ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

‘রহস্যময়তাই রবীন্দ্র চিত্রকলার প্রাণ’

রবাব রসাঁ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০১১
‘রহস্যময়তাই রবীন্দ্র চিত্রকলার প্রাণ’

রহস্যময়তাই রবীন্দ্রনাথের চিত্রকলার প্রাণ। চারপাশের অস্তিত্বের সবটাই আমাদের জানা নেই।

তাই রবীন্দ্রনাথ তার ছবি এঁকেছেন মায়াবী আলোয়। কথাগুলো বলেছেন ভারতের বিশিষ্ট শিল্পসমালোচক ও কলা ঐতিহাসিক প্রণবরঞ্জন রায়।

বেঙ্গল শিল্পালয় ৩১ মার্চ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রবীন্দ্রনাথের সার্ধশততম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ধানমন্ডির নিজস্ব গ্যালারিতে আয়োজন করেছিল রবীন্দ্র চিত্রকলা বিষয়ে এক বিশেষ বক্তৃতা।

প্রণবরঞ্জন রায় তার বক্তৃতায় বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ সাহিত্যে হৃদয়ের গভীরের যেসব ভাবনা প্রকাশ করতে পারেননি তাই প্রকাশ করেছেন তার চিত্রকর্মে। ’

তিনি বলেন, ১৯২৪ সালে রবীন্দ্রনাথ তার ‘পূরবী’ কাব্যগ্রন্থের পাণ্ডুলিপি পরিমার্জনা করতে গিয়ে যে রেখার জাল সৃষ্টি করেছিলেন তা দিয়েছিল কিছু পরিচিত, স্বল্প পরিচিত বা অপরিচিত জীবজন্তুর অবয়ব।

রবীন্দ্রনাথের শিল্পচর্চার ক্রমোবর্ধমান ইতিহাস উল্লেখ করে প্রণবরঞ্জন রায় বলেন, পরবর্তীতে এই রেখাগুলোর স্থান দখল করে নেয় পুঞ্জ। ‘তাই আমরা পরবর্তী রবীন্দ্র চিত্রকলায় দেখতে পাই রেখার চেয়ে রঙের প্রাধাণ্য। ’

কলা ঐতিহাসিক রায়ের মতে, রবীন্দ্রনাথ যে সময়ে চিত্রচর্চা শুরু করেছিলেন তা ইউরোপে ছিল দুইটি মহাযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময় আর ব্রিটিশ-শাসিত ভারতে ছিল জাতিগত হানাহানির সংকটকাল।

তিনি বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ যেসব বিচিত্র জীবজন্তুর ছবি এঁকেছেন তা যেন আমাদের চারপাশের অশুভ শক্তিগুলোর উত্থানকেই মনে করিয়ে দেয়। তবে তিনি তার সব ধরণের চিত্রকর্মেই এক রহস্যময়তার উপস্থাপন করে গেছেন। ’

রবীন্দ্রনাথের চিত্রকলাকে অনন্য উল্লেখ করে রায় বলেন, ‘কবিগুরু তার কবিতায়, গানে পরিচিত ছন্দের শৃংখলার ভেতর দিয়ে কাজ করেছেন। তবে চিত্রকলায় তিনি সেই বাঁধা ধরা ছন্দের বাইরে কাজ করেছেন নতুন সৃষ্টির প্রেরণায়। রবীন্দ্রনাথের চিত্রকলা তার একান্ত নিজস্ব। ’

রবীন্দ্রনাথের আত্মপ্রতিকৃতি আঁকার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে রায় বলেন, ‘তৎকালীন ভারতীয় শিল্পীদের ভেতর রবীন্দ্রনাথ বিশিষ্ট বিশেষ করে তার আত্মপ্রতিকৃতির জন্য। অনেক প্রতিকৃতিতে তিনি রহস্য এনেছেন আবার অনেক প্রতিকৃতিতে করেছেন ব্যঙ্গ। ’

রবীন্দ্রনাথ পৃথিবীর বিভিন্ন জাতির শিল্প ঐতিহ্য থেকে উপাদান নিয়ে তা আত্মস্থ করেছেন নিজের প্রয়োজন অনুসারে। অনেক শিল্প-আন্দোলনের ভেতর তিনি গ্রহণ করেছিলেন উত্তর ইউরোপীয় ‘এক্সপ্রেশনিজম’ যা তার মনের ভাব প্রকাশের জন্য সহযোগী হয়েছিল।

রায় জানান, রবীন্দ্রনাথ তার স্বভাবসুলভ গ্রহণ-বর্জনের মাধ্যমে যে চিত্রকলা সৃষ্টি করেছিলেন তা যে কোন শিল্প-আন্দোলনের ঊর্ধ্বে। ‘তিনি তার শিল্পকর্মে যে রহস্যময়তা সৃষ্টি করেছেন তা অনন্যসাধারণ। ’ তাই রায়ের বিশ্বাস, ‘রবীন্দ্র চিত্রকলার প্রাণ রহস্যময়তা। এই রহস্যময়তাই চিত্রকর্মগুলোকে করেছে অতুলনীয়’।

বাংলাদেশ সময় ১৫৩৫, এপ্রিল ১, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।