ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

কবিতা-আড্ডা-গল্পে মুখর ‘কবি শামীম আজাদ সন্ধ্যা’

ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৩৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০২০
কবিতা-আড্ডা-গল্পে মুখর ‘কবি শামীম আজাদ সন্ধ্যা’

ঢাকা: যুক্তরাজ্যে বসবাসরত শামীম আজাদ একজন দ্বিভাষিক কবি, লেখক ও গল্প বলিয়ে। বাংলা ও ইংরেজি মিলিয়ে এ পর্যন্ত প্রায় অর্ধশতাধিক বই লিখেছেন ও সম্পাদনা করেছেন তিনি। তার সাহিত্য কর্ম প্রকাশিত হয়েছে বিশ্বের বিখ্যাত সব সাময়িকীতে। এই বিলেতবাসী কবিকে নিয়েই অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো ‘কবি শামীম আজাদ সন্ধ্যা’।

শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর কাঁটাবনে অবস্থিত দীপনপুরে অনুষ্ঠিত এই আয়োজনে উঠে আসে কবির লেখালেখি, নিজের জীবন, সমাজ ভাবনা, আর নানাবিধ স্মৃতির কথা। একইসঙ্গে তিনি নিজের বিভিন্ন লেখা পাঠ করে ও গল্প বলে শোনান শ্রোতা-দর্শকদের।

আয়োজন সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌস।

আয়োজনের শুরুতেই প্রিয় ‘মা’ কে নিয়ে কথা বলেন শামীম আজাদ। কল্পনায় আনেন একজন মায়ের কিশোরী রূপ। বলেন, মায়েরাও কিন্তু একসময় কিশোরী থাকেন। তাদেরও ভালোবাসা থাকে, অনুভূতি থাকে। সেগুলোর মমতা এসে পড়ে সন্তানের উপর। এরপর সেই সন্তানও একদিন মা হন, নানি হন। পরম্পরায় কেটে যায় সময়। মঞ্চে কথা বলছেন কবি, লেখক ও গল্প বলিয়ে শামীম আজাদএসময় তিনি ৩টি পরম্পরা (মা-মেয়ে-নাতনি) নিয়ে পাঠ করে শোনান নিজের লেখা সিলেটের আঞ্চলিক ভাষার একটি কবিতা। সেই কবিতার শব্দে উঠে আসে মা এবং সন্তানের মধ্যকার ভালোবাসা, ভাষার প্রতি আবেগ।

অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে সঞ্চালক আয়োজনের মধ্যমণিকে নিয়ে বলেন, প্রতিটি মুহূর্ত প্রাণবন্ত এবং জীবন্ত হয়ে থাকেন যেই মানুষটি, তিনি কবি শামীম আজাদ। তাকে এককথায় যেমন অসাধারণ বলা যায়, তেমনি প্রিয়ংবদা শব্দটাও তার জন্য প্রযোজ্য।

এ কথার উত্তরে মিষ্টি হেঁসে কবি বলেন, জন্ম নিয়েই দেখি জীবনটা একটা মধুর হাড়ির মতো। আর আমরা তার চারপাশে ভিড় করে আছি পিঁপড়ার মতো করে। তাইতো সবসময় জীবনটা মিষ্টি করে উদযাপনের দিকে এগোয়।

মঞ্চে কথা ওঠে কবির নাম বিভ্রাট নিয়েও। এ পর্যায়ে নারী হয়েও পুরুষের মতো নামের পেছনের গল্প বলেন তিনি। তার ভাষ্যে, বাবা মা মিলে একটা নাম ঠিক করেছিলেন, সেই নামটা এমন, তা ছেলে বা মেয়ে যাই হোক না কেন নাম রাখা হবে একটাই। আর এই নামের অর্থ হলো ভোরের বাতাস।

সত্তর ও আশি দশকে ঢাকায় শিল্প-সাহিত্য-সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে উজ্জ্বল উপস্থিতি ছিল শামীম আজাদের। বাংলাদেশে ফ্যাশন সাংবাদিকতাও এসেছে অনেকটা তার হাত ধরেই। কবি কথা বলেন সে প্রসঙ্গেও। বলেন, আমাদের ধর্মীয় ব্যাপারগুলো সবসময়ই একটু গম্ভীর। সেই জায়গাটাকে উৎসবমুখর করা, দৈনন্দিন জীবনে কীভাবে নিজেকে সুন্দর করে সাজানো যায়, অফিসের টিফিনটা কীভাবে নেওয়া যায়, স্বামীর পাঞ্জাবীতে সাদার পরিবর্তে একটু রঙ আনাসহ এমন বিষয়গুলো মাথায় নিয়েই শুরু হয় কাজ করা।

প্রশ্ন ওঠে, একুশ শতকে এসেও লেখকদের তার লেখার উত্তর হিসেবে চাপাতি দিয়ে হত্যা করা হয়! লেখার পরিবর্তে লেখা দিয়ে উত্তর না দিয়ে হত্যা করা কেন? ঘাটতিটা কোথায়?

এই পর্যায়ে লেখকের সঙ্গে সঙ্গে কথা বলেন বাংলা সাহিত্যের আরেক বরেণ্য কথা সাহিত্যিক মোহিত কামাল। তিনি বলেন, আমরা মুখে বললেও প্রকৃত অর্থে আমাদের শিশুদের স্বাধীনতা দেই না। তাদের প্রতিটি বিষয় আমরা নির্ধারণ করে দেই। ফলে শিশুকাল থেকেই তার মধ্যে এক প্রকার সহিংসতা ঢুকে পড়ে। তাই শৈশবের সামাজিকীকরণ এবং বাবা-মায়ের শিশুশিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ পালন করে এ ক্ষেত্রে। উপস্থিত শ্রোতা-দর্শকদের গল্প বলে শোনান শামীম আজাদ

আলোচনার এ পর্যায়ে আবারও ফেরা হয় কবিতায়। কবি পাঠ করেন হুমায়ুন আজাদকে নিবেদিত একটি বাংলা কবিতা এবং উইলিয়াম শেক্সপিয়রকে নিবেদিত একটি ইংরেজি কবিতা। পাঠ শেষে প্রসঙ্গ তুলে বলেন, আমি খুব আশা দেখি এ বাংলাদেশকে নিয়ে, এদেশের তরুণদের নিয়ে। খারাপকে পেছনে ফেলে আমাদের উচিত সবসময় ভালো কথাগুলো আগে বলা, সুসংবাদকে বড় করে বলা।

এরপর আবারো আসে কবিতা। গল্প বলিয়ে মন খোলা মানুষটি দর্শক-শ্রোতাদের শোনান নিজের প্রেম, ভালোবাসা, মেয়ে-বেলার স্মৃতি আর ইংল্যান্ডের রাণীর সঙ্গে দেখা করা গল্পও। আয়েশি ভঙ্গিতে কথার পিঠে কথা জুড়ে ভর করেন মঞ্চের সামনে থাকা মানুষগুলোর ভেতর। দর্শকদের সঙ্গে পারস্পরিক আলাপ-চারিতায় আয়োজনের শেষ মুহূর্তটিও ছুঁয়ে যান তারুণ্যের দীপ্ততায় পা রেখে।

সন্ধ্যার এই আয়োজনে দীপনপুরে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলানিউজের সম্পাদক এবং কবি জুয়েল মাজহার, প্রকাশনা সংস্থা সময় প্রকাশনের প্রধান নির্বাহী ফরিদ আহমেদ, স্থপতি সাঈদা সুলতানা এ্যানি, প্রয়াত প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপনের সহধর্মিণী এবং বুকশপ ক্যাফে ‘দীপনপুর’-এর প্রতিষ্ঠাতা রাজিয়া রহমান জলি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুরসহ বরেণ্য কবি, লেখক এবং কবি শামীম আজাদের শুভানুধ্যায়ীরা।

বাংলাদেশ সময়: ২৩৩৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০২০
এইচএমএস/জেআইএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।