ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

করোনায় সাংস্কৃতিক অঙ্গনে স্থবিরতা

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৯ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০২০
করোনায় সাংস্কৃতিক অঙ্গনে স্থবিরতা

ঢাকা: অন্যান্য সময় ছুটির দিন বিকেলে শিল্পকলা একাডেমির নাট্যমঞ্চ বা জাতীয় জাদুঘর অথবা রবীন্দ্র সরোবরে যেমন ভিড় জমতো, এখন তার কিছুই নেই। মঞ্চে নেই নাটকের দৃশ্য, নৃত্যশিল্পীর নূপুরের নিক্কন অথবা বাচিক শিল্পীদের কণ্ঠের মধুরতা। ধারায় বসন্ত এলেও কোকিলের ডাক উপেক্ষা করেই সবকিছু যেন নিশ্চুপ। নেই কোথাও কোনো পদধ্বনি।

শুক্রবার (২০ মার্চ) রাজধানীর বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অঙ্গনের জায়গা ঘুরে দেখা গেছে এমন দৃশ্যই। করোনা ভাইরাসের কারণে একদিকে যেমন দর্শক বেরুচ্ছেন না ঘর থেকে, ঠিক তেমনি জনসমাগম এড়াতে বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানও বন্ধ রেখেছেন তাদের সাংস্কৃতিক কার্যক্রম।

বিশ্বব্যাপী দ্রুত ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের কার্যক্রম বিভিন্ন মেয়াদে স্থগিত করা হয়েছে। সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে বিভিন্ন গ্যালারিও। সেইসঙ্গে দেশের সব প্রত্নস্থল ও প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরও পর্যটক এবং দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে দেশে ৫১৯টি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি ও ২১টি প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর রয়েছে।

এছাড়া বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ রেখেছে তাদের সব মিলনায়তন। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে সাময়িকভাবে সাধারণ দর্শনার্থী প্রবেশ বন্ধ রয়েছে। প্রত্নস্থল ও প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর ২ এপ্রিল পর্যন্ত এবং নাট্যাঙ্গনের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনগুলো আগামী ২২ মার্চ সকাল থেকে ৩১ মার্চ রাত পর্যন্ত সব নাটকের শুটিং স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

একইসঙ্গে মঞ্চে নাট্য প্রদর্শনীসহ নাট্যদলগুলোর আয়োজনে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বন্ধ রাখার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন।

এ প্রসঙ্গে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কামাল বায়েজিদ বাংলানিউজকে জানান, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে কয়েকটি নাট্যদল হল বরাদ্দ নিয়েও নাট্য প্রদর্শনী বাতিল করেছে। এ মুহূর্তে আমরাও মনে করছি পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত শিল্পকলা একাডেমির হল বরাদ্দ বাতিল করা উচিত। এ বিষয়ে নির্দেশনা সংশ্লিষ্ট নাট্যদলগুলোকেও জানিয়ে দেওয়া হবে। পাশাপাশি সারা দেশের নাট্যদলগুলোকেও গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের পক্ষ থেকে এ পরিস্থিতিতে নাট্য প্রদর্শনী না করার জন্য আহ্বান জানাবো।

এ ছাড়া দেশের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর অভিভাবক সংগঠন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সৃষ্ট অবস্থার উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত জোটভুক্ত সব সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে অনুষ্ঠান আয়োজনে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। এমন অবস্থায় যেন স্থবির হয়ে পড়েছে দেশের গোটা সাংস্কৃতিক অঙ্গন। কোথাও নেই কোনো ধরনের আয়োজন। তবে স্থবিরতার থেকে জনগণের সুরক্ষকাকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন সবাই।

এ প্রসঙ্গে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেছেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জনস্বার্থের কথা বিবেচনায় রেখে সামগ্রিক পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত দেশব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন থেকে বিরতি থাকার জন্য সব জেলা ও উপজেলা সাংস্কৃতিক জোট এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতি আহ্বান জানানো যাচ্ছে। তবে মহান স্বাধীনতা দিবসসহ অন্যান্য জাতীয় অনুষ্ঠান ছোট পরিসরে প্রতীকীভাবে পালন করা যেতে পারে। সব কিছুর আগে জনগণের সুরক্ষায় প্রধান বিষয়।

এদিকে, পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে রমনা বটমূলে ছায়ানটের প্রভাতী আয়োজন কিংবা চারুকলা অনুষদের মঙ্গল শোভাযাত্রা বৈশাখ উদযাপনের প্রধান দুই আয়োজন। এবার করোনা ভাইরাস আতঙ্কের মধ্যে বিকল্প ব্যবস্থায় উদযাপিত হতে পারে এ দুই আয়োজন। বিকল্পপন্থাকে মাথায় রেখে এগিয়ে যাচ্ছে আয়োজন দুটির প্রস্তুতি।

এ বিষয়ে ছায়ানটের সহ-সভাপতি খায়রুল আনাম শাকিল বাংলানিউজকে বলেন, আমরা আমাদের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছি। তবে থিম এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। একইসঙ্গে মহড়াও শুরু করিনি। ছায়ানট গানের মাধ্যমে সবসময় মানুষের জয়গান গেয়েছে। করোনার কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত। তাই আমরা আয়োজন নিয়ে ভাবছি না। মানুষের মধ্যে সমস্যা সৃষ্টি করে আয়োজন করবো না।

বিকল্প ব্যবস্থা ভাবা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা পরিস্থিতি উন্নতির আশা করছি। যদি তা না হয় প্রয়োজনে আমরা পুরো আয়োজনটি রেকর্ড করে পহেলা বৈশাখের সকালে টেলিভিশনের মাধ্যমে প্রচার করবো। আমাদের ইচ্ছা রমনা বটমূলেই রেকর্ড করার। তা না হলে আমাদের নিজস্ব মিলনায়তনে রেকর্ড করা হবে।

এছাড়া মঙ্গল শোভাযাত্রা এখন পহেলা বৈশাখের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ। করোনার কারণে এ আয়োজনটিও এখনও পর্যন্ত চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। ছায়ানেটের মতোই প্রয়োজনে বিকল্প ব্যবস্থায় মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজনের চিন্তা করছে আয়োজক কর্তৃপক্ষ।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদের ডিন নিসার হোসেন বলেন, মঙ্গল শোভাযাত্রার বিষয়ে আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে। প্রয়োজনে শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে যেসব অনুষঙ্গ বানাতে পারে সেগুলো নিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। মঙ্গল শোভাযাত্রা করা হয়, মানুষের জন্য। যদি পহেলা বৈশাখের দিন মানুষই না থাকেন, তাহলে আমরা কাদের জন্য এ শোভাযাত্রা বের করবো! আমরা আয়োজনটি বাদ দেবো না। স্বল্প আকারে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রদক্ষিণ করে ফিরে আসা হবে। যদি অনুমতি না পাওয়া যায়, তাহলে মঙ্গল শোভাযাত্রাটি রেকর্ড করে টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচার করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৯ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০২০
এইচএমএস/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।