ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

শামীম আজাদের গুচ্ছকবিতা 

শিল্প-সাহিত্য ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৪ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০২০
শামীম আজাদের গুচ্ছকবিতা 

তোমার নিশ্বাস

ও নির্বিকার শরীর সন্ধিস্থল

কী অনায়াসে নেয় তুলে

সব ম্লান ময়লা অবিচল।

 

বুঝি, আমার শ্রেষ্ঠ ভেন্টিলাইজার।।

নির্ঘুম রাতে নিঝুম কপাটে

ঘাড়ের কাছে তোমার চলাচল

আনে নিদ্রা আনে হাওয়া

আনে অজস্র ঘুমফল।

 

মানি, তুমিই আমার শ্রেষ্ঠ ট্র্যাঙ্কুলাইজার।

 

তোমার দু’একটি কথা কথকতা

ও ভাবনা সাবানজল

সুন্দর করে ধুয়ে নেয়

সব করোনার অঞ্চল।

 

জানি, তুমিই আমার শ্রেষ্ঠ বিষাদ-পিউরিফায়ার।

 

প্রকৃতি

২.

দুঃসহ এ শহর ছেড়ে যাওয়া

মৃত মানুষের সংখ্যা

এই নিয়ে হল সাত।

 

শেষ মানুষটি এ তল্লাটেই ছিলো

 

সেইন্ট প্যাট্রিক চার্চের পরের

চটুল রঙের বাড়িটিতে,

ফ্ল্যাট নম্বর আট।

 

হয়তো আমিও দেখিয়াছি তারে

হয়রান হাল সে হতভাগীরে।

চুলের চকচকে

 

ট্যাসেল দিয়ে বাঁধা

তার চাকার চেয়ারটি

ঠেলে ঠেলে যেতে।

 

রোববারে রোমান রোডে

রবারের কোট পরে উহাতেই

বসিতো সে রোদে।

 

কে জানে হয়তো সে গতকালই

হুবহু এমনি কোনো

অথবা প্রায় এই পণ্যশূন্য দোকানেই

এসেছিলো।

 

দস্তানা হাতে, মুখে মাস্ক পরে

র‍্যাক থেকে শক্ত শেষ পাউরুটিটি নেড়েচেড়ে

‘অখাদ্য’ বলে রেখে গিয়েছিলো।

আর আজ আমি

 

সেই মরা মানুষের পরিত্যক্ত

রুটিটিই ছুঁয়ে দেখিতেছি।

আমারও লাগিতেছে শক্ত!

 

ভাবতেই বিষাক্ত সাপের মত

রুটি ছেড়ে র‍্যাক থেকে

ছুঁড়ে যাই, পড়ে যাই।

 

কেউ তবু আসে না ধরিতে

দূরে দাঁড়িয়ে বলে মিজ,

ইউ অল রাইট?

 

স্যরি,

ইট ইজ এ ন্যাস্টি ভাইরাস

উই অল হ্যাভ টু ফাইট!

 

শুনিলাম সত্য তা,

ইহারাও চিনিতো তারে

সে নাকি আমারই মত ছিল একা।

সমিল বয়স ছিলো, ছিলো শুচিবাই,

 

বলিত সে নিজে নিজে কথা!

হয়তো সে সারাদিন ছিল

কোয়ারেন্টাইন্ড

সকালে পার্সেল এলে

 

ডোরবেল শুনে

খোলেনি দুয়ার

‘প্লিজ পোস্টম্যান ওখানেই রেখে যাও’ বলে,     

ওয়াশিং লিকুইড দিয়ে পুনরায়

হাত মুখ নখ ধুয়ে

 

প্যাকেট খুলিয়া দেখে মেয়ে তার

গরমের দেশ থেকে পাঠায়েছে

তিনখানা মাস্ক আর

বারোটি প্যাকেট ভরা স্যানিটাইজার।

 

হয়তো বা তারপর চা বানিয়ে বসে

তারই ভেতর অবশেষে

আমারই মত পেয়েছিল আরো

কিছু চকোলেট বার।

 

চিরকুটে লেখা, মা আমার

আশা করি হাত ধুয়ে খুলিয়াছো

আর পরিষ্কার বলছি আবার

এ থেকে দিও না কাউকে

কোন ভাগ, খবরদার!

 

হুবহু আমার মত

 

৩.

এই নিদারুণকে আর আমার বাস্তব মনে হচ্ছে না।

এই সব অপ-সংবাদ, এই অকস্মাৎ নাই হয়ে যাওয়া পরস্পর

পর পর

 

পুনঃপুনঃ!

এত কষ্ট,

এত ব্যাধি,

এত অভিমান,

এত থিতু মুখ,

চুম্বনবিহীন এত চঞ্চু!

 

আমি তবু বেঁচে আছি এতগুলো

অনাবশ্যক বছর।

 

এক এক করে শঙ্কার সকল

পাথরই তো ডোবালাম

তবু যেন আরো ভারী হয়ে গেছে

রিক্ত এ অশ্বত্থ বাগান।

 

আজ বুঝি বুজরুকি ছাড়াই -

বুকের সব পশম চেঁছে ফেলা ঠিক না

সব নদীতে বাঁধও দেয়া উচিত না

খেয়ালের অবশিষ্ট রেখে দিলে হয়তো

 

চন্দন-ঘ্রাণ উজ্জীবিত হবার

একটা অজুহাত পেতো

কাফনের কপাট বন্ধ করার আগে

দু’একটা বাড়তি পেরেকও হয়তো

অবশিষ্ট থাকতো!

 

অবশিষ্ট

 

৪.

আজকের দিনটি দেখতে

একদম মন খারাপের মত!

 

দিনের গায়ে কী লম্বা কালো ও ধূসর কোট!

গলায় হাতেবোনা অসুখ উলের স্কার্ফ,

পায়ে ভাইরাসের বুট,

মাথায় কেমিক্যাল হ্যাট।

 

সে হাঁটছে

কিন্তু মন খারাপ থামছে না।

 

দিনের চোখে আইসোলেশনের আইশেড

গালের পাশে পড়ো পার্কের সীমানা

ক্ষয়ে যাওয়া মেদের ভাঁজে কুঁচকানো এনএইচএস।

 

শুধু কি তাই!

আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি

তার পেডিকিওর না করা নখে

আটকে আছে কোভিড কয়লার কুটো।

 

ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে যারা দিন দেখছে তাদের গলা থেকে থেমে গেছে

ঝুলন্ত গয়নার গান ।

 

ওরে দিন

কে দিয়েছে চোখে তোর

গলিত লোহার আইড্রপ?

কবে থেকে তোর শ্রুতির সুড়ঙ্গপথে

পাথরের ব্লক নেমে এসেছে?

 

কী করে তোর নাকের শীতল শ্লেষ্মায়

হাঁসের আনন্দে সাঁতরাচ্ছে

করোনার কিট?

 

কেন রে তোর মত

তুবড়ি ও তেহাই তোলা দিন এত হাই তুলছে?

 

আমি আর কত শুশ্রুষার

বীজ

বপন করে যাবো?

 

তোমরা দেখ গো আসিয়া

শামীম আজাদ মরে কান্দিয়া কান্দিয়া।

 

হায় দিন, সোনালী সুখির্তা দিন

কবে থেকে তোর এমন অসুখ?

 

অসুখ

৫.

লবেজান করোনার কারণে

ছায়ান্ধকার কেটে

শুচিবাই এসে গেছে চতুর্দিকে

নিয়ম ছাড়া।

 

পরিষ্কারকের দাঁত ঝিঁকিয়ে উঠছে

মানুষের বাগানে, বিছানায়, বায়ুপন্থে

ভীষণ আত্মহারা।

 

জীবনের আকাশে

সুরমার মত মারাত্মক গুঁড়া

আঁকছে আঁকচারা

যার টান, টংকার ও

জোয়ার চুম্বকেরও বাড়া।

 

তার ছোট ছোট ড্রপলেট

অন্তিম অন্ধকার ঝর্না

যখন তখন যার তার

শ্বাসের কড়ায় দিচ্ছে নাড়া।

 

এ অনাহূত অতিথি যাকে চুম্বন দেয়

তার প্রিয়জনও হতে পারে না তার পাহারা।

 

পাহাড় বনানী সাগর তেল ও তলোয়ার

বালির পরগনা

সমস্তই করোনায় ভরা।

 

জলে ডোবা নাসারন্ধ্র বন্ধকরা

ষড়যন্ত্রের মত কালো

রাত নামে অ্যাম্বুলেনস এর কাঁধে নিয়ে

একপাল মরা।

 

তার কালো আইলাইনার পরা।

তাকালেই শবের মোচ্ছব,

ডুবছে প্রশাসন, নিউট্রন, শ্রেষ্ঠ মনুষ্য ধন,

নারী কিংবা পুরুষ

আস্তিক নাস্তিক ভেজিটেরিয়ান

 

হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খৃষ্টান

সকলেই সমান ভাই

তার দায়িত্ব শুধু সমতার ভিত্তিতে

দিবানিশি যত্রতত্র মানুষের প্রাণ কাড়া। ।

 

করোনা ভাবনা

৩০.৩.২০

লন্ডন

ইমেল: [email protected]

 

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৪ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০২০

এফএম/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।