ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

কবিতা

মিছিল খন্দকারের একগুচ্ছ কবিতা

কবিতা ~ শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৯
মিছিল খন্দকারের একগুচ্ছ কবিতা

মিছিল খন্দকার। ১৯৮৫ সালের ২০ ডিসেম্বর বরিশালের বাকেরগঞ্জে জন্ম এ কবির। 

তার প্রকাশিত বইগুলো হলো- মেঘ সামান্য হাসো (ঐতিহ্য, ২০১৫), পুষ্প আপনার জন্য ফোটে (প্রথম প্রকাশ: জেব্রাক্রসিং, ২০১৮। আগামী বইমেলায় বইটির পরিমার্জিত সংস্করণ বের করবে ‘বৈভব’ প্রকাশনা।

এছাড়া আসন্ন এ বইমেলায় প্রকাশিত হবে তার তৃতীয় কবিতার বই- ‘আকাশ চাপা পড়ে মরে যেতে পারি’।

পাঠকদের জন্য মিছিল খন্দকারের প্রকাশিতব্য বই ‘আকাশ চাপা পড়ে মরে যেতে পারি’ থেকে একগুচ্ছ কবিতা পত্রস্থ করা হলো।



অনর্থে (১)

কবি কামরুজ্জামান কামুর প্রতি

আলো কমে আসে সন্ধ্যার আগে আগে
পৃথিবীর মুখে লাগে কুয়াশার দাগ—
দাঁতে নখ কাটি, ধীরে হাঁটি খালি পায়ে
রক্ত কিছুটা মাটির গন্ধ পাক।

পৃথিবীর প্রতি নেই কোনো অভিযোগ
কথা কমে আসে বয়স বাড়ছে বলে,
মানুষের প্রতি পরামর্শ যা ছিল
সেসব সরিয়ে বসি নিমগাছতলে।

কোথা থেকে আসে কাঠগোলাপের ঘ্রাণ
ঘুরেফিরে খুঁজি গাছটাকে চারদিকে—
হাইওয়ে থেকে হর্ন ভেসে এলে ভাবি,
তারা তারা খুব চলে যাওয়া নেয় শিখে।

তাতে করে বেশ বাণিজ্য পায় লাভ
কোম্পানি চায় দূর গ্রহে নিয়ে যেতে—
সেখানে যাওয়ার কী যে লাভ আছে আর!
সেইতো একই অগ্নি বা নৈর্ঋতে।

মানুষের সাথে অম্ল-মধুর পরে
তন্দ্রায় নিজ নারীটার পাশে রাতে,
টাকা দিয়ে কিনে খেতে হবে ভাত-পানি
মরে যাওয়া শেষে অসুখে বা অপঘাতে।

হয়তো সে গ্রহে নতুন ফুলের প্রাণে
ক্রমে ফুঁসে ওঠা ব্যথা এক অতিকায়,
জেগে চুপচাপ দেখে যাবে এইসব—
কেউ কোনো কিছু আসলে কি আর পায়!



নিশুতি পাড়া

মোড়ের দোকানে যে কিশোরেরা নিচু স্বরে কথা বলছে— তাদের মধ্যে কেউ একজন কাল সকালে ইদ্রিস সার্ভেয়ারের ছোট মেয়ে সন্ধ্যাকে নিয়ে ভাগবে। ফলে থানা-পুলিশ হবে। আটক হবে ওদেরই তিন বন্ধু— যাদের একজনের মানিব্যাগে পাওয়া যাবে এক পুরিয়া গাঁজা। এসব নিয়ে কানাঘুষায় আছরের নামাজ কাজা হবে পাশের বাসার বন্যার মা ও ওদের ভাড়াটিয়া কাকীর।  

খাটালে বসে বৌ গুনগুন করে কানতে থাকলে হঠাৎ গর্জে উঠবে অর্ধশায়িত বোজাচোখ সার্ভেয়ারের গলা, মাগী থাম! 

শেষ বিকেলে ইলশাগুঁড়ি বৃষ্টি হবে। তাতে বাইরে তারে কাপড় ভিজতে থাকলেও তা তুলতে ভুলে যাবে তারা। রাতে সার্ভেয়ারের প্রেসার বাড়বে। তার স্ত্রীর বাড়বে সুগার। বোনের গোপন খবরে পরদিন ভোরে সন্ধ্যা এসে ঘাড় নিচু করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকবে ঘরের পেছনে, তার মুখ অন্ধকার।


ঝিঁঝিঁ

দিন চলে গেলে অন্ধকারের হাতে
ফাল্গুনের হাওয়ায় উড়তে থাকে
ঝিঁইইইইই
ঝিঁইইইইই
ঝিঁইইইইই
ঝিঁ ঝিঁ ঝিঁ ঝিঁ ঝিঁ ঝিঁ
ঝিঁইইইইই
ঝিঁইইইইই
ঝিঁইইইইই
ঝিঁ ঝিঁ ঝিঁ ঝিঁ ঝিঁ ঝিঁ
ঝিঁঝিঁ ডাকে-
নৈঃশব্দ্য ফালি ফালি করে
কাকে ডাকে ঝিঁঝিঁ,
হিজিবিজি পৃথিবীতে?


শূন্যে হামাগুড়ি

ক্যাটস অ্যান্ড ডগস বৃষ্টি-নামা-রাতে
অন্ধকারে হচ্ছে না নিজ
মুখটা প্রতিভাত।
কেবল কণ্ঠ বেড়ায় ভেসে
সব বারই কি কাছিমটাকে
জিততে দেব রেসে?
তাতো নহে—
বাতাস যদি একাই নিজে বহেন,
ডাকি কাকে?
মানুষ কি আর নিজের সাথেও থাকে?
এসব থাকার
কতোটা আর দৃশ্যগত 
বেশির ভাগই ফাঁকা!
তাতে অন্ধ হৃদয়
দেখার নিকট শুনতে চেয়ে ভাবে,
শুন্যে হামাগুড়ি দিয়ে
কার কাছে আর যাবে!
চতুর্পাশে সেই তো একই খালি—
ফলে বাতাস একা 
বইতে বইতে সঙ্গে করে উড়িয়ে নিচ্ছে বালি।


মৃত্যুচিন্তা

বন থেকে কতো দূরে ছাপাখানা—
একটা শিমুলগাছ বাতাসের কাছে
জানতে চায় রোজ।

বাংলাদেশ সময়: ০০০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৯ 
এইচজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।