ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

বোধের বহিঃপ্রকাশের শক্তিশালী মাধ্যম কবিতা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২১ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০২১
বোধের বহিঃপ্রকাশের শক্তিশালী মাধ্যম কবিতা ‘মর্ত্যে রচিব অমরাবতী’ কাব্যগ্রন্থের পাঠ উন্মোচন।

কক্সবাজার: আমি মানুষ/তবে আপনাকেই বলছি/কাউকে বলবেন না, প্লিজ/আসলে আমি হোমো স্যাপিয়েন্স/জানোয়ার ডাকলে আপত্তি করি/কিন্তু বাঘের বাচ্চা বললে খুশি হই/আমি নাকি সৃষ্টির সেরা জীব।

কবি অধ্যাপক নীলোৎপল বড়ুয়ার ‘মর্ত্যে রচিব অমরাবতী’ কাব্যগ্রন্থের আমি হোমো স্যাপিয়েন্স কবিতার অংশবিশেষ এটি।

শনিবার (১৯ জুন) রাতে কক্সবাজারের রামু ল্যাবরেটরি স্কুল মিলনায়তনে এ কাব্যগ্রন্থের পাঠ উন্মোচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।  

নাট্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সমস্বর’ এর সভাপতি মাস্টার মোহাম্মদ আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মুফীদ্ আল আলম। তিনি বলেন, নীলোৎপলের একটা কবি মন আছে। সব সাহিত্যের অধ্যাপক কবি হয় না, নীলোৎপল হয়েছে। ‘মর্ত্যে রচিব অমরাবতী’ বইয়ের সব কবিতা উতরে গেছে; কবিতাগুলো ঝরঝরে, নির্মেদ, গড়গড় করে পড়া যায়। কোথাও আড়ষ্টতা নেই। পড়তে ভালো লাগে। ‘নিজ চারণভূমির বাইরে, চিন্তা করার ক্ষমতা নাই’। এরূপ সত্য কথা বলার জন্য কবিকে ধন্যবাদ।

‘কবিকে নতুন জগৎ দেখাতে হয়। রাজনীতি, অর্থনীতি, দর্শন ইত্যাদি থেকে কবিতার প্লাটফর্ম আলাদা। তবে সংযোগ রয়েছে। সংযোগের সূত্রটা কবিতার ঢং-এ ধরিয়ে দিতে হবে। পৃথিবীতে কারো একঘরে হয়ে থাকার উপায় নেই, কবিরও না। রামুর সন্তান নীলোৎপল। রামু ধন্য এরূপ সন্তান উপহার দিয়ে’ বলেন তিনি।

অনুভূতি প্রকাশ করে কবি নীলোৎপল বড়ুয়া বলেন, ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র আমি। সাহিত্যের প্রতি, মানুষের প্রতি, সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা সবসময় অনুভব করি। তাই আমার কবিতার বিষয়ও মানুষ, সমাজ, সভ্যতা। সময়কে ধারণ করে, কবিতাগুলোতে কথা বলার চেষ্টা করেছি বর্তমানের। যা হয়ে উঠেছে সব সময়ের।

তিনি বলেন, কবিতা হচ্ছে কবির বোধের বহিঃপ্রকাশ। নিজের মধ্যে যে বোধ সৃষ্টি হয়, সেটা প্রকাশ করার শক্তিশালী মাধ্যম কবিতা। কবিতার মধ্য দিয়ে অনেক বড় কথা, বিষয় ছোট করে প্রকাশ করা যায়। আমি মনে করি এজন্যেই কবিতা হচ্ছে শক্তিশালী মাধ্যম, সহজে নিজের বোধের বহিঃপ্রকাশের।  

অনুষ্ঠানে আলোচনা করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমদ, রামু সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মো. আবদুল হক, সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিজামুল হক, রামু পাবলিক লাইব্রেরির সাধারণ সম্পাদক মুজিবুল হক, বাংলাদেশ বেতার কক্সবাজার কেন্দ্রের সংগীত প্রযোজক বশিরুল ইসলাম, সংগীত শিল্পী মানসী বড়ুয়া, সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা ননী গোপাল দে, বাঁকখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের নির্বাহী পরিচালক কিশোর বড়ুয়া, রামু প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি খালেদ শহীদ, রামু উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নীতিশ বড়ুয়া, ছড়ুয়া সম্পাদক কামাল হোসেন প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন বেহালাশিল্পী আহমদ কবীর। ‘মর্ত্যে রচিব অমরাবতী’ কাব্যগ্রন্থ থেকে কবিতা পাঠ করেন মানসী বড়ুয়া, জয়নাল আবেদিন, সুনীল বড়ুয়া, জিয়াউল হক বাদশা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার জয়নাল আবেদিন, রামু ল্যাবরেটরি স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাহাবুবুল আলম, সমস্বরের সাধারণ সম্পাদক মিজানুল হক।

৫৬ পৃষ্ঠার ‘মর্ত্যে রচিব অমরাবতী’ কবিতার বইটি প্রকাশ হয়েছে ‘মার্চ ২০২১’ সালে। মূল্য দুইশত টাকা। এ কাব্যগ্রন্থের প্রচ্ছদ এঁকেছেন কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের চারুকলা শিক্ষক রেজাউল করিম রেজু। কবি নীলোৎপল বড়ুয়া সূচিপত্রে কবিতার শিরোনাম করেছেন ‘মর্ত্যে রচিব অমরাবতী’, ‘হোমো স্যাপিয়েন্স’, ‘এই বেশ ভালো আছি’, ‘কিছু কিছু পরিচয়’, ‘যাচ্ছে নেমে’, ‘সমাজ দর্পণ’, ‘ডাক’, ‘টু বি অর নট টু বি’, ‘গুণগত পার্থক্য’, ‘মাঝখানের বিচ্যুতি’, ‘হৃদয়ের সৌজন্যবোধ’, ‘অষ্টপ্রহরের সঙ্গী’, ‘সমর্পিত অপেক্ষা’, ‘বর্তমান’, ‘মুখোমুখি’, ‘যেভাবে আজ আমি’, ‘সন্ধান’, ‘এখানে সবকিছু’, ‘সবাই দেখি আমার মতন’, ‘হেই ভালোবাসা’, ‘দুঃসময় একুশের ও আমার’, ‘মানুষ আমরা’, ‘একুশের সৃষ্টি’, ‘তোমার কী এসে গেল’, ‘সভ্যতা’, ‘উলটাপালটা স্বপ্ন’, ‘আমি’, ‘জবাব দিতে পারিনি’, ‘জীবন সাধন’, ‘ভালো থাকতে’।

এই বইয়ের কবিতাগুলো দারুণ সৃষ্টিকর্ম উল্লেখ করে সাংবাদিক খালেদ শহীদ বলেন, একটি সৃষ্টিকর্ম মানুষকে জীবিত রাখে অনন্তকাল। ‘মর্ত্যে রচিব অমরাবতী’ মানুষ, সমাজ, সভ্যতায় জীবিত রাখবে কবি, অধ্যাপক নীলোৎপল বড়ুয়াকে।

উল্লেখ্য রামু’র সন্তান নীলোৎপল বড়ুয়া দুই দশক ধরে শিক্ষকতা করছেন নাইক্ষ্যংছড়ি হাজী এম এ কালাম সরকারি কলেজে। বাংলাদেশ বেতার এর ‘অনুষ্ঠান ঘোষক’ ও ‘সংবাদ পাঠক’ তিনি। সাহিত্য-সাংস্কৃতিক কর্মযজ্ঞে দীর্ঘদিন ধরে তাঁর সরব উপস্থিতি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৪ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০২১
এসবি/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।