ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

আবদুল মান্নান সৈয়দের অগ্রন্থিত অনুবাদ কবিতা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৫, ২০১১
আবদুল মান্নান সৈয়দের অগ্রন্থিত অনুবাদ কবিতা

বাংলাদেশের একজন অগ্রগণ্য আধুনিক কবি, সাহিত্যিক, গবেষক ও সাহিত্য-সম্পাদক আবদুল মান্নান সৈয়দ । পঞ্চাশ বছরেরও অধিক সময় ধ`রে তিনি বাংলা সাহিত্যকে নানাভাবে ঋদ্ধ করে গেছেন।



ঊনিশ শতকের ষাট দশকে আবির্ভূত এ কবি কবিতা ছাড়াও গল্প, উপন্যাস, সমালোচনা, নাটক ইত্যাদি সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় সুপ্রসার ও সুগভীর অবদান  রেখেছেন।

২০১০ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তিনি প্রয়াত হন। এ বছর পালিত হচ্ছে তার প্রথম মৃত্যুবাষিকী। এ উপলক্ষ্যে বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো তার করা জার্মান কবি গ্যেটের একটি কবিতার অনুবাদ। কবিতাটি তার কোনো বইয়ে এখনও অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।


প্রমিথিয়ুস

হে জিউস, তোমার আকাশ
ঢেকে দাও মেঘমেঘালিতে।
বালিকার মত তুমি
ওক আর পাহাড় চূড়ার কাঁটাগাছ করো শিরোশ্ছেদ।
তবু তোমাকে রাখতে হবে আমার পৃথিবী অবিক্ষত :
আর আমার ছোট্ট কুঁড়েঘর--
যা নয় তোমার তৈরি;
এবং আমার এই অগ্নিকুণ্ড--
যার দীপ্যমান তাপ তুমি ঈর্ষা করেছো।

দেবতারা,
কে আর এমন হতভাগ্য চরাচরে, তোমাদের চেয়ে বেশি!
রাজকীয় ঠাটবাট চলে তোমাদের
সামান্য পাওয়ায়
নৈবেদ্য এবং প্রার্থনার নিঃশ্বাস।
মূর্খ আশা-- ভরা শিশু আর ভিখারিরা না থাকলে
কী দশা যে হত তোমাদের!

আমিও একদা, বাল্যকালে
কী করতে হবে না- জেনে,
বিস্ময়আহত চোখ তুলে চেয়েছিলাম সূর্যের দিকে,
যেন কেউ সেখানে আছেন শুনতে আমার অভিযোগ,
আছে আমার মতই একটি হৃদয়
অত্যাচারীতের প্রতি করুণাসঘণ।

আমাকে কে সাহায্য করেছে
দৈত্যদের তামস উগ্রতা থেকে?
কে আমাকে বাঁচিয়েছে
মৃত্যু ও দাসত্ব থেকে?
আমার হৃদয়, পবিত্র ও জ্যোতিষ্মান, একা,
অর্জন কি করেনি সমস্ত?
আমার হৃদয়, তরুণ এবং ভালো,
প্রতারিত হয়নি কি ওই আকাশের নিদ্রিত-- কে
তার মঙ্গলের জন্য দীপ্ত ধন্যবাদ দিয়ে?

কেন শ্রদ্ধা নিবেদন করবো তোমাকে? কী কারণে?
তুমি কি কখনো
মানুষের বেদনায় এনেছো প্রশম?
তুমি কি কখনও মানুষের উদ্বেগের ভার নামিয়েছ?
মুছেছো চোখের জল?
সর্বশক্তিমান কাল আর অনন্ত নিয়তি
আমাকে কি মানুষ করেনি?
এবং তোমাকে?

নাকি ভেবেছিলে, আমি
জীবনকে ঘৃণা করে পালাবো মরু-তে ধূ-ধূ,
যেহেতু আমার
স্বপ্নের মঞ্জরি বিকশিত হয়নি সম্পূর্ণ?

তাই তো এখানে আমি,
মানুষকে গড়ে তুলছি
আমার নিজের ছাঁচে; আমার মতই এক জাতি;
আমার মতই কষ্ট পাবে, চোখে বইবে ধারা,
খুশি হবে, আনন্দ করবে,
আর আমার মতই
তোমাকে হানবে অস্বীকার!


সূত্র : এবং মুশায়রা, গ্যোটে সংখ্যা,
       কলকাতা, জানুয়ারি ২০০০।

বাংলাদেশ সময় ১৬৩০, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।