ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

রবীন্দ্রনাথ ও ভারতবর্ষ

মজিদ মাহমুদ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৭ ঘণ্টা, মে ৫, ২০১১
রবীন্দ্রনাথ ও ভারতবর্ষ

রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যচিন্তায়, কর্ম ও দর্শনে এক ব্যাপক অংশ দখল করে আছে ভারতবর্ষ। প্রাচীনকালে বৈদিক মুনি-ঋষিরা যেমন ভারতচেতনা গঠনে অবিচ্ছেদ্য ভূমিকা রেখেছিলেন-- খাঁটি ভারতীয় চেতনা বলতে আমরা যা বুঝে থাকি, আধুনিককালে রবীন্দ্রনাথ সেই চেতনার একটি সংগঠিত রূপ নির্মাণে আজীবন সচেষ্ট ছিলেন।

মহাভারত ও রামায়ণের কবিগণ যে মহাপ্রজ্ঞা ও রূপকল্পের মাধ্যমে সমগ্রভারতের আত্মার অনুসন্ধান করেছিলেন, রবীন্দ্রনাথ একক প্রচেষ্টায় তা পুনরায় সংগঠিত করে তুলতে প্রয়াস পেয়েছিলেন। এমনকি পরবর্তীকালে রবীন্দ্রনাথের এই ভারত-চিন্তাকে রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিয়ে জওহরলাল নেহেরুসহ অনেক রাষ্ট্রনায়ক ভারত অনুসন্ধানের কাজ এগিয়ে নিতে সচেষ্ট ছিলেন। তাই বলে এটি ভাবলে চলবে না যে, রবীন্দ্রনাথ কেবল প্রাচীন ভারতের রূপ, রস ও দার্শনিক প্রজ্ঞা নিয়ে বিভোর ছিলেন। রবীন্দ্রনাথকে অতীতের ভারত ভাবিয়েছিল আধুনিক ভারত নির্মাণের প্রয়াসে। ফলে তাঁর ভারতভাবনার মধ্যে সমকালীন রাজনীতি, অর্থনীতি, ভূগোল ও সমৃদ্ধ ভারতের একটি সুস্থ রূপকল্প ঠাঁই পেয়েছিল।

রবীন্দ্রনাথ জন্মগ্রহণ করেছিলেন ব্রিটিশশাসিত এক পরাধীন ভারতে। তাঁর জন্মের প্রায় শতাধিক বছর আগে ১৭৫৭ সালে ইংরেজ ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির ক্লাইভ বাহিনীর কাছে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের মাধ্যমে মূলত এ দেশে ব্রিটিশ শাসনের সূচনা হয়। রবীন্দ্রনাথের জন্মের মাত্র চার বছর আগে ব্রিটিশকে খেদিয়ে দিতে ভারতজুড়ে এক মহারণের উপস্থিত হয়, ইতিহাসে যার নাম ‘মাহবিদ্রোহ’ বা ‘সিপাহি-বিদ্রোহ’ বলে খ্যাত। রবীন্দ্রনাথের ভারতভাবনা অনুসন্ধানের আগে ভারতের রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক ইতিহাসের কিছু সাধারণ আলোচনা জরুরি হয়ে আসে।

মানুষও এই পৃথিবীর প্রকৃতির সন্তান। অন্যান্য প্রাণির মতো রয়েছে তার বৃদ্ধি ও ক্ষয়, আনন্দ-বেদনা ও টিকে থাকার লড়াই। অন্যদের সঙ্গে প্রাকৃতিক সম্পদ ভাগাভাগি করে তাকেও বেঁচে থাকতে হয়। তাই মানুষের চরিত্র ও চেহারা গঠনে প্রাকৃতিক পরিবেশের রয়েছে এক অপরিসীম প্রভাব। প্রকৃতির উপর নির্ভর করে গড়ে ওঠে তার কর্মদক্ষতা, খাদ্যাভ্যাস, চিন্তার ধরন। ফলে পৃথিবীর সকল প্রান্তরের মানুষের চিন্তা ও কর্মসম্পাদনের উপায় একরকম নয়। কোনো জাতির ইতিহাসের গতিপ্রকৃতি তার নিজস্ব দেশের ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল। ভারত ইতিহাসের আদিকাল থেকে ইউরোপ ও মধ্যএশিয়ার রাষ্ট্রগুলো থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এর ভূগোল ও প্রাকৃতিক পরিবেশ এই অঞ্চলের মানুষের ওপর এমনভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে যে, অন্যজাতির মানুষের সাধারণ বৈশিষ্ট্য থেকে এখানকার মানুষের ধ্যান-ধারণা জীবন-বোধ ভিন্নভাবে গড়ে উঠেছে। ইতিহাসের কাল থেকে ভারত একটি আলাদা জাতি হিসাবে গড়ে উঠেছে, যার সাধারণ বৈশিষ্ট্য পৃথিবীর অন্য কোনো জাতি-গোষ্ঠীর সঙ্গে মিলবে না। বিস্তৃত উর্বরা জমি, খাদ্যে স্বয়ংভরতা, যোগাযোগের সহজগম্যতা, সুষম আবহাওয়া এ অঞ্চলের মানুষকে করে তুলেছে আয়েশি, পরজাতির প্রতি সহিষ্ণু এবং অন্য দেশ দখল ও বাণিজ্যে পরাক্সমুখ। রবীন্দ্রনাথ ভারতবর্ষের ভৌগোলিক রূপ এইভাবে চিহ্নিত করেছেন :

‘ভারতবর্ষের একটি সম্পূর্ণ ভৌগোলিক মূর্তি আছে। এর পূর্বপ্রান্ত থেকে পশ্চিমপ্রান্ত এবং উত্তরে হিমালয় থেকে দক্ষিণে কন্যাকুমারিকা পর্যন্ত যে একটি সম্পূর্ণতা বিদ্যমান, প্রাচীনকালে তার ছবি অন্তরে গ্রহণ করার ইচ্ছে দেশে ছিল, দেখতে পাই। এক সময়, দেশের মনে নানা কালে নানা স্থানে যা বিচ্ছিন্ন হয়েছিল তা সংগ্রহ করে, এক করে দেখার চেষ্টা, খুব স্পষ্টভাবে জাগ্রত দেখি। তেমনি ভারবর্ষের ভৌগোলিক স্বরূপকে অন্তরে উপলব্ধি করবার একটি অনুষ্ঠান ছিল, সে তীর্থভ্রমণ। দেশের পূর্বতম অঞ্চল থেকে পশ্চিমতম অঞ্চল এবং হিমালয় থেকে সমুদ্র পর্যন্ত এর পবিত্র পীঠস্থান রয়েছে, সেখানে তীর্থ স্থাপিত হয়ে একটি ভক্তির ঐক্যজালে সমস্ত ভারতবর্ষকে মনের ভিতরে আনবার সহজ উপায় সৃষ্টি করেছে।

ভারতবর্ষ একটি বৃহৎ দেশ। একে সম্পূর্ণভাবে মনের ভিতর গ্রহণ করা প্রাচীনকালে সম্ভবপর ছিল না। আজ সার্ভে করে, মানচিত্র এঁকে, ভূগোল বিবরণ গ্রথিত করে ভারতবর্ষের যে ধারণা মনে আনা সহজ হয়েছে, প্রাচীনকালে তা ছিল না। ’ (মহাত্মা গান্ধী; রবীন্দ্র-রচনাবলী চতুর্দশখণ্ড, ঐতিহ্য, ঢাকা, ২০০৪, পৃ. ২২৩)

এই হলো রবীন্দ্রনাথের মোটামুটি ভৌগোলিক ভারত। তবে ভারতের ভৌগোলিক সীমানা সবসময় রাজনৈতিক ও দার্শনিক ধারণা অনুসরণ করতে পারেনি।

আয়তনের বিশালতা ও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ভারতকে একটি মহাদেশের অবয়ব দান করেছে। রাশিয়াকে বাদ দিলে সমগ্র ইউরোপ মহাদেশের আয়তন ভারতের চেয়ে বড় নয়। জলবায়ু, ভাষা, নৃতাত্ত্বিক ভিন্নতা ও প্রকৃতিক সম্পদ বিবেচনা করলে ভারতকে একটি মহাদেশ বলা যায়।

পৃথিবীর অন্যান্য প্রান্তের জাতিরাষ্ট্রের চেয়ে ভারতীয় জাতিরাষ্ট্রের সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য হওয়ার কারণ প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য। খাদ্যশস্যের জন্য এ দেশের মানুষকে বড় ধরনের পরিশ্রমের মধ্যে যেতে হয়নি। প্রাচীনকাল থেকে প্রায় সর্বত্র বনেজঙ্গলে নানা প্রকার ফলমূল ও শস্যদানায় ভরপুর থাকতো। নদীগুলো ছিল আমিষের অনিঃশেষ ভাণ্ডার। জমির ওপর কোনো রকম বীজ ছিটিয়ে দিলে সহজেই উৎপন্ন হতো ফসল। দেশের সর্বত্র নদীগুলো জালের মতো বিস্তৃত ছিল-- সারা ভারতবর্ষকে করেছিল সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থার অধীন। মধ্যযুগের পর্যটক ইবনে বতুতা, সেবাস্থিন মানরিক কিংবা ফ্রাঁসোয়া বার্নিয়ারের ভ্রমণবৃত্তান্ত থেকে আমরা এর সমর্থন পাই। ফলে ভারতবর্ষের মানুষ নিজের টিকে থাকার লড়াইয়ের বাইরে জীবনজগৎ নিয়ে ভাববার মতো পেয়েছিল প্রভুত সময়। এমনকি সংসারত্যাগের বানপ্রস্থর ধারণাটিও এসেছিল বনে প্রচুর খাদ্য পাওয়ার জন্য।

রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘পরিচয়’ গ্রন্থে ‘ভারতবর্ষের ইতিহাসের ধারা’ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। রবীন্দ্রনাথের কথায় : ‘পর্দা উঠিবামাত্র ভারতবর্ষের ইতিহাসের প্রথমাঙ্কে আমরা আর্য-অনার্যের প্রচণ্ড জাতি-সংঘাত দেখিতে পাই। এই সংঘাতের প্রথম প্রবলবেগে অনার্যের প্রতি আর্যের যে বিদ্বেষ জাগিয়া ছিল তাহারই ধাক্কায় আর্যরা নিজের মধ্যে নিজে সংহত হতে পারিল’। (ভারতবর্ষের ইতিহাসের ধারা, পরিচয়, রবীন্দ্র-রচনাবলী, ৯ম খণ্ড, প্রাগুক্ত, পৃ. ৬২৭)

ভারতবর্ষের সঠিক ইতিহাস নির্মাণ রবীন্দ্রনাথের একটি প্রধান কর্ম ছিল। আমরা জানি, প্রথমে ভারতবর্ষের বাইরে থেকে আর্যরা এ দেশে এসে বসতি স্থাপন করেছিল। তারা এসেছিল পূর্ব ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে। তবে তারা যে একদিনে বা একই সময়ে ভারতবর্ষে এসেছিলেন তেমন নয়। ভারতবর্ষে তাদের অভিবাসন প্রক্রিয়াটি ছিল শত শত বছরব্যাপী। তাদের এই আগমন যে খুব সহজ ছিল এমনও নয়, তারা সবাই সরাসরি ভারতে এসে পৌঁছাতে পেরেছিল তাও হয়তো নয়। তবু তাদের দলে দলে এই আগমন ভারতে আদিবাসীদের মনে ব্যাপক শঙ্কা সৃষ্টি করেছিল। এই শঙ্কা ভারতের আদিবাসীদের সঙ্গে আর্যদের বিপুল সংর্ঘষে রূপ নিয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, এই বাধা ও সংর্ঘষই ভারতে আর্য জাতিকে একত্রে  বা একসূত্রে গাঁথার উপায় তৈরি করে দিয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ বলছেন, আর্যদের এই জাতি সংগঠনের কালে কে তাদের বীর ছিল আমরা তা জানি না। আর সে জানার প্রয়োজনীয়তাও ছিল না। কিন্তু আর্যরা যখন এখানে নিজেদের অবস্থান সংহত করে তুললেন তখন তাদের অনার্যদের সঙ্গে যোগবন্ধন তৈরি করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিল। এই মহা-উদযোগে তিনজন ক্ষত্রিয়ের বিশেষ অবদান আছে বলে রবীন্দ্রনাথ তাঁর এই গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। এই তিনজন হলেন জনক, বিশ্বমিত্র ও রামচন্দ্র। এই তিনজনের যে কেবল একটিমাত্র ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল তা-ই নয়, এই তিনজনের অভিপ্রায়ের মধ্যেও একটি মিল দেখা যায়। ‘বিশ্বমিত্র রামচন্দ্রের সম্মুখে যে লক্ষ্য স্থাপন করিয়াছিলেন তাহা তিনি জনক রাজার নিকট হইতে লাভ করিয়াছিলেন। ’

আর্যরা এ দেশে এসে কৃষি ও পশুপালনকে জনপ্রিয় করে তুলতে সচেষ্ট ছিলেন । কৃষি বিস্তারের মাধ্যমে আর্য সভ্যতা বিস্তার করা ছিল ক্ষত্রিয়দের একটি প্রধান কাজ। বিশ্বমিত্র রামচন্দ্রকে জনক রাজার গৃহে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং বিশ্বমিত্রের নেতৃত্বে রামচন্দ্র জনকের ভূকর্ষণজাত কন্যা সীতাকে ধর্মপতœী হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। আমরা জানি, সীতা মানে লাঙ্গলের ফলা। অতএব আমরা লক্ষ করব রামায়ণের কাহিনীতে যেমন ব্যক্তিরূপে চরিত্রসমূহের অস্তিত্ব বিদ্যমান, তেমনি এর একটা রূপক মূল্যও রয়েছে। জনক একদিকে ব্রহ্ম-জ্ঞানের অনুশীলন এবং অন্যদিকে সহস্তে হলচালনাও করতেন। রবীন্দ্রনাথ এ স্থলে অপেক্ষাকৃত সাম্প্রতিক কালের একটি ইতিহাসের তুলনা করেছেন। ‘আমেরিকায় ইউরোপীয় উপনেবেশিকগণ যখন অরণ্যের উচ্ছেদ করিয়া কৃষি বিস্তারের  ক্ষেত্র প্রস্তুত করিতে ছিলেন তখন যেমন মৃগয়াজীবী আরণ্যকগণ পদে পদে তাহাদিগকে বাধা দিতে ছিল-- ভারতবর্ষেরও সেরূপ আরণ্যকদের সহিত কৃষকদের বিরোধে কৃষি ব্যাপার কেবলই বিঘœ-সংকুল হইয়া উঠিয়া ছিল। ’

রবীন্দ্রনাথ নৃ-তাত্ত্বিক আলোচনা থেকে দেখাতে চেয়েছেন বানর, ভল্লুক, সর্প কিংবা হনুমান বলতে এই মহাকাব্যগুলোতে যা বর্ণনা করা হয়েছে তা মূলত কোনো ইতরপ্রাণী বোঝাবার জন্য নয়-- তা হয়তো সেই সময়ের অনার্য বংশপরিচয়েরই অংশ। যেমন আগের দিনে বর্বর জাতির মধ্যে বিশেষ জন্তু পবিত্রজ্ঞানে পূজিত হয়ে থাকতো এবং সেই জন্তুর নামেই তাদের বংশধর পরিচিতি লাভ করতো, তেমনি ভারতবর্ষে নাগ বংশের পরিচয় পাওয়া যায়। ‘কিষ্কিন্ধ্যার রামচন্দ্র যে অনার্য দলকে বশ করিয়া ছিলেন তাহারাই যে এইরূপ কারণেই বানর বলিয়া পরিচিত তাহাতে সন্দেহ নাই। কেবল তো বানর নহে রামচন্দ্রের দলে ভল্লুকও ছিল। ’  রামচন্দ্র যে অনার্য বানর বংশের আনুগত্য পেয়েছিলেন তা কেবল রাজনীতি ও শক্তির দ্বারা নয়, ভক্তি ধর্মের মাধ্যমে তিনি এদের কাছে টানতে পেরেছিলেন। এমনকি  তিনি হনুমানের ভক্তি পেয়ে দেবতা হয়ে উঠেছিলেন।

মহাভারতের আলোচনা করলে দেখা যায়, বিরোধের মধ্য দিয়েও আর্যদের সঙ্গে অনার্যদের রক্তের মিলন ও ধর্মের মিলন ঘটেছিল। একদিন ভারতবর্ষে আর্য-অনার্যের যে মিলন ঘটেছিল তার মধ্যে পদে পদে একটা সংঘর্ষ ছিল। তারপর ভারতবর্ষের ধারার মধ্যে বৌদ্ধধর্মের প্রাবল্য এসে উপস্থিত হলো। এর কারণ হয়তো আর্য-অনার্যের মধ্যে প্রবল সংঘর্ষে ভারতীয় জাতপাত ও চতুর্বর্গ এর যাত্রাকে ব্যাহত করে তুলছিল। তাই গৌতম বুদ্ধ এসে এর সবটার ওপরে প্রবল আঘাত হেনে একসূত্রে গেঁথে দিতে চাইলেন। বৌদ্ধ প্রাবল্যে আর্যসমাজে ব্রহ্মণরা তাদের স্বতন্ত্র বজায় রাখতে পেরেছিলেন। বৌদ্ধধর্মের মিলন-নীতির ফলে শক, হূন প্রভৃতি অনার্যগণ ভারতবর্ষের মূল স্রোতের সঙ্গে, ভারতবর্ষের সমাজের সঙ্গে সহজেই মিশে যেতে পেরেছিলেন। বাইরে থেকে আসা জাতিগুলোর মধ্যে তাদের টিকে থাকা এবং ক্ষমতা বিস্তারের স্বার্থে যে সব বিরোধ আসন্ন হয়েছিল তা মূলত ধর্মীর নীতির দ্বারা মিলিত হওয়ার উপায় নির্ণয় করা হয়েছিল।

তবে এ কথা মনে করবার কোনো উপায় নেই যে, আর্যরাই ভারতে প্রথম সভ্যতার বীজ বপন করেছিল। আর্যরা আসার আগে দ্রাবিড়রা সভ্যতায় হীন ছিল না । মহেঞ্জদারো এবং হরোপ্পার মতো নগর সভ্যতা আর্যরা এ দেশে আসার আগে সিন্ধু নদের অববাহিকায় গড়ে উঠেছিল। দ্রাবিড়রা আর্যদের মতে তত্ত্বজ্ঞানী না হলেও কল্পনা, গান ও কলাবিদ্যায় একেবারে পিছনে ছিল না । ফলে আর্য এবং এই অনার্যদের তথ্য, জ্ঞান, রস প্রবণতা মিলেই ভারতে একটি  শিল্পদর্শন গড়ে উঠেছিল- যা আর্যও নয়, অনার্যও নয়- এটি খাঁটি ভারতীয়। রবীন্দ্রনাথ বলতে চেয়েছেন, ভারতবর্ষের আরম্ভ যুগে আর্য-অনার্যের এই যুদ্ধ সংঘাত তাদের সমকক্ষতারই পরিচায়ক।

আর্য-অনার্যের এই সংঘাত শেষ না হতেই ভারতবর্ষের জীবনের মধ্যে ঝড়ের বেগে এসে প্রবেশ করলো আরব-মুসলমানরা, যা ভারতীয় সমাজকে আবার নতুন সংঘর্ষে নতুন চিন্তায় নতুন ধর্মে জাগ্রত করে তুললো। এতকাল যা ছিল ভারতের হিন্দুর কাছে গৃহীত তাই হয়ে উঠল মুসলমানের কাছে নিগৃহীত। হিন্দু এতকাল যা উপাস্য জেনে এসেছিল, মুসলমানের কাছে তা হয়ে উঠলো পরম অভিশাপের বিষয়। এই প্রবল বিরোধের যুগে ভারতের হিন্দুরা মহাসংকটে নিপতিত হতে থাকলো। এর থেকে বহুকাল ধরে পরিত্রাণের কোনো পথ খুঁজে পেল না তারা। যদিও এই বাধার মূলে প্রধানত ছিল ধর্ম, তবু এই ধর্মের পথেই তার একটি মিলনের সূত্র আবিষ্কৃত হলো। এই আবিষ্কারের মহাগুরু ছিলেন নানক, কবীর, শ্রীচৈতন্য প্রমুখ মহামানবগণ। কবীরের জীবন পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, তিনি ভারতবর্ষের যাবতীয় বাহ্য আবর্জনাকে ভেদ করে এর অন্তর-সৌন্দর্য আবিষ্কার করতে পেরেছিলেন। যে কারণে কবীরপন্থীদের মূলত ভারতপন্থী বলা হয়ে থাকে। এই মহাপুরুষদের সাধনার ফলে ভারতের হিন্দু-মুসলমানের প্রবল বিরোধও একটি মিলনসূত্র খুঁজে পায়। রবীন্দ্রনাথ বলছেন ‘বহুর মধ্যে আপনাকে বিক্ষিপ্ত করিয়া ফেলা ভরতবর্ষের স্বভাব নহে, সে একককে পাইতে চায় বলিয়া বাহুল্যকে একের মধ্যে সংযত করাই ভারতের সাধনা। ’

ভারতীয় জীবনে বহুবার এই সংঘাত ও দ্বন্দ্ব উপস্থিত হয়েছে। কিন্তু ভারত কখনো সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ করে নিজেকে বিলিয়ে দেয়নি। সে সকল কিছুকে তার আপনার মধ্যে নেবার চেষ্টা করেছে। রবীন্দ্রনাথ তাঁর নিজকালেও ইংরেজের প্রবল-প্রতাপের যুগে এ ধরনের সংঘাত লক্ষ করেছিলেন। এই সংঘাতের কোনো নিরাময় আছে বলে সমকালীন মানুষদের ভাবনায় খুব একটা স্পষ্ট হয়নি। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ বলতে চেয়েছেন, সমকালে আমরা দেখতে না পেলেও ভারত তার নিজের মতো করে নতুন অভিবাসীদের আত্তীকরণ করবে। ভারতের উপলব্ধি স্বজাতির মধ্য দিয়ে সর্বজাতিকে ও সর্বজাতির মধ্য দিয়ে স্বজাতিকে সত্যরূপে পাওয়া। রবীন্দ্রনাথ বলছেন, ‘আপনাকে ত্যাগ করিয়া পরকে চাহিতে যাওয়া যেমন নিষ্ফল ভিক্ষুকতা, পরকে ত্যাগ করিয়া আপনাকে কুঞ্চিত করিয়া রাখা তেমনি  দারিদ্র্যের চরম দুর্গতি। ’

এছাড়া ‘সমাজ’ গ্রন্থের ‘পূর্ব ও পশ্চিম’ প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন : ‘একদিন যে শ্বেতকায় আর্যগণ প্রকৃতির ও মানুষের সমস্ত দুরূহ বাধা ভেদ করিয়া ভারতবর্ষে প্রবেশ করিয়াছিলেন, যে অন্ধকারময় সুবিস্তীর্ণ অরণ্য এই বৃহৎ দেশকে আচ্ছন্ন করিয়া পূর্বে পশ্চিমে প্রসারিত ছিল তাহাকে একটি নিবিড় যবনিকার মতো সরাইয়া দিয়া ফলশস্যে বিচিত্র আলোকময় উন্মুক্ত রঙ্গভূমি উদ্ঘাটিত করিয়া দিলেন, তাহাদের বুদ্ধি শক্তি ও সাধনা একদিন এই ইতিহাসের ভিত্তি রচনা করিয়াছিল। কিন্তু এ কথা তাহারা বলতে পারেন নাই যে, ভারতবর্ষ আমাদেরই ভারতবর্ষ। ’ (র-র-৬, প্রাগুক্ত, পৃ. ৫৭০) রবীন্দ্রনাথের অভিপ্রায় ছিল, ভারতবর্ষে কেউ নিজেকে বড় করে প্রকাশ করবে না। এটা না হিন্দুর দেশ, না মুসলমানের। আগের দিনে আর্যরা যেমন করে এসে এর মূলধারায় মিশে গেছে। এমনকি শূদ্রের সঙ্গে তাদের মিলিত হতে বাধেনি। ভারতীয় রাজনীতি ও সমাজকে রবীন্দ্রনাথ যে প্রায় একই সূত্রে গ্রোথিত করে চিন্তা করেছিলেন ‘কর্তার ইচ্ছাই কর্ম’ প্রবন্ধে তা প্রকাশ পেয়েছে। এ প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ বলেন, ‘ভারতশাসনে আমাদের ন্যায্য অধিকারটা ইংরেজের মনস্তত্ত্বের মধ্যেই নিহিত-- এই আশার কথাটাকে যদি আমাদের শক্তি দিয়া ধরিতে পারি তবে ইহার জন্য বিস্তর দুঃখ সহা, ত্যাগ করা, আমাদের পক্ষে সহজ হয়। ’

ভারতবর্ষের ইতিহাসের ধারায় রবীন্দ্রনাথের প্রধান আলোচ্য ছিল, ভারতের নিজস্ব সঞ্জীবনী ক্ষমতার প্রকাশ। ইতিহাসের কালে ভারত বহুবার হতাশার ঘোর অন্ধকারে নিপতিত হয়েছে। কিন্তু একেবারে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে সে নিজেকে পুরোপুরি হারিয়ে ফেলেনি। যেসব বহির্শক্তি ভারতের সম্পূর্ণ কণ্ঠরোধ করতে চেয়েছে, কালক্রমে তাদের পিছনে ফেলে ভারত স্বকীয় কণ্ঠস্বর প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। সুতরাং রবীন্দ্রনাথের প্রত্যাশা ছিল তার কালে ভারত যে ধরনের সমস্যা মোকাবিলা করছিল তারও একদিন ভারতীয় উপায়ে সমাধান হবে।

রবীন্দ্রনাথের আজীবন আকাক্সক্ষা ছিল প্রকৃত ভারতের ইতিহাস ভূগোল ও ঐতিহ্যকে জানা, তুলে ধরা। কারণ ভারত এমন একটি দেশ যার পশ্চাতে রয়ে গেছে হাজার হাজার বছরের ইতিহাস ও কর্মকাণ্ড। যে ভারত জন্ম দিয়েছে বেদ উপনিষদ, রামায়ণ ও মহাভারত, সেই ভারতের কোনো নিজস্ব ইতিহাস ও ভূগোল থাকতে পারে না, তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। তিনি ভারতকে যেমন ভারতের মধ্যে অনুভব করতে চেয়েছেন, তেমনি ভারতকে ভারতের বাইরেও অনুসন্ধান করতে চেয়েছেন। কবির কথায় : ‘বিদেশী বণিকের হাতে গড়া কলকাতা শহরের মধ্যে ভারতের এমন কোন পরিচয় পাওয়া যায় না যা সুগভীর ও সুবিস্তৃত। ’ কবির এই আক্ষেপের মাধ্যমে সহজেই অনুমেয় আধুনিক কলকাতা শহরের সঙ্গে প্রকৃত ভারতের তেমন কোনো সংযোগ ছিল না। ১৬৯৮ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ বণিকদের সুবিধার্থে জোব চার্নক যে কলকাতা শহরের পত্তন করেছিলেন তার পুরোটা ইংরেজ আদলে গড়ে উঠেছিল। তখন থেকেই এই শহরটি ছিল ভারতবর্ষের মধ্যে প্রথম একটি বিদেশী শহর যার আত্মা ও আদল ছিল ইউরোপীয় । কিন্তু সে শহর যতই সুন্দর হক, পরিপাটি হোক, ভারতীয় কবির তাতে স্বস্তি ছিল না । রবীন্দ্রনাথ ১৯২৭ সালে সুমাত্রা ও জাভা যাত্রার প্রাক্কালে একটি প্রবন্ধ রচনা করেন, যার নাম ছিল ‘বৃহত্তর ভারত’। সেখানে কবি বলেছিলেন, ‘আজ একটা আকাংক্ষা আমাদের মধ্যে জেগেছে ভারতের বাইরেও ভারতকে বড় সন্ধান করতে চাই। ’ ‘ডিসকভারি অফ ইন্ডিয়া’ লিখতে যেয়ে হওহরলাল নেহেরু রবীন্দ্রনাথকে অনুসরণ করে বলেছিলেন : ‘ভারতবর্ষকে যদি জানতে ও বুঝতে হয়, আমাদের সময় ও স্থানের ব্যবধান ছাড়িয়ে দূরে যেতে হবে। আমরা যেন কিছুক্ষণের মতো আমাদের দুর্গতি ক্ষুদ্রতা ও বিভীষিকা ভুলে যেতে পারি। তা হলে আমরা আভাস পাব আমাদের দেশ একদিন কেমন ছিল, কি যোগ্যতা দেখিয়েছিল। ’

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন : ‘আমার দেশকে জানতে হলে সেই যুগে যেতে হবে যখন সে তার আত্মাকে উপলব্ধি করেছিল তার বাস্তব সীমা অতিক্রম করে উর্দ্ধে উঠে গিয়েছিল, যখন ভারত আত্মপ্রকাশ করেছিল দীপ্যমান মাহনুভবতায়; যে প্রকাশ পূর্বদিগন্ত আলোকিত করে বহু বিদেশের অধিবাসীদের অন্তরে এনেছিল এই প্রত্যয় যে ভারত তাদেরও আপন । তারা জাগ্রত হয়ে উঠেছিল চমকিত বিস্ময়ে জীবনের অনুভূতিতে। এখন দেখলে আমার দেশকে জানা যাবে না, এখন সে এক ক্ষুদ্র গণ্ডির মধ্যে আত্মগোপন করেছে, হীন গর্বে সকলকে বাইরে ঠেকিয়ে রেখেছে। সে অতীতের সকল আলো নিবে গেছে, ভবিষ্যতের যাত্রীদের জন্য তার কোন বাণী নেই, আজ তার দীনমন নিজেকে নিয়ে মূক হয়ে নিজেরই চারিদিকে আবর্তিত হচ্ছে। ’

রবীন্দ্রনাথ আজীবন ভারতীয় দর্শনচেতনার উপযোগী এক নায়কের অনুসন্ধান করেছেন। ‘গোরা’ উপন্যাসের গোরা চরিত্রে তিনি তার কিছুটা প্রতিফলন ঘটাতে পেরেছিলেন। অনেকেই ধারণা করে থাকেন, মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে গোরার কোথায় যেন মিল রয়ে গেছে। আত্তীকরণের ভেতর দিয়ে ভারত যেভাবে সারা পৃথিবীর মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছিল রবীন্দ্রনাথ গোরা চরিত্রের মাধ্যমে তার সন্নিবেশ ঘটাতে চেয়েছিলন।

রবীন্দ্রনাথের ভারত-চেতনা ছিল ব্যাপক ও বিশাল; কিছু ক্ষেত্রে জটিল ও যুক্তিসাপেক্ষ-- পুরোপুরি ইতিহাসের তথ্যের উপর প্রতিষ্ঠিত নয়। প্রাচীন মহাকাব্য ও ধর্মগ্রন্থের বাণী এবং ইতিহাসের বিক্ষিপ্ত তথ্যের আলোকে তিনি একটি ভারতীয় ধারণা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যার সহজ উপসংহারের উপায় নেই। গীতাঞ্জলির ১০৬ সংখ্যক কবিতাটির আংশিক উদ্ধৃতি দিয়ে এই রচনার ইতি টানছি :

হে মোর চিত্ত, পুণ্য তীর্থে
জাগো রে ধীরে--
এই ভারতের মহামানবের
সাগরতীরে।
হেথায় দাঁড়ায়ে দু বাহু বাড়ায়ে
নমি নরদেবতারে,
উদার ছন্দে পরমানন্দে
বন্দনা করি তাঁরে। ...

কেহ নাহি জানে কার আহ্বানে
কত মানুষের ধারা
দুর্বার স্রোতে এল কোথা হতে
সমুদ্রে হল হারা।
হেথায় আর্য, হেথা অনার্য,
হেথায় দ্রাবিড় চীন--
শকহুনদল পাঠান মোগল
এক দেহে হল লীন।
পশ্চিম আজি খুলিয়াছে দ্বার,
সেথা হতে সবে আনে উপহার,
দিবে আর নিবে, মিলাবে মিলিবে,
যাবে না ফিরে--
এই ভারতের মহামানবের
সাগরতীরে।

সহায়ক পাঠ :

 ১. ভারতবর্ষ, রবীন্দ্র-রচনাবলী, দ্বিতীয়খণ্ড, ঐতিহ্য, ২০০৪, পৃ: ৭৪১
 ২. আত্মশক্তি, প্রাগুক্ত, পৃ: ৬৫৯
 ৩. ১০৬ সংখ্যক গান, গীতাঞ্জলি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কবিতাপাক্ষিক, কলকতা, ২০১১
 ৪. জাপানযাত্রী, মজিদ মাহমুদ সংকলিত রবীন্দ্রনাথের ভ্রমণ সাহিত্য, কথাপ্রকাশ ২০১১
 ৫. জাভাযাত্রী, প্রাগুক্ত
 ৬. গোরা, রবীন্দ্র-রচনাবলী, তৃতীয়খণ্ড, ঐতিহ্য, ঢাকা ২০০৪
 ৭. বৃহত্তর ভারত, কালান্তর, রবীন্দ্র-রচনাবলী, দ্বাদশখণ্ড, ঐতিহ্য, ঢাকা ২০০৪, পৃ. ৬৫১
 ৮. শূদ্রধর্ম, প্রাগুক্ত, পৃ. ৬৪৭
 ৯. ইংরাজ ও ভারতবাসী, রাজা-প্রজা, রবীন্দ্ররচনাবলী, পঞ্চমখণ্ড, ঐতিহ্য ২০০৪, পৃ. ৬৭৫
 ১০. দেশনায়ক, সমূহ, প্রাগুক্ত, পৃ: ৭৫৩
 ১১. ইংরাজের আতঙ্ক, প্রাগুক্ত, পৃ. ৭৮৯
 ১২. ভারতবর্ষের ইতিহাসের ধারা, পরিচয়, রবীন্দ্র-রচনাবলী, নবমখণ্ড, ঐতিহ্য, পৃ. ৬২৭
 ১৩. কর্তার ইচ্ছায় কর্ম, প্রাগুক্ত, পৃ. ৭১৭
 ১৪. মহাত্মা গান্ধী, রবীন্দ্র-রচনাবলী, চতুর্দশখণ্ড, প্রাগুক্ত, পৃ: ২২৩
 ১৫. আশ্রমের রূপ ও বিকাশ, পাগুক্ত, পৃ. ২৪১
 ১৬. বিশ্বভারতী, প্রাগুক্ত, পৃ: ২৬৩
 ১৭. ভারতবর্ষে সমবায়ের বিশিষ্টতা, সমবায়নীতি, প্রাগুক্ত, পৃ: ৩৪৫
 ১৮. শিক্ষা, রবীন্দ্র-রচনাবলী, ষোড়শখণ্ড, প্রাগুক্ত, পৃ. ২৭৫
 ১৯. (কবিতা) হোক ভারতের জয়, পৃ- ২৫, দিল্লী দরবার, পৃ. ৫৩, ভারতী, পৃ. ৫৪ রবীন্দ্র-রচনাবলী, সপ্তদশখণ্ড
 ২০. নব্যভারত, সাময়িক সাহিত্য সমালোচনা, প্রাগুক্ত, পৃ. ৭২৯
 ২১. সাময়িক সারসংগ্রহ, প্রাগুক্ত, পৃ. ৬৯১
 ২২. শান্তিনিকেতন, প্রার্থনা, রবীন্দ্র-রচনাবলী, সপ্তমখণ্ড, পৃ. ৫৬৫
 ২৩. স্বদেশ, রবীন্দ্র-রচনাবলী ৬ষ্ঠখণ্ড, পৃ. ৫০৯
 ২৪. সমাজ, প্রাগুক্ত, পৃ. ৫৩১
 ২৫. শিক্ষা, প্রাগুক্ত, পৃ. ৫৮১
 ২৬. ঘরে-বাইরে, রবীন্দ্র-রচনাবলী, চতুর্থ খণ্ড, প্রাগুক্ত, পৃ: ৪৮৫  
 ২৭. সভ্যতার সংকট, রবীন্দ্র-রচনাবলী, ত্রয়োদশখণ্ড, পৃ. ৭৮৫

বাংলাদেশ সময় ১৬৫০, মে ৫, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।