ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

বিদায়, গেরিলা শিল্পী মাহবুব কামরান

ফকরুল চৌধুরী | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০১১
বিদায়, গেরিলা শিল্পী মাহবুব কামরান

দিবস রজনী শেষ হয়ে গেলে
মানুষ টুপ-টাপ হাওয়ার গল্প এঁটে
ধীরে ধীরে চলে যায় অন্তরগত ছায়ায়।
                 - মাহবুব কামরান

একজন মানুষ চলে যাওয়া মানে শুধু একটি দেহ হারিয়ে যাওয়া নয়, পৃথিবীতে অনেক শূন্যতা তৈরি হওয়া।

মানুষটি যতই সাধারণই হোক জীবনাবসানে তিনি রেখে যান মহাকাব্যিক এক উপখ্যান, এক উপন্যাস। আর মানুষটি যদি হন একটু ‘বিশেষ’, তাহলে তার শূন্যতা হয় অপূরণীয়, অশেষ। বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী মাহবুব কামরান গত ২২ জুলাই (২০১১) শুক্রবার নতুন দিনের আলো দেখার আগেই পৃথিবী ছেড়ে চলে যান।

এক কবিতায় তিনি পৃথিবীকে ‘কৃষ্ণাঙ্গ পৃথিবী’ অভিধা দিয়েছিলেন, সেই পৃথিবীর কাছেই তিনি সমর্পিত হন। কবিতার পঙক্তি- ‘ঘরে ফেরার পর, ঘরময় হেঁটে বেড়াই/লোভনীয় এক চাঁদ, বুকের ভিতরে ফুটে ওঠে/কৃষ্ণাঙ্গ পৃথিবী/এক প্রান্তে জমে থাকে পল্লবিত শস্য,/ অন্য প্রন্তে নিটোল জমকালো শিউলী/যার এলোচুলে ঢেকে যায় মেঘ, শব্দহীন ভালোবাসা। ’ চরিত্রগতভাবে তিনি ছিলেন রোমান্টিকতা ও দ্রোহের মিশেলে গড়া অদ্ভুত এক মানুষ। স্বপ্নচারী কামরান ভাই তার প্রতিটি স্বপ্নেরই বাস্তব রূপায়ন চাইতেন। স্বপ্ন নিয়ে কাজ করতেন। মিছে বুলিতে তার আস্থা ছিল না। তাই শুধু রোমান্টিকতার আষ্টেপিষ্ঠে নিজেকে নিমজ্জিত রাখেন নি। রোমাঞ্চ আর রোমান্টিকতা ছিল তার একান্তই ব্যক্তিগত, দ্রোহই ছিল আসল।

কবিতার পঙক্তি- ‘এসব বড়োই ব্যক্তিগত/এখন শুধু বাইরে আর্তনাদ, রক্তপাত, যুদ্ধ/মৃত্যুধ্বনি প্রকৃতির মতো ছেয়ে যায়,/এমন খেয়ালী প্রকৃতির কাছে কেউ কোনদিন/ কিছু ছেড়ে যায়নি। ’ রোমান্টিকতা থেকে বাস্তব পৃথিবীর চালচিত্রই তার উপলব্ধির বিষয় ছিল। তিনি শ্রেণীবৈষম্য আর আধিপত্যশীল পৃথিবীর বিপরীতে অবস্থান নিয়েছিলেন। এই অবস্থান থেকেই মাহবুব কামরানের জীবনের সব চর্চা ও চর্যা। একজন কৃষকের মানষিকতা নিয়ে তিনি শিল্পকর্ষণ করেছেন, একজন গেরিলার মতোই তিনি সমাজ-বদলের জন্য কাজ করেছেন। যা বিশ্বাস করেছেন তাই করেছেন, আপোস করেননি; আর আপোষহীন মানুষদের আমাদের বিদ্বৎজনরা প্রান্তে রাখতে ভালোবাসেন, কিন্তু কথিত প্রান্তবাসীদের কাছে তিনি স্মরণীয়। মাহবুব কামরান অনেক মানুষের অন্তরে প্রজ্জ্বলিত আলো ছড়াতে পেরেছেন- তাই তিনি আমাদের আলো।

মাহবুব কামরানের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত পরিচয় বেশি দিনের নয়। তবে তার নামের সঙ্গে আগেই কিছুটা পরিচিত ছিলাম। সেটা মূলত একজন প্রচ্ছদশিল্পী হিসেবে। শাহবাগে ঘাসফুলনদী বইগুলোর প্রচ্ছদ ছিল ব্যতিক্রমধর্মী, তেমনি বই নির্বাচনও ছিল অন্য রকম। নামটিও অদ্ভূত, যেন বাংলাদেশের অপর নাম। এই বইগুলোর প্রচ্ছদশিল্পী ছিলেন মাহবুব কামরান, পরবর্তীকালে জেনেছি তিনি এই প্রকাশনীর একজন স্বত্ত্বাধিকারীও ছিলেন।

২০০৭ সালের জানুয়ারিতে কামরান ভাইয়ের সঙ্গে আমার পরিচয়, বাংলাবাজারে, র‌্যামন পাবলিকেশনে। ওখান থেকে আমার সম্পাদিত ‘উপনিবেশবাদ ও উত্তর-ঔপনিবেশিক পাঠ’ গ্রন্থের প্রথম সংস্করণ বের হচ্ছে। প্রচ্ছদ করবেন কামরান ভাই। বইমেলা শুরু হয়ে গেছে, বই যন্ত্রস্ত- এরই ফাকে কামরান ভাইয়ের সঙ্গে বইয়ের বিষয় নিয়ে কথা হয়। প্রথমে একটু বিরক্ত হয়েছিলাম, একজন প্রচ্ছদশিল্পী বইয়ের বিষয় নিয়ে এতো উৎসাহ কেন! প্রচ্ছদ একটি করে দিলেই তো হয়? কিন্তু এক সময় বুঝতে পারলাম, তিনি শুধু একজন প্রচ্ছদশিল্পীই নন, বড় পরিচয় আরো আছে। যে-বিষয় নিয়ে আমি বইটি সম্পাদিত করছি, সে-বিষয় নিয়ে তারও অনেক আগ্রহ। এভাবে আমাদের চেতনার মিল হলো, আমরা একই পথের যাত্রী হলাম।

mahbub kamranকামরান ভাই ছিলেন সুপুরুষ, দীর্ঘদেহী, কর্মঠ, সদাহাস্যজ্জ্বল ও অত্যন্ত মিশুক। ঝাকড়া চুলের বলিষ্ঠ মানুষটি কী করে শিশুর মতো এতো সরল হাসি সদা ঠোঁটে লেপ্টে রাখতো, তা ছিল বিস্ময়ের বিষয়। দেখে তার কবিতার পঙতির কথাই মনে হতো- ‘মানুষ কি জানে, কি ভীষণ একা সরল মানুষ,/একদিন দিনের শেষে হাতে তুলে নেয় রকমারি সন্ধ্যা/যেন কোনোদিন এই রকম নিখুঁত সন্ধ্যা নামেনি সবার জন্য। ’ এই সরল মানুষটি যে-কাউকে মুহূর্তে আপন করে নিতে পারতেন। আর আমি যেন তার একটু বেশিই আপন হতে পেরেছিলাম। র‌্যামন পাবলিকেশনে আমরা কয়েক বছর দিনের পর দিন গল্প করেছি, পরস্পরের কাজ নিয়ে কথা বলেছি, করণীয় নিয়ে কথা বলেছি, বিদ্যমান পরিস্থিতি ও শিল্পসাহিত্য নিয়ে আলাপ করেছি। চায়ের কাপে ঝড় তুলেছি, একসঙ্গে খেয়েছি।

র‌্যামনের স্বত্ত্বাধিকারী রাজন নিজেদের তৈরি বিশেষ এক রান্না দিয়ে দুপুরে আমাদের ক্ষুধা নিবৃত করতো। খাবারের রেসিপি হলো- বিভিন্ন ধরনের সবজির সঙ্গে চাল মিশিয়ে, পরিমান মতো লবণ ও পানি দিয়ে প্রেসারকুকারে বসিয়ে দেয়া। কিছুক্ষণ পর রান্না হয়ে যা উপস্থাপিত হত আমরা তৃপ্তি নিয়ে তা খেতাম। কামরান ভাই, এই খাবারের নাম দিয়েছিলেন- আফগানিস্তানের বিরিয়ানি। এই বিরিয়ানির খাওয়ার সঙ্গে কামরান ভাইয়ের রসালো গল্প উপরি পাওনা বলেই মনে হতো আমার কাছে। কামরান ভাইয়ের সঙ্গে মিশে আমি কখনো ক্লান্ত হইনি। তার সঙ্গে প্রতিটি বৈঠক যেন নতুন আনন্দ, নতুন অভিজ্ঞতা। তার সঙ্গে যতই মিশেছি, তাকে নতুনভাবে আবিস্কার করেছি। জীবনে তার অর্জন ছিল বিপুল, রাজধানীতে শিল্পসাহিত্যের কেন্দ্রে থেকেও আমি আগে তা জানি নে। আমাদের এই মুর্খতা আমাদের প্রতিনিয়ত পিছিয়ে দিচ্ছে- কামরান ভাইয়ের সঙ্গে মিশে আমার এই উপলব্ধি হয়েছে।

আমার প্রিয় মানুষদের মধ্যে তিনজনকে কখনো আমি দেখেনি, তারা হলেন- আন্তোনিও গ্রামসি, চে গুয়েভারা এবং এস.এম সুলতান। বইয়ের মাধ্যমে তাদের চিন্তার সঙ্গে পরিচিত হয়েছে, কল্পনায় তাদের অবয়ব দেখেছি। কামরান ভাইয়ের মধ্যে আমি এই তিনজনের কর্ম ও অবয়বের সাযুজ্য খুঁজে পাই। কামরান ভাইকে যখন প্রথম দেখি, চেহারাসুরতে মনে হয়েছে সাক্ষাৎ চে গুয়েভারা। তার কর্মের সঙ্গে যখন পরিচিত হই- মনে হয়েছে বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানের মধ্যে থেকে তিনি প্রতিষ্ঠান-ভাঙার প্রতিষ্ঠান ও মানুষ তৈরি করছেন। সুলতানের মতো তিনিও শিল্পচর্চাকে সামাজিক উত্তরণে হাতিয়াররূপে দেখেছেন। আমি যখন উত্তর-উপনিবেশবাদ নিয়ে সম্পাদিত গ্রন্থ বের করছি, তখন তিনি তার দুটি চিত্রকর্ম থেকে কিয়দংশ নিয়ে বইটির প্রচ্ছদ করেন। ক্যাটালগে প্রথম ছবি দেখেই ভিন্নতার স্বাদ পাই। পরবর্তী তার প্রতিষ্ঠিত গ্যালারি ছাপে তার ছাত্রদের আঁকা ছবির এক যে-এক্সিবিশনে উপস্থিত ছিলাম। সেখানে তার একটি ছবি দেখি। তার শোয়ার ঘরে টাঙানো একটি ছবি দেখি। তার সংগ্রহে নিজের তেমন ছবি নেই। তাই অনেক ছবি দেখার সৌভাগ্য হয়নি। যা-দেখেছি মনে হয়েছে তিনি আসলে কবিতা এঁকেছেন। মূর্ত-বিমূর্তের মিশেল কাব্যঅনুষঙ্গময় এরকম ছবি আমি আর দেখিনি।

২০১০ সালে বইমেলার আগে মাহবুব ভাইয়ের সঙ্গে বাংলাবাজার আক্কাসের গ্রাফিক্স শপে দেখা। আক্কাস তার সহকারি হিসেবে প্রচ্ছদের কাজ করতো। কথাপ্রসঙ্গে জানালেন, এ পর্যন্ত এ বছরই দুশতাধিক বইয়ের প্রচ্ছদ করেছেন, এরও বেশি কাজ বাকি আছে। আমি একটু বিরক্ত হয়েই বললাম- ‘কামরান ভাই, প্রচ্ছদের কাজ ছেড়ে দিন, আপনি ছবি আঁকুন। এক্সিবিশন করুন। লিখুন। ’

কামরান ভাই কিছু বললেন না, অসহায়ভাবে হাসলেন। বইমেলার পর আবার দেখা, বললেন- ‘জানেন আমি ছবি আঁকছি, অন্যরকম ছবি। এক্সিবিশন করবো। প্রচ্ছদের কাজ কমিয়ে দিচ্ছি’। আমার তখন খুব ভালো লেগেছিল। এরকম ভালোলাগা আমার আরেকবার হয়েছিল। ২০০৮ সালের বইমেলায় তার সম্পাদনায় যখন চে গুয়েভারা রচনা সমগ্র প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থের কভার এবং চে গুয়েভারা নিয়ে তিনি যে পোস্টার করেন তা ছিল অসাধারণ। তেমনি লালনকে নিয়ে তিনি অসাধারণ এক পোস্টার করেন। শিল্পী জয়নুল আর সুলতানের ছবির অনুরাগী ছিলেন তিনি। তবে সুলতানের সঙ্গেই তার মিল ছিল বেশি। একবার তিনি জানালেন, চটের ক্যানভাসে নিজের বানানো রঙ দিয়ে তিনি ছবি আঁকছেন। আমি অসন্তুষ্ট হয়ে বললাম, ‘সুলতানের মতো পাগলামী করবেন না। এসব করতে যেয়ে সুলতানের অনেক ভালো ছবি নষ্ট হয়ে গেছে। ’ মাহবুব ভাই হাসলেন- ‘আমি তো শিল্পের জন্য শিল্পী নই, চিরন্তন হওয়ার ইচ্ছাও নাই, মানুষের মগজে একটু ঝাকুনি দিতে চাই। ’

তারুণ্যে ভরপুর মাহবুব কামরান ‘ছাপ’ নামে একটি বিষয়ভিত্তিক ছোটকাগজ করতেন। প্রতিটি সংখ্যায় একজনই লিখেছেন, তিনি মাহবুব কামরান। ‘এরকম কেন?’ জানতে চাইলে বললেন- লেখা চাই লেখা পাই না। আমি এসএম সুলতানকে নিয়ে কিছু লেখালেখি করেছি, তাই বললেন সুলতানকে নিয়ে একটি সংখ্যা করে দিতে। গ্যালারি ছাপ-এ সুলতানকে নিয়ে একটি বক্তৃতা করার আমন্ত্রণও তিনি দিয়েছিলেন। উভয়ক্ষেত্রেই আমি ব্যর্থ হয়েছি। ‘ব্যর্থ’ শব্দটি তিনি পছন্দ করতেন না, তাই অবিরত সক্রিয় থাকতেন। তিনি একাধারে চিত্রশিল্পী, কবি, গল্পকার, শিশুসাহিত্যিক, অনুবাদক, নাট্যকার ও নাট্যসংগঠক, চলচ্চিত্র সংগঠক ও নির্মাতা, সম্পাদক, শিক্ষক। নারায়নগঞ্জে নিজস্ব উদ্যোগে তিনি আর্ট গ্যালারী, আর্ট স্টুডিও, আর্ট স্কুল, টেক্সাটাইল ডিজাইন এ- প্রিন্টিং স্কুল গড়ে তোলেন। তিনি ছিলেন এদেশের স্বল্পদৈর্ঘ চলচ্চিত্র ও থার্ড থিয়েটার আন্দোলনের অন্যতম ব্যক্তি। নির্মাণ করেছেন আলোচিত ‘দেয়াল’ স্বল্পদৈর্ঘ চলচ্চিত্র। ঋত্বিক ঘটকের ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ চলচ্চিত্রে তিনি কাজ করেছেন। এখানে উল্লেখ্য যে, স্বাধীনতাউত্তরকালে তিনি ভারত সরকারের বৃত্তি পান। সেখানে তিনি নাটক ও চিত্রকলায় উচ্চতর শিক্ষা নেন। প্রচুর অনুবাদ করেছেন তিনি। দেশে তিনি প্রথম কার্টুন প্রদর্শনী করেন। সত্তরের দশকে তিনি মার্ক্সীয় চিন্তায় উদ্দীপিত হন, এই ধারার রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত ছিলেন কিছুকাল।

mahbub kamranতিনি কথিত ভদ্রসমাজের কেউ ছিলেন না, সুশীল সমাজের কেউ ছিলেন না। তিনি ছিলেন একজন গেরিলা। মুক্তিযুদ্ধের এই বীর গেরিলা যোদ্ধা বিজয়ী হয়ে অস্ত্র সমর্পণ করেছিলেন কিন্তু কৌশল ধরে রেখেছিলেন ঠিকই । গেরিলা কায়দাই তিনি সৃজনকর্মে নিয়োজিত ছিলেন, নতুন নতুন গেরিলা ক্যাম্প ও গেরিলা রেখে গেছেন। আলোকিত কিছু বাতি মাহবুব কামরানের বদৌলতে প্রজ্জ্বলিত থাকবে। কয় জনে তা পারে! শিল্পী মাহবুব কামরানের সান্নিধ্যে আমি বিভিন্নভাবে সমৃদ্ধ হয়েছি। যতই তার সঙ্গে সম্পর্কের আত্মীয়তা বেড়েছে, ততই মনে হয়েছি- একটি ডুবোচর আস্তে আস্তে ভেসে উঠছে। পলি-ভরা উর্বরা সে-চর নিয়ে গর্ভ করার অনেক কিছুই আছে। তার এই প্রস্তান আমাদের জাতীয় জীবনে কোনো আলোড়ন তুলবে না জানি, কিন্তু আমরা যারা তাকে কাছ থেকে কিছুটা চিনি, তারা জানি শিল্প-সাহিত্যচর্চা ছাড়াও, জাতির উন্নয়ন চর্চাও তিনি করে গেছেন। যদি আমাদের সমাজ জ্ঞাননির্ভর হতো, তাহলে আমরা মাহবুব কামরানের ঐশ্বর্যের সঙ্গে পরিচিত হতে পারতাম, তার কাছ থেকে আরো অনেক কিছু আদায় করে নিতে পারতাম।

মাহবুব কামরান স্বভাবে ছিলেন বোহেমিয়ান। ছেলেবেলা থেকেই মাঝে মাঝে ঘরছাড়া হয়ে উধাও হয়ে যেতেন। একটু বড় হয়ে সীমানা পেরিয়ে সে অভ্যাস অব্যাহত রাখেন। ঘুরেছেন- চীন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যা-, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, নেপাল, ভুটান প্রভৃতি দেশে। আজ যখন, মাহবুব কামরানের মৃত্যুতে শোকশব্দ রচনা করছি, কেন যেন মনে হচ্ছে, প্রিয় কামরান ভাই তার শিশুসুলভ হাসি নিয়ে পাশে দাঁড়াবেন, বলবেন- ‘এ কি করছেন! উদায় হওয়া মানে মৃত্যু নয়। ’ তারপর তিনি নতুন এক দেশের গল্প করবেন, এরপর বলবেন- ‘ছবি আঁকা শেষ, এবার হয়তো এক্সিবিশনটা করতে পারবো। ’ গত এক বছর ধরে কামরান ভাই মাঝেমাঝে বলতেন- ‘দেখে যান, আমি নতুন ধরনের ছবি আঁকছি। ’ দেখা হয়নি। বলতে ইচ্ছে করে- ‘কামরান ভাই, আপনার অনেক সৃষ্টিই তো আমাদের দেখা হয়নি, আমরা যে অন্ধ। ’ সান্ত¡না এই, আমরা ভাববো, ‘আপনি এক পলাতক পাখি, ফিরবেনই। আপনি তো কমরেড, আপনি তো গেরিলা- মৃত্যুঞ্জয়ী। ’ দেখা হবে, (মাহবুব কামরানের) কবিতার পঙতির মতো-

বুকের ভিতর আঙুল রেখে
নীরবে যাই রণাঙ্গনে
যুদ্ধে হবে ফিরে দেখা
বদ্ধ মাতাল কৃষ্ণচূড়া।

বাংলাদেশ সময় ১৫৪৫, জুলাই ২৮, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।