ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

লালবাগ (পর্ব-৩)

নভেরা হোসেন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০২০
লালবাগ (পর্ব-৩) ...

সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নার মিশেলে এই জীবন। একগুচ্ছ মুহূর্তের কোলাজ।

গল্প-উপন্যাস সেই মুহূর্তগুলো ধরে রাখার উৎকৃষ্ট মাধ্যম। পুরান ঢাকার লালবাগকে যেমন সময়ের ফ্রেমে বেঁধেছেন লেখক নভেরা হোসেন। ‘লালবাগ’ একটি নভেলা। এটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হবে বাংলানিউজের শিল্প-সাহিত্য পাতায়। নভেলাটি পড়তে পাঠক বাংলানিউজে চোখ রাখুন প্রতি শুক্রবার ও মঙ্গলবার।

৩ 
জহির  মামুদ মামুদের দাদা, ইন্ডিয়ার বিহার থেকে এ দেশে এসেছে। ঐখানে জহির মামুদরা বংশ পরম্পরায় বাস করতো। বাড়ি-ঘর, গাছপালা, ক্ষেত-খামার সব ছিল। জিন্নাহ সাহেবের দ্বিজাতিতত্ত্বে দেশ ভেঙে দুটুকরা হয়ে গেলো। এতদিনের হিন্দু-মুসলমান ভাই ভাই সব শত্রু হয়ে গেলো। কেউ কারও নাম শুনতে পারে না। একজন যেন অন্যের চিরকালের শত্রু। কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারে না। কলমের একটা খোঁচায় সবকিছু বদলে গেলো। রাজনীতির কঠিন মারপ্যাঁচ সাধারণ মানুষ বোঝে না, তারা শুধু ভুক্তভোগী। তাদের এক দেশ থেকে আরেক দেশে, এক ভূমি থেকে আরেক ভূমিতে ছুটে বেড়াতে হয়। কোথাও পুরোপুরি ঠাঁই হয় না। ওখানে মুসলমানরা ভয়ে পালাতে  লাগলো। যারা পালাতে পেরেছিল, আত্মরক্ষা করতে পেরেছিল, লুকিয়ে ছিল, তারা অনেকে ঐদেশে থেকে গেলো। জহির মামুদের এক বোন আর এক ভাই বিহারে রয়ে গেলো। তাদের কথা আর কোনোদিন জানতে পারে নাই জহির মামুদ। হিন্দুদের ওপর আক্রমণ হচ্ছিল এই প্রান্তে, ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়ে ভয়-ভীতি দেখিয়ে এমন এক পরিবেশ তৈরি করা হয়েছিল, অনেকেই প্রাণ ভয়ে ইন্ডিয়া চলে যায়। অনেকে মুসলমানদের সাথে সম্পত্তি বিনিময় করে ইন্ডিয়াতে যায়। পূর্ব পাকিস্তান, পশ্চিম পাকিস্তানের হিন্দুরা সব দল বেঁধে ঘটি-বাটি নিয়ে এক কাপড়ে সীমান্ত পার হয়ে ইন্ডিয়া চলে গেলো চিরজীবনের মতো।

জহির মামুদ বউ, ছেলে-মেয়ে নিয়ে এপারে চলে আসে। সাত চল্লিশের পর প্রথম নারায়ণগঞ্জে আসে, আদমজী জুট মিলে চাকরি পায়। মিলের চাকরি করে ভালোই চলছিল সংসার। একবার মিলে বেতন নিয়ে ঝামেলা হয়, তখন কিছুদিন সবার বেতন বন্ধ থাকে। এরপর ঝামেলা হয় বিহার থেকে আগত সালমানকে নিয়ে। সালমান ঠিকমতো কাজে যেত না, মিলের নিয়ম মেনে কাজ করতো না, আড্ডা দিয়ে ঘুরে বেড়াতো, দল পাকাতো। এ নিয়ে মালিকপক্ষের সাথে সালমানের প্রায়ই কথাকাটাকাটি হতো। একপর্যায়ে সালমানের সাথে মিলের এক উচ্চ পর্যায়ের কর্মচারীর হাতাহাতির ঘটনা ঘটে, পরে মালিকপক্ষ গুণ্ডা দিয়ে সালমানকে খুব পেটায় মিলের ভেতরে। সালমান মারাত্মক আহত হয়। শ্রমিকরা মিল বন্ধ করে দেয়। মিছিল, ঘেরাও, পুলিশ, লাঠিচার্জ। অনেকের নামে সমন জারি হয়। জহির মামুদ তখন তাগড়া জোয়ান। সেও এইসব ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ে। শেষে আরও অনেকের সাথে মিলের চাকরিটা চলে যায়। একদম পথে বসার মতো অবস্থা। কিছুদিন এটা সেটা নানা কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে হয়, সংসারে অভাব-অভিযোগ বাড়তে থাকে। এভাবে বেশিদিন চলে না। সেই সময় আরও অনেকের সাথে জহির মামুদ পরিবার নিয়ে মিরপুরে চলে আসে। পাকিস্তানি সেনা শাসক আইয়ুব খান বিহার থেকে আগত মুসলমানদের থাকার জন্য কোয়াটার তৈরি করে দেয় ঢাকার মিরপুর, মোহাম্মদপুর এই এলাকাগুলোতে। জহির মামুদ তারই একটা ঘরে বরাদ্দ পায়। দুই ছেলে আর এক মেয়ে নিয়ে মিল্লাত ক্যাম্পে শুরু হয় বসবাস। ক্যাম্পের ঘুপচি ঘরে নতুন জীবন। মিরপুরে এসে বেনারস থেকে আসা কারিগরদের সাথে আলাপ-পরিচয় হয়।  বেনারস থেকে আগত হামিদের সাথে পরিচয় হয়, বন্ধুত্ব হয়। হামিদরা পৈতৃক -সূত্রে বেনারসি শাড়ির কারিগর। জহির মামুদকে শাড়ি তৈরির কাজ শিখিয়ে দেয়। কয়েক বছরের মধ্যে জহির মামুদ ঘরে বেনারসি শাড়ির তাঁত বসায়, তার দেখাদেখি বিহার থেকে আসা অনেকেই বেনারসি তৈরির কাজে জড়িত হয়ে পড়ে। ছেলে মোহাম্মদ ও মেয়েদের নিয়ে জহির মামুদ কাজ শুরু করে।

জহির মিয়ার বড় ছেলে মোহাম্মদ নানা রকম কারুকার্যময় বেনারসি শাড়ি বুনতো, মিরপুর এগারো নম্বর বাজারে একটা দোকান দিল, বোনের বিয়ে হলো আরেক বেনারসি কারিগরের সাথে। ছোট ভাই জাভেদ মোহাম্মদপুরে চলে গেলো জহুরি মহল্লায়।

বাবার মৃত্যুর পর মোহাম্মদ কলোনির ঘরেই নতুন জীবন শুরু করে। অভাব-অনটন, ছোট দমবন্ধ ঘরে বেড়ে চলে সংসার। বিয়ে করে মিরপুর এক নম্বর শিয়ালবাড়ির ফিরোজকে। ফিরোজারাও বিহার থেকে এসেছে সাতচল্লিশের পরে। স্ত্রী ফিরোজা আর এক ছেলে তিন মেয়ে নিয়ে মোহাম্মদের সংসার। ফিরোজা খুব সুন্দর হাতের কাজ জানতো। বেনারসি শাড়ির মধ্যে নানারকম হাতের কাজ করতো। মসৃন জমিনের ওপর নকশাকার ফুল, লতা-পাতা, বরফি কত কি! এছাড়াও কারচুপির কাজ করতো শাড়িগুলোতে, চুমকির কাজ, জরির কাজ। একেকটা শাড়িকে মনে হতো আসমানে তারা ফুটে আছে। সেই ফিরোজাও তিনদিনের জ্বরে ভুগে চলে গেলো। মৃত্যুর সময় ফিরোজা মোহাম্মদের হাতে তিন মেয়ে আর এক ছেলেকে সপেঁ দিয়ে বলেছিল ওরা যেন কোনো দিন ভাত-কাপড়ের কষ্টে না থাকে, কিন্তু মোহাম্মদ সে কথা রাখতে পারে নাই। আয়-রোজগারে অমনোযোগী হয়ে পড়ে, স্ট্রান্ডেড পাকিস্তানিদের অফিসে গিয়ে বসে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।

অফিসে ক্যাম্পের আরও অনেকে আসে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ এখনও মনে করে পাকিস্তান সরকার একদিন তাদের পাকিস্তানে নিয়ে যাবে। আবার অনেকে এদেশে যে জীবন গড়ে নিয়েছে, তার আর কোনো পরিবর্তন চায় না। যেটুকু আছে তা যেন কোনোদিন হাতছাড়া হয়ে না যায় এই দুশ্চিন্তায় থাকে। ছেলে–মেয়েদের ভালো করে লেখাপড়া শেখাতে পারেনি, এই আফসোস সবার মনে। মিরপুর এগারো নম্বরে রাস্তা বানানোর জন্য অনেকের দোকান চলে যাচ্ছে, দোকানের জন্য সবাই অন্য একটা বিকল্প জায়গা চায়। কিন্তু কে শুনবে তাদের কথা? বাজারে মোহাম্মদের জরি, চুমকি, ওড়না এসবের দোকান। ওই দোকানের আয় আর মামুদের মামাদের থেকে সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে ছেলে-মেয়েদের খুব কষ্টে বড় করেছে। এখন সারাদিন ঘরে শুয়ে থাকে, শরীরও বেশি ভালো না, বাতের ব্যথায় সারাদিন কোঁকাতে থাকে। আরও নানা অসুখ, পেটে খাবার সহ্য হয় না। এখন ছেলের রোজগারেই পুরো সংসার চলে।

মামুদ ওই মামুদ সোবাহানকে ঘরে ঢুকতে দেখে মোহাম্মদ বিছানা থেকে ডাকতে থাকে।
দেখ সোবাহান আসছে।
মামুদ আজ একটু দেরিতে ঘুম থেকে উঠেছে। সারারাত মহররমের তাজিয়া মিছিলে ছিল, সেজন্য শেষ রাতে ঘরে এসে ঘুমিয়েছে।
সোবাহানের কথা শুনে শাবান সামনের ঘরে আসে।
কী শাবান কেমন আছো?
ভালো। আপনি ভালো আছেন?
আর ভালো থাকা যায়? সারাদিন দৌড়ের ওপর। কিন্তু তোমাকে দেখলে সব ভালো লাগে শাবান।
শাবান চোখ নামিয়ে বলে আপনি তো আর আসেন না আমাদের এইখানে।
কাম না থাকলে কেমনে আসি? ইচ্ছা তো করে।
শাবানের চোখে-মুখে উজ্জ্বল এক আভা ফুটে ওঠে, আঙুল দিয়ে চেয়ারে দাগ কাটতে থাকে।  
রোজা, মহররম ওরা কই?
ওরা বড় মামুর বাড়িতে গেছে পল্লবীতে।
তোমার কলেজ শুরু হবে কবে?
এই শুরু হয়ে যাবে কিছুদিনের মধ্যে। শোনেন সোবাহান ভাই আজ আমাদের বাসায় রাতে বিরিয়ানি রান্না হবে, খানা-পিনা হবে, অনেক মজা হবে, আজকে থাইক্যা যান। ভাইজানরা তাজিয়া মিছিল করবে, বুকে ছুরি দিয়া কাইট্যা হায় হাসান, হায় হোসেন জিকির করবে।
সোবাহান হাসে, আমার কি সেই সময় আছে? এক্ষুনি মাল নিয়ে লালবাগে যাইতে হবে। মামুদ কই? সাড়াশব্দ নাই।
ভাইজান গোসল করতেছে। আপনাকে চা বানাইয়া দেই? ঘরে বাখরখানি আছে।
না না ঝামেলা কইরো না।
ঝামেলা হবে কেন, আপনি আসলে আমাদের কত খুশি লাগে।
সোবাহান খাটের পাশে বসে অপেক্ষা করতে থাকে। মামুদ একটা মুখবন্ধ চিরুনি খুলে চুল আচড়াতে আচড়াতে সামনের ঘরে এসে ঢোকে।
সরি সোবাহান ভাই তোমার দেরি করাইয়া দিলাম।
না না অসুবিধা নাই।
শাবান দু কাপ চা, বাখরখানি আর একটা পিরিচে দুটো লাড্ডু এনে সামনে রাখে।
খাও সোবাহান ভাই।
সোবাহান একটা বাখরখানি দিয়ে লাড্ডু খায়। মামুদ চিরুনি দিয়ে চুল আচড়াতে থাকে আর মনে মনে আজকের মালের চালানের হিসাবটা করে ফেলে। সোবাহানের কাছে মামুদদের কথা বলার ভাষাটা ভালো লাগে। ওরা বাংলা বলে কিন্তু কিছুটা উর্দু-হিন্দি উচ্চারণে।
কীরে মামুদ কই যাইতাছোস? মামুদের বাবা বিছনায় শুয়ে জানতে চায়।
কাজে বাবা, তোমার কিছু লাগবো?
আমার জন্য কয়েকটা ডাইল পুরি পাঠা কাউরে দিয়া।
তুমি ডাইল পুরি খাইবা? হজম হইবো?
হইবো হইবো, তুই পাঠা।
সোবাহান হেসে বলে চাচা ভালো আছেন?
আছি বাবা, কোনোরকম বাঁইচা আছি। আমাগো আবার বাঁইচা থাকা! কুত্তা-বিলাইয়ের জীবন। বাপের হাত ধইরা এই দেশে আসলাম কত স্বপ্ন নিয়া। মুসলমানগো দেশ। সবাই ভাই ভাই। কয়দিনের মধ্যে সব বদলাইয়া গেলো। যেন সবাই সবার দুশমন। আমরা বিহারিরা একটা অভিশাপ বাবা। ক্যাম্পের ঘরে জিন্দেগি কাটাইয়া দিলাম। আমাগো কি ইচ্ছা করে না ভালো দালান-কোঠায় থাকতে? ছেলে-মেয়ে নিয়ে সুখের জীবন কাটাইতে? আমরা এই দেশে শত্রু হইয়া গেছি, রিফিউজি নাম হইছে আমাগো।

সোবাহান বলে সেই দোষতো আপনাগো না।
আমরা কী চাইছি সেইটা কি কেউ কোনোদিন জিজ্ঞাসা করছে? বড় বড় নেতা কায়েদে-আজম জিন্নাহ, নেহরু, গান্ধী, আরও কত নাম। তাদের কথায় দেশ ভাগ হইছে। ইংরেজরা চইলা গেলো দেশটারে লুইটা-পুইটা খাইয়া। দেশ ভাগে হিন্দু-মুসলিম শত্রু হইয়া গেছে। মুসলমানদের জন্য নতুন দেশ বানানো হইছে। কিন্তু এতো কিছু কইরা কার লাভ হইছে? আমরা দেশ ছাইড়া চইলা আসছি, রিফিউজি হইছি। লাভ হইছে ওই বড়লোকদের, রাজনীতিকদের, ব্যবসায়ীদের। তাদের তো কিছু খোয়া যায় নাই। তারা তো কোনো দেশ হারায় নাই, মা-বোন হারায় নাই। মোহাম্মদ লুঙ্গি দিয়ে একটু চোখ মোছে।
সোবাহান অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে মামুদের বাবার দিকে, কেমন রোগাটে আর শীর্ণ হয়ে গেছে। বোঝা যায় একসময় বলশালী লোক ছিল।
সেই পেয়ারা পাকিস্তান আবার ভাইঙা গেলো! হ, আমাগো জ্ঞাতি-গোষ্ঠীর লোক অনেক ভুল করছে। তারা পাকিস্তানিদের সাথে হাত মিলাইয়া অনেক অপরাধ করছে। তাদের ক্ষমা নাই। আমি তাদের ক্ষমা করি নাই।
আব্বা তুমি আবার আগের কথা শুরু করছো? 
সোবাহান বলে না না চাচারে বলতে দাও। মন খালি করুক, তারা তো শুধু কষ্টই করলো। নিজের একটা দেশ কি পাইছে?
কেন পাইবো না, এইটাই এখন আমাদের দেশ। আগে কে কোথায় ছিলাম সেই পরিচয় বড় না। বাঁচার জন্য আমাদের যে জায়গা দিবে, খাদ্য দিবে সেই আমার দেশ, সেই আমার মা।
সোবাহান অবাক চোখে মামুদের দিকে তাকায়। কী অদ্ভুত সব কথা বলে মামুদ, একেবারে কলিজাটা ঠাণ্ডা হয়ে যায়।

নভেরা হোসেন
জন্ম ২০ সেপ্টেম্বর ১৯৭৫, মাদারীপুর শহরে নানাবাড়িতে। শৈশব থেকেই ঢাকায় বেড়ে ওঠা। তিনি লেখাপড়া করেছেন ধানমন্ডির কাকলি উচ্চ বিদ্যালয়, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ এবং নৃবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। লিটল ম্যাগাজিনে লেখা শুরু করেছেন ২০০০ সালের পর থেকে। বিশেষত কবিতা, গল্প ও নৃবৈজ্ঞানিক লেখালেখি করেন। e-mail: [email protected]

আরও পড়ুন>> লালবাগ (পর্ব-২)
                     লালবাগ (পর্ব-১)

বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০২০
টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।