‘একদিন কবি হব বলে শিমুল তুলো ভোরে মাড়িয়েছিলাম ক্ষেতের আইল। দূরের
নদীতে বেদেনীদের নৌকাগুলো নেই, জলের স্পর্ধায় জল ভেঙে কোথায় হারাও
ও জলকুমারী?’ [ডোমের টেবিলে স্বপ্ন অথবা কবির জবানবন্দি]
ওপরের কবিতার পঙ্ক্তিগুলি যিনি লিখেছেন তিনি মুস্তাফিজ শফি।
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ছোটকাগজের মধ্য দিয়ে মুস্তাফিজ শফির সফল সূচনা হলেও পরবর্তী সময়ে জাতীয় পর্যায়ে সাংবাদিকতায় নিজেকে নিয়োজিত করেন এবং এ পেশায় তার সময়ের মেধাবী তরুণদের একজন। যথারীতি তার সম্পর্কেও ধারণা করা হয়েছিল, সাংবাদিকতার চাপে তার কবিসত্তা পরাভূত হয়েছে। কিন্তু দেখা গেল, কবিতা থেকে তিনি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েননি। বরং কাব্যচর্চার শুরুর দুই দশক পর এসে নতুন করে জানান দিলেন তার অস্তিত্ব।
‘পড় তোমার প্রেমিকার নামে’ বইটির শুরুতেই রয়েছে ‘মুস্তাফিজ শফির সঙ্গে মুস্তাফিজ শফির যত অমিল’-এর মতো চমকপ্রদ এক শিরোনামের কবিতা, যেখানে উঠে এসেছে একই শরীরে কবিসত্তা ও সাংবাদিকসত্তাকে লালন করার দ্বন্দ্বমুখর চিত্র। রয়েছে চিরায়ত ব্যক্তিমানসের ভেতরকার স্বপ্নের সাথে বাইরের বাস্তব জীবনকে যাপনের পার্থক্য :
‘দু’জনের দেখা হয়, কথা হয় নিরন্তরÑ অভিজ্ঞতা বলাবলি করে, হাত ধরে হাঁটে।
একজন খবরের কারিগর, আরেকজন রঙের মিস্ত্রি; কাব্যকলা করে, জ্যোৎস্নারাতে
ছোটে ভাবনদীর ঘাটে।
নিজেকে উজাড় করে মানুষকে জানায়, আরেকজন বুকে পোষে আশ্চর্য
দহন। একজন আগলে রাখে স্তব্ধতাÑ কিশোরীর গোপন অসুখ। আরেকজন
কেমনতরো, যেখানে-সেখানে মেলে ডায়েরির পাতা।
একজন সরব ভীষণ, আরেকজন মৌনতার করে চাষবাস- স্মৃতির কলসে বান্ধে
বাউরি বাতাস; খুঁজে ফেরে মাধবকুণ্ডের মেয়ে, বারুণী বেলা; আরেকজন ভাবে
এইসব নিতান্তই ছেলেখেলা।
একজন নির্বোধ খুব, একজন অদ্ভুত চালাক। বাইরের মানুষ বোঝে না ভেতরের
ফারাক। ’
মুস্তাফিজ শফির এ বইটিতে কবিতা রয়েছে ৪৪টি। এগুলিতে নানাভাবে উঠে এসেছে কবির দেখা নিসর্গচিত্র, গ্রাম, প্রেম, শৈশবের নস্টালজিক জগৎ বা কৈশোরের রঙিন ব্যক্তিজীবন। বইটি পাঠ করলে পাঠকরা নিশ্চিতই সাধ পাবেন কবিতাময় শব্দ, ছবি, বিষাদ আর আনন্দজগতে ভ্রমণের।
বইটি প্রকাশ করেছে ঐতিহ্য, প্রচ্ছদ করেছেন মাহবুবুল হক, মূল্য ৭০ টাকা।
বাংলাদেশ সময় ১৭৩০, এপ্রিল ২৭, ২০১১