ তার লেখনির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ও মননের ছাপ  রেখে গেছেন। বইটি প্রকাশ করেছে সূচীপত্র প্রকাশনী। এখানে তিনি ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, রাজনীতি ও সাংবাদিকতা বিষয়ে তার মতামাত প্রকাশ করেছেন।

এ বইতে রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থায় রাজনৈতিক দর্শনের পরিবর্তন প্রসঙ্গে ফয়েজ আহমদ লেখেন-- “গণতান্ত্রিক চিন্তার মাধ্যমে ধনতান্ত্রিক শোষনের বাহিরে কোন শাসন ব্যবস্থার কথাই চিন্তা করতে পারি নি। ” দুটি বিশ্বযুদ্ধের কারন হিসাবে চিহ্নিত হয় ধনবাদী-সামান্তবাদী শক্তির পাশবিক যুদ্ধ। যে যুদ্ধে জনগণের সমর্থন ছিল না। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের পর যে-মৌলিক ও দর্শনগত পরিবর্তন হয়, তার কার্যকর প্রতিস্থাপন সম্ভব হয় নি। কেবল মানুষ বদলে গেছে। মননের পরিবর্তন হয় নি। প্রশ্ন জুড়ে দিয়ে বললেন, মৌলিক চিন্তার পরিবর্তন কোথায়? শাসক ও জনগণের ক্ষমতা প্রসঙ্গ তিনি তুলে ধরেন, কেউ চায় না তার অধিকার অন্য কেউ হরণ করুক। অপরের অধিকার হরণ করার মাধ্যমে শাসনের সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা লাভ করে। আর মানুষ তার অধিকারের জন্য সংগ্রাম করে, সংগ্রাম করে ভূমি ও খাদ্যের জন্য, সংগ্রাম করে আশ্রয়ের জন্য।

জেফারসনের উক্তি টেনে লেখেন-- “ যে-কোন ধরনের সরকারই হোক না কেন, তা হবে জনগণের জন্য, জনগণ সরকারের জন্য নয়। ”  ভাষা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাসের সন্ধানে তিনি উল্লেখ করেন-- আজ পর্যন্ত ভাষা আন্দোলনের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস লেখা হয় নি। ভাষা আন্দোলনের রাজনৈতিক ফায়দাটুকু অনেকেই গ্রহণ করেছেন, কিন্তু তার মর্ম উদ্ধার করে ইতিহাস রচনা করেন নি। ভয়াল পঁচিশে মার্চ রাতে তার সাংবাদিক জীবনের বাস্তব ঘটনার ব্যাপক বিশ্লেষণী দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ পাওয়া যাবে এ বইয়ে।
বঙ্গবন্ধুর সাথে পঁচিশে মার্চ রাতে এবং সাত মার্চে এই দুই সন্ধিক্ষণের জীবন্ত সাক্ষী ছিলেন তিনি। ‘হাজার বছরেও এমন অভিজ্ঞতা হয় নি’ প্রবন্ধে তিনি লেখেন, ‘ডিসেম্বর আমাদের একটি গৌরবের ইতিহাসের সাথে সমৃদ্ধ করেছে। এর গন্ধ, স্বাদ; এর পরিধি, প্রেক্ষিত;এর ইতিহাস, ইতিবৃত্ত এবং এর বোধ, বোধদয় আর এমনভাবে কোনদিন পাওয়া যাবে না।
 
প্রেসক্লাব’কে এখানে তিনি তিন জনমের বন্ধু হিসাবে অভিহিত করেন। অবশেষে রবি ঠাকুরের কবিতার লাইন-- মেঘের পরে মেঘ জমেছে,/ আঁধার করে আসে--/ আমায় কেন বসিয়ে রাখো/ একা দ্বারের পাশে’ দিয়ে শেষ করেন প্রবন্ধটি।

আমরা জানি আর দ্বারের পাশে বসে থাকতে হবে না ফয়েজ আহমদকে; সত্যি-সত্যি একা হয়ে তিনি চলে গেছেন দূরের আকাশে। আর কোন দিন ফিরে আসা হবে না এই অদম্য সাহসিক বীরের। তবে সান্তনার কথা হলো তাঁর মৃত্যুর আগে শেষ বইটি তিনি দেখে যেতে পেরেছেন।

বাংলাদেশ সময় ১৫০২, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।