ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

নোবেলজয়ী কবি টোমাস ট্রান্সট্রোমারের সাক্ষাৎকার [পর্ব-১]

ভাষান্তর: রানা রায়হান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ৭, ২০১১
নোবেলজয়ী কবি টোমাস ট্রান্সট্রোমারের সাক্ষাৎকার [পর্ব-১]

টোমাস ট্রান্সট্রোমার ২০১১ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। ১৯৩১ সালে স্টকহোমে জন্ম।

এর আগে তিনি ১৯৮৩ সালে কবিতার জন্য মর্যাদাপূর্ণ বনিয়ার পুরস্কার পান, ১৯৮১ সালে পান পশ্চিম জার্মানির পেত্রার্ক পুরস্কার। ১৯৮৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইকো প্রেস থেকে তার ‘সিলেক্টেড পোয়েমস ১৯৫৪-১৯৮৮’ (অনূদিত) প্রকাশিত হয়।

১৯৮৯ সালের ৭ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য ইন্ডিয়ানাপোলিসে লিন্ডা হভার্থের বাসায় এবছরের নোবেলজয়ী কবি টোমাস ট্রান্সট্রোমারের দীর্ঘ সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। সাক্ষাৎকারটি নেন মার্কিন কবি ট্যান লিন নেভিললিন্ডা হর্ভাথ

হর্ভাথ : আপনি কি সাহিত্যের কোনো নির্দিষ্ট ধারার মধ্যে পড়েন বলে নিজেকে মনে করেন, যা আপনার অনুবাদকদের কাছে সংজ্ঞায়িত করা সম্ভব? আমার মনে হয়, ব্লাই, সোয়েনসন, ফুলটন বা আপনার অন্য সব অনুবাদকের নাগাল আমি পেয়ে গেছি।

http://www.banglanews24.com/images/PhotoGallery/2011September/images 222220111007184701.jpgটোমাস ট্রান্সট্রোমার : অবশ্যই আমি মনে করি। এটা একটি বিশাল ধারা, কবিতায় আপনি একে আধুনিকতাবাদ বলতে পারেন। তবে সংজ্ঞায়ন করার আরও সুনির্দিষ্ট কিছু থাকতে পারে। প্রথম যে কবি আমার প্রতি আগ্রহ দেখান তিনি হচ্ছেন রবার্ট ব্লাই। এর কারণ হচ্ছে, আমি যে অভিমুখে কাজ করছিলাম, তার অভিমুখও তা। তিনি নরওয়েতে ছিলেন, স্ক্যান্ডিনেভিয়ান লেখকদের পড়েছেন ইত্যাদি। স্ক্যান্ডিনেভিয়ান কবিতায় প্রকৃতির প্রতি যে মনোভাব ফুটে উঠেছে, সেটা তিনি আমেরিকানদের মধ্যে পরিচিত করতে চেয়েছেন। ‘সাইলেন্স ইন দ্য স্নোয়ি ফিল্ডস’ (ব্লাইয়ের লেখা বই) আমার কাছে খুব পরিচিত মনে হয়। তার কবিতা সম্পূর্ণ আমেরিকান ঐতিহ্যের, তবে এতে এমন কিছু আছে যা আমাদের প্রথম সাক্ষাতের সময় থেকে আমি তার লেখার সঙ্গে আমার লেখার সাদৃশ্য পাই। সুতরাং আপনার মতোই একই অভিমুখে যিনি কাজ করছেন তিনি আপনার কবিতা অনুবাদ করলে সেটা অত্যন্ত উৎসাহব্যঞ্জকই বটে। এরকম অভিজ্ঞতা প্রত্যেকের হয় না।

আমার ভাগ্য প্রসন্ন। এমন সব কবি আমার কবিতা অনুবাদ করেছেন, যারা সুইডিশদের চিনতেন। সুইডিশের মতো এত ক্ষুদ্র ভাষা সম্পর্কে সবক্ষেত্রে এরকম ঘটে না। বরং এটাই স্বাভাবিক ঘটনা যে, আপনি এমন একজন ভাষা বিশেষজ্ঞের হাতে পড়েছেন, যার কবিতা নিয়ে আগ্রহ খুবই কম।

নেভিল : গত রাতে আপনি উল্লেখ করেছিলেন, আপনার কবিতা এতই অনূদিত হয়েছে যে, এতে আপনার সুইডিশ প্রকৃতিও পরিবর্তিত হয়ে গেছে। এও বলেছিলেন, লেখালেখি শুরুর সময়ে যেরকম সুইডিশ ছিল, এখন তা নেই, এটা ঠিক?

টোমাস ট্রান্সট্রোমার : হ্যাঁ, একজন নারী আমাকে উদ্ধৃত করেই এটা বলেছিলেন।

নেভিল : আপনি কী একমত?

টোমাস ট্রান্সট্রোমার : আমার পক্ষে সেটা জানা কঠিন, কারণ ঘটনাটা খুব একটা সচেতন স্তরে ঘটেনি। আমার মনে হয়, বেশিরভাগ নির্জন লেখকের মনে এক ধরনের পাঠক থাকে। এক ধরনের অদৃশ্য পাঠক, এটা তিনি নাও জানতে পারেন। তবে তার মনে এটা থাকে। আর আমি প্রায়ই ভাবি, ঘনিষ্ঠ বন্ধু বা যারা আপনাকে ভালোভাবে চেনে তাদের নিয়েই এ পাঠকশ্রেণীর পরিগঠন। তবে এর কিছুক্ষণ পরই আমি ভাবি, ভিন্ন সংস্কৃতির সঙ্গে আপনার পরিচয় ঘটার চমৎকার অভিজ্ঞতা যদি থাকে এবং বিদেশে আপনার লেখা পাঠ হলে, সেসব মানুষ আপনার পাঠক হয়ে ওঠে, তারাও আপনাকে প্রভাবিত করে। দুঃখজনক বাস্তবতা হচ্ছে, সুইডেনে আমাদের বেশিরভাগ কবি অনুবাদযোগ্য নয়। কারণ তাদের লেখালেখির কাঠামো সুইডিশ ভাষা কাঠামোর খুব কাছাকাছি। আর এ কারণেই তাদের কবিতা অনুবাদ করা প্রায় অসম্ভব। অন্য কবিদের সহজেই অনুবাদ করা যায়। সব ভাষার ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য।

হর্ভাথ : পূর্ব ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গ্লাসনস্তের  (গ্লাসনস্ত: সাবেক সোভিয়েত সরকারের নীতি, এতে রাজনীতি ও সামাজিক বিভিন্ন ইস্যুতে মুক্ত আলোচনা করা যায়) স্বাধীনতা উপভোগ করছে কি না, সম্প্রতি এ বিষয়টি সম্পর্কে আপনি কি ওয়াকিবহাল?

টোমাস ট্রান্সট্রোমার : হ্যাঁ হ্যাঁ, আমি জানি। বিশ্বের সবচেয়ে বাজে দেশ রোমানিয়া, দেশটি ভিন্ন দিকে মোড় নিচ্ছে। তবে বিশেষ করে, সোভিয়েত ইউনিয়নের বাল্টিক দেশগুলো যেমন, এস্তোনিয়া, লাতভিয়া, লিথুয়ানিয়া ও এখানে অস্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটেছে। ১৯৭০ সালে আমি লাতভিয়া ও এস্তোনিয়ায় ছিলাম। বাল্টিক অঞ্চলটি অত্যন্ত আবদ্ধ। গ্রাহাম গ্রিনের প্রথম দিককার গল্পের কোনো চরিত্র যেমন, সেখানে সেরকম মানুষ পাবেন।

এসব দেশ আমার কাছে অনেক অর্থপূর্ণ, সুইডেনের বহু নাগরিকের কাছেও। বাল্টিক দেশগুলো থেকে নির্বাসিত বহু লোক আমাদের দেশে আসছে আর সেখানে কী ঘটছে সে বিষয়ে আমরা অত্যন্ত সচেতন। গত কয়েক বছরে সেখানে অবিশ্বাস্য পরিবর্তন দেখা গেছে। বিশেষ করে, গত বছর, গত মাসেও তা পরিলক্ষিত।

নেভিল: এক মিনিটের জন্য আমি পাঠক প্রসঙ্গে একটি প্রশ্নে ফিরে যেতে চাই। এই দেশে (যুক্তরাষ্ট্র) কবিতার পাঠক সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী? আমার বিবেচনায় এখানকার পাঠকরা অত্যন্ত আত্ম-পরিবেষ্টিত, চাপা স্বভাবের ও আত্মসচেতন। এখানকার একজন কবি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অন্য সব কবি ও কবিতার ছাত্রদের জন্যই লেখে। এটা সুইডেনের ক্ষেত্রে সত্য কি না আমি জানি না।

http://www.banglanews24.com/images/PhotoGallery/2011September/50499_35702212806_3345670_n20111007195400.jpgটোমাস ট্রান্সট্রোমার : ঠিক আছে, এখানে কবিতা পাঠ বা এ ধরনের সব উদ্যোগ প্রধানত বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্ম এবং সুইডেনে বড়জোর গ্রন্থাগারে কবিতা পাঠ করা হয়। তারা কবিতা পাঠের আয়োজন করে। ইন্ডিয়ানাপোলিসের (মার্কিন অঙ্গরাজ্য ইন্ডিয়ানার রাজধানী) মতো কোনো স্থানে গেলে সম্ভবত পাঠের জন্য আপনাকে গ্রন্থাগারে যেতে হবে। সেখানে সব বয়সী ও সব ধরনের লোকের সাক্ষাৎ পাবেন।

নেভিল: এখানে তাহলে আরও নানা শ্রেণীর ও বৃহত্তর পাঠক গোষ্ঠী পাচ্ছেন।

টোমাস ট্রান্সট্রোমার : হ্যাঁ, এখানে একটি তরুণ শ্রেণী আছে, যারা একে অপরকে সমর্থন করে। তারা নিজেরা লেখালেখি করে, এক সাথে পাঠ করে। তবে উপসালার (সুইডেনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর) মতো শহরে আপনি বিভিন্ন স্থান থেকে আসা লোকজন পাবেন, সম্ভবত তারা নিঃসঙ্গ। মাঝে মাঝে কবিতা পাঠ করে। তবে অবশ্যই সবাই না।

নেভিল : তবে তারা সবাই নিশ্চয় শিক্ষক বা ছাত্র না?

টোমাস ট্রান্সট্রোমার : কেউ কেউ। অবশ্য বিশ্বদ্যালয়গুলোতে আমাদের পাঠাভ্যাস আছে, শিক্ষার কাজের অংশ হিসেবে সংগঠিত আকারে পাঠ হয় না। ছাত্রদের নিজস্ব সাহিত্য ক্লাব আছে। আলাদা আর কোথায়? বরং আমি বলতে পারি, সুইডিশ পাঠকরা তাদের অনুভূতি প্রকাশের ক্ষেত্রে অনিচ্ছুক। গতানুগতিক ঢঙে তারা শান্ত হয়ে বসে, মুখে অভিব্যক্তি নেই, জোরে দম ফেলে না, হাসে না বা চিৎকারও করে না। তারা মনে করে, আবেগ প্রকাশ না করাই ভালো আচরণের মধ্যে পড়ে। নানা সময়ে এটা হতাশাজনকও হতে পারে। আপনি জানবেন না লোকজন বিরক্ত নাকি উৎসাহী। আর এখানে প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় বেশ খোলাখুলি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের অঞ্চলেভেদে এটা আলাদা। যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরের অঙ্গরাজ্যগুলোয় লোকজনের অভিব্যক্তি সবচেয়ে কম প্রকাশ পায়।

হর্ভাথ : আমার মনে পড়ছে, ২২ বছর বয়সেই আপনার প্রথম কবিতার বই বের হয়। আমার মনে হয় তখন থেকে আপনি বিকাশের নানা স্তর পেরিয়েছেন, আপনার মূল্যায়ন কী?

টোমাস ট্রান্সট্রোমার : আমি সেটাই আশা করি (হাসি)...। তবে এ ব্যাপারে মূল্যায়ন করা কঠিন। নতুন কোনো বই বের হলে আমার সমালোচকরা বলে থাকেন, এটা আগের লেখার মতোই অথবা আমি ধীরে ধীরে উন্নতি করছি। তারা একটি পরম্পরা খুঁজে পান। আমার প্রথম বই দেখে এবং এর সঙ্গে আমি এখন যা লিখেছি তার সঙ্গে সাদৃশ্য খুঁজে পায়। তবে আমি মনে করি, বিশাল পার্থক্য রয়েছে।

হর্ভাথ : আপনার নির্বাচিত কবিতা (সিলেক্টেড পোয়েমস) পড়ে আমার মনে হয়েছে, সময়ের সাথে সাথে আপনার কবিতা জটিল থেকে জটিলতর হয়েছে।

টোমাস ট্রান্সট্রোমার : এটা সত্য হতে পারে। তবে কবিতা লেখার শুরুর দিকে আমার ভাষার স্তর ছিল অত্যন্ত জটিল। অনুবাদের বেলায় এটা সামনে আসে না, বরং শুরুর দিককার কবিতাগুলো ছিল অধিক সংকুচিত ও সেগুলোতে আমি প্রথাগত ছন্দ এখনকার চেয়ে বেশি বেশি ব্যবহার করেছি। আমার মনে হয়, সেসব শুরুর কবিতা অনুবাদ করা অধিক কঠিন। ইংরেজি অনুবাদে আপনি সরলীকৃত সংস্করণ পাবেন। তবে পরের কবিতাগুলো অনুবাদ করা অধিক সহজ, বিশেষ করে ভাষা স্তর বিবেচনায়। একটি পার্থক্য আছে, আমি আঙ্গিক ও বিষয়বস্তু নিয়ে কথা বলতে ঘৃণা করি। তবু সেটাই করি (হাসি)। আমার মনে হয়, পরের কবিতাগুলোয় বিষয়বস্তু অধিক জটিল, কারণ এগুলোতে অধিক অভিজ্ঞতা প্রবেশ করেছে। আমার বয়স এখন ৫৭ বছর। ২২ বছরের তরুণ ও ৫৭ বছরের পৌঢ়ের মধ্যে অনেক পার্থক্য। শেষের কবিতাগুলোয় পুরো জীবন, সমাজ, সবকিছু এক পথে বা আরেক পথে। প্রথম বই লেখার সময় আমি খুব তরুণ ছিলাম এবং শৈশব ও প্রকৃতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তবে বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল সীমিত। এখন আমি সেসব বিষয়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি বা  গেছি।

হর্ভাথ : আপনার কাজের বহু বিষয়ের মধ্যে আমাকে যেটা আকৃষ্ট করেছে সেটা হচ্ছে, আপনার বৈশ্বিক সচেতনতা। বিশ্বের অন্তর্যন্ত্রণার নিয়ে আপনার অনুভূতি আমি টের পেয়েছি। ‘স্কেচ ইন অক্টোবর’ কবিতায় মাশরুমের চিত্র পাই, দারুণ আকৃষ্ট হই। যেমন, ‘সাহায্যের আশায় আঙুলগুলো বিস্তৃত হচ্ছে, এমন একজনের দিকে যে নিজেই সেখানে অন্ধকারে ফোঁপাচ্ছে। ’ এতে আমি শান্তির আশুপ্রয়োজন অনুভব করি। যদিও কবিতাগুলো রাজনৈতিক নয়, সব মানবিক। আপনার মন্তব্য কী?

http://www.banglanews24.com/images/PhotoGallery/2011September/transtromerklein20111007184724.jpg

টোমাস ট্রান্সট্রোমার : আপনি বেশ দারুণ কথা বলেছেন, আমি এতে বাগড়া বাঁধাতে চাই না (হাসি)। আমি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বেড়ে উঠেছি, যা আমার জন্য এক বিরাট অভিজ্ঞতা। সুইডেন নিরপেক্ষ থাকলেও এর চারপাশে জার্মানির দখলদারিত্ব অব্যাহত ছিল। নরওয়ে দখল হয়ে গিয়েছিল, ডেনমার্ক দখল হয়ে গিয়েছিল। সুইডেন স্বাধীন থাকলেও একা হয়ে পড়েছিল। সুইডেনের মানুষ বিভক্ত হয়ে পড়েছিল, কেউ কেউ মিত্র বাহিনীর পক্ষে, কেউ কেউ জার্মানদের। শিশু হিসেবে সেসময় আমার ভেতর তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল। আমার বাবা-মার মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়েছিল, মা আর আমি একসাথে থাকতাম। আমার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজন ছিলো। তারা সবাই হিটলারবিরোধী। আমিও মিত্র বাহিনীর সমর্থক ছিলাম। ছোট অধ্যাপকের মতো ছোট বালক ছিলাম, শিশুদের মতো না। সবসময় আমি লোকদের উদ্দেশে ভাষণ দিতাম। তবে আমি সংবাদপত্র পড়তাম, যুদ্ধের খুঁটিনাটি জানতাম।

অভিযাত্রী হওয়ার স্বপ্ন ছিল আমার। আমাদের নায়ক হচ্ছেন, লিভিংস্টোন ও স্ট্যানলি (সুইডেনের দুই বিখ্যাত অভিযাত্রী)। সুইডেনের মানুষ এটা পছন্দ করে। কল্পনায় আমি আফ্রিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরতাম। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, আমি স্টকহোমেই থাকতাম এবং গ্রীষ্মে আর্কিপেলাগো দ্বীপপুঞ্জে যেতাম। সেটাই ছিল আমার স্বর্গ। যুদ্ধের পর আমার বিদেশ বা বিশ্ব ঘুরে দেখার ইচ্ছা হলো। আমার মা তার গোটা জীবনে কখনোই বিদেশে যাননি,  তবে আমার যেতে ইচ্ছা হতো। ১৯৫১ সালে আমার এক স্কুলবন্ধুর সঙ্গে আমি আইসল্যান্ডে যাই। সেটা ছিল আমার প্রগাঢ় অভিজ্ঞতা। ফিরে আসার পর আমার কাছে কোনো অর্থ ছিল না, তবে আমি দরিদ্র না। ১৯৫৪ সালে আমার প্রথম বইটি বের হলে একটি পুরস্কার পাই। পুরস্কারের এ অর্থ দিয়ে আমি প্রাচ্যে যাই, বিশেষ করে তুরস্কসহ অদূর প্রাচ্যের দেশগুলোতে ঘুরি। সেসময় এসব দেশে মোটেও পর্যটন করার সুযোগ ছিল না। তুরস্কে তো ছিলোই না। সেটাই সত্যিকার অভিযান। আজকাল তরুণরা কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে সেসব দেশে যায়। এটা এখন খুব স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে গেছে।

এই পৃথিবীর সঙ্গে সাক্ষাৎ আমার জন্য বলিষ্ঠ অভিজ্ঞতা। সেসময়ের কিছু কবিতা আমার দ্বিতীয় বইয়ে আছে। এগুলোর মধ্যে আছে, ‘সিয়েস্তা’, ‘ইজমির অ্যাট থ্রি’ ও ‘ক্লক’ ইত্যাদি। ৫৪ সালে আমি তুরস্ক ও গ্রিসে যাই। ৫৫ সালে ইতালি ও যুগোস্লাভিয়ায়, ৫৬ সালে মরক্কো, স্পেন ও পর্তুগালে ছিলাম। তখন থেকেই আমি ভ্রমণ করছি। তবে আজকাল আমি আমন্ত্রিত হলে বা কোনো কাজ নিয়ে যাই। আমি রাজনীতিতে ভীষণ আগ্রহী। তবে আদর্শিক পথের চেয়ে মানবিক পথ ধরেই এগিয়ে যেতে চাই।

(চলবে)

বাংলাদেশ সময় : ১৬২২ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৭, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।