ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

সাম্রাজ্যের মন, স্পিলবার্গের প্রাচ্য অথবা ইন্ডিয়ানা জোন্স

জাহেদ সরওয়ার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১০
সাম্রাজ্যের মন, স্পিলবার্গের প্রাচ্য অথবা ইন্ডিয়ানা জোন্স

দুনিয়ার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ পাঁচজন কালজয়ী চলচ্চিত্রকারের নাম চেয়ে দর্শকদের কাছে আবেদন করেছিল নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকাটি। পাঠকদের পাঠানো প্রতিক্রিয়ার ভিত্তিতে প্রথম জনের নাম স্টিভেন স্পিলবার্গ।

একজন পরিচালক হিসাবে চলচ্চিত্রের টেকনিক অথবা ম্যাকানিজমে তার তুলনা নাই। তার তৈরি সিনেমার মধ্যে ‘ইন্ডিয়ানা জোন্সে’র চারটি সিক্যুয়াল (Raiders of the Lost Ark, Indiana Jones and the Temple of Doom, Indiana Jones and the Last Crusade, Kingdom of the Crystal Skull) ও জুরাসিক পার্কের সিক্যুয়ালগুলো (Jurassic Park, The Lost World, Jurassic Park III, Jurassic Park 4 The Extinction) দেখেননি এরকম চলচ্চিত্রপ্রেমী দর্শক পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। স্পিলবার্গের প্রথম গুণ হচ্ছে তার ছবি দেখতে ভাষাগত সমস্যা হয় না। ইংরেজি জানেন না এরকম যে কোনও দর্শকও তার ছবির দিকে বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকবেন। একজন পরিচালক হিসেবে এটাই তার সফলতার মূল কারণ। তার ছবিগুলো একে একে পৃথিবীর সর্র্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ জনপ্রিয় ছবিতে জায়গা করে নিয়েছে সহজেই।

এক সাক্ষাৎকারে স্পিলবার্গ বলেছিলেন, ‘আমি চলচ্চিত্রের ভাষায় ছবি বানাই’। কথাটা হাস্যকর শোনালেও সত্য। যে পরিচালক চলচ্চিত্রের ভাষায় ছবি বানান, তার ছবিতে ভাষাগত সমস্যা হয় না। যেমন ডব্লিউ ডি  গ্রিফিথ, আইজেনস্টাইন, চ্যাপলিন, ডি সিক্কা, জা লুক গদার, ইলমাজ গুনে, ফাসবাইন্ডার, পুদোভকিন, দভজেঙ্কো, হিচককদের ছবি দেখতে ভাষার সমস্যা হয় না কোনও দর্শকের। এদের মধ্যেও সব শ্রেণীর দর্শকদের কাছে স্পিলবার্গের গ্রহণযোগ্যতা বিস্ময়কর। কারণ তার বিষয়ের বৈচিত্র্য। সব ধরনের বিষয় নিয়েই তিনি কাজ করেছেন। জনপ্রিয় ধারার জিকজাক ছবি করার জন্য সিরিয়াস সমালোচকরা তাকে ‘মুভি জাগলার’ বা ‘মুভি ম্যাগনেট’ বলে গাল পাড়ে।   জনপ্রিয় ধারার ছবি যেমন তিনি বানান, তেমনি বর্ণবাদ নিয়ে বানান ওয়াকার এলিসের ফিকশন অবলম্বনে ‘কালার পার্পলের’ মতো সিরিয়াসধর্মী ছবি। নাজিযুগ নিয়ে বানান ‘শিল্ডলার্সলিস্ট, মিউনিখ’। তার প্রত্যেকটা ছবিতেই প্রায় সর্বোচ্চ ব্যবসা ও একাডেমি অ্যাওয়ার্ড ধরাবাঁধা।
 
তার প্রথম যে ছবিটা ছোটবেলায় নিজের অজান্তে একঘণ্টা তিরিশ মিনিট আমাকে টেলিভিশনের পর্দায় আটকে  রেখেছিল তার নাম ‘জস’। ছবি যে এত আকর্ষক ও আনন্দদায়ক হতে পারে এই প্রথম জানা। ‘জস’র পরের সিক্যুয়াল তো দেখেছিই, এরপর স্পিলবার্গের এমন কোনও ছবি নেই যা সংগ্রহ করিনি অথবা দেখিনি। শুধু একবার নয় বহু বহুবার করে একেকটা ছবি দেখা।

সম্প্রতি আবার তার ‘ইন্ডিয়ানা জোন্স’র সিক্যুয়ালগুলো  দেখতে গিয়ে চোখ আটকে গেল। বিশেষ করে ‘রেইডার্স অব দি লস্ট আর্ক, ও ‘টেম্পল অব ধুম’ ছবি দুটো দেখে মনে হলো এগুলো নির্মাণগত মুগ্ধতা সত্ত্বেও পূর্ণবিবেচনা দাবি করে।

রেইডার্স অব দি লস্ট আর্ক ছবিটা দেখার আগেই  বইটি পড়া ছিল। ক্যাম্পবেল ব্ল্যাকের দুর্দান্ত থ্রিলার। অনেকদিন আগে পড়া, কোনও দোষ খুঁজে পাইনি তখন। পরে এই ছবির কোথাও লেখকের নাম না দেখে একটু বিস্মিতও হয়েছি। হয়তো আমার চোখে পড়েনি এরকমও হতে পারে।

স্পিলবার্র্গ খুব বাধ্য আমেরিকান। আমেরিকান বা হলিউডের আদর্শই তার আদর্শ। এবং আমেরিকার দেবত্ব ও হিংস্রতা, প্রাচ্যবিমুখতা, ঘৃণা, তুচ্ছতা ও আতঙ্কের চোখে প্রাচ্যকে দেখা ইত্যাদি গুণ তার মধ্যে পুরাপুরি বিদ্যমান।

রেইডার্স অব দি লস্ট আর্কে আমরা দেখতে পাই  নেপাল আর মিশরকে। ইন্ডিয়ানা জোন্স নেপালে বেশিক্ষণ থাকেননি। খুব স্বল্প সময়ে যে নেপালকে দেখান তা হচ্ছে রেস্তোরাঁয়, বারের ভেতর ঝগড়া করা জনগণ, গুপ্তধনের জন্য হত্যামুখী চায়নিজ-নেপালি, যে কিনা লোভ করতে গিয়ে প্রায় আগুনেই পুড়তে বসেছিল তার পাপের প্রায়শ্চিত্য হিসেবে। ভয়ংকর অস্ত্র হাতে থাকা সত্ত্বেও মাত্র একটা চাকু দিয়ে ইন্ডি বধ করে ডজন দুয়েক চায়নিজ-নেপালিকে।

তবে ছবির অর্ধেকজুড়ে মিশরকে দেখা যায়। আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদের আরব বা প্রাচ্য বিরোধিতার পুরাপুরি প্রমাণ পাওয়া যায় ছবির এই মিশর খন্ডে। তিনি মিশরীয় আরবদের উপস্থিত করেন ভয়াবহভাবে। তারা লম্বা দাড়ি রাখে। ভয়ংকর জোব্বা পরে। জাত অপরাধী আর বগলে ছুরি নিয়ে ঘোরে। খাবারে বিষ মেশায়। বিদেশি নারী দেখলেই ধর্ষণ করতে চায়। বানরের মতো একটা নিরীহ প্রাণীকে স্পাই হিসেবে ব্যবহার করে কাজ হাসিল করে। মিশরীয়রা খুব খারাপ। তারা ক্রীতদাসদের দিয়ে মাটি খনন করায়। ক্রীতদাসদের বেত্রাঘাত করে। যেন আমেরিকানরা কোনওদিন ক্রীতদাস দেখেনি। ছবিটি দেখতে দেখতে স্পিলবার্গের দুর্ধর্ষ ক্যামেরায় এই সব দৃশ্য ফ্রেমিং হবে আর দর্শকদের চোখ আটকে থাকবে। এসব দৃশ্য দেখতে দেখতে মনে হয়, আহা ক্যামেরাটা মিশর থেকে সরে গেলেই বাঁচি, এত খারাপ মিশরীয় লোকগুলো! তার সাথে সাথেই প্রায় স্পিলবার্গের অবচেতনেই হয়তো উঠে আসতে থাকে আমেরিকানদের আগ্রাসী চেহারা। এতগুলো দুর্বৃত্ত, এত ষড়যন্ত্র ইন্ডি একাই প্রতিহত করে বীরত্বের সাথে। যেন সে কোনও অবতার এই কালো স্বাস্থ্যহীন মানুষগুলোর ভেতর। কালো মানুষগুলোর হাতে আছে ছুরি আর তলোয়ার, একসঙ্গে অনেকেই ইন্ডিকে আক্রমণ করে, কিন্তু হঠাৎ ইন্ডি বন্দুক বার করে এক গুলিতেই সব নিকেষ করে।

‘টেম্পল অব দি ধুম’ পর্বে দেখানো হয় চায়না আর ভারতকে। এ পর্বে আরও ভয়াবহভাবে উপস্থাপন করা হয় এশিয়ানদের। ইন্ডি তখন সাংহাই। পৃথিবীর সবচাইতে বড় হীরাটি উদ্ধারের মিশনে। ক্রুর ষড়যন্ত্রকারী হত্যালুলুপ লোভী চীনাদের হাত থেকে সে হীরা এবং সাদা নারী দুটিকেই হলিউডি কৌশলে উদ্ধার করে বিমানে উড়াল দেয়। কিন্তু চীনাদের নিষ্ঠুরতার এখানেই শেষ নয়। যেই মারামারিতে পরিশ্রান্ত ইন্ডি ঘুমিয়ে পড়েছে, বিমানের চায়নিজ ক্রু ও পাইলট তাদের বিমানে ঘুমন্ত অবস্থায় ফেলেই প্যারাসুট নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। অনিবার্যভাবে বিমান দুর্ঘটনা। কিন্তু দুর্ঘটনা ঘটার আগেই ইন্ডিও ঝাঁপিয়ে পড়ে বিমান থেকে। তারা বরফের পর্বতের ওপর পড়ে পিছলে যায়। এই বরফের রাস্তাই তাদের নিয়ে আসে ইন্ডিয়ায়।

ইন্ডিয়ায় ইন্ডির যে অভিজ্ঞতা হলো তা যে কোনও ভয়ংকর কল্পনাকেও হার মানায়। ইন্ডিয়ায় এসেই ইন্ডি দেখতে পায় অন্ধ বিশ্বাসী হাড় জিরজিরে গরিব লোকদের, যারা একজন অবতারের জন্য অপেক্ষা করছে। তাদের দিয়ে স্পিলবার্র্গ বলাল যে ইন্ডিই সেই অবতার। ইন্ডির সিনা ফুলে উঠে।

প্রধানমন্ত্রীর দাওয়াত খেতে গিয়ে আরেক কা-। এ কি!  খাবার প্লেটে এতবড় বাচ্চা পেটের অজগর! হবে না, ইন্ডিয়ানরা তো জীবন্ত অজগর খেতে খুব পছন্দ করে। এই রাজকীয় ভোজে ইন্ডিয়ার উজির-নাজিররা খুব মজা করে অজগরের পেট কেটে কিলবিল করা কালো মসৃণ অজগরের বাচ্চা দু হাতে ধরে কামড়ে খাচ্ছে! ইন্ডির চক্ষু ছানাবড়া হলেও সে অবাক হবার বা ভয় পাবার লোক নয়। কেবল ইন্ডির সঙ্গিনী শ্বেতাঙ্গিনীটার মাথা ঘুরছে সাপ দেখে। তাই সে একটু সামান্য সুপ চায় পরিবেশকদের কাছে। ধুমায়িত বাটিতে চামচ দিয়ে দেখে আরেক কা-, এ কি! ইন্ডিয়ানরা মরা মানুষের চোখের সুপ খায়? এবার সত্যি সত্যি মহিলা মূর্ছা যায়। ইন্ডিয়ানরা এরপর খেতে থাকে একে একে তেলাপোকা ভাজি, বড় বড় মাকড়শা ইত্যাদি। তবে স্পিলবার্গের খাদ্যচিন্তা চমৎকারা বলতেই হয়। খাদ্য শেষে ইন্ডিয়ানরা কী খায় জানেন? সদ্য কাটা বানরের মাথার গরম গরম মগজ। এই নিষ্পাপ আমেরিকান ইন্ডিরা এই সব সভ্যতাবিরোধী কাজকর্ম দেখে অবাক মানে। শুধু ইন্ডি নয়, দর্শকরা, মানে আমরা যারা ছবিটা দেখছি তাদেরও ইন্ডিয়ানদের প্রতি ঘৃণায় কুঁচকে যায় কপাল। আর ইন্ডির মতো নিষ্পাপ ‘শুভ’র প্রতিনিধির জন্য মমতায় ভরে উঠে মন।

না, এখনও শুরুই হয়নি অসভ্য ইন্ডিয়ানদের হিংস্রতা। ভারতীয় বাজারি ছবির জনপ্রিয় অভিনেতা অমরেশপুরী এক ভয়ংকর দৈত্য (বলরাম) যার মাথায় সবসময় ষাড়ের শিংয়ের ট্রুপ। আর মুখে মা কালির নাম। এমন দৈত্য কে দেখেছে আগে? যে জীবন্ত মানুষের বুকের ভেতর হাত ঢুকিয়ে হাতের মুঠোয় কলিজা নিয়ে খুশিতে চিৎকার করে বলে ‘আব ইসকি জান মেরি মুট্টি মে হ্যায়, মা কালী...’। তার পর সেই লোকটিকে আগুনের ভেতর আস্তে আস্তে নামিয়ে দেওয়া হয়। সে এক বীভৎস দৃশ্য। এমন ভয়ানক দৃশ্য কে দেখেছে আগে।

এই ছবির সবচাইতে মজার দৃশ্য শেষ দৃশ্য। ইন্ডি ইন্ডিয়ার আপামর জনতাকে অমরেশপুরীর হাত থেকে রক্ষা করার মিশনে নামে। মা কালির মণিমুক্তা নিয়ে পালানোর পথে আবার দলবলসহ অমরেশপুরী ঝাঁপিয়ে পড়ে ইন্ডির ওপর। একটা সেতুর দুই দিক থেকেই ইন্ডিয়ানরা আক্রমণ করে ইন্ডিকে। এই সেতু এমন এক নদীর ওপর যার নিচে কিলবিল করছে ভয়ংকর কুমির। ইন্ডির এই বিপদ দেখে ভারত শাসনরত ব্রিটিশ সৈন্যরা ইন্ডির পক্ষ হয়ে যুদ্ধ শুরু করে। একদিকে তীর-ধনুক নিয়ে হাস্যকর ভারতীয় সৈনিক অন্যদিকে বন্দুক হাতে ব্রিটিশ সৈন্য। শেষমেষ ইন্ডিই জিতবে এটা তো চলচ্চিত্রের আইন।

যাই হোক একজন আমেরিকান হিসেবে স্পিলবার্র্গ যে বিশ্বস্ত দেশপ্রেমিক সে ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নাই। আর বিশ্বস্ত আমেরিকান মানে খুব ভয়ংকর মানুষ। একজন ইন্ডি বা স্পিলবার্গের মনের ভেতর লুকানো জিনিসটাকেই বলে সাম্রাজ্যের বাসনা বা সাম্রাজ্যের মন।   রেইডার্স অব দি লস্ট আর্ক ও টেম্পল অব ধুম ছবি দুটিতে ইন্ডির চরিত্রটা বিশ্লেষণ করলে কিন্তু পুরা সাম্রাজ্যর মনটাকে বুঝতে পারা যায়। ইন্ডি একজন আর্কিওলজিস্ট। যে কোনও দুর্লভ সংগ্রহের জন্য সে এক পায়ে খাড়া। প্রথম ছবিতে বাদশাহ সোলেমানের জাদুর বাকসোটা, যেটার ভেতর নাকি অমর হবার আলো লুকায়িত আছে। এর জন্য স্বয়ং ফুয়েরার হিটলার পাগল। নাজিরা দুনিয়াটা চষে ফেলছে বস্তুটির জন্য। তা শেষ পর্যন্ত ইন্ডিই বগলদাবা করে। অবশেষে সেটা যখন আবার নাজিরা দখল করে তখন দেখা যায় সে জাদুর বাকসোর ভেতর থেকে বের হওয়া রশ্মিতে নাজিরাই পুড়ে ছারখার হয়ে যায়।

স্পিলবার্র্গ ইহুদির সন্তান। নাজিবিরোধীতা তার রক্তে। কিন্তু এই চলচ্চিত্রে সু আর কু-র যুদ্ধে ইন্ডি হচ্ছে সু আর শক্তির অধিকারী, বাকি সব কু আর অশুভ শক্তির প্রতিনিধি। এই ছবিতে দেখানো এশিয়া আর আফ্রিকার মানুষদের নাজিদের একই লাইনে এসে শেষতক এমন এক সিদ্ধান্তে দর্শক আসে যে, নাজি আর এশিয়া-আফ্রিকানদের তথা প্রাচ্যেদের মধ্যে কোনও তফাৎ নাই। তারা সবাই ইন্ডি বা আমেরিকানদের মতো সহজ-সরল মানুষদের হত্যা করতে চায়।

ইন্ডিয়ানদের যে খাদ্য তালিকা টেম্পল অব ধুমে দেখানো হয় তাও প্রাচ্যবাসীদের রাক্ষসের সমকক্ষ করে। এমন উপাদান দিয়ে ছবিগুলো বানানো হয়, স্পিলবার্গের অধিকাংশ ছবিই সপরিবারে একসাথে দেখার মতো। এখন স্পিলবার্গের মতো আবেগী, দক্ষ, জনপ্রিয় একজন পরিচালক, যার ছবি হাজার হাজার ইউরোপ-আমেরিকার শিশুদের প্রিয়, তারা কী ভাবছে এই সব ছবি দেখে, সে কথা তিনি যে জানতেন না তা তো নয়। বরং তিনি উল্লসিত ছিলেন। এবং খুব সূক্ষ্মভাবে এই কাজ তিনি করেছেন। কারণ তার মতো ডিটেলে কাজ  করে এরকম পরিচালক জগতে খুব কম। এই ডিটেলস নিয়ে চিন্তা করার সময় প্রত্যেকটা সিকোয়েন্সের কথা তিনি ভেবেছেন, প্রত্যেকটা ফ্রেমের, গতির প্রতিক্রিয়ার কথা তিনি ভেবেছেন। তার রাজনীতি-সচেতনতা প্রতিটি শটেই প্রমাণিত। চলচ্চিত্রের ইতিহাসে স্পিলবার্র্গকে বলা হয় নীতিবাদী পরিচালক। তার প্রায় ছবিতে অভিনেতা বা মুটিভ অমানবিক এক শক্তির কাছে নিজের নিরাপত্তার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে আবার নিজের চেষ্টায় তা ফিরে পায়। কিন্তু পৃথিবীতে সব সময় দুই শ্রেণীর মানুষের নীতি দুই রকম। একজন আমেরিকান হিসেবে স্পিলবার্গের যে নীতি, তা প্রাচ্যের একজন চলচ্চিত্রকারের একই নীতি নয় নিঃসন্দেহে। আর তাই ইন্ডিয়ানা জোন্সের নীতি আর চীন-ভারত-মিশর তথা প্রাচ্যের নীতি একরকম নয়। প্রাচ্যের চোখে ইন্ডি একজন লোলুপ কিডন্যাপার ছাড়া কিছু নয়। এবং স্পিলবার্র্গও বুঝেছেন যে এটাই সত্য। আর তাই তাকে মিশরীয় বা ভারতীয়দের খারাপ বানাতে হয় তার মুভিম্যাজিকের মাধ্যমে যেন যারা প্রাচ্য সম্পর্কে জানে না তারা প্রাচ্যের খারাবি সম্পর্কে কোনও প্রশ্ন তুলতে না পারে। এটাই সাম্রাজ্যের সাংস্কৃতিক রাজনীতি বা নৈতিকতা। প্রকারান্তরে এই ছবি দুটোর মানসিকতাই হয়ে উঠে সাম্রাজ্যবাদীদের লাস্ট ক্রুসেডের মেটাফোর।

[email protected]

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ২১০৫, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।