ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

‘বনবিহারী’ যেন প্রকৃতির প্রতিচ্ছবি

এম আলম রাইন, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০২১
‘বনবিহারী’ যেন প্রকৃতির প্রতিচ্ছবি আলম শাইন

কেমন হবে একটা সবুজ অরণ্যে ঘেরা দ্বীপে আপনি বছরের পর বছর কাটিয়ে দিলে? যে দ্বীপ বনে অবিরত জোৎস্না চুইয়ে পড়ে ক্ষীর রসের মতো। যে দ্বীপে নদীর মোহনা আর সমুদ্রের ফেনিল ঢেউ মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে।

তার চেয়েও বড় কথা হচ্ছে, দ্বীপে আছে আপনার বেঁচে থাকার রসদ আর উপভোগ করার মতো নৈসর্গিক সব দৃশ্য!

দ্বীপে আরো রয়েছে আপনার পছন্দের সব বন্যপ্রাণী। আছে ভয়ংকর বুনো কুকুর আর বুনো মহিষের যত্রতত্র বিচরণ। এছাড়া আপনি যদি হন পাখিপ্রেমী, তাহলে কথাই নেই; ধরে নিন উপন্যাসটি আপনার জন্যই রচিত।

‘বনবিহারী’ উপন্যাসটি বন্যপ্রাণী ও পরিবেশ বিষয়ক লেখক, কলামিস্ট আলম শাইনের লেখা। লেখকের ষোলতম প্রকাশিত গ্রন্থ ‘বনবিহারী’ মূলত প্রকৃতিপ্রেমী পাঠকদের উপযোগী করেই রচিত।  

উপন্যাসটি নিঝুম দ্বীপের পটভূমিতে লেখা। কাব্যিক সূচনা দিয়ে লেখা বনবিহারী’র প্রতি পাতায় পাতায় রয়েছে বিশেষ চমক। উত্তম পুরুষে লেখা এই উপন্যাসটিতে প্রকৃতি বন্দনার পাশাপাশি রয়েছে গহিন জঙ্গলে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ধরনের রোমহর্ষক ঘটনাবলি। যার সাক্ষী হয়ে আছে মায়ারাণী। এই মায়ারাণী হচ্ছে একটি মাদি হাতির নাম। দ্বীপ বনে মায়ারাণী ছাড়া চলাফেরা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। জঙ্গলে হিংস্র বুনো কুকুর আর বুনো মহিষের যত্রতত্র বিচরণের কারণে বনচারীদের বিচলিত থাকতে হচ্ছে সর্বক্ষণ। এই বুঝি প্রাণ গেল!

কাহিনী সংক্ষেপ: বিপত্নীক অবসরপ্রাপ্ত প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী ‘রাজ্জাক বিশ্বাস’ নিঝুমদ্বীপ ভ্রমণে বের হয়ে যাত্রাপথেই পরিচিত এক ক্লায়েন্টকে পেয়ে যান। গল্প করতে করতে জানতে পারেন তাদের কোম্পানি একটি ভেষজ প্ল্যান্টের জন্য দ্বীপের একাংশে বিশাল জায়গা লিজ নিয়েছে। ওই প্লান্টের পরিচালক ব্যক্তিগত কারণে দ্বীপের নির্জনতা পছন্দ করেননি বলে চাকরি ছেড়ে চলে যান।  

এদিকে ঘটনাক্রমে গল্পের নায়ক মধ্যবয়স্ক রাজ্জাক বিশ্বাস কোম্পানির প্রজেক্ট পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত হন। দ্বীপের প্রকৃতি এবং পরিবেশ তাকে এতোটাই মুগ্ধ করেছিল যে, তিনি দিব্যি বছরের পর বছর ওখানেই কাটিয়ে দিয়েছেন। অল্প সময়ের মধ্যেই কোম্পানির বিভিন্ন কর্মচারী, প্রহরী ও শ্রমিকরা আপনজন হয়ে ওঠেন নিঃসঙ্গ এই পরিচালকের।

পশু-পাখির অভয়ারণ্য নিঝুম দ্বীপ চারটি ভাগে বিভক্ত। দ্বীপের একধারে স্বচ্ছ নীল সমুদ্র আর অন্যধারে মেঘনা নদীর ঘোলাটে মোহনা। দ্বীপ বন আর সমুদ্রের গর্জন মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় মায়াবী পূর্ণিমার রাতগুলোতে। ঘটনাপ্রবাহে দ্বীপান্তর জীবনের অম্লমধুর স্মৃতি আর অভিজ্ঞতার শেষদিকে করুণ কিছু অনুভূতিও ব্যক্ত করেছে লেখক।

দ্বীপ বনের বিশেষ আকর্ষণ হচ্ছে বনজ্যোৎস্না। মায়ারাণীর পিঠে চড়ে পূর্ণিমা উপভোগ করতে দেখা যায় ভেষজ প্ল্যান্টের পরিচালককে।  

লেখকের সেই বন পূর্ণিমার বর্ণনা সামান্য তুলে দেওয়া হলো- ‘ধীরে ধীরে চন্দ্র তেজোময় জ্যোতি ছড়িয়ে উপরে উঠতে লাগল; সোনালি আভা ফুরিয়ে গেছে নিমেষেই, রুপালি জ্যোতি ছড়িয়ে পড়েছে কয়েক মিনিটের মধ্যেই। বনভূমি মুহূর্তেই ফর্সা হয়ে গেল, চন্দ্রপ্লাবনে ভাসছে এখন দ্বীপ বন। তার ওপর মৃদুমন্দ বসন্ত বাতাসও বইছে, তাতে মন উদাস হয়ে গেল আমার। চন্দ্রের এত আলোকচ্ছটা, এত রূপ আগে কখনো দেখিনি আমি। ইচ্ছে করছে হাত বাড়িয়ে চন্দ্রটাকে স্পর্শ করতে; কিন্তু সে সাধ্য নেই। ’

বাকিটা জানতে হলে আপনাকে পড়তে হবে আলম শাইনের ‘বনবিহারী’। লেখকের নৈসর্গিক বর্ণনার মায়াজালে হারিয়ে যেতে থাকবেন উপন্যাসের প্রতিটি পরিচ্ছদেই।

ব্যক্তিগত অভিমত: লেখকের বর্ণনা এবং উপন্যাসের চরিত্রকে প্রকৃতির প্রতি বিমোহিত হতে দেখে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আরণ্যক’ আর বুদ্ধদেব গুহের ‘কোয়েলের কাছে’ উপন্যাসের বর্ণনার কথাই মনে পড়ে গেল। সত্যিই বুঝি আলম শাইন তাদের উত্তরসূরিদের একজন হলেন। উপন্যাসটি দেশের ঐতিহ্যবাহী প্রকাশনা সংস্থা মাওলা ব্রাদার্স থেকে প্রকাশিত হচ্ছে। প্রচ্ছদ করেছেন ধ্রুব এষ। ১৪৪ পৃষ্টার এই উপন্যাসের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২৭৫ টাকা।

এম আলম রাইন, বিএফএ (প্রাচ্যকলা বিভাগ)
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।