ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

একগুচ্ছ কবিতা | অপূর্ব সোহাগ

কবিতা ~ শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১৬
একগুচ্ছ কবিতা | অপূর্ব সোহাগ

চটি ও পথের বৃত্তান্ত

অনেক রাতের গল্প আছে ক্ষয়ে যাওয়া চটি ও পথের
সরকারি কোয়ার্টারের বাড়ির জানালার নীল পর্দার কাছে;
সেই সকল গল্প নতুন পোশাকে
আমাকে আবার মুখের দিকে দেখায়

কিছুদিন নীরবতা ভালো
নৈঃশব্দের পাঠশালায় মূর্তি হয়ে থাকুক অন্ধ অক্ষর
আর চুমুর দুপুর অস্পষ্ট থাকুক মৌলিক আয়নায়!
চলন্ত ট্রেনের কান্নায় ভুলে থাকা যাক
চটি ও পথের বৃত্তান্ত...

ধ্বংসের নগরে বেঁচে থাকুক কিছু কঠিন অনুভব
তুমুল বৃষ্টিতে ভেস্তে যাক তোমার ডাকনামের সন্ধ্যা
নিরাপদ থাকুক শুধু জানালার নীল পর্দা...


চৈত্রপারের হাওয়া

সকালে আমার ঘুম ভাঙলেও বালিশটা ঘুমিয়েই থাকে! আমার বালিশের অমরত্ব আছে; বালিশ ঘুমিয়ে ঘুমিয়েও বেঁচে থাকে আর আমি বেঁচে থেকেও মরে আছি ঠাকুর!

এক ভোরবেলায় বনফুলের মায়ায় পুড়েছিলাম চৈত্রপারের হাওয়ায়। আর বলেছিলাম ‘সমস্ত না পাওয়া নিয়েছি দু’হাত ভরে দেখো হাতে আর জায়গা নেই!’ মুখে কোনো কথা নেই, আমার সকল কথা পুড়িয়ে পুড়িয়ে ডুবে যায় সূর্য হাত-ঘড়িতে!

আমি পাঠ করি দিন, পাঠ করি রাত
দেখি নীল নীল অক্ষরের সন্তরণ
দেখি দৃশ্য থেকে আড়াল হয়ে যাওয়া;

দেখি না কখনো—কিভাবে আড়াল থেকে দৃশ্য হয়ে উঠেছিলে!


জলপদ্মরেখা ৫

হে আমার জলপদ্মরেখা এক্সপ্রেস
চলে গেলে সময় ডিঙিয়ে
চলে গেলে অন্তরনগর স্টেশন ছেড়ে!
মিলনের লাল পতাকা তোমাকে থামাতে পারেনি!

কথা ছিল না এমন
এ কোন নির্বাসন দিলে আমায়!
শেষ রাত্রির গানের করুণ সুরে আমার বসতি হবার কথা ছিল না
এ কেমন জীবন দিয়ে গেলে আমায়
যে জীবনের ভাঁজে ভাঁজে চিঠি না পাওয়ার দুঃখ, বিকেলের নিঃসঙ্গতা!

হে আমার জলপদ্মরেখা এক্সপ্রেস
চলে গেলে ভালোবাসা ডিঙিয়ে
চলে গেলে অন্তরনগর স্টেশন ছেড়ে
মিলনের লাল পতাকা তোমাকে থামাতে পারেনি
থামলে তুমি বিচ্ছেদের স্টেশনে!

তুমি বলে কেউ ছিল না আসলে কোনোকালে সব মনের সৃষ্টি...


প্রাত্যহিকী

রাত যেন একটি ডায়েরি
রাত্রির কাছে জমিয়ে রাখি আমার প্রাত্যহিকী
লিখে রাখি শর্মা হাউস, ম্যাংগো ক্যাফের গল্পগুলো।



কতকাল আমি তোমায় লিখি না
শব্দেরা পালিয়ে বেড়ায়
নিঃসঙ্গ কলমটি পড়ে থাকে অবহেলায়;
সাদা পৃষ্ঠাটিও চায়
শব্দেরা মাতলামি করুক তার বুকে!

মেঘ করে আসা বিকেলে
দেখি শব্দগুলো স্মৃতির ঝাউবনে ঘুড়ে বেড়ায়
পায়ে রক্তরাঙা আলতা মেখে।

রাত্রির কাছে জমে না তাই প্রত্যহিক শিশির!


পতনের শব্দ

অনুভূতিহীন এই নগরে
আমি পতনের শব্দ শুনতে শুনতে ক্লান্ত
তাই দৃশ্যের দর্শক না হয়ে
অন্ধকাররে মধ্যে মিশে
হয়ে গেছি রাতের চিত্রকল্প।

দ্যাখো তো আমাকে খুঁজে নিতে পারো কি না !


খেলাঘর

জীবন আশ্চর্য এক খেলাঘর
সে ঘরে তাসের আসর!

যা ভাবি না তাও ঘটে
সত্য হারিয়ে যায় মিথ্যের জটে!

সম্পর্ক জমছে টুপটাপ
সম্পর্ক ভাঙছে, ভেঙে উত্তাপ!

যা পাই নি তা আমার নয়
যা পেয়েছি সেটা নিয়েও সংশয়!

জীবন আশ্চর্য এক খেলাঘর
দূরে থেকেও থাকা যায় পরস্পর!

এই জীবনটা যেন ডাকঘর
চিঠির জন্যে অপেক্ষায় থাকে দিনভর।



বাংলাদেশ সময়: ১৮৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১৬

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।