ঢাকা, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

বইমেলা

তবু অদম্য পাঠক, নতুন বই ৭১টি

ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৯
তবু অদম্য পাঠক, নতুন বই ৭১টি তবু পাঠকের ভিড় অমর একুশে গ্রন্থমেলায়/ছবি: বাদল

গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণ থেকে: নতুন বইয়ের একটা অনন্য ঘ্রাণ থাকে, সে ঘ্রাণে মুগ্ধ হয় পাঠক। তবে যারা প্রকৃত বইপ্রেমী, তারা ভিজে যাওয়া বইয়ের ঘ্রাণও নিজের রন্ধ্রে আটকে নেন অনন্য ভালোবাসায়। সে ভালোবাসাতেই ভিজে যাওয়া বইয়ের ঘ্রাণ নিতে গ্রন্থমেলায় ভিড় জমিয়েছেন পাঠকরা। ব্যথিত হয়েছেন ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত স্টল আর বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া বইগুলো দেখে, স্পর্শ করে।

তবে রোববার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বাধা-বিপত্তির মধ্যেও মেলা শুরু হওয়ার সময় থেকেই পাঠকদের জন্য স্টল উন্মুক্ত করেছে প্রায় প্রতিটি প্রকাশনী। চেষ্টা করেছেন পাঠককে দুর্যোগের স্বাদ না দেওয়ার জন্য।

তাল মিলিয়েছেন পাঠকও। তারাও হয়েছেন অদম্য। মেলায় ঘুরে এদিন তারাও কিনেছেন নিজের পছন্দের বই। স্বাগত জানিয়েছেন নতুন বইগুলোকে।

ঝড়-বৃষ্টি উপক্ষো করেও এদিন মেলায় এসেছে নতুন ৭১টি বই। এর মধ্যে গল্প ৭টি, উপন্যাস ৭টি, প্রবন্ধ ৮টি, কবিতা ৩১টি, ছড়া ২টি, শিশুসাহিত্য ১টি, জীবনী ৩টি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ৩টি, ভ্রমণ ২টি, স্বাস্থ্য ১টি, রম্য ১টি, ধর্মীয় ১ট, সায়েন্স ফিকশন ১টি এবং অন্যান্য ৩টি।

প্রকাশিত বইগুলোর মধ্যে বিজয় প্রকাশ থেকে সালমান হাবীবের কাব্যগ্রন্থ ‘আলোঝরা স্বপ্নের দিন’, নন্দিতা প্রকাশ থেকে মোহাম্মদ সাদেক আলীর উপন্যাস ‘জীবনের স্মৃতিময় দিনগুলো’, পিয়াল প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিকেশন্স থেকে হোসনে আরা’র ‘বাংলাদেশের প্রথম নারী ওসি বলছি’, ঐতিহ্য থেকে আনোয়রুল হকের গল্পগ্রন্থ ‘ফুলকন্যা’ ও দেওয়ান সালাউদ্দীন বাবু’র স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ ‘জেলখানার ভেতর বাহির’, আগামী থেকে আব্দুর রউফ চৌধুরী’র মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গ্রন্থ ‘বাংলাদেশ: ১৯৭১’, এবং প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর থেকে জিসান আহমেদ ও মো: খায়রুল বাসার স্বপনের ‘ছোটদের প্রত্নতত্ত্ব’ উল্লেখযোগ্য।

বিকেল ৪টায় একুশের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় ‘সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক: শ্রদ্ধাঞ্জলি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন খালেদ হোসাইন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মফিদুল হক, আসাদ মান্নান, শিহাব সরকার ও আনিসুল হক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কবি মনজুরে মওলা।  

প্রাবন্ধিক বলেন, সৈয়দ শামসুল হকের জীবনাচরণের প্রতিটি ক্ষেত্রে ছিলেন সপ্রতিভ। আর তার বিপুলায়তন সাহিত্যসৃষ্টিতে লক্ষ্য করা যায় এক নিহিত ও বস্তুনিষ্ঠ পরিকল্পনা। উন্মাদনাময় এই সৃষ্টিশীলতাকে সাবলীলভাবে নিয়ন্ত্রণের সামর্থ্যই তাকে বাংলা সাহিত্যে অগ্রগণ্য প্রতিনিধি হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে। তার সক্রিয়তা, চিন্তার স্বকীয়তা, প্রকাশের যথোপযুক্ততা অর্জন করে নিয়েছে পাঠকের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।  

তিনি বলেন, সমাজস্থিত মানুষ হিসেবে সৈয়দ হকের নিরাপস মানসতার স্বাক্ষর তার সাহিত্যকর্মেও প্রতিভাত। এভাবেই তিনি আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সঙ্গে একাত্ম হয়ে নিজেই ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছেন।  

আলোচকরা বলেন, সৈয়দ শামসুল হক বাংলা ভাষার সর্বাগ্রগণ্য সাহিত্যশিল্পীদের একজন। সাহিত্যের সব ক্ষেত্রে তার ঈর্ষণীয় বিচরণ ও অর্জন পরবর্তীকালের লেখকদের জন্য দৃষ্টান্ত। তিনি সাহিত্যে যেমন শিল্পকৌশলের নব রূপ-রীতি উদ্ভাবন করেছেন, তেমনি জনমানুষের স্বপ্ন, সংগ্রাম ও সংকল্পকে সাহিত্যভাষা দান করেছেন।  

সভাপতির বক্তব্যে মনজুরে মওলা বলেন, ভাষার প্রতি সৈয়দ শামসুল হকের আমৃত্যু যত্নশীলতা আমাদের সাহিত্যসমাজে এক বিরল ব্যাপার, যেক্ষেত্রে আমরা প্রায়ই উদাসীন। নতুন শব্দ ও ভাববন্ধ নির্মাণে তিনি ছিলেন সদাসচেষ্ট। কবি হিসেবে চূড়ান্ত সিদ্ধির পরও তিনি নিজের জন্য কাব্যনাট্যের মতো এক দুরূহ শিল্পমাধ্যম বেছে নিয়েছেন। সৈয়দ শামসুল হকের মতো সাহিত্যস্রষ্টা কখন বিস্মৃত হওয়ার নন।

আলোচনা শেষে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ করেন কবি মোহাম্মদ সাদিক ও খালেদ হোসাইন। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী লায়লা আফরোজ এবং মো. মাসুদুজ্জামান। সন্ধ্যায় মানজারুল ইসলাম সুইটের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী’ এবং অনন্যা ওয়াফী রহমানের পরিচালনায় নৃত্য সংগঠন ‘নৃত্যমঞ্চ’ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে। সংগীত পরিবেশন করেন শাহনাজ নাসরিন ইলা, মামুন জাহিদ খান, মো. মনিরুজ্জামান ভূইয়া, রাকিবুল ইসলাম রাকীব, নীপা সাহা, শামীমা নাসরিন এবং অপর্ণা খান।

সোমবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) মেলা চলবে দুপুর ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। এছাড়া অমর একুশে গ্রন্থমেলা উপলক্ষে বাংলা একাডেমি প্রতিবছর শিশু-কিশোরদের যে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে, এ বছর প্রথমবারের মতো ২০০৮ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত শিশু-কিশোরদের পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবিগুলো নিয়ে বাংলা একাডেমির ড. মুহম্মদ এনামুল হক ভবনের দ্বিতীয় তলায় একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। বিকেল সাড়ে ৪টায় প্রদর্শনীটির উদ্বোধন করবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। প্রদর্শনী চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ পর্যন্ত প্রতিদিন মেলা চলার সময়।

বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘কবি বেলাল চৌধুরী: শ্রদ্ধাঞ্জলি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন পিয়াস মজিদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন জাহিদুল হক, দিলারা হাফিজ এবং তারিক সুজাত। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন কবি রবিউল হুসাইন। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, কবিতা-আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।  

বাংলাদেশ সময়: ২০২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৯
এইচএমএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।