ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

‘ঠাই নাই, ঠাই নাই, ছোট সে মেলা’

আদিত্য আরাফাত, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১২
‘ঠাই নাই, ঠাই নাই, ছোট সে মেলা’

বইমেলা থেকে:   চিত্তরঞ্জন সাহা কি তখন জানতেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের পরের বছর মাত্র কয়েকটি বই নিয়ে এক টুকরো চটের ওপর ৩২টি বই সাজিয়ে যে মেলা শুরু করেছিলেন তিনি, তা কালের পরিক্রমায় মহীরুহ হবে? ১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বর্ধমান হাউসের সামনে বটতলায় একটি বই মেলা শুরু করেছেন। সেই থেকেই বাংলা একাডেমীর বইমেলার সূচনা।

 

মুক্তধারা প্রকাশনার প্রতিষ্ঠাতা চিত্তরঞ্জন সাহা যে বইমেলার সূচনা করেছেন, তা আজ একুশের চেতনাকে ধারণ করেছে।
বইমেলা শুধু এখন মেলা নয়। তা এখন উৎসবে পরিণত হয়েছে। ফেব্রুয়ারি জুড়েই চলে এ উৎসব। প্রতিদিনই দর্শনার্থীর পদচারণায় মুখরিত থাকে বাংলা একাডেমীর বইমেলা প্রাঙ্গণ। তবে একুশে ফেব্রুয়ারি জনস্রোতে পরিণত হয় একুশের বইমেলা।
মঙ্গলবার এবারের অমর একুশে ফেব্রুয়ারি সকালে জনস্রোত ছিল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেই স্রোত নদী হয়ে দুপুর থেকে ঢুকছে বইমেলায়। ভাষাশহীদদের প্রতি সম্মান জানানোর পর একুশের গ্রন্থমেলায় একটুখানি ঢু’ না মারলে কি চলে!

মঙ্গলবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তাই মেলাজুড়ে অনুভূত হয় একুশের আবহ।  

বইমেলার এ একটি দিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তিল ধারণের ঠাঁই থাকে না। জনারণ্য হয়ে ওঠে বইমেলা প্রাঙ্গণ। একুশে ফেব্রুয়ারি লোক সমাগম এতোই বেশি যে বাংলা একাডেমীর বইমেলা প্রাঙ্গণকে মনে হয়েছে ছোট্ট পরিসর। সন্ধ্যায় অনেক দর্শনার্থী প্রচণ্ড ভিড়ের কারণে মেলায় প্রবেশ করতে পারেননি। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় এক দর্শনার্থী মেলায় প্রবেশ করতে না পেরে বলেন, ‘ঠাই নাই, ঠাই নাই, ছোট সে মেলা’।

প্রতি বছরের মতো এবারও একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমী কর্তৃপক্ষ সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মেলার কার্যক্রম চালাচ্ছে।

ছুটির দিনে যানবাহন সঙ্কটের নাগরিক যন্ত্রণা, ভিড় আর দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে মেলার মাঠে ঢোকার দুর্ভোগও দমাতে পারেনি বইপ্রেমীদের। বই কিনে মায়ের ভাষার প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ ঘটাতে সকাল আটটা থেকে রাত রাত পর্যন্ত মেলায় চলছে তাদের পদচারণা। মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসার দীপ্তিতে উজ্জ্বল এখন বইমেলা প্রাঙ্গণ।

সকাল ৮টায় মেলা গেট খোলার পর থেকে দর্শনার্থীদের পদভারে মুখরিত হতে থাকে বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দর্শনার্থীদের মেলায় প্রবেশের সারি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়। দুটি প্রবেশপথে দুটি করে চারটি সারিতে তাদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে।  

বাঁধভাঙা প্রাণের জোয়ার আবারও প্রমাণ করে, একুশ আর একুশে বইমেলা তাদের জীবনে কখনও ম্লান হওয়ার নয়। বইমেলার একুশতম দিনে আগতদের মধ্যে একুশের সাজে সজ্জিত ছিলেন অনেকে। বর্ণমালা লেখা বাহারি কাপড়, কমলা শাড়ি, পাঞ্জাবি ও ফতুয়া পরে আসেন নারী-পুরুষেরা। তবে নানা বয়সের জ্ঞানপিয়াসীরা রঙ-বেরঙের পোশাক পরে ঘুরে বেড়ান মেলায়। অনেকে আসেন দলবেঁধে, আবার যুগল বা সপরিবারেও আসেন কেউ কেউ। শিশু ও তরুণ-তরুণীরা গালে-কপালে এঁকে নিয়েছে জাতীয় পতাকা, শহীদ মিনারের প্রতিকৃতি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন রাস্তাজুড়ে চুড়ি, ফিতা, খেলনাপাতি, মাটির জিনিস আর নানা রকম মিঠাই মণ্ডার পসরা সাজিয়ে মেলা জমান হকাররা। তাদের ওই মেলায়ও ক্রেতা,-দর্শনার্থীর স্রোত ছিল।

মঙ্গলবার রেকর্ড সংখ্যক বই

বাংলা একাডেমীর তথ্যকেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, একুশে ফেব্রুয়ারি নতুন বই এসেছে ২৫৫টি। ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট বইয়ের সংখ্যা দুই হাজার ৭৯২টি। গত বছর একুশে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট বইয়ের সংখ্যা ছিল দুই হাজার ২৭৩টি। ২০১০ সালে ছিল দু্ই হাজার ৬৩০টি। ২০০৯ সালে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে একুশে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছিল দুই হাজার ১৯৭টি বই।

মঙ্গলবার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বইয়ের মধ্যে রয়েছে-মাওলা ব্রাদার্স থেকে সেলিম আল দীন রচনা সমগ্র-৮, ঝিনুক প্রকাশনী থেকে মহাদেব সাহার নির্বাচিত কবিতা, নান্দনিক থেকে হাসান আজিজুল হকের স্বনির্বাচিত গল্প, মুক্তদেশ প্রকাশন থেকে মুস্তাফা জামান আব্বাসীর যে নামেই ডাকি, গদ্যপদ্য থেকে সেলিনা হোসেনের মতিজানের মেয়েরা, অগ্রদূত থেকে সাযযাদ কাদিরের নারীঘটিত, পাঠশালা থেকে সুকুমার রায় ও সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলালের ছড়া সমগ্র, সূচীপত্র থেকে মতিউর রহমান চৌধুরীর কূটনীতির অন্দরমহল, আকাশ প্রকাশনী থেকে আহসান হাবীবের ভূত-রম্য প্রভৃতি।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।