বাংলাদেশের কিংবদন্তীতুল্য আলোকচিত্রী নাসির আলী মামুন। আগামী বছর তার ফটোগ্রাফির ৪০ বছর হতে যাচ্ছে।
এসব ব্যক্তির মধ্যে রয়েছেন বিশ্ববিখ্যাত লেখক, কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী, রাজনীতিবীদ, বিজ্ঞানীসহ বিভিন্ন সেক্টরের সেরা সেরা ব্যক্তিত্বরা। তার তোলা ছবিতে আলো ছায়ার মিলনে থাকে রহস্যময় শিল্পের খেলা।
৫ জানুয়ারি ২০১১ নাসির আলী মামুনের সাভার জোরপুরের বাসায় তার সাথে দীর্ঘ আড্ডা হয়। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন : ফেরদৌস মাহমুদ
ফেরদৌস মাহমুদ : মামুন ভাই, ক্যামেরার প্রেমে পড়লেন কবে?
নাসির আলী মামুন : অন্ধকার কালো বাক্সের জন্য একটা বন্য আকর্ষণ আমার ছিল ছোটবেলা থেকেই। তখন তো আর কেউ ক্যামেরা দিত না, আমার ক্যামেরাও ছিল না। তখন আমি বিভিন্ন খবরের কাগজে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, কোনো বিখ্যাত লেখক, কবি বা কোনো ব্যক্তির ছবি দেখতাম আর কাটতাম। অনেক সময় আব্বা ওই খবরের কাগজ পড়ার আগে আমি কাইটা ফেলতাম। এইজন্য আব্বার হাতে অনেক মাইরও খাইছি। কাটতাম এই কারণে যে, কাইটা ওইটা নিয়া বসতাম, ধ্যানের মতো করে। ভাবতাম এইটাতো ক্যামেরা দিয়েই তোলা হয়েছে। এই ছবিটা কে তুলছে, কিভাবে তুলছে। এই যে বিখ্যাত লোকটা তার সামনে কিভাবে বসছে, তার সাথে কী কথা হইছে, কিভাবে তার সাথে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করছে-- এগুলি নিয়ে নানা রকম প্রশ্ন করতাম মনে মনে। এইভাবে প্রশ্ন করতে করতে কিন্তু আমি ব্যক্তিত্বের ভক্ত হয়ে গেছি।
যেহতু ঢাকার শহরেই আমার জন্ম ১৯৫৩ সালের ১ জুলাই। পুরোনো ঢাকার মৌলভি বাজারে। কাজেই প্রকৃতি বা গ্রাম আমি ছোটবেলা থেকে দেখি নাই। ভাড়া বাড়িতে পুরোনো একটা গলিতে থাকতাম, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের উল্টাদিকে।
এই লোহা-কাঠ-সিমেন্ট-পাথর শুকনা জায়গা এইগুলি আমি দেখছি। আমার প্রকৃতি ছিল ওই টবের মধ্যে বা মাটির মালসার মধ্যে থাকা ছোট গাছ...। কাজেই প্রকৃতির প্রতি আমার আকর্ষণ কোনো কালেই ছিল না। আমি দেখেছি মানুষ। থাকতাম মৌলভি বাজারে দোতলা পুরোনো একটা চিপা ছোট্ট বাসায়। রেলিং ধইরা দাঁড়ালেই দেখতাম নানা ধরণের পণ্য নিয়া মানুষ মাথায় কইরা যাইতাছে, ভ্যানে কইরা নিয়া যাইতাছে, সাইকেলে কইরা যাইতাছে। অথচ কাছেই কিন্তু বুড়িগঙ্গা নদী, ওইপারে বিরাট প্রকৃতি, সুন্দর... ওইগুলি কিন্তু আমারে টানত না।
ফেরদৌস মাহমুদ : প্রথম দিকে কী ধরণের ক্যামেরা ব্যবহার করতেন? ক্যামেরার সাথে ধীরে ধীরে আপনার স্থায়ী সম্পর্কটা কিভাবে গড়ে উঠল?
নাসির আলী মামুন : প্রথম প্রথম নানা জাতের নানা দেশের বিভিন্ন রকমের ক্যামেরা ব্যবহার করেছি। এত ক্যামেরা ব্যবহার করেছি, কারন : নিজের কোনো ক্যামেরা ছিল না। নিজের ক্যামেরা থাকলে তো একটা বা দু’টাই ক্যামেরা ব্যবহারের সুযোগ থাকতো। যেহেতু নিজের কোনো ক্যামেরা ছিল না, তাই সততার বিনিময়ে আমি ক্যামেরা ধার করতাম। কাদের কাছ থেকে করতাম, যারা আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু তাদের কাছ থেকে। আমার কয়েকজন আত্মীয়স্বজনের কাছে ক্যামেরা ছিল, কিন্তু তারা ওই ক্যামেরা ধরতেও দিত না। আমার বন্ধুবান্ধব যাদের সাথে স্কুলে পড়তাম, তখন আমি খোঁজ নিলাম কাদের কাছে ক্যামেরা আছে। আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু নাম হচ্ছে হারেস, ওর বোন একবার ওরে লন্ডন থেকে একটা বড় প্যাকেট দিলো। তার মধ্যে অনেকগুলো খেলনা, গাড়ি ছিল, তার মধ্যে একটা প্লাস্টিকের ক্যামেরা ছিল। সময়টা সম্ভবত ১৯৬৬ সাল। ক্যামেরাটা ছিল ফিক্সড ফোকাস... কোনো ডিউ ফাইন্ডার ছিল না। কিভাবে দেখব এটা ছিল না। আন্দাজ করে ছবি তুলতে হতো। ফলে অনেক সময় পা কাটা যেত, মাথা কাটা যেত-- তবে ওই ক্যামেরায় ছবি তুলতে তুলতে একসময় বুঝে গেলাম কিভাবে অনুমানের উপর ক্যামেরা ধরলে পুরোপুরি ছবিটা আসবে।
তখন তো আর পোট্রেইট বুঝতাম না। বুঝতাম, এই জিনিসটা দিয়ে ছবি তোলা যায় যা দেখতে হুবহু সেরকম ছবি আসে। সেটা যাই-ই তুলি না কেন গাছের, বানরের আর মানুষের...। ১৯৬৬ সালের কথা বলছি।
তখন আমাদের একটা ক্লাব ছিল ‘নবারুণ কিশোর সংঘ’। সেই ক্লাবটা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৬৪ সালে। ক্লাবটা ছিল ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত। সেই ক্লাবে আমাদের যারা সিনিয়র তারাও খেলত। তাদের মধ্যে একজন হচ্ছেন আবদুল আজিজ। উনি ঢাকা সিটি মুক্তিযোদ্ধাদের কমান্ডার ছিলেন এবং ঢাকা কলেজের ছাত্র সংসদের সভাপতি ছিলেন। উনি আমাদের বড় ভাই, মুরব্বি...। ছিলেন লেফটেনেন্ট বাবুল, উনি বীর উত্তম খেতাব প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মারা গেছেন। উনিও আমাদের ক্লাবে খেলতেন।
আমাদের ক্লাবটা বন্ধ হয় ১৯৭৩ সালে, তখন আমরা ওই এলাকা ছেড়ে চলে আসলাম। আমাদের ক্লাবের আসলে ভাঙনের শুরু হয় ১৯৭১ সালে। কারণ আমাদের ক্লাবে কয়েকজন বন্ধু ছিল বিহারি। ওরা অনেকে পাকিস্তানে চলে গেল, লাহোরে চলে গেল। আমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলাম।
ওদেরও আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে ক্যামেরা ধার নিতাম। যারা বনেদি বিহারী ছিল ওই সময় তাদের কারও কারও ক্যামেরা ছিল। ধানমন্ডি স্কুলে পড়তাম আমি। তার মধ্যে একজন ওর দাদার ক্যামেরা ধার দিত আমাকে।
একটা ঘটনার কথা বলি-- ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর, যেদিন পাকবাহিনী আত্মসমর্পণ করলো, ভারতের যুগ্মকমান্ডের কাছে সেদিন সকাল থেকেই দেখছি অনেক পাকিস্তানি আর্মি, এক পায়ে জুতা আছে তো আরেক পায়ে নেই, জামা ছেঁড়া, গায়ে রক্ত, হাত তুলে বিডিয়ার ক্যাম্পের দিকে যাচ্ছে। সেদিন ওই ছবি তোলার জন্য অনেকের কাছে ক্যামেরা চেয়েছি কিন্তু কেউ দেয়নি। যদি দিত তাহলে হয়ত আমার কাছে ওই সময়ের অনেক ছবি থাকতো। এসব ছবি এখন দেখা যায় না, রক্তাত্ব অবস্থায় পাকিস্তানি আর্মি। চারদিকে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। যে পাকিস্তান আর্মিরা তার আগের দিন আমাদের পাখির মত গুলি করে মারছে, রেইপ করছে তারা অসহায় অবস্থায় মাথানত করে যাচ্ছে ওটা দেখার মত দৃশ্য না! ওটা তো একটা দলিল।
ফেরদৌস মাহমুদ : ছবি তোলার জন্য আপনি কত ধরনের ক্যামেরা ব্যবহার করেছেন?
নাসির আলী মামুন : ক্যামেরার আবিষ্কারক কে, এটা নিয়ে একজন কারও নাম বলা যাবে না। বই পইড়া, ক্যামেরা টিপতে টিতে, বিভিন্নজনরে প্রশ্ন করতে করতে আমি ক্যামেরা চলানো শিখছি। ক্যামেরা আবিস্কারের গল্পের মতো আমার ক্যামেরা হাতে নেওয়া। ক্যামেরা বিভিন্নজনের কাছ থেকে নিয়েছি।
আমি অনেক প্রবীণ ফটোগ্রাফারকে জিজ্ঞেস করেছি কয়টা ব্যবহার করেছেন। অনেকে বলছে ৫টা ৬টা, কেউ বলছে ১০টা ১২টা। কিন্তু আমার হিসেবে এই যাবত আমি প্রায় ৭০টার উপরে ক্যামেরা ব্যবহার করেছি। তার মধ্যে থারটি ফাইভ ক্যামেরাই বেশি। ওয়ান টুয়েন্টি ছিল অনেক। এমন ক্যামেরাও আমি ব্যবহার করেছি যা ১৯২২ সালের ক্যামেরা। ওইটা আমার এক স্কুলের বন্ধু চুরি কইরা আইনা দিছিল। ক্যামেরাটা ছিল আমার ওই বন্ধুর দাদার। দাদা হইল ব্রিটিশ আমলের দারোগা। ৭২ সালে সে দাদার বয়স ৯৪-৯৫ বছর। সেই লোক ক্যামেরা একটা মখমলের লাল কাপড় দিয়া মোড়াইয়া রাখতো।
ফেরদৌস মাহমুদ : আপনি ওই সময় কি ধরণের ছবি তুলতেন?
নাসির আলী মামুন : পোট্রেট। আমি তো ৭২ সাল থেকে শুরু করি পোট্রেট ছবি তোলা। আমি দেখলাম যে, বাংলাদেশের আলোকচিত্রে তখন প্রধানত প্রকৃতি নির্ভর ছবি। প্রকৃতি বা ন্যাচারকে বিষয়বস্তু করে বাংলাদেশের সমস্ত ফটোগ্রাফাররা আলোকচিত্র চর্চা করে। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, আমি এমন একটা দিকে যাবো যেদিকে নতুন একটা পথের সূচনা হবে। এই পোট্রেট ফটোগ্রাফির সূচনা করলাম ৭২ সালে।
পোট্রেট ছবি তুলতে গিয়ে যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সৃজনশীল, বিখ্যাত ওদের ছবি তুলতে শুরু করলাম। ধার করা ক্যামেরা দিয়ে আমি ওইসব ছবি তুলেছি। প্রথম ছয় বছর আমার কোনো নিজস্ব ক্যামেরা ছিল না। কিন্তু এই ছয় বছরের মধ্যে আমি দুইটা ক্যামেরা কিনেছি। একটা ক্যামেরা কিনছিলাম, ওইটা এক বছর ছিল। ওই ক্যামেরাটার নাম ‘ক্যাওয়া’। জাপানি ক্যামেরা। ৩২ বার নষ্ট হয়েছিল। ৩৩ বার যখন নষ্ট হয়েছিল তখন ওইটা আর দোকান থেকে ফেরত আনিনি। ওই দোকানেই ছিল, ওটা পরে কি হয়েছিল জানি না। ওই ক্যামেরা দিয়ে আমি শামসুর রাহমান, আহসান হাবীব, আবুল হোসেন, কমরেড মনি সিং এর ছবি তুলেছি, আরও বহু মানুষের।
ক্যামেরার সাথে আমার এমন একটা সম্পর্ক, ক্যামেরাকে আমি প্রাণময় সত্তা হিসেবে দেখি। আমি মনে করি ক্যামেরার প্রাণ আছে। ক্যামেরার চোখ আছে, হার্ট আছে। ক্যামেরা সব কিছুই বোঝে তা না হলে এত ভালো ভালো ছবি তোলে কিভাবে। ক্যামেরার সঙ্গে যে কমিউনিকেট করতে পারবে না তার ছবি ভালো হবে না।
ফেরদৌস মাহমুদ : ছবি তোলার এত সাবজেক্ট থাকতে আপনি কেবল মানুষ বেছে নিয়েছেন, তাও বিখ্যাত মানুষ। আপনি বিখ্যাত লোকের ছবি তোলার দিকেই বা আগ্রহী হলেন কেন?
নাসির আলী মামুন : মানুষ হলো...মানুষ পৃথিবীতে আসছে অল্প সময়ের জন্য। যারা সৃজনশীল মানুষ তারা কাজ করে ২০ বছর ৩০ বছর ৪০ বছর, তারপর হারিয়ে যায়। তাদেরকে এরপর আর পাওয়া যায় না, ক্যামেরার সামনে তাদের আর পাওয়া যায় না।
কিন্তু ফুল-পাখি-নিসর্গ এই যে প্রকৃতি, প্রকৃতির মধ্যে এত রূপ এত রঙ এগুলি কিন্তু সারা পৃথিবীতেই আছে। যেমন-বট গাছ সারা পৃথিবীতে আছে, চড়–ই পাখি সব দেশে আছে, কবুতর সব দেশে আছে। এই যে প্রকৃতির মধ্যে যেসব জিনিসপত্র গাছপালা পশুপাখি তা প্রায় সব দেশেই আছে, কোথাও না কোথাও পাওয়া যায় এবং একই চেহার। আমি দেখলাম আমার দেশের এসএম সুলতান, কবি শামসুর রাহমান, প্রফেসর ইউনুস তারা কিন্তু একটাই। এরা শুধু এদেশেই আছে, এদেরকে অন্য কোথাও গেলে পাওয়া যাবে না। তাদের ভাষা আলাদা, তাদের পোশাক আলাদা, খাদ্যাভ্যাস আলাদা। নিয়ম কানুন আলাদা। আমি এই কারণে দেখলাম যে যারা বুদ্ধিমান, সৃজনশীল তারা অনেক কাজ করে একসময় উধাও হয়ে যায়। আর ফেরে না। এইসব মানুষদের ধরে রাখা, তাদের কষ্ট তাদের দুঃখ তাদের যন্ত্রণা ক্যামেরায় ধরে রাখা যায় কিনা, আমি এসব ধরে রাখার চেষ্টা করেছি ক্যামেরায়।
ফেরদৌস মাহমুদ : আপনার ছবি সাধারণত শাদা-কালো হয়, একটা আলো ছায়ার খেলা থাকে। বেশ একটা রহস্যময় ব্যপার যেন। কিন্তু মুখের পূর্ণ অবয়বটা থাকে না, এটা কেন?
নাসির আলী মামুন : যে জিনিস তুমি সব সময় দেখবা, কানে শুনবা, খুব সহজে পাবা সেটার কিন্তু কোনো মূল্য নাই। সেটাকে কিন্তু এন্টিক বলা যাবে না কখনো।
যেমন, বাংলাদেশের একটা মাটির বদনা সেটা কি অ্যান্টিক? যে কোনো বাজারে গেলেই ১০-১৫ টাকায় কিনতে পারবা। কিন্তু তুমি যখন পাশ্চাত্যে যাবা। মনে করো আমেরিকায় গিয়েছো, সেখানে বাংলাদেশের মাটির বদনা একটা কিনোতো, এইখান থেকে ১২ হাজার মাইল দূরে নিউইয়র্কে, দেখবা পাবা না। ওইখানে এইটা কিন্তু এন্টিক।
সেইরকম প্রকৃতির মধ্যে এত আলো, এই হাজার রকমের কালারগুলা, এর মধ্যে শাদা আর কালো দুইটা কালার। সেই কারণে এইটা একটা এন্টিক, আমি ছবি তুলি শাদা কালোতে। এত রঙ থাকতে রঙের ব্যবহার আমি করি না। রঙের মধ্যে রঙহীন জিনিস নিয়া আমি কাজ করি।
আমরা সাধারণত যারা সাধারণ মানুষ তারা খুব স্পষ্ট, স্বচ্ছ, পরিস্কার জিনিস দেখতে পছন্দ করি। খুব কম লোকই আছে যারা আলো-আধারি-অন্ধকার, অন্ধকারের মধ্যে রহস্যময় একটা কিছু... খুব কম লোকই এত কষ্ট করে দেখতে চায়। সে কারণেও অন্ধকারের মধ্য থেকে আলোটারে দেখাতে চাই আমি। মূল জিনিসটা অন্ধকার, এর মধ্যে একটু আলো।
ওর মধ্যে কি আছে, ওর মধ্যে তার কতটুকু কান্না, ওর মধ্যে তার কতটুকু যন্ত্রণা এটা পাল্লা দিয়ে মাপা যায় কিনা, সে চেষ্টা আমি করি লেন্সের মধ্য দিয়ে, ক্যামেরার মধ্য দিয়ে, আলোকচিত্রের মধ্য দিয়ে। এবং চেষ্টা করি যে একটা নির্জীব খসখসে কাগজের মধ্যে প্রাণময় কোনো সত্তা গুজে দেওয়া যায় কিনা। সেটা পারছি কিনা আমি জানি না।
আমার বেশিরভাগ ছবির মধ্যে মিনিমাম ফিফটি পার্সেন্ট অন্ধকার থাকে। এটা যে আমি খুব পরিকল্পিতভাবে করেছি তা না। আমি যে অনেকের ছবি দেখে করেছি তা না। আমি এখন দেখছি যে, ৭০-৮০ বছর আগে, বা আরও আগে পৃথিবীর অনেক দেশে এই কাজ হয়ে গেছে। ভারত উপমহাদেশে এটা হয়নি, এই যে আলো আধারি দিয়ে এরকম পোট্রেইট তৈরি করা এটা ইন্ডিয়ান সাবকনটেন্টে হয়নি। কিন্তু ৭০-৮০-৯০ বছর আগে পশ্চিমা দেশে ইউরোপে-আমেরিকায় এই ধরনের কাজ হয়ে গেছে। এতকাল পরে দেখছি। আমি যখন ছবি তোলা শুরু করি, তখন যদি এইসব দেখতাম আমার মনে হয় আমি ওইসব দ্বারা ইনফ্লুয়েন্স হয়ে যাইতাম।
আমি মনে করি, কোনো ছবি না দেখে এটা যে শুরু করেছি তা সরলভাবেই করেছি... আলো ছায়ার এই ব্যপারটা। আমি দেখছি যে শাদাকালো ছবিতে ফ্লাট রাখলে মানুষের চোখ কোনো একটা সেন্ট্রাল জিনিসের মধ্যে পড়ে না। আমি মনে করি ছবির মধ্যে আলো ছায়ার অনেক বাক্য থাকে, সেগুলিকে সাজায়ে একটা ছিবি নির্মাণ, একটা ছবি তৈরি করা, একটি ছবি চূড়ান্ত করা, তারপরই একটা সার্থক ছবি বা পোট্রেইট হয়। বুঝতে হবে কতটুকু আলো রাখতে হবে, কতটুকু ছায়া রাখতে হবে। তার বেদনার পরিমাণটা বোঝানোর জন্য কতটুকু ছায়ার মধ্যে তাকে রাখতে হবে।
ফেরদৌস মাহমুদ : ছবি তুলতে গেলে আপনি সাধারণত নির্দিষ্ট মানুষের নানা মহূর্তকে, নানা ভঙ্গিকে সেলেক্ট করেন। এর কারন কি?
নাসির আলী মামুন : আমি ছোটবেলায় যখন এদের ছবি দেখতাম, বইতে পড়তাম, বিভিন্ন লাইব্রেরিতে দেখতাম- আমি পাকিস্তান আমলের কথা বলছি... দেখতাম সবই পাসপোর্ট সাইজের ছবি। পরে যখন কাউকে কাউকে সামনা সামনি দেখতাম অবাক হতাম আরে এই মানুষের সাথে তো ছবির মিল নাই। তার তো মুখে অনেক দাগ, গালভাঙা। ছবিতেতো দেখছি গালফোলা। পরে বুঝলাম এইসব ছবি স্টুডিওতে তোলা বলে ছবিগুলির এই অবস্থা। স্টুডিওর ছবি তো আর শিল্প না। তারা প্রফেশনালি যেভাবে মানুষ চায় সেভাবেই তুলে দেয়। কাজেই ওই ধরণের ছবি আসলে ছবি না।
আমি দেখলাম এমন ছবি তুলবো তার প্রকৃত চেহারাটা অন্তত ধরা পড়বে, তার মুখের দাগগুলি ধরা পড়বে। শুধু তাই না তার অন্তরের কথাও যাতে বোঝা যায়। ভবিষ্যতে কোনো প্রজন্ম যাতে তার ছবি নিয়ে আলোচনা করতে পারে। গবেষণা করতে পারে। এই ধরণের ছবি আমি তোলার চেষ্টা করেছি।
এটার একটা স্থায়ী মূল্য আছে, শিল্প মূল্য আছে, আর্কাইভাল মূল্য আছে। এইগুলি আমার কাজে লাগবে, দেশের কাজে লাগবে, মানুষের কাজে লাগবে, প্রকাশনার কাজে লাগবে, মিডিয়ার কাজে লাগবে।
আমি ওই সময় আমার ছবি ছাপানো জন্য লেখকদের বুঝাইতাম। বলতাম স্টুডিওর ছবি ছাইপেন না। এমনও হইছে লেখকদের বইয়ে আমার ছবি ছাপানোর জন্য প্রেসে পর্যন্ত গেছি।
সৈয়দ শামসুল হকের এক বইতে একটা টাক মাথা ছবি আছে না, পুরোপুরি টাকমাথা। বইটার নাম ‘প্রাচীন বংশের নিস্ব সন্তান’। ওই ছবিটারে প্রচ্ছদ হিসেবে ব্যবহারের জন্য হক ভাইরে আমিই কইছিলাম। হক ভাই পরে আমার কথা রেখেছিল।
ফেরদৌস মাহমুদ : আপনি যাদের ছবি তুলেছেন, নিশ্চয়ই সব ছবিই খুব সহজে তোলা হয়নি। কোনো কোনো ছবি তুলতে গিয়ে অনেক বিড়ম্বনার মুখোমুখিও হয়েছেন। দেখা গেছে কোনো কোনো ছবি হয়ত দূর থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে নিতে হয়েছে। কিংবা ছবি তুলতে অনেকবারই যেতে হয়েছে। বিড়ম্বনার স্বিকার হয়েছেন এরকম কিছু ঘটনার কথা শুনতে চাচ্ছি।
নাসির আলী মামুন : ১৯৮৬ সালের ২ডিসেম্বর যখন জার্মান-লেখক গুন্টার গ্রাস ঢাকায় এসেছিলেন, তখন তার ছবি তোলার জন্য জার্মান কালচারাল সেন্টারের ডিরেক্টর পিটার ডেভিড গোপণীয়ভাবে আমাকেই সিলেক্ট করলেন। উনি ঠিক করলেন কবি বেলাল চৌধুরী তার গাইড থাকবে আর আমি তুলবো ছবি। কিন্তু এদিকে গুন্টার গ্রাস আগেই না করে দিয়েছিল কোনো সাংবাদিক যাতে তার সাথে না থাকে, তিনি কাউকে ইন্টারভিউ দেবেন না এবং ছবি তুলতে দিবেন না।
ফেরদৌস মাহমুদ : আপনি তো গুন্টার গ্রাসের অনেক ছবি তুলে ছিলেন, এই নিষেধাজ্ঞার পরও এটা কিভাবে সম্ভব হলো ?
নাসির আলী মামুন : আমাকে ব্রিফ করা হয়েছিল খুব কৌশলে কাজ করতে হবে। তবে তিনি যদি ‘না’ করেন তবে ছবি তোলা যাবে না, পুরো ব্যপারটাই নির্ভর করছে আমার উপর। আমি খুব আতঙ্কে ছিলাম। ২ ডিসেম্বর ১৯৮৬ গুন্টার গ্রাস এবং তার স্ত্রি উটার গ্রাস যখন কলকাতা থেকে বিমানে এসে নামলেন এয়ারপোর্টে তখন প্রায় ৩০ ফিট দূর থেকে তাদের দুজনের একটি ছবি তুলেছিলাম। তারা ট্রলি ঠেলে নিয়ে আসছিল। ওই সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন বেলাল চৌধুরী, রফিক আজাদ, ত্রিদিব দস্তিদার, রবিউল হুসাইন, আহমদ ছফা এরকম আরও বেশ কয়েকজন। তুলেই আমি তাদের ভিড়ের মধ্যে ক্যামেরাটা আড়াল করে রাখলাম। সবাই যখন ফুল দিচ্ছিল আমি তখন দ্রুত দু’তিনটা ছবি তুলে ফেললাম তাও দূর থেকে। তারপর মাইক্রোবাসে উঠলাম গুন্টার গ্রাসের সাথে।
পরে রাতে গুন্টার গ্রাসের আগমন উপলক্ষে ডিনারের ব্যবস্থা করা হলে, আমি তার উল্টাদিকে বসেছিলাম কায়দা করে। সেখানে আমি তার কয়েকটা ছবি তুলি, দেখি যে গ্রাস কিছু বললেন না। পরের দিন আমরা রওয়ানা দিলাম লালবাগের কেল্লার উদ্দেশ্যে রিক্সায়। রিক্সায় ওঠার সাথে সাথে গুন্টার গ্রাস তার চিরচেনা পাইপটায় আগুন ধরালো, পাশেই হাস্যজ্জল তার স্ত্রী উটার গ্রাস। তারা দুজন রিক্সায় বসা ঢাকার রাস্তায়, আমি ওই ছবি তুলি। তারপর আমি আর বেলাল চৌধুরী সামনের রিক্সায় গিয়ে উঠলাম। তাদের রিক্সা আমাদের ফলো করলো লালবাগের উদ্দেশ্যে। মজার ব্যাপার হলো, লালবাগেও আমি তার ছবি তুললাম। বুঝলাম যে তার মনের মধ্যে আমার ব্যাপারে কোনো সংশয় নাই। সে আমাকে নিরাপদই মনে করেছে। তারপর তো সাতদিন তার ছবি তুলেছি কোনো সমস্যা হয়নি। এরকম আরও অনেক ঘটনা ঘটেছে।
ফেরদৌস মাহমুদ : মাদার তেরেসা বা বিসমিল্লাহ খাঁর ছবি তুলতেও নাকি আপনাকে অনেক ঝামেলা করতে হয়েছিল...
নাসির আলী মামুন : মাদার তেরেসা যখন আসলো ১৯৮১ সালের জানুয়ারিতে, তখন তো তিনি শান্তিতে নোবেল জয়ী। এত বড় মহিয়সী মহিলা মাদার তেরেসা কিন্তুু কোনো প্রেস এলাউ করছিলেন না। কোথায় তার কী অনুষ্ঠান কিছুই জানা যাচ্ছিল না। শুধু শুনেছিলাম তেজগাঁও চার্চে তিনি আসবেন। আমি ওই চার্চের গেটে দাঁড়িয়ে থাকলাম। তখন তিনি ওই চার্চে আছেন।
কিছুক্ষণ পরই দেখি তিনজন নান আর সাথে মাদার তেরেসা চার্চ থেকে বেরিয়ে মাইক্রোতে উঠছেন, তিনি যাবেন পুরনো ঢাকায়। আমি তার গতিরোধ করলাম, আমার সাথে ছিল ওই সময়ের ইত্তেফাকের এক সাংবাদিক নাজিমউদ্দিন মস্তান। আমি বললাম যে ছবি তুলতে দিতেই হবে। মাদার তেরেসা খুবই ক্ষুব্ধ হলেন।
উনি বললেন যে, আমাকে তোমরা আটকাইলা, তোমরা কি জানো অনেক শিশু আমার জন্য অপেক্ষা করতেছে। তোমরা কি অনুতপ্ত না। আমি তার কাছে ক্ষমা চাইলাম। পরে মাদার তেরেসা ছবি তুলতে দিলো। অনেকগুলি ছবি তুললাম তার।
ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খাঁ যখন ঢাকায় আসছিলেন, সম্ভবত ২০০০ সালে। গেলাম তার ছবি তুলতে। তার লেবেলের এত বড় আর্টিস্ট এর আগে আসে নাই ঢাকাতে। যে লোক এত বড় শিল্পী, ভারত বিখ্যাত, পৃথবী বিখ্যাত শিল্পী... সানাই বাজিয়ে লক্ষ লক্ষ লোককে সে কাদায়, আবার আনন্দ দেয়। অনেকে বলে তার সানাই ছাড়া বিয়ে হয় না। ভাবছিলাম কিভাবে তার বেদনাটা ক্যামেরায় বন্দি করা যায়। তার বেদনাটা কী। শুধু চেহারা ধরার জন্য আমি তার ছবি তুলতে যাই নাই। তিনি যে কয়দিন ঢাকাতে ছিলেন প্রতিদিনই আমি চেষ্টা করছিলাম তার পোট্রেট ছবি তোলার কিন্তু সম্ভব হচ্ছিল না।
পরে যেদিন তিনি ঢাকা ছাড়বেন সেদিন তার বড় ছেলেকে গিয়ে বললাম আমার মা তো ‘শিয়া’। বললাম, তোমরা তো শিয়া, এখানে তো শিয়া কম, একটা ছবি যদি না তুলি তাহলে কেমন হয় ব্যপারটা। শিয়া বলার পর দেখলাম, মহূর্তের মধ্যে তার বড় ছেলে কেমন যেন হয়ে গেল। সে বলল, কোনো চিন্তা করো না, আমার বাবার কাছে তোমাকে নিয়ে যাবো। তার ছেলে আমাকে ভিতরে নিয়ে যাওয়ার পর আমার সাথে তার পরিচয় করিয়ে দিলো। বিসমিল্লাহ খাঁ সবসময় অজু করা অবস্থায় থাকতেন। আমি তার সাথে কিছু কথা বললাম। কিছু ছবি তুললাম।
ফেরদৌস মাহমুদ : স্রেফ শিয়া বলার কারণে আপানাকে এ সুযোগ দেওয়া হলো!
নাসির আলী মামুন : আসলে ওটা ছিল আমার একটা টেকনিক। আমি ওনার ছেলেদের পায়ে ধরেও সালাম করেছিলাম। একটা ছেলে ছিল প্রায় আমার সমানই বয়স, তবলাবাদক, তবু আমি তার পা ধরে সালাম করলাম। আমার এত কিছু করার উদ্দেশ্য তো একটাই বিসমিল্লাহ খাঁর সামনে যাওয়া, সেটা গেছি...ছবি তুলে নিয়ে এসেছি।
ফেরদৌস মাহমুদ : অ্যালেন গিন্সবার্গের সাথে সাক্ষাৎ নিয়ে বলুন...
নাসির আলী মামুন : মার্কিন কবি অ্যালেন গিন্সবার্গ যার নাম আমি বহু আগে থেকেই জানি। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের একটা লেখায় তার সম্পর্কে আমি পড়েছিলাম এবং তার ছবি দেখেছিলাম।
সামনাসামনি গিন্সবার্গের দেখা আমি পাই আমেরিকায় এখন থেকে একুশ বছর আগে ১৯৮৯ সালে। তখন নিউইয়র্কের টমকিন স্কয়ার পার্কে একটি অনুষ্ঠান হচ্ছিল, মে দিবসের অনুষ্ঠান। পৃথিবীর সম্ভবত একমাত্র দেশ আমেরিকা, যেখানে মে দিবসের কোনো ছুটি নাই। অথচ মে দিবসের ঘটনাটা আমেরিকাতেই ঘটেছিল।
তো ওই পার্কে আমি ঘোরাঘুরি করতেছি, আমার সাথে আমার বন্ধুরা আছে কয়েকজন। হঠাৎ দেখি যে দাড়িওয়ালা এক লোক ছবি তুলতেছে হোমলেসদের... কাছে গিয়ে দেখলাম হোমলেসরা পিসবোর্ডের বাক্সের মধ্যে কেউ শুয়ে রয়েছে, কেউ গান গাইতাছে, কেউ ঘাসে শুয়ে রয়েছে... টুক টুক করে সে ছবি তুলতেছে। আমি লোকটার দিকে তাকালাম, তাকাইয়া হঠাৎ মনে হলো এই লোকটার ছবি তো আমি ‘দেশ’ পত্রিকাতে দেখেছি। এটা তো অ্যালেন গিন্সবার্গ। গিন্সবার্গ তো নিউইয়র্কেই থাকে...ভেনিজুয়েলারে।
ছবি তুইলা সে আগাইয়া যাইতেছে। ওদিকে মে দিবসের অনুষ্ঠান উপলক্ষে চলছে বিকট ড্রামের আওয়াজ, গানের আওয়াজ... খুব ইনফরমাল ওয়েতে অনুষ্ঠান হচ্ছে...।
আমার সঙ্গে ছিল হাসান ফেরদৌস, আলম খোরশেদ। আমি ওদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এসে ওই দাড়িওয়লা লোকটার পিছু নিলাম। পার্ক থেকে বের হয়ে উনি একটা গলির মধ্যে ঢুকলো, পুরোনো দেওয়াল, ভাঙা... আমার কাছে খুব অবাক লাগলো, পৃথিবীর সব বড় বড় ধন কুবেররা থাকে... কোটিপতিরা থাকে এই এলাকা এরকম কেন? কেমন পুরোনো একেকটা দেওয়ালঅলা দালানসব। অনেকটা আমাদের দেশের পুরোনো শহরের মতো।
আমি গিন্সবার্গকে জিজ্ঞেস করলাম ‘এক্সকিউজ মি, আর ইউ অ্যালেন গিন্সবার্গ’? আমার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে সে আরও জোড়ে হাঁটা ধরলো। তারপর আমি তার পিছে পিছে হেঁটে তাকে জিজ্ঞেস করলাম ‘ডু ইউ নো সুনীল? আই অ্যাম ফরম ক্যালকাটা, হি ইজ মাই ভেরি গুড ফ্রেইন্ড’। গিন্সবার্গ আমার মুখের দিকে তাকালো। লম্বা-টম্বা...গিন্সবার্গ মোটাসোটা... দাড়ি আছে...সঙ্গে ক্যামেরা।
গিন্সবার্গ আমাকে বললো, ‘হ্যাঁ সুনীলরে তো আমি চিনি। সুনীল কেমন আছে?’ আমি বললাম, ভাল আছে। আসলে ওটা ছিল মিথ্যা কথা। সুনীলদার সাথে আমার দেখা হয় না তখন অনেক দিন। পরে অবশ্য সুনীল দারে আমি এই ঘটনাটা বলছি।
একসময় গিন্সবার্গ রাস্তা ছেড়ে ফুটপাতে গেল, সেখানে দেখি সে পুরনো বই ঘাটতেছে। ছোট্ট একটা মিনোস ক্যামেরা তখন আমার হাতে। ৭২টা এক্সপোজার হয়। সেই ক্যামেরাটা আমি কিনছিলাম বাংলাদেশের খুব প্রবীন আলোকচিত্রী গোলাম কাসেম ড্যাডিকে উপহার দেওয়ার জন্য। কেনার পরে আমি দুই-তিনটা রিল ছবিও তুলছি।
ওই ক্যামেরা দিয়ে আমি গিন্সবার্গের কয়েকটা ছবি তুললাম, বই কিনতেছে...বই ঘাটতেছে। গিন্সবার্গ যেখান থেকে বই কিনতেছিল সেখানে বিক্রেতা ছিলো একজন কালো, ব্লাক আমেরিকান। ফুটপাতে শুয়ে থাকে আর ওইখানেই বই বিক্রি করে।
খুব ইচ্ছে হলো গিন্সবার্গের সাথে আমার ছবি তোলার। এই যে গিন্সবার্গের সাথে দেখা হলো এটা তো কেউ বিশ্বাস করবে না। আমি ক্যামেরাটা ওই যে বইবিক্রেতা কালো ওর হাতে দিলাম... গিন্সবার্গের সাথে আমার ছবি তোলার জন্য। ও হয়ত সারারাত মদ পান করে... দেখলাম টলতেছে। ও আমার ছবি তুলল।
পরে অবশ্য গিন্সবার্গের সাথে আমার অনেক ভালো সম্পর্ক হয়েছিল। সে আমার একরকমের গুরু হয়েছিল, বন্ধুর মতো সম্পর্ক হয়েছিল। গিন্সবার্গ আমার একটা ছবি এঁকে দিয়েছিলো। ওই ছবি আমি ফেইসবুকে দিছি, ওইখানে গেলেই দেখতে পাবা।
[চলবে]
বাংলাদেশ সময় ১৫০০, এপ্রিল ০৭, ২০১১